ফেসিয়াল ম্যাসাজঃ কী এবং কেন দরকার? 

ফেসিয়াল ম্যাসাজ হলো সৌন্দর্য চর্চার একটি কৌশল যা প্রাচীনকাল থেকেই চীন, গ্রীস, পারস্য, জাপান, মেক্সিকো, ফ্রান্স, সুইডেন এমন কি ভারতেও হয়ে আসছে। সেই সাথে আমাদের দেশেও সৌন্দর্যপ্রেমীরা ফেসিয়াল ম্যাসাজ করে থাকেন। তবে এই কনসেপ্টটি এখনো আমাদের দেশে বেশ নতুনই বলা চলে। এর রয়েছে নানারকম উপকারিতা। চলুন আজকে জেনে নিই ফেসিয়াল ম্যাসাজের সম্পর্কে দারুণ কিছু তথ্য।

 

ফেসিয়াল ম্যাসাজের উপকারিতা

 

সাধারণত আমরা বডি ম্যাসাজ করে থাকি তবে ফেসিয়াল ম্যাসাজ নিয়ে খুব একটা সচেতন নই।  স্কিনকেয়ারের পাশাপাশি ফেসিয়াল ম্যাসাজও কিন্তু আমাদের স্কিনে দারুণ সব বেনিফিটস দেয়।

 

ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়

ফেসিয়াল ম্যাসাজের সময় বিভিন্ন ধরনের যে স্ট্রোক ব্যবহার করা হয়, তা স্কিনের সেলগুলোকে স্টিমুলেট করে ফলে ত্বকের কোষগুলোতে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ বাড়ে। এই সার্কুলেশন বেড়ে যাওয়ার ফলে মুখের ফোলাভাব দূর হয় বিশেষত চোখের নিচের ফোলাভাব চলে যায়, স্কিনটোন ঠিক হয় এ জন্য উজ্জ্বল দেখা যায় এমনকি কালো দাগ, ফাইন লাইনস, রিংকেলস এসবও দূর হয়। ফেইস ম্যাসাজ স্কিন থেকে টক্সিন বের করে দেয় তাই স্কিন হয়ে ওঠে আরো সতেজ ও তারুণ্যোদীপ্ত।

 

রিলাক্সেসন ও স্ট্রেস রিলিফ

ফেসিয়াল ম্যাসাজে যে জেন্টেল প্রেসার ও রিদমিক ম্যাসজ করা হয় তা মাসলগুলোকে রিল্যাক্স করে এবং টেনশন দূর করে। ফলে পুরো বডিতেই একটি রিলাক্সেসন আসে, স্ট্রেস রিলিফ হয়। এতে রিংকেলস, ফাইন লাইনস কমে যায় ফলে চেহারায় আসে তারুণ্য।

 

লিম্ফ্যাটিক ড্রেইনেজ ক্লিয়ার করে

আমাদের শরীরে যত টক্সিক রেসিডিউ আছে তা শরীর থেকে বের করতে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম কাজ করে থাকে। ফেসিয়াল ম্যাসাজের স্পেশাল টেকনিকে রিপিটেটিভ মুভমেন্ট ও জেন্টেল প্রেসার লিম্ফেটিক মুভমেন্টকে স্টিমুলেট করে সহজ করে দেয়। ফলে লিম্ফ্যাটিক ড্রেইনেজ দ্রুত ক্লিয়ার হয় ও মুখে ফোলা ভাব, ইনফ্ল্যামেশন হয় না। তাছাড়া রেসিডিউ ক্লিয়ার হওয়ার কারণে স্কিনের টক্সিক পার্টিকেলসও বের হয়ে যায় তাই বিভিন্ন রকম ইনফেকশন, র‍্যাশ, ইচিং ইত্যাদি থেকে রক্ষা পায়।

 

ফাইন লাইনস ও রিংকেলস দূর করে

ফেসিয়াল ম্যাসাজ স্কিনে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে দিয়ে স্কিনে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়। এটি কোলাজেন উৎপাদন ও বাড়িয়ে তোলে ফলে ফাইন লাইনস ও রিংকেলস দূর হয়, নতুন সেলস গঠন হতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ফেসিয়াল ম্যাসাজ অ্যান্টি এজিং হিসেবে কাজ করে। 

 

সাইনাসের সমস্যা দূর করে

ফেসিয়াল ম্যাসাজ যে শুধু সৌন্দর্যের জন্য কাজ করে তা-ই নয় বরং বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর বেনিফিটসও দেয়। যেমন- ফেসিয়াল ম্যাসাজের হালকা প্রেসার ও মুভমেন্ট নাকের আশেপাশের নার্ভকে স্টিমুলেট করে থাকে। ফলে সাইনাসের জন্য যে অস্বস্তি হয়ে থাকে সেটি উপশম হয় এবং ভেতরে জমে থাকা ময়লা বের হয়ে আসতে সাহায্য করে। স্ট্রং সাইনাসের সমস্যা ট্রিট্মেন্ট না করলেও সিজনাল ও মাইল্ড সাইনাস প্রবলেম ফেসিয়াল ম্যাসাজ দূর করে থাকে।

