কন্ডিশনার ব্যবহারে ভুল করছেন না তো?

একরাশ ঝলমলে চুল কে না চায় বলুন? ছেলে হোক বা মেয়ে, চুল ঝলমলে থাকবে, দেখতে ভালো লাগবে, চুলে যে কোনো হেয়ার স্টাইল করা যাবে, এমন ভাবনা সবারই থাকে। কিন্তু সঠিকভাবে চুলের যত্ন না নেয়ার কারণে এসব চিন্তায় ছেদ ঘটে তাড়াতাড়ি। চুলে নানা ধরনের হেয়ারপ্যাক লাগাচ্ছেন, শ্যাম্পু করছেন, কন্ডিশনও করছেন, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। হতে পারে আপনি হয়ত চুলের জন্য সঠিক কন্ডিশনার চুজ করেননি অথবা ভুলভাবে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করছেন। চলুন এই বিষয়গুলো আজ বিস্তারিত জানা যাক। 

 

কন্ডিশনার কী?

স্কিন সফট ও ময়েশ্চারাইজড রাখার জন্য আমরা যেমন বিভিন্ন প্রোডাক্ট ইউজ করি, তেমনই চুল সফট, ময়েশ্চারাইজড ও প্রোটেক্টেড রাখার জন্য কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়। সাধারণত শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করা হয়। অর্থাৎ এটি হেয়ার ওয়াশিং এর সেকেন্ড পার্ট। শ্যাম্পুর কাজ হচ্ছে স্ক্যাল্পে জমে থাকা ঘাম, ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করা এবং কন্ডিশনার চুলকে করে সফট ও ম্যানেজেবল। এটি হেয়ার শ্যাফটকে ড্যামেজের হাত থেকেও রক্ষা করে।

বেশিরভাগ শ্যাম্পুতেই কেমিক্যাল ইউজ করা হয় যেগুলো হেয়ার ফলিকলের জন্য বেশ রাফ হয়। এতে ওয়াশ করার পর চুল হয়ে ওঠে ড্রাই, ডাল এমনকি হেয়ার স্টাইলও সহজে করা যায় না। কন্ডিশনারে আছে ফ্যাটি অ্যালকোহল, হিউম্যাকটেন্ট ও অয়েল যা হেয়ার সফট ফ্লেক্সিবল করে তুলবে। কিছু কন্ডিশনারে প্রোটিন আছে যেগুলো স্প্লিট এন্ড কমায়, আবার কিছুতে আছে থিকনিং এজেন্ট যা হেয়ারে দেয় ফুলার ফিল। যখন কন্ডিশনার সিলেক্ট করা হবে, তখন চুলের ধরন, ফর্মুলেশনের বেনিফিটস ও সাইড ইফেক্ট ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।

 

কীভাবে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করবেন?

কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করার সময় কয়েকটি নিয়ম ফলো করতে হবে। যেমন-

১) ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন শ্যাম্পু যেন চুলে লেগে না থাকে।

২) বোতলের রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী কন্ডিশনার নিয়ে নিন।

৩) চুলের নিচের অংশে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। চুল বেশি লম্বা হলে মাঝ থেকে নিচ পর্যন্ত অ্যাপ্লাই করতে হবে। স্ক্যাল্পে কখনো কন্ডিশনার আপ্লাই করবেন না।

৪) আঙুল বা প্রশস্ত দাঁতের চিরুনি দিয়ে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করা চুলটুকু আঁচড়ে নিন।

৫) ২/৩ মিনিট অপেক্ষা করুন।

৬) এবার পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

 

কন্ডিশনার অ্যাপ্লাইয়ে ভুল

শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের বোতল যদি সেইম সাইজেরও হয়, তবু কিন্তু দুইটা একই পরিমাণে ইউজ করা যাবে না। কন্ডিশনিং এ অনেকেই কিছু ভুল করেন, যেগুলোর কারণে চুল সফটও হয় না, আবার ম্যানেজেবলও থাকে না। চলুন এমন কয়েকটি ভুল সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

 

১) আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত অ্যাপ্লাই করা

অনেকেই ভাবেন, কন্ডিশনার যদি আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত দেয়া হয়, তাহলে পুরো চুলই সফট থাকবে। আসলে তা নয়। আমাদের স্ক্যাল্পে এমনিতেই ন্যাচারাল অয়েল থাকে, যার কারণে ওই এরিয়ার চুল ময়েশ্চারাইজড থাকে। আরও কন্ডিশনার দিলে সেখানে বেশি গ্রিজিভাব চলে আসবে যা চুলের জন্য মোটেও ভালো নয়। নিয়ম হচ্ছে চুলের মাঝ বরাবর থেকে নিচ পর্যন্ত অ্যাপ্লাই করা।

 

২) পর্যাপ্ত সময় পর্যন্ত না রাখা বা বেশি সময় রাখা

কন্ডিশনার অ্যাপ্লাইয়ের সাথে সাথেই যদি ধুয়ে ফেলেন বা অনেকটা সময় চুলে লাগিয়ে অপেক্ষা করেন, কোনোটাই চুলের জন্য ভালো নয়। সাধারণত বোতলের গায়ে দেয়া থাকে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়টা সাধারণত ২-৫ মিনিটের ভেতরই হয়ে থাকে। চুলের জট ছাড়ানোর জন্য এর চেয়ে বেশি সময় কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করে রাখার প্রয়োজন নেই।

 

৩) অনেক বেশি বা একদম কম অ্যাপ্লাই করা

কন্ডিশনার সাধারণত অল্প পরিমাণেই ব্যবহার করতে হয়। বেশি পরিমাণে ইউজ করলে চুল একদম হালকা মনে হবে। চুলের সাইজ ও লেন্থের উপর ডিপেন্ড করে পরিমাণমত কন্ডিশনার নিয়ে নিন। যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে প্রোডাক্টের লেবেল চেক করে নিন।

 

৪) নিয়মিত কন্ডিশনিং না করা

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ডার্মাটোলজি এর মতে, প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনিং অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু অন্যান্য সময়? এই প্রতিষ্ঠানের মতে, আপনার হেয়ার টাইপ ও অয়েলিনেসের উপর নির্ভর করে, আপনি সপ্তাহে ২/৩ বার শ্যাম্পু করতে পারেন। তবে এই সময়ের মধ্যে হতেই পারে যে আপনার চুলের ময়েশ্চার কমে গেলো। তখন? তখন আপনি হারানো ময়েশ্চার ফেরানোর জন্য কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনার চুল বেশি ড্রাই হয়, তাহলে ১ দিন পরপর কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করুন বা হেয়ার কেয়ার রুটিনে লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেরই শাওয়ার নেয়ার সময় থাকে না কিন্তু চুলকে সফট ও স্টাইলিশ রাখা জরুরি হয়ে পড়ে। তারাও এই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।

 

৫) ভুল কন্ডিশনার ব্যবহার করা

আপনার হেয়ার টাইপের সাথে কন্ডিশনারের মিল থাকা আবশ্যক। থিন ও ফ্ল্যাট হেয়ারের জন্য কন্ডিশনারে যেসব ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করা হয়, ড্রাই ও ড্যামেজ হেয়ারের জন্য ইনগ্রেডিয়েন্ট আলাদা হয়। যদি আপনি শিওর না হতে পারেন যে, কোন কন্ডিশনার আপনার ইউজ করতে হবে, তাহলে একজন হেয়ার স্টাইলিস্টের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।

 

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য শ্যাম্পু সিলেক্ট করার পাশাপাশি কন্ডিশনার সিলেক্ট করাও জরুরি। নইলে মনের মতো চুল পাওয়া একদমই সম্ভব নয়। তাই এই কন্ডিশনিং মিসটেকগুলো যেন না হয় সেদিকে যেমন খেয়াল রাখবেন, তেমনই কন্ডিশনিং স্টেপগুলোও ভালোভাবে ফলো করবেন।