মিলিয়াঃ ব্রণ বা হোয়াইটহেডস মনে হলেও আসলে তা নয়

রিয়া আয়নার সামনে বসে খেয়াল করে তার চোখের আশেপাশের স্কিনে বেশ কিছু ব্রণের মত উঠেছে। তবে সে ভালো করে খেয়াল করে দেখে এটি আসলে ব্রণ বা হোয়াইটহেডস নয়। ব্রণের মত সাদা ছোট ছোট বাম্পস গুলো নিয়ে রিয়া চিন্তিত হয়ে পড়ে।

 

আমরা সবাই ফ্ললেস, ফ্রেশ স্কিন চাই। কিন্তু মাঝে মাঝেই বিভিন্ন কারনে বা আমাদের লাইফ স্টাইল, কিছু অভ্যাস অথবা অন্যান্য় কারনে বিভিন্ন স্কিন প্রবলেম হয়ে থাকে। মিলিয়াও এর মাঝে একটি। মিলিয়াকে অনেকেই ব্রণ বা হোয়াইটহেডস ভেবে ভুল করে থাকেন। তবে চলুন আজকে মিলিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

 

মিলিয়া কি?

 

স্কিনে ছোট সাদাটে বা হলুদাভ বাম্পস মিলিয়া বা মিল্ক স্পট নামে পরিচিত। এগুলো সাধারনত চোখের চারপাশে বা ফেসের উপরের দিকে গুচ্ছ আকারে হয়ে থাকে। এগুলো একবচনে মিলিয়াম নামে পরিচিত। মিলিয়াম সিস্ট হলো স্কিনের আউটার লেয়ার স্টার্টাম করটেনিয়ামে আটকে যাওয়া কেরাটিন। এই লেয়ারটি লিপিড ও কেরাটিন দিয়ে তৈরী। মিলিয়াম এই লেয়ারেই হয়ে থাকে। কেরাটিন একটি শক্তিশালী প্রোটিন যা স্কিনের টিস্যু, নখের সেলস, এবং চুলে পাওয়া যায়। মিলিয়া যেকোন বয়সের যে কারো হতে পারে তবে নবজাতকদের মাঝে এটি বেশি হতে দেখা যায়। মিলিয়া কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এগুলো ছোঁয়াচে নয় কিংবা ক্ষতিকর নয়। স্কিনে কোন ইরিটেশন বা র‍্যাশ হয় না মিলিয়ার কারনে। 

 

মিলিয়া কেন হয়?

 

নবজাতকদের মাঝে মিলিয়া কেন হয় তার সঠিক কোন কারন এখনো জানা যায়নি। সাধারনত এটি একা একাই সেরে যায়। ধারণা করা হয় মায়ের হরমোন থেকে মিলিয়া হতে পারে। অনেকে এটিকে ছোটদের ব্রণ মনে করেন কিন্তু শিশুরা মিলিয়া নিয়েই জন্মাতে পারে। অপরদিকে ব্রণ শিশুর বয়স তিন বা চার সপ্তাহ না হলে সাধারণত উঠেনা। বড়দের মাঝে মিলিয়া হওয়ার জন্য কিছু কারন থাকতে পারেঃ

 

  • কোন কারনে স্কিন ড্যামেজ হলে মিলিয়া হতে পারে।

 

  • ইউভি রশ্মি, সানট্যান ইত্যাদি নানা কারনে স্কিন বার্ন হলে মিলিয়া হতে পারে।

 

  • দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা হলে মিলিয়া হতে পারে।

 

  • কোন কারনে ত্বকের স্বাভাবিক এক্সফোলিয়েশন ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে মিলিয়া হতে পারে।

 

  • বয়স বাড়ার কারনে হতে পারে। 

 

  • খুব বেশি অক্লুসিভ জাতীয় প্রোডাক্ট ইউজ করলে মিলিয়া দেখা দিতে পারে। 

 

  • জেনেটিক্যাল কারনে হতে পারে।

 

মিলিয়া কত প্রকার?

 

মিলিয়ার ধরন অনুযায়ী একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

 

নিওন্যাটাল মিলিয়া

 

এটিকেই মূলত মিল্ক স্পটস বলা হয়। এটি সাধারনত নবজাতকদের হয়ে  গালে, নাকে হয়ে থাকে। ধারনা করা হয় নবজাতকদের ঘামগ্রন্থি ঠিকমতো বিকশিত হয় না বলে এ ধরনের মিলিয়া হয়ে থাকতে পারে।

 

প্রাইমারী মিলিয়া

 

এটি শিশু অথবা প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে দেখা দিতে পারে। কোন চিকিৎসা ছাড়াই এগুলো মিলিয়ে যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে এটি বেশ অনেকদিন স্থায়ী হতে পারে আবার পারমানেন্ট ও হতে পারে। 

 

সেকোন্ডারী মিলিয়া

এ ধরনের মিলিয়া স্কিনের কোন ইনজুরি বা ট্রমার পর হয়ে থাকে। ধারনা করা হয় কোন আঘাত বা ট্রমার কারনে স্কিনের ঘামগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মিলিয়া তৈরী হতে পারে। আবার অনেক সময় কিছু ক্রিম ব্যবহারের পরও হতে পারে। 

 

মিলিয়া এন প্লেক

 

এই ধরনের মিলিয়া সহজে দেখা যায় না, অর্থ্যাৎ খুবই রেয়ার সিচুয়েশনে এ ধরনের মিলিয়া দেখা যায়। এটি সাধারনত চোখের পাতা, কানের লতি, গাল এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে একসাথে অনেকগুলো মিলিয়া উঠে প্লেকের মত অবস্থা হয়। অনেক সময় এটি স্কিন টিউমারে রুপ নেয়।

 

মাল্টিপল ইরাপটিভ মিলিয়া

 

এটিও মিলিয়ার একটি রেয়ার সিচুয়েশন যেখানে একসাথে অনেকগুলো মিলিয়া হয়ে থাকে। সাধারনত মিলিয়া হলে চুলকায় না তবে এক্ষেত্রে সাধারনত চুলকায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।

 

মিলিয়া ও ব্রণ বা হোয়াইটহেডস এর মাঝে পার্থক্য কী?

 

মিলিয়াকে যে আমরা প্রায়ই ব্রণ বা হোয়াইটহেডস ভেবে ভুল করি তা আগেই বলেছি। তাহলে চেনার উপায় কী? উপায় অবশ্যই আছে। লক্ষ্য করলেই ব্রণ ও মিলিয়ার মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারা যায়।

 

  • ব্রণ বা হোয়াইটহেডস পপ করলে ভেতর থেকে গোটা জাতীয় কিছু বের হয়, কিন্তু মিলিয়া হলে এ ধরনের কোন কিছু বের হয় না।

 

  • হোয়াইটহেডস একরকম একনে, কমেডোন টাইপ। কিন্তু মিলিয়া কমেডোন না, এটি কিছুটা বাম্পি, সিস্ট টাইপের। 

 

  • একনের ক্ষেত্রে কিছুটা ইরিটেশন, ইচিনেস হয়। কিন্তু সাধারন মিলিয়ার ক্ষেত্রে সাধারনত ইরিটেশন বা ইচিনেস হয় না।

 

মিলিয়া হলে কী করবো?

 

সাধারনত মিলিয়া হলে একা একাই সেরে যায়। যেহেতু এটি ছোঁয়াচে নয়, ইরিটেশন বা ইচিং হয় না তাই খুব একটা ক্ষতিকরও নয়। কিন্তু এটির কারনে স্কিনের ফ্রেশনেস নষ্ট হয়। ঠিকমতো যত্ন না নিলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তাই মিলিয়া হলে কী করলে মুক্তি মিলতে পারে তা জানা যাক।

 

  • মিলিয়া হলে কখনোই চাপ দেয়া অথবা পপ করা যাবেনা। মিলিয়া পপ করলে এর ভেতর থেকে কিছু বের হবেনা। কিন্তু এভাবে চাপ দিলে বরং স্কিনের ক্ষতি হবে আরো বেশি, তৈরী হতে পারে ক্ষত অথবা স্পটস। আবার মিলিয়াও পার্মানেন্ট রুপ নিতে পারে। 

 

  • সানস্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারন দীর্ঘদিন সানবার্ন বা সানট্যান  এসবের কারনেও মিলিয়া হতে পারে। 

 

  • অক্লুসিভ জাতীয় প্রোডাক্টস যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল, সিলিকন, ওয়্যাক্স ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। কারন অনেক বেশি অক্লুসিভ জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার মিলিয়া হওয়ার চান্স বাড়িয়ে দেয়।

 

  • এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করুন। ঠিকমতো এক্সফোলিয়েট না করলে স্কিনে ময়লা ও অন্যান্য জিনিস জমে মিলিয়া সহ নানা কিছু হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। 

 

  • মিলিয়া বাড়তে থাকলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন।

 

মিলিয়া সাধারনত খুব একটা ক্ষতি করে না। তবে মিলিয়া যদি সিভিয়ার পর্যায়ে যায় তাহলে বেশ কিছু ট্রিটমেন্ট বর্তমানে করা হয়ে থাকে। এছাড়া মিলিয়া বেশিরভাগ সময় একাই কিওর হয়ে যায়। তাই মিলিয়া দেখা দিলে ধৈর্য্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে এবং কিছু নিয়ম কানুন মানলেই এটি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

Author