 

মুখের ফোলা ভাব ও ডাবল চিন কমায়

অনেক সময় স্কিনে অতিরিক্ত মেদ জমে, ঠিকমতো রেসিডিউ ক্লিয়ার না হলে, রক্ত চলাচল ঠিক মতো না হলে গাল ফুলে যায় বা মোটা হয়ে যায়, হয় ডাবল চিন। নিয়মিত ফেসিয়াল ম্যাসাজ করলে এ সমস্যাগুলো দূর হয়ে যায়। এটি মেদ ভাঙতে এবং মাসল টাইট করতে সাহায্য করে ফলে মেদ ও অন্যান্য জিনিস স্কিনে জমতে পারে না। তাই ডাবল চিন ও ফোলা ভাব থেকে মুক্তি মেলে।

 

জ লাইন শার্প করে

বিভিন্ন মডেল বা বিশ্বসুন্দরীদের শার্প জ লাইন দেখে কি মাঝে মাঝে মনে হয় যে এরকম যদি আমাদেরও হতো? তবে নিয়মিত শুরু করুন ফেইস ম্যাসাজ। দেখা গেছে কিছু ফেইস ম্যাসাজ টেকনিক নিয়মিত করলে হেলদি স্কিনের পাশাপাশি জ লাইন শার্প হয়ে থাকে। প্রফেশনাল বিউটিশিয়ান ও মডেলরা তাই নিয়মিত ফেইস ম্যাসাজের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

 

স্কিনটোন উজ্জ্বল করে ও ক্ষত সারায়

নিয়মিত ম্যাসাজে ফেইসের ব্লাড ফ্লো, অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্কিনটোন উজ্জ্বল করে থাকে। এছাড়া ছোটখাটো দাগছোপ, কাটা বা ক্ষতও আস্তে আস্তে সেরে যেতে থাকে নিয়মিত ফেসিয়াল ম্যাসাজে। 

 

 

ফেসিয়াল অয়েল কোথায় পাব? 

 

ফেসিয়াল ম্যাসাজের কথা তো বললাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফেসিয়াল অয়েল কোথায় পাব? ফেইসের বিভিন্ন বেনিফিটস দেয়া ম্যাসেজের জন্য অয়েল পাবেন অর্গানিকাওনে। অর্গানিক ইনগ্রেডিয়েন্টস দিয়ে তৈরি কুমকুমাদি অয়েল ফেইস ম্যাসাজের জন্য খুব ভালো কাজ করে। 

কুমকুমাদি অয়েলের মেইন ইনগ্রেডিয়েন্ট স্যাফরন। আরও আছে চন্দন, লাল চন্দন, গোলাপের নির্যাস, হলুদ, পেঁপের নির্যাস, সিসেমী অয়েল, গোখুরা সহ নানারকম উপকারী ভেষজ উপাদান। ত্বকের কালো দাগ, হাইপার পিগমেন্টেশন, রোদে পোড়া দাগ এসব দূর করার পাশাপাশি স্কিনটোনকে লাইট করে স্যাফরন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক ধীরে ধীরে টান টান ভাব হারাতে থাকে। বাড়তে থাকে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস। কুমকুমাদি অয়েলে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা মূলত অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এগুলো অকাল বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও রিংকেলস দূর করে। এই অয়েলের মাঝে রয়েছে লিকোরিস যা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। ফলে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস দূর হয়। এছাড়া রেডিকেলস এর কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় তা প্রতিরোধ করে থাকে এই অয়েলটি। এই অয়েলের মাঝে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান স্কিনের সেল রিজেনারেট করতে সাহায্য করে, বয়সের দাগ কমায়। ফলে ত্বক থাকে মসৃণ ও তারুণ্যোদীপ্ত।

 

বেনিফিটস –

 

১) শাইন বাড়ায় ও ইনার বিউটি রিডিসকভার করে।

 

২) অ্যান্টি এজিং সাইনস, রিংকেলস ও ডার্ক স্পট কমায়।

 

৩) প্যাচিনেস কমায় এবং স্কিন স্মুথ করে।

 

৪) একনে প্রিভেন্ট করে।

 

৫) স্কিন ডিপলি ময়েশ্চারাইজ করে।

 

৬) হাইড্রেট করে এবং গর্জিয়াস গ্লো দেয়।

 

ব্যবহারবিধি 

 

জেন্টল ক্লিনজার দিয়ে ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে নিন। স্কিনের পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করার জন্য টোনার অ্যাপ্লাই করুন। কুমকুমাদি অয়েল কয়েক ফোঁটা হাতের তালুতে নিয়ে ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন। স্কিনে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন যেন ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হয়ে যায়। যদি দিনে স্কিনে অ্যাপ্লাই করতে চান, সেক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করার ৩০ মিনিট পর সানস্ক্রিন অবশ্যই দিতে হবে।

 

যারা স্কিনের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কনসার্ন এবং ফেইস ম্যাসাজ করতে চান তারা স্কিনকেয়ার রুটিনে জলদি জলদি এই অয়েলটি অ্যাড করে ফেলুন। 

 

Author