ব্রণ (একনি) সমস্যা সমাধানে দূর্দান্ত পাঁচটি এসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যাবহার জানতেন কি?

ব্রণ ! একটা আতঙ্কের নাম।ত্বকের যত্নে আমরা কতো কিছুই না করি।কিন্তু ব্রণ থাকলে আমাদেরকে সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্রণের (একনি) চিকিৎসায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হবার আগে আমরা ঘরোয়া ভাবে অনেক কিছু ট্রাই করতে পারি।সেগুলোর পাশাপাশি কিছু এসেন্সিয়াল অয়েল রয়েছে যা আমাদের ব্রণ নিরাময়ে অনেক সাহায্য করবে।

হয়তো আমরা ভালো করে জানিনা দেখে অয়েলগুলোর যথাযথ ব্যাবহার করে উঠতে পারছি না।

চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ব্রণের চিকিৎসায় দূর্দান্ত কার্যকরী পাঁচটি এসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যাবহার সম্পর্কে।

 

টি ট্রি এসেন্সিয়াল অয়েল

 

ব্রণ বা একনি প্রবলেমে টি ট্রি এসেন্সিয়াল অয়েলটিকে রকস্টার বলা যায়।

নন কমেডোজেনিক এই অয়েলটি ব্রণের (একনি) শত্রু ও বলা হয়।উচ্চ মাত্রার এন্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিইনফ্ল্যামেটরী এবং এন্টিসেপটিক গুণাবলি থাকার কারণে এটা ব্রণের বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে।

 

ব্রণ (একনি) প্রবলেমে অন্য সমাধানের সাথে মেইন যে যে সমাধান গুলো দেবে তা হলো:

.পিম্পল কমিয়ে আনবে।
.পোরস এর মুখ /গর্ত গুলোকে চারপাশ থেকে ছোট করে আনবে।
.হাত,নখ এগুলোর কারণে ব্রণ বা একনির জায়গায় যে দাগ/স্কারস পড়েছে এবং উঠছেই না সেগুলোর ওপর এই টি ট্রি অয়েল দূর্দান্ত কাজ করে।
.ব্রন বা একনিতে হওয়া ব্যথার প্রকোপ কমাবে।

 

কিভাবে ব্যবহার করবেন টি ট্রি অয়েল

 

যেকোন কিছুর ই সঠিক ব্যবহারে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ উপযোগিতা।ব্রণ বা একনি প্রবলেমে টি ট্রি অয়েলটি বিভিন্নভাবেই ব্যাবহার করা যায়।

চলুন জেনে নেই সেগুলো সম্পর্কে:

 

ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে:

যেকোন ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যাবহার করতে পারেন।সেটা হতে পারে কোকোনাট বা অলিভ অয়েল।

নোট: এটার জন্য পারফেক্ট পরিমাপ হলো ১২ ফোটা ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে ২ ফোটা টি ট্রি অয়েল মিক্সিং হবে।এটা ছোট্ট বোতলে করে আলাদা করে রাখলে ভালো।

 

গোলাপ জলের সাথে:

হাফ কাপ রোজ ওয়াটারের সাথে ১০ ড্রপ টি ট্রি এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে মিশ্রণটিকে সংরক্ষণ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে কটন বলে ভিজিয়ে ব্রণ বা একনির জায়গায় লাগিয়ে রেখে ঘুমান।

সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধূয়ে ফেলুন।

 

এলোভেরার সাথে:

ব্রণ হলে ত্বকে অনেক সময় ক্ষত হয়ে যায়।

সেজন্য এক চামচ এলোভেরা জেলের সাথে ২ ফোটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ছোট পেইন্টিং ব্রাশের সাহায্যে ব্রণ বা একনিট ওপর লাগান।১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধূলে ফেলুন।এরপর বরফ পাতলা সুতি কাপড়ে পেচিয়ে পুরো মুখে আলতো করে ম্যাসাজিং করে নিন।

 

প্রোপোলিস এর সাথে:

আমরা অনেকেই জানি না যে প্রপোলিস কি।এটা হলো মধূর চাকে যে মোম গুলো থাকে সেটাকেই বোঝায়।

