নিজেকে তরুণ রাখতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন এই ১০ টি খাবার।

জীবনের অলিখিত সত্য হলো সময়ের সাথে সাথে বয়স বাড়বেই। চেহারায় পড়বে বয়সের ছাপ এবং ত্বক আস্তে আস্তে হারাবে তার জৌলুস। আমরা সবাই চাই নিজেকে তরুণ দেখাতে।কিন্তু চাইলেও তো এটা এত সহজ নয়। বয়সের বেড়াটোপ টপকে নিজেকে সতেজ ও তারুণ্যময় রাখতে  নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার সাথে খাদ্যাভাস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ খাবার আমাদের শরীরের ফিট থাকা,দৃশ্যমান সৌন্দর্য,জীবনের মান ঠিক রাখা এবং রোগপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন খাবারের মধ্যে থেকে নিদ্রিস্ট কিছু খাবার রয়েছে যা আমাদের ত্বকের যত্নে দারুন কাজ করে এবং বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া থেকে অনেকটাই প্রটেক্ট  করতে সক্ষম।

 

তো,সুপ্রিয় পাঠক চলুন তাহলে আজ আমরা জানবো এরকম কিছু খাবার সম্পর্কে যা ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বককে রাখবে তারুণ্যদীপ্ত।

সাধারণত খাদ্যতালিকায় যে ধরণের খাবার রাখতে হবে সেগুলোর মধ্যে যে ধরণের গুণাবলি থাকতে হবে তা হলো:

(১)স্বাস্থ্যকর প্রটিন থাকতে হবে।

(২)স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকতে হবে এবং

(৩)উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ খাবার।

 

এখন চলুন তাহলে জেনে নেই যে কোন কোন খাবারগুলো বয়সের ছাপ রুখতে সাহায্য করবে:

 

(১) কলা:

অতন্ত্য সুপরিচিত ও সহজলভ্য এই সুস্বাদু ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ব্রোমেলিয়ান,ম্যাগনেশিয়ামএবং ভিটামিন এ,বি আর ভিটামিন সি।বয়সের সাথে সাথে পটাশিয়ামের অভাবে ত্বক কোমলতা হারায়।কলাতে থাকা পটাশিয়াম ত্বকের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে।এছাড়াও পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি মিলে মানবদেহের লিবিডো ব্যাপারটিকে ত্বরান্বিত রাখতে সাহায্য করে।

 

এটা শরীরের টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বাড়ায় এবং ত্বককে ইয়ংগার রাখতে সাহায্য করে।হাতের নাগালে থাকা সহজলভ্য এই উপাদানটি বয়সের ছাপ রুখতে ও ত্বকের যত্নে আদর্শ একটি খাবার।

(২)অলিভ অয়েল:

অলিভ অয়েল পৃথিবীর অন্যতম পুস্টিকর অয়েলগুলোর মধ্যে একটি।এটি উচ্চমাত্রার স্বাস্থ্যকর চর্বি আর এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।বিভিন্ন স্টাডিতে এটা এসেছে যে অলিভ অয়েলে থাকা প্রায় ৭৩% মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটস যা ত্বকে স্ট্রং এন্টিইনফ্ল্যামেটরী উপাদান যোগায়।রান্নার কাজে অলিভ অয়েল ব্যাবহার করতে পারলে শরীরে থাকা ক্ষতিকর কোলস্টেরলের পরিমাণ কমে আসে এবং এটি ত্বকে মেদ জমতে দেয় না।

 

তাছাড়াও ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন ত্বকে অলিভ অয়েল মাখার অভ্যাস করতে পারলে এটা ত্বকের বলিরেখা কমাতে অনেক সাহায্য করে।এতে করে দীর্ঘদিন তারুণ্য থাকে অটুট।

(৩)রসুন:

অত্যন্ত উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রসুন ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সেই প্রাচীনকাল  থেকেই সুপরিচিত।এটাতে রয়েছে ফসফরাস,জিঙ্ক,পটাশিয়াম ও এলিসিন নামক উপাদান।এটা হৃদরোগের প্রকোপ কমায়,রক্তের প্লাটিলেট নিয়ন্ত্রনে রাখে।এছাড়াও বয়সজনিত কারণে হওয়া নানা রোগ যেমন আর্থাইটিস,ক্যাটারেক্ট ফরমেশন এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।রসুন রক্ত পরিচলন উন্নত করে, শরীরে এনার্জি লেভেল সমুন্নত করতে সহায়তা করে।

 

আর দৈহিক ইন্দ্রিয়গুলোতে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে।তাই তারুণ্যময় ত্বকের যত্নে অবশ্যই খাদ্যতালিকায় রসুন রাখা উচিত।

(৪)ডার্ক চকলেট:

চকলেট খাওয়া ভালো নয় এবং দাঁতে পোকা ধরবে এরকমটা শুনতেই অভ্যস্ত আমরা।কিন্তু এর সম্পূর্ণ উল্টো তথ্য হলো যে ডার্ক চকলেট যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে।এটায় থাকে প্রচুর পরিমানে পলিফেনলস এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস যা আসলে অনেক উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট।এটি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্নি থেকে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং স্কিন ড্যামেজ প্রসেসিং স্লো করে।এছাড়াও এটি ত্বকের দৃঢ়তা বাড়ায় এবং ত্বকের ভাঁজ কমিয়ে আনতেও সহায়তা করে।কিন্তু চেস্টা করতে হবে এমন ভ্যারাইটির চকলেট সিলেক্ট করা যেটাতে ৭৯% কোকোয়া সলিড থাকবে এবং চিনি খুবই অল্প পরিমাণে থাকবে।

 

নিয়মিতভাবে প্রতিদিন এক টুকরো ছোট সাইজের ডার্ক চকলেট বয়সের ছাপ কমাতে অনেকটাই ভালো কাজ করবে।

(৫)ডিম:

বয়সের ছাপ কমাতে ডিম অত্যন্ত জরুরি একটি খাদ্য উপাদান।এটাতে রয়েছে রিবোফ্লাভিন নামক ভিটামিন B2, ভিটামিন B12, ভিটামিন D,সেলেনিয়াম,  আয়োডিন,ভিটামিন A ইত্যাদি।এছাড়াও রয়েছে ফোলেট,বায়োটিন,প্যানটোথেনিক এসিড এবং কোলিন নামক ভিটামিন B সিরিজ।আর প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম তো আছেই।সাধারনত বয়স ৪০ হবার পরে যেহেতু পেশীর ভাঙ্গন শুরু হয় তাই অবশ্যই খাদ্যতালিকায় ডিম রাখতেই হবে।

 

কারণ প্রোটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান এই ভাঙ্গন রোধ করার জন্য।তাই ত্বকে বয়সের ছাপ রুখতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই  ডিম রাখা উচিত।

(৬)চিয়া সিডস:

চমৎকার এই দানাদার খাবারটিতে রয়েছে উদ্ভিজ্জ ওমেগা ৩, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুস্টি উপাদান রয়েছে।এটা ওজনকে নিয়ন্ত্রণে তো রাখেই পাশাপাশি বয়স বেড়ে যাওয়াটাও কমিয়ে আনে অনেকটাই।তাছাড়াও হার্টবিট ঠিক রাখতে,স্মৃতিশক্তি উন্নত রাখতে,স্কিনের স্বাভাবিক টেক্সচার বজায় রাখতে  চিয়া সিডস দূর্দান্ত কাজ করে।তাই বয়সের ছাপকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই চিয়া সীডস রাখা উচিত।

(৭)গ্রীন টি:

গ্রীন টি তে রয়েছে উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্টস। এগুলো সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্নি,ধোঁয়া,দূষণ এগুলো থেকে হওয়া ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।উচ্চমাত্রার পলিফেনল থাকার কারণে  এটা বাহ্যিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বককে প্রটেক্ট করে এবং ভেতর থেকেও শরীরকে বয়সের ছাপ রুখতে প্রতিরোধী করে গড়ে তোলে।

 

তাই ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই এই পানীয়টি যোগ করা প্রয়োজন।

(৮) বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি:

সাধারনত বেশির ভাগ শাক সব্জিই স্বল্প ক্যালরি এবং উচ্চমাত্রার পুস্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।সুস্থ থাকার জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি খেতে হয়।কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও কিছু নিদ্রিস্ট শাকসব্জি রয়েছে যেগুলোতে বিটা ক্যারোটিন এবং ক্যারোটিনয়েডস নামক এন্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া রুখতে সাহায্য করে।বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এটা পাওয়া গিয়েছে যে ক্যারটিনয়েডস  সূর্যের ক্ষতিকারক রঞ্জনরশ্নি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত করে প্রিম্যাচিউর এজিং থেকে রক্ষা করতে দারুন ভালো কাজ করে।গাজর, মিস্টিকুমড়া ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে বিটা  ক্যারোটিন রয়েছে।আবার কিছু সব্জিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি যা ত্বকের কোলাজেন প্রডাকশনের ব্যাপারটার প্রতি খেয়াল রাখে।আসলে ২৫ বছর বয়সের পর থেকেই আমাদের ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন অনেকটাই কমে আসে। তাই খাদ্যতালিকায় নানারকম রঙ্গিন শাকসব্জি যোগ করা উচিত যা স্বাস্থ্যগত উপকারীতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বককে ভেতর থেকে তারুন্যময় করে তোলে এবং ত্বকের বয়সের ছাপ রুখতে সহায়তা করে।

 

আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং  সহজলভ্য সব্জি হলো টমেটো।প্রচুর মাত্রার লাইকোপেন নামক এন্টিঅক্সিডেন্টস থাকার কারনে এটা হয়ে উঠেছে এন্টিইনফ্ল্যামেটরী টাইপের।এটা ত্বকের গঠন এবং ধরণের ওপর কাজ করে ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর এটি অত্যন্ত সহজলভ্য বিধায় আমাদের খাদ্যতালিকায় ইজিলি এটি রাখা যায় ।

(৯)বাদাম:

বিভিন্ন ধরনের বাদামে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ই, এসেন্সিয়াল অয়েল এবং মিনারেলস যা ত্বকে বয়সের ছাপ রুখতে অনেক ভালো কাজ করে।বিশেষ করে আমন্ড বা কাঠ বাদাম খুবই উপকারী। বয়সের সাথে সাথে ত্বকের টিস্যু ক্ষয় হতে থাকে,ত্বকের ময়েশ্চার কমে যেতে থাকে এবং  সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্নির  কারণে ত্বক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ  হতে থাকে।

 

এই সমস্ত সমস্যা দূর করতে বাদাম খুব ভালো ফলাফল দেয়।আবার ওয়ালনাটস এ রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা পরিপাক প্রক্রিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য খুবই স্ট্রংলি স্কিন মাইক্