স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস সালফেট ফ্রি হওয়া কেন জরুরী? আপনার শ্যাম্পুতে সালফেট নেই তো? 

আপনার প্রিয় স্কিন কেয়ার পণ্যের নীরব শত্রু সালফার, সময় এসেছে সচেতন হবার। আপনার শ্যাম্পু , ফেসওয়াশে সালফেট আছে এটা কি আপনি জানেন? প্রতিদিন ব্যবহার করছেন নিশ্চিন্তে? সাবধান হোন কারণ এই নিরীহ মনে হওয়া উপাদানটি আপনার ত্বক ও চুলের গভীরে পৌঁছে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে চলেছে।

 

আজকের লেখায় আমরা জানব সালফেট আসলে কী, কেন এটি ক্ষতিকর? এবং কেনো আপনাকে সালফেট মুক্ত স্কিন কেয়ার বেছে নিতে হবে।

সালফেট কী?

সালফেট হলো একধরনের রাসায়নিক ক্লিনজিং উপাদান, যেটি তেল ও ময়লা দূর করতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত সারফ্যাকট্যান্ট হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ এমন একটি যৌগ যা জল ও তেলের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং ধোয়ার সময় ময়লা তুলে ফেলতে সাহায্য করে।

 

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সালফেটগুলো হলো:

 

Sodium Lauryl Sulfate (SLS)

Sodium Laureth Sulfate (SLES)

 

এই উপাদানগুলো মূলত ত্বকে ফেনা তৈরি করে পরিষ্কার করার অনুভূতি দেয়। শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, বডিওয়াশ, এমনকি কিছু টুথপেস্টেও এগুলোর ব্যবহার দেখা যায়।

সালফেটের ক্ষতিকর প্রভাব

 

১. ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর নষ্ট হয়

আমাদের ত্বকে একটি প্রাকৃতিক প্রটেকশন ব্যারিয়ার থাকে এটি ময়েশ্চার ধরে রাখে এবং বাইরের ক্ষতিকর জীবাণু বা কেমিক্যালের আক্রমণ থেকে বাঁচায়। সালফেট সেই সুরক্ষা স্তর সরিয়ে দেয়, ফলে ত্বক হয়ে পড়ে:

  • শুষ্ক
  • জ্বালাপোড়া যুক্ত
  • সংবেদনশীল

 

২. অতিরিক্ত শুষ্কতা ও র‍্যাশের প্রবণতা বাড়ে

নিয়মিত সালফেটযুক্ত ফেসওয়াশ বা শ্যাম্পু ব্যবহারে ত্বক নিজস্ব তেল হারিয়ে ফেলে, যার ফলে:

  • ত্বকে র‍্যাশ ও চুলকানি হয়
  • হাইড্রেশন নষ্ট হয়ে যায়
  • স্কিন পিলিং (ছাল ওঠা) শুরু হয়

 

৩. অ্যাকনে ও ব্রণের সমস্যা বাড়ে

ত্বকের ময়েশ্চার হারালে শরীর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন শুরু করে। এর ফলে পোরস বন্ধ হয়ে যায় এবং তৈলাক্ততা বাড়ে, যা ব্রণ সৃষ্টি করে।

 

৪. চুল পড়া ও চুলের গঠন নষ্ট করে

শ্যাম্পুতে থাকা সালফেট স্ক্যাল্প থেকে প্রাকৃতিক তেল তুলে ফেলে। ফলে

 

  • চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়
  • স্ক্যাল্প চুলকায় ও শুষ্ক হয়
  • ড্যানড্রাফ তৈরি হয়
  • চুল পড়া বাড়ে

 

৫. কালার ট্রিটেড ও কেমিক্যাল ট্রিটেড চুলের ক্ষতি করে

যারা চুলে রং বা হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়েছেন, তাদের জন্য সালফেট একটি বিপজ্জনক উপাদান। এটি

 

  • হেয়ার কালার দ্রুত ফিকে করে
  • ট্রিটমেন্টের ফলাফল নষ্ট করে
  • কোটিকল দুর্বল করে দেয়

 

বৈজ্ঞানিকভাবে সালফেট ক্ষতিকর বলছে গবেষণা

International Journal of Toxicology অনুসারে, SLS এবং SLES ত্বকের জন্য অন্যতম ইরিটেটিং উপাদান।

Harvard School of Public Health জানায়, দীর্ঘ সময় ব্যবহারে সালফেট ত্বকের ইমিউন রেসপন্সে প্রভাব ফেলতে পারে।

American Academy of Dermatology বলেছে, সালফেট দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স নষ্ট করে দেয়।

 

সালফেট নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা

 

সালফেট না থাকলে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার হবে না

ভুল! বর্তমানে বাজারে এমন অনেক জেন্টল ও প্রাকৃতিক উপাদান আছে যেগুলো একইভাবে পরিষ্কার করে কিন্তু ত্বক ক্ষতি করে না।

 

সবাই তো ব্যবহার করছে, তাহলে ক্ষতিকর কীভাবে?

ত্বক এবং স্ক্যাল্প প্রতিটি মানুষের আলাদা। অনেকে ক্ষতি টের পান না, আবার কেউ মাত্র এক সপ্তাহেই সাইড ইফেক্ট পান।

 

ফেনা না হলে মনে হয় পরিষ্কার হচ্ছে না

এটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। সালফেট মুক্ত প্রোডাক্ট কম ফেনা তৈরি করলেও অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ।

সালফেট ফ্রি প্রোডাক্টের উপকারিতা

 

 ১. ত্বকের প্রাকৃতিক তেল রক্ষা করে

ত্বকের ময়েশ্চার এবং প্রাকৃতিক তেল অক্ষুণ্ন থাকে, ফলে স্কিন থাকে হাইড্রেটেড ও প্রাণবন্ত।

 

 ২. চুলে প্রাকৃতিক কোমলতা আসে

 

সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল হয়:

 

* সফট ও ঝরঝরে 

* চুল কম পড়ে

*এবং খুব সহজে ম্যানেজেবল

 

৩. ত্বকে জ্বালাপোড়া কমে

যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তাদের জন্য সালফেট ফ্রি ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার হলো পারফেক্ট সমাধান।

 

৪. শিশুদের জন্য নিরাপদ

শিশুর স্কিন খুবই নরম ও সংবেদনশীল, তাই তাদের জন্য সালফেট মুক্ত বেবি প্রোডাক্ট বেছে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

 

সালফেট ফ্রি প্রোডাক্ট কীভাবে চিনবেন?

 

প্রোডাক্টের গায়ে নিচের যেকোনো শব্দ থাকলে বুঝবেন তাতে সালফেট নেই:

 

১ “SLS/SLES Free”

২ “Sulphate Free”

৩ “Gentle Cleanser”

৪ “Non-foaming”

৫ “For Sensitive Skin”

 

এছাড়াও ইনগ্রেডিয়েন্টস লিস্টে যদি নিচের উপাদান থাকে, তাহলে সেটি নিরাপদ

 

১ Cocamidopropyl Betaine (কোকোনাট থেকে তৈরি)

২ Decyl Glucoside

৩ Sodium Cocoyl Isethionate

৪ Lauryl Glucoside

 

কোন কোন প্রোডাক্টে সালফেট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়?

 

১ শ্যাম্পু

২ ফেসওয়াশ

৩ বডি ওয়াশ

৪ টুথপেস্ট

৫ হ্যান্ড সোপ

৬ ক্লিনজিং স্ক্রাব

 

আপনার প্রতিদিনের ব্যবহৃত এসব প্রোডাক্ট ভালো করে দেখে নিন, প্রয়োজনে বদলে ফেলুন।

 

সালফেট যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে?

 

  • একজিমার মতো ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়
  • ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায় (প্রিম্যাচিওর এজিং)
  • স্থায়ী চুল পড়া ও হেয়ার থিনিং দেখা দেয়
  • রং করা চুলে রঙ এক সপ্তাহেই উঠে যায়
  • বারবার ত্বকে ব্রণ ও র‍্যাশ হয়

 

এছাড়া কিছু গবেষণায় সালফেটকে সম্ভাব্য এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার বলা হয়েছে অর্থাৎ এটি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

 

সালফেট ব্যবহারের পেছনে ব্যবসায়িক কৌশল

সালফেটের ব্যবহার স্কিন কেয়ারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার একটি বড় কারণ হলো এর সস্তা উৎপাদন খরচ এবং দ্রুত পরিষ্কারের ক্ষমতা। অনেক ব্র্যান্ড এই উপাদানকে ব্যবহার করে প্রোডাক্টের কার্যকারিতা যেন বেশি বলে মনে হয়, কারণ ফেনা মানেই অধিক কার্যকারিতা  এই ভুল ধারণায় বিশ্বাস করে অনেক মানুষ। কিন্তু এই কম খরচের কেমিক্যাল আপনাকে দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ত্বক ও চুলের ক্ষতি। 

 

সঠিক সময়ে বদলান আপনার স্কিন কেয়ার রুটিন

নিজেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সচেতনতা। তাই আজই আপনার ব্যবহার করা প্রোডাক্টগুলো যাচাই করুন এবং সালফেটযুক্ত প্রোডাক্ট বাদ দিয়ে দিন। বেছে নিন এমন কিছু ব্র্যান্ড যারা ন্যাচারাল, স্কিন-ফ্রেন্ডলি ও হারশ কেমিক্যাল মুক্ত প্রোডাক্ট বিক্রি করে।ত্বকের যত্ন মানেই শুধু ভালো ক্রিম ব্যবহার নয়, বরং সেটি কোন উপাদান দিয়ে তৈরি তা জানা আরও গুরুত্বপূর্ণ। সালফেট শুনতে নিরীহ মনে হলেও এটি ত্বক ও চুলের পেছনে কাজ করা এক নিঃশব্দ শত্রু।

 

অবশ্যই করণীয়

আপনার শ্যাম্পুতে এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে সালফেট আছে কি না, তা আজই চেক করুন। পরিবর্তন আনুন এখনই, নইলে পরবর্তীতে আরো বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে । ত্বকের নিরাপদ যত্নে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী। তাই প্রোডাক্ট কেনার আগে ভালোভাবে প্রোডাক্ট চেক করে নিন ,লেবেল পড়ুন , এবং অবশ্যই পণ্যটি সালফেট ফ্রি কিনা তা নিশ্চিত হন । আপনার সচেতনতায় আপনাকে দিতে পারেএকটি সুস্থ ও সুন্দর ত্বক ।  

Author