যদিও জিনিসটা জোগাড় করা কিছুটা কস্টসাধ্য বলা যায়।কিন্তু ব্রণ (একনি) সমস্যার সাথে যখন ত্বক অতিরিক্ত পরিমাণে দাগছোপ যুক্ত হয়ে পড়েছে তখন এটার সাথে টি ট্রি অয়েল মিক্সিং টা  হতে পারে বেস্ট একটা সমাধান।

অল্প পরিমান প্রপোলিস এর সাথে দুই ফোটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে আক্রান্ত পিম্পল গুলোতে লাগান।১০ মিনিট মতো রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধূয়ে ফেলুন।

ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল

 

ব্রণ (একনি) প্রবলেমে আরেকটি চমৎকার এসেন্সিয়াল অয়েল হলো এই ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল

এটা হলো এন্টিব্যাকটেরিয়াল,এন্টিসেপটিক,এন্টিফাঙ্গাল,এন্টিকোলিনেরেস্টেস ন্যাচারের । তাই এটি ব্রণ (একনি) সমস্যায় ভালো ফলাফল দেয়।এটি নন কমেডোজেনিক হওয়ায় পোরস বন্ধ করবে না।

 

ল্যাভেন্ডার অয়েল ব্রণ (একনি) সমস্যায় কি কি ফলাফল দেবে

.এটা ব্রণ বা একনি ত্বকের জ্বালাপোড়া কমিয়ে আনে।
২. ব্রণ(একনি) বেশি হলে চেহারায় যে বিবর্ণতা ও কালচে ভাব আসে সেটা দূর করে।
৩.ব্রণ (একনি) অনেকদিন থেকে ত্বকে যে জেদি দাগ তৈরী করে সেগুলো দূর করতে ল্যাভেন্ডার অয়েল মারাত্নক কার্যকরী।

ল্যাভেন্ডার অয়েল যেভাবে ব্যাবহার করতে হবে ব্রন (একনি) সমস্যায়:

১.কোকোনাট বা অলিভ অয়েলের সাথে সামান্য পরিমাণে মিশিয়ে ত্বকে ব্যাবহার করা যাবে।
.হলুদ গুড়ো,লেবুর রস ও আদার রসের সাথে দুই ফোটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে পিঙ্পল এর ওপর লাগিয়ে রাখুন।

১০-১৫ মিনিট বাদে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 

সিনামন (দারুচিনি)এসেন্সিয়াল অয়েল

 

ব্রণ (একনি) ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারাত্নক আকার ধারণ করে ফেলে।সেজন্য সিনামন এসেন্সিয়াল অয়েলটি একটি পারফেক্ট চুজ। এটি পোরস এর মুখ বন্ধ করবে না।

 

এটি ব্রণ বা একনি সমস্যায় মূলত যা করবে তা হলো

 

.ব্রণ বা একনির কারণে ত্বক বয়স্ক দেখায়।সিনামন অয়েল সেই ভাইবস টা কমিয়ে আনে।
.ব্রন বা একনি বেশি পরিমানে হয়ে সেটা অনেক সময় চুলকায় এবং পেইন হয়।সিনামন এই জায়গাটাতে হিলিং করে।
৩.ব্রণ বা একনির কারণে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়।এটি রুক্ষতা দূর করতে হেল্প করে।

 

ব্রণ বা একনি সমস্যায় যেভাবে ব্যবহার করা যাবে সিনামন এসেন্সিয়াল অয়েল:

১.কোকোনাট বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগিয়ে সকালে পাতলা পরিস্কার কটন কাপড় দিয়ে মুখ ভালোভাবে ডলে ডলে ধুয়ে ফেলুন।

২.ব্রণ বা একনি পোরস এর জায়গাগুলোতে আলুর রসের সাথে এক চিমটি শঙ্খ গুড়ো মিশিয়ে তাতে তিন ফোঁটা সিনামন এসেন্সিয়াল অয়েল মিক্স করুন।

আক্রান্ত জায়গাতে এট কটন বাডের সাহায্যে লাগিয়ে রাখুন ৭/৮ মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন।এই মিশ্রণের সাথে লেবুর রস ও লাগাতে পারেন।

 

