প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে ভারতের মাটিতে জন্ম নেয় আয়ুর্বেদ নামের প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র। এই শাস্ত্রে মূলত প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের একটি প্রাচীন তেল হলো কুমকুমাদি অয়েল বা কুমকুমাদি তৈলাম। বলা হয়ে থাকে সৌন্দর্যচর্চায় এটি একটি জাদুকরী উপাদান।
বৈদিক শাস্ত্রে কুমকুমাদি অয়েলের যে ইতিহাস পাওয়া যায় তা থেকে জানা যায়, এই কুমকুমাদি অয়েল তৈরী করেছিলেন সূর্যদেবতা সুরিয়া এর যমজ ছেলেরা যারা অশ্বীনি কুমার নামে পরিচিত। তারা ছিলেন চিরতরুণ এবং দেবতাদের চিকিৎসক। দেবীদের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য এই কুমকুমাদি ফেইস অয়েল তারা বানিয়েছিলেন এবং শুরুতে এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল না।
সংস্কৃততে কুমকুমা অর্থ স্যাফরন যা এই তেলের মূল উপাদান। এই শব্দটি থেকেই মূলত এর নাম রাখা হয়েছে কুমকুমাদি তৈলাম। স্যাফরন ছাড়াও নানারকম ফল, ফুল এবং ভেষজ উপাদান ও নির্যাস থেকে এই তেলটি তৈরী করা হয়। শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয় বরং ত্বকের নানারকম উপকার করে থাকে এই Kumkumadi Oil। এতে স্যাফরন ছাড়াও চন্দন, লাল চন্দন, গোলাপের নির্যাস, হলুদ, পেঁপের নির্যাস, সিসেমী অয়েল, গোখুরা সহ নানারকম উপকারী ভেষজ উপাদান আছে যা ফেইসের ভেতর থেকে গ্লো দেয়, করে তোলে হেলদি।
চলুন তবে আজকে এই জাদুকরী তেলটি ব্যবহারের গুনাগুন জেনে নিইঃ
১) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ
কুমকুমাদি অয়েলের প্রধান উপাদান হলো স্যাফরন। প্রাচীনকাল থেকেই ত্বক উজ্জ্বল করতে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনকি ত্বকের কালো দাগ, হাইপারপিগমেন্টেশন, রোদে পোড়া দাগ এসব দূর করার পাশাপাশি স্কিনটোনকে লাইট করে থাকে স্যাফরন। এর সাথে অন্যান্য আয়ুর্বেদিক উপাদান যেমন চন্দন, মঞ্জিষ্ঠা ইত্যাদি যুক্ত হলে তা ত্বকের গ্লো বাড়াতে গভীরভাবে কাজ করে। ফলে ফেইসে রেডিয়েন্স ও গ্লো আসে। সবকিছু ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্স হওয়ায় স্কিনও থাকে হেলদি। তাই যদি ফেইসে ডালনেস, পিগমেন্টেশন, কালো দাগ, রোদে পোড়া ভাব ইত্যাদি থাকে তবে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন কুমকুমাদি অয়েল।
২) প্রিম্যাচিউর এজিং প্রিভেন্ট করেঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক ধীরে ধীরে টান টান ভাব হারাতে থাকে। বাড়তে থাকে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস। কুমকুমাদি অয়েলে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা মূলত অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এগুলো অকাল বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রিংকেলস দূর করে। এই অয়েলের মাঝে রয়েছে লিকোরিস, যা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। ফলে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস দূর হয়। এছাড়া রেডিকেলস এর কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় তা প্রতিরোধ করে থাকে এই অয়েলটি। এই অয়েলের মাঝে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান স্কিনের সেল রিজেনারেট করতে সাহায্য করে, বয়সের দাগ কমায়। ফলে ত্বক থাকে মসৃণ ও তারুণ্যোদীপ্ত।
৩) স্কিন সারিয়ে তোলা ও ইম্পারফেকশন দূর করেঃ
কুমকুমাদি অয়েলের আরেকটি দারুণ কার্যকারীতা হলো ত্বকের ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলে ত্বককে আবার হেলদি করে তোলা। পিগমেন্টেশন, ব্রণ, সানট্যান, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ইত্যাদির কারণে অজান্তেই ত্বকের নানারকম ক্ষতি হয়ে থাকে। যেহেতু স্কিন সাধারণত অনেক সেনসিটিভ হয়ে থাকে তাই চাইলেই যেকোনো কিছু ইউজ করা যায় না। এক্ষেত্রে কুমকুমাদি অয়েল একটি দারুণ জিনিস। এর মাঝে থাকা চন্দনের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ব্রণ, স্কিনের ইনফ্ল্যামেশন দূর করে। মঞ্জিষ্ঠা দাগ, ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারিয়ে তোলে। এছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের নির্যাস স্কিনের ভেতরে পুষ্টি যোগায় ও স্কিনের নতুন সেল তৈরী করতে সাহায্য করে। ফলে ফেইস হয় ন্যাচারালি গ্লোয়িং ও হেলদি।
