বেসিক স্কিনকেয়ার: প্রতিদিনে অল্প সময়েই ত্বকের যত্ন

নাজিয়া ভীষণ ব্যস্ত থাকে অফিস ও বাসার রুটিন নিয়ে। প্রতিদিনের টাইট শিডিউলে নিজের ত্বকের যত্নের জন্য সময় বের করা হয় না। একদিন হুট করেই আয়নার সামনে যেয়ে খেয়াল করে তার মুখের ত্বক কেমন যেন রুক্ষ হয়ে আছে। পিগমেন্টেশন, ডার্ক সার্কেল এমন কি কিছু ব্রণও দেখা দিয়েছে। বেশ মন খারাপ হয় নাজিয়ার। এখন তবে উপায় কী? 

উপায় খুবই সহজ। দিনে ও রাতে মাত্র অল্প কিছু সময় ব্যয় করে বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলা। এই অল্প সময়ের স্কিনকেয়ার রুটিন আপনার ত্বককে রাখবে প্রাণবন্ত। তবে চলুন আজকে জেনে নিই বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন সম্পর্কে।

বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিন শুনলেই অনেকে ভাবেন এটি বেশ জটিল। কিন্তু মোটেই তা নয়। বরং অল্প কিছু স্টেপ ফলো করে সহজেই প্রতিদিনের স্কিনকেয়ার করে ফেলতে পারবেন। নিয়ম করে সকালে ও রাতে স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করলে অল্পদিনেই দেখতে পারবেন আপনার ত্বক পরিষ্কার ও ঝকঝকে হয়ে উঠছে। বেসিক স্কিনকেয়ারের জন্য যা যা লাগবে:

১। ক্লিনজার

২। টোনার

৩। সিরাম

৪। ময়েশ্চারাইজার 

৫।সানস্ক্রিন

৬। ফেইস মাস্ক

৭। লিপ স্ক্রাব ও লিপ বাম

 

কীভাবে করবেন বেসিক স্কিনকেয়ার?

 

বেসিক স্কিনকেয়ারের কিছু নির্দিষ্ট স্টেপ আছে। চলুন জেনে নিই সেই স্টেপগুলো:

 

১। ক্লিনজিং:

স্কিনকেয়ারের প্রথম স্টেপ হলো ক্লিনজিং। হেলদি স্কিন পেতে শুরু থেকেই ডাবল ক্লিনজিং মেথড ফলো করুন। এজন্য শুরুতে একটি অয়েল বেইসড ক্লিনজার বা মাইসেলার ওয়াটার অথবা মেকআপ ক্লিনজিং অয়েল দিয়ে ফেইস ক্লিন করতে হবে। এরপর একটি ওয়াটার বেইজড ক্লিনজার বা ফোম অথবা জেল বেইজড ফেইসওয়াশ বা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সকালে ডাবল ক্লিনজিং না করলেও রাতে অবশ্যই করতে হবে৷ কারণ সারাদিনের ধুলোবালি, মেকআপ প্রোডাক্টস ইত্যাদি স্কিনের পোরস ক্লগ করে দিতে পারে। তাই ডাবল ক্লিনজিং অবশ্যই করা উচিত। এতে আরো যে যে সুবিধা পাবেন:

◑ স্কিনে জমে থাকা ধুলোবালি, মেকআপ, বিউটি ও অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টসের রেসিডিউ ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।

◑ স্কিনে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার হবে।

◑ পোরস ক্লগ হয়ে স্কিনে বাম্পস বা ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

আগেই বলেছি, ফেইস ক্লিন করার জন্য ক্লিনজার মাস্ট। তবে অনেকেই আছেন যারা কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি প্রোডাক্ট ইউজ করতে চান না। ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে তৈরি প্রোডাক্ট সেক্ষেত্রে তারা প্রিফার করেন। এমনই একটি প্রোডাক্ট হচ্ছে অরগানিকাওন এর Saffron Goat Milk Soap । এই সোপে আছে এক্সফোলিয়েটিং ইনগ্রেডিয়েন্ট যা স্কিন ক্লিন করতে হেল্প করে। প্রতিদিনের স্কিনকেয়ার রুটিনে আপনি এটি যুক্ত করতে পারেন। 