নোট:সিনামন অয়েল কিছুটা গরম প্রকৃতির অয়েল।খুব বেশি সেন্সিটিভ স্কিন হলে এটা ব্যবহার করতে হবে প্যাচ টেস্ট করে নিয়ে।চোখের নিচে এটা লাগানোই যাবে না।

 

হেম্পসীড এসেন্সিয়াল অয়েল

 

নন কমেডোনিক এই অয়েলটি আরেকটি পারফেক্ট অপশন ব্রণ বা একনি সমস্যাতে।এটি এন্টিব্যকটেরিয়াল,এন্টিমাইক্রোবায়াল এবং এন্টিসেপটিক ন্যাচারের।

 

চলুন জেনে নেই যে হেম্পসীড অয়েল ব্রণ বা একনি যুক্ত ত্বকে কি কি হেল্প করবে:

.এটি ত্বকের ব্লাড সেলের কার্যকারীতা বাড়িয়ে তোলে এবং এতে করে কোষগুলো ব্রণ প্রতিরোধী হয়।
২.এটা ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে,ত্বক টানটান রাখে।এতে করে ব্রণ বা একনি যুক্ত ত্বক ঢিলেঢালা হয়ে যায়না এবং ত্বকে বয়স্ক ভাব আসে না।
৩.এটা ত্বককে ন্যাচারালি ময়েশ্চারাইজড রাখে।অতিরিক্ত ড্রাই ত্বক হলে তাতেও কিন্তু ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়।হেম্পসীড অয়েল পোরস এর মুখ বন্ধ না করেই ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখে।

 

ব্রণ বা একনি সমস্যায় হেম্পসীড অয়েলটি যেভাবে ব্যাবহার করা যায়:

১.ছোট একটা কৌটায় এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ হেম্প অয়েল নিয়ে তাতে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।এটাকে প্রিজার্ভ রাখুন।প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে এটি ত্বকে ইউজ করুন।

.ব্রণ বা একনি সমস্যায় হেম্পসীড অয়েলটি খাবার হিসেবে খেতে পারলে খুব ই ভালো রেজাল্ট দেবে।

সেজন্য সালাদ বা স্যুপের সাথে দুই ফোটা পরিমান হেম্প অয়েল মিশিয়ে খেতে পারেন।তবে এটা প্রতিদিন করা যাবেনা।

সপ্তাহে দুদিন হতে পারে।এটা ভেতর থেকে ব্রণ প্রতিরোধে শরীরকে কার্যকরী করে তোলে।

 

গ্রেপসীড অয়েল

 

ব্রণ বা একনি সমস্যায় আরেকটি দূর্দান্ত সমাধান হলো গ্রেপসীড অয়েল।

নন কমেডোজেনিক এই অয়েলটিতে উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর মাত্রার ভিটামিন ই রয়েছে যা ব্রণ (একনি) সমস্যায় চমৎকার ফলাফল দেয়।

 

চলুন তাহলে জেনে নেই যে গ্রেপসীড অয়েলটি ব্রণ বা একনি প্রবলেমে কি উপকার করবে:

.এটি পোরস এর মুখ বন্ধ করা ছাড়াই ত্বক ময়েশ্চারাইজড করে।
.ব্রণ বা একনি ত্বকের সেবাম অনেক ঘন হয়ে যায়।ত্বকে একদম জড়িয়ে যায় এবং এভাবেই ব্রণ বা একনি বাড়িয়ে তোলে।গ্রেপসীড অয়েলে থাকা প্রচুর পরিমাণে লিনোলিয়িক এসিড এই সেবাম প্রডাকশন কমাতে সাহায্য করে।
.ব্রণ বা একনি প্রবণ ত্বকের ইলাসটিসিটি বাড়িয়ে তোলে,টাইটেনিং করে।
.দীর্যদিন যদি ত্বক ব্রণ বা একনি যুক্ত থাকে তবে ত্বকে ভিটামিনের ঘাটতি পড়ে।

গ্রেপসীড অয়েল ত্বকে ভিটামিন এর ঘাটতি পূরণ করে তুলতে সুপার।এতে করে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জল হয়।

 

ব্রণ বা একনি সমস্যায় গ্রেপসীড অয়েলটি যেভাবে ব্যবহার করা যায়:

.চারভাগের এক ভাগ কোকোনাট বা অলিভ অয়েলের সাথে ১০ ফোটা করে গ্রেপসীড অয়েল মিশিয়ে এটাকে স্টোর করুন।

প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগান।সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

২.ব্রণ বা একনির কারণে দাগ ছোপ অনেক বেশি বসে গেলে কমলার খোসা,লেবুর রসের সাথে তিনফোটা গ্রেপসীড অয়েল মিশিয়ে ছোট পেইন্ট ব্রাশের সাহায্যে ব্রণ বা একনি প্রবণ জায়গাগুলোতে লাগান।২০ মিনিট মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন।

ব্রণ বা একনি আমাদের জন্য অনেক বড় একটি সমস্যা।

হয়তবা প্রাথমিক ভাবে মনে হতে পারে যে তেমন বড় সমস্যা না,কিন্তু দীর্ঘসময় ব্রণ বা একনি থাকলে সেটা মুখের সৌন্দর্য তো নস্ট করেই পাশাপাশি আমাদের কনফিডেন্স লেভেল ও কমিয়ে ফেলে।এতে করে আমাদের সার্বিক জীবনে বাজে প্রভাব ফেলে।

বেশি মাত্রায় ব্রণ বা একনি হয়ে গেলে তখন তো চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে।কিন্তু সেই পর্যায়ে যাওয়ার আগে সঠিক জীবনাচরণ,পর্যাপ্ত পুস্টি নিশ্চিত করা এবং তার পাশাপাশি সঠিক প্রডাক্ট চুজ করে পারফেক্ট কেয়ার নেয়ার মাধ্যমে আমরা এই ব্রণ বা একনি সমস্যার সমাধান করতে পারি অনেকটাই।

 

 

 

 

আর সেই স্টেজে Essential Oil অবশ্যই রাখা উচিত আমাদের। যদিও ব্রণ বা একনি সমস্যার জন্য বিভিন্ন গবেষণায় এই সমস্ত এসেন্সিয়াল অয়েলের তেমন কোন সাইড ইফেক্টস পাওয়া যায়নি তারপরেও প্রত্যেকেরই একবার প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া ভালো হবে।

তবে যে জিনিসটি খেয়াল রাখতে হবে সেটা হলো নকল ও কেমিক্যালযুক্ত অয়েল কেনা যাবে না।পয়সা খরচ করে নিজের ত্বক নস্ট করাটা সুখকর নয়।

সেজন্য আমরা চেস্ট করবো ভালো এবং বিশ্বস্ত কোন জায়গা থেকে ক্রয় করার জন্য।

আপনারা চাইলে অর্গানিকাওন স্কিন কেয়ার পেজটি থেকে অয়েলগুলো নিতে পারেন।এরা গত তিন বছর যাবৎ স্কিন কেয়ার প্রডাক্টস সেল করে আসছে এবং সমস্ত প্রডাক্টগুলোই হালাল সার্টিফাইড।আমি আমার ব্রণের সমস্যায় এদের থেকে ক্রয়কৃত প্রডাক্টসগুলো থেকে অনেক উপকৃত হয়েছি। আপনারাও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

তো আজ আমরা জেনে নিলাম যে ব্রণ (একনি) সমস্যায় এসেন্সিয়াল অয়েল আমরা কিভাবে ব্যবহার করবো। আশা করছি সঠিক মাত্রা এবং নিয়মিত ইউজে আপনার ব্রণ (একনি) সমস্যা সমাধান হবে।

আপনাদের নানারকম সমস্যায় আমরা অর্গানিকাওন রয়েছি আপনাদের পাশে  স্কিনকেয়ার,হেয়ারকেয়ার এবং বডিকেয়ার এর জন্য নানাবিধ সব প্রাকৃতিক সব উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরী কেয়ারী প্রডাক্টস নিয়ে।বিশুদ্ধ,কেমিক্যাল বিহীন,সিন্থেটিক ফ্র্যাগরেন্সবিহীন এবং ত্বকের কোন ক্ষতি না করে নিজেকে সুন্দর,লাবণ্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে অর্গানিকাওন হলো আপনার নিরাপদ যাত্রার সঙ্গী।

 

আজ এ পর্যন্তই । ব্রণ কে বিদায় জানান এবং সবাই ভালো থাকুন।