৪) স্কিন ময়েশ্চারাইজড ও নারিশ করেঃ
শুষ্ক ও প্রাণহীন ত্বক কারোরই পছন্দের নয়। তাই শুষ্ক ও প্রাণহীন ত্বক হলে ব্যবহার করতে পারেন কুমকুমাদি অয়েল। এই অয়েল ত্বকের পোরস ক্লগ না করেই পুষ্টি যোগায় এবং অনেক সময় পর্যন্ত হাইড্রেট রাখে। অয়েলের মাঝে থাকা আমন্ড অয়েল এবং সিসেমি অয়েল ন্যাচারাল ইমোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে তাই আপনার ত্বক সারাদিন থাকে ময়েশ্চারাইজড ও সফট। এছাড়া এই তেলগুলো ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে অন্যান্য আয়ুর্বেদিক উপাদানকে স্কিনের গভীরে ঢুকতে সাহায্য করে, ফলে স্কিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়। তাই স্কিনের আর্দ্রতার ভারসাম্য থাকে, ইলাস্টিসিটি ঠিক রাখে এবং স্কিনকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে বাঁচায়। তাই স্কিন হেলদি ও গ্লোয়ি হয়ে ওঠে সহজে।
৫) যেকোনো স্কিন টাইপে স্যুট করেঃ
কুমকুমাদি অয়েলের সবচেয়ে বড় একটি সুবিধা হলো এটি সব স্কিন টাইপেই স্যুট করে। অয়েলি, কম্বিনেশন, নরমাল বা ড্রাই- অয়েলটি সব ফেইসেই দারুণ কাজ করে। এটি ত্বকের অয়েল প্রোডিউস ব্যালান্স করে তাই একনে প্রন স্কিনে কোনো সমস্যা হয় না। আবার অয়েলটি স্কিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যুগিয়ে ড্রাই ও সেনসিটিভ স্কিনের ড্রাইনেস ও ইরিটেশন দূর করে। এটি সাধারণত নন কমেডোজেনিক হিসেবে তৈরী করা হয়, ফলে এটি পোরস ক্লগ করে না এবং একনে হয় না বলে ত্বক থাকে স্পট ফ্রি ও সেইফ।
৬) ব্রণ থেকে রক্ষা করেঃ
কুমকুমাদি অয়েলে আছে চন্দনসহ নানারকম অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান, যা স্কিনে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে, ফলে ব্রেক আউট হয় না। এছাড়া ব্রণের দাগও দূর করে এই অয়েলটি। এর মাঝে থাকা নন ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ বার বার ব্রণের ফিরে আসা রোধ করে। এই কারণে এই ফেইস অয়েলটি ব্রণ থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখে।
৭) পোরস টাইট করেঃ
স্কিনের পোরস বেশি বড় হয়ে গেলে এখান থেকে নানা সমস্যা তৈরী হয়। কুমকুমাদি অয়েল এই পোরস গুলোকে টাইট করে স্কিনকে রাখে হেলদি। ফাইন লাইনস ও রিংকেলসের প্রবলেম অনেকটাই কমে আসে।
কোথায় পাবেন কুমকুমাদি অয়েল?
এই দারুণ জাদুকরী অয়েলটি কোথায় পাবেন ভাবছেন? এত উপাদান একসাথে পাওয়া যেমন ঝামেলার তেমন বানানোও তো ঝক্কি। চিন্তা নেই, এই সমস্যার সমাধানে আছে অরগানিকাওন। অরগানিকাওন প্রাকৃতিক সব উপাদান দিয়ে কেমিক্যাল ফ্রি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস তৈরী করে আসছে। অরগানিকাওন এর এই কুমকুমাদি অয়েলে আছে স্যাফরন, চন্দন, লাল চন্দন, গোলাপের নির্যাস, হলুদ, পেঁপের নির্যাস, সিসেমী অয়েল, গোখুরা, মঞ্জিষ্ঠা,জবার নির্যাস সহ নানারকম উপকারী ভেষজ ও ফলের নির্যাস যা ত্বককে করে হেলদি গ্লোয়িং এবং ইয়াং। এটি ব্রণ, ত্বকের পিগমেন্টেশন, সানট্যান, বিভিন্ন কালো দাগ দূর করে। এন্টি এজিং এজেন্ট হিসেবেও কুমকুমাদি অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। তাই হেলদি গ্লোয়িং ও ইয়াং স্কিন পেতে আজই ব্যবহার শুরু করতে পারেন অরগানিকাওন ব্রান্ডের কুমকুমাদি অয়েল।
কীভাবে ব্যবহার করবেন এই অয়েল?
১) সকালে ও রাতে ভালোভাবে ফেইস ক্লিন করে নিয়ে এরপর ৩/৪ ফোঁটা অয়েল ফেইসে লাগিয়ে নিন। ধীরে ধীরে ফেইস ম্যাসাজ করুন। ২/৩ মিনিট ম্যাসাজ করতে থাকুন।
ফেইস ম্যাসাজের কী কী উপকার রয়েছে?
১) ব্লাড সার্কুলেশন ইমপ্রুভ হয়
২) স্কিন ইভেন টোন হয়
৩) জ লাইন শার্প হয়
৪) ডাবল চিন কমে যায়
২) ফেইস ছাড়া গলায়, হাতেও তেলটি ইউজ করতে পারেন। এতে এসব জায়গায় রিংকেলস সহজে ভিজিবল হবে না।
৩) মেকআপ রিমুভার হিসেবেও তেলটি ব্যবহার করতে পারবেন।
সম্পূর্ণ ন্যাচারাল পদ্ধতিতে তৈরি এই প্রোডাক্টটি আপনি পেয়ে যাবেন অর্গানিকাওন এ। এজন্য ভিজিট করতে পারেন অর্গানিকাওন এর ওয়েবসাইটটি। ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় অর্গানিক বিভিন্ন পণ্য এখন আপনার হাতের নাগালে।
Leave a comment