 

২। টোনিং:

ক্লিনজিং এর পর যেই স্টেপটি আসে সেটি হলো টোনিং। অনেকে কনফিউজড হয়ে যান টোনার কখন লাগাতে হবে। ক্লিনজিং এর পর পরই টোনার ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত আমাদের স্কিনের একটি স্বাভাবিক পিএইচ লেভেল থাকে। কিন্তু ক্লিনজিং এরপর পিএইচ লেভেল এর মাত্রা কমে যেতে পারে। টোনার সেটি ব্যালেন্স করে এবং স্কিনের ব্যারিয়ার ও টেক্সচার ঠিক করে। ফলে আমাদের স্কিন অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ভালোভাবে অ্যাবজর্ব করতে পারে। এছাড়াও টোনার ব্যবহারে যেসব বেনিফিটস পেতে পারেন:

◑ এটি স্কিনকে হাইড্রেট করে, ফলে স্কিন সফট হয়।

◑ স্কিনের পোরস টাইট রাখতে এবং ক্লিন করতে সাহায্য করে।

◑ স্কিনে সুদিং ফিল দেয়।

 

৩। অ্যাপ্লাইং সিরাম:

টোনারের পর যে প্রোডাক্টটি অ্যাপ্লাই করতে হবে তা হলো সিরাম। সিরাম স্কিনের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। এটি অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। সানবার্ন, ডার্ক সার্কেলস, হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করতে সহায়তা করে। সিরাম ত্বকের কোলাজেন বাড়াতেও সাহায্য করে। এছাড়াও সিরাম ব্যবহার করলে যে সব উপকার পাওয়া যায়:

◑ সিরাম স্কিনকে ব্রাইট করে।

◑ রিংকেলস দূর করে ত্বককে আরো বেশি হেলদি ও ইয়াংগার লুকিং করে তোলে। 

◑ সানবার্ন দূর করে।

◑ স্কিন হাইড্রেট করে এবং স্কিনের টেক্সচার ঠিক করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরানোর জন্য ভিটামিন সি সিরাম খুব ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে অরগানিকাওন ব্র্যান্ডের ভিটামিন সি হাইড্রোবুস্টিং গ্লোয়িং সিরামটি ইফেক্টিভ রেজাল্ট দিতে পারে। এই সিরাম স্কিনের গ্লো বাড়ায়, এজিং সাইনস রিডিউস করে, কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়, স্কিনকে রাখে সফট ও ময়েশ্চারাইজড, স্কিনকে দেয় ইয়াংগার লুক। সেই সাথে স্কিনকেয়ার রুটিনকে করে তোলে আরও ইফেক্টিভ। 

 

৪। ময়েশ্চারাইজিং:

সিরামের পর যেটি আসে তা হলো ময়েশ্চারাইজার। ময়েশ্চারাইজার মূলত ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। সাধারণত আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা কমে গেলে রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। রিংকেলস বেড়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার এ সকল জিনিস থেকে স্কিনকে প্রোটেক্ট করে। ত্বকের কোমলতা ধরে রাখতে, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে ময়েশ্চারাইজারের কোনো বিকল্প নেই। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে যে সকল সুবিধা হয়:

◑ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।

◑ এজিং সাইনস প্রিভেন্ট করে। 

◑ রুক্ষতা, শুষ্কতা রোধ করে ত্বকের টেক্সচার ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

◑ স্কিন হাইড্রেট করে এবং ত্বকের তৈলাক্ততা ঠিক রাখে।

নিয়মিত ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সম্পূর্ণ ন্যাচারাল ইনগ্রডিয়েন্ট দিয়ে তৈরি অরগানিকাওন পারফেক্ট এসেন্স- রোজহিপ ও ব্লুবেরী হাইড্রেটিং নাইট ক্রিম। এতে আছে রোজহিপ যা স্কিনকে পারফেক্টলি হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। তাই স্কিনকেয়ার রুটিনে রাতের বেলায় এই ক্রিমটি নিয়মিত ব্যবহার করে দারুণ ফলাফল পেতে পারেন। 

 

৫। অ্যাপ্লাইয়িং সানস্ক্রিন:

সাধারণত দিনে আমাদের ত্বকে সূর্যের আলো লাগে। সূর্যের ইউভি রশ্মি আমাদের ত্বকে অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে রিংকেলস বাড়ে, স্কিন ট্যানিং হয়, সানবার্নও দেখা দেয়। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে সকালের স্কিনকেয়ার রুটিনে একটি সানস্ক্রিন অবশ্যই রাখতে হবে। ত্বকের সুরক্ষার জন্য এস পি এফ ৩০+ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিন ব্যবহারের সুবিধা হলো:

◑ সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্নি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।

◑ সানবার্ন, রিংকলস, সানট্যান এসব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

◑ ইউভি রশ্নির ক্ষতিকর প্রভাবে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এটির ঝুঁকি কমে।

 

৬। ফেইস মাস্ক:

ফেইস মাস্ক ত্বকে একটি হেলদি লুকিং গ্লো আনে। এছাড়া ওভার অল ডিপ ক্লিনজিং করে, স্কিন ব্রাইট করে এবং হাইড্রেট করে। এছাড়া এটি ত্বককে একটি সুদিং ফিল দেয়। ফলে রিফ্রেশিং একটা ভাব আসে। ফেইস মাস্ক সকালে ব্যবহার না করতে পারলেও রাতে অবশ্যই একটি ফেইস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। রাতে আমাদের ত্বক রেস্টে থাকে তাই সেসময় ফেইস মাস্ক ব্যবহার করলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

 

৭। লিপ স্ক্রাব ও লিপ বাম:

আমাদের চেহারার একটি আকর্ষণীয় পার্ট হলো ঠোঁট। ঠোঁট যদি দেখতে সুন্দর না লাগে, শুষ্ক থাকে, কালো হয়ে থাকে তবে পুরো চেহারার গ্লো টাই যেন হারিয়ে যায়। তাছাড়া ঠোঁট ফেটে গেলে বেশ যন্ত্রণাও ভোগ করতে হয়। এইজন্য লিপ স্ক্রাব ও লিপ বাম অত্যন্ত কার্যকরী। লিপ স্ক্রাব মূলত ঠোঁটের উপরের মরা চামড়া তোলে এবং ঠোঁটের দাগ দূর করে। লিপ বাম ঠোঁটকে হাইড্রেট করে এবং ঠোঁটের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রেখে ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে, ঠোঁটকে সফট রাখে। দিনে ও রাতের যেকোনো সময় লিপ বাম দেয়া যায়। ঠোঁটের যত্নে দারুণ একটি প্রোডাক্ট হলো অরগানিকাওন এর লিপ স্ক্রাব ও লিপ বাম কম্বো। লিপ স্ক্রাব সপ্তাহে একদিন এবং লিপ বাম দিনের মাঝে কয়েকবার করে ব্যবহার করতে পারেন। 

 

৮। এক্সফোলিয়েটিং:

এক্সফোলিয়েটিং হলো ত্বকের ডেড সেলস দূর করার পদ্ধতি। সাধারণত প্রতি ৩০ দিনে আমাদের নতুন চামড়া তৈরী হয়। বেশিরভাগ সময় এটি ত্বকে বোঝা না গেলেও অনেক সময় পোরস ক্লগ করে দেয়, ত্বক ফ্লেকি হয়ে যায়। এ সমস্যার সমাধান পেতে সপ্তাহে অন্তত দুইবার মানানসই স্ক্রাব ব্যবহার করুন।

 

এগুলোই ছিলো প্রতিদিনের বেসিক স্কিনকেয়ারের স্টেপগুলো। এই স্কিনকেয়ার রুটিন একদমই সহজ এবং অল্প সময়েই হয়ে যায়। আর নিয়মিত এটি সঠিকভাবে ফলো করলে ইয়াংগার লুকিং হেলদি স্কিন পেতে আর কোনো ঝামেলাই থাকবে না।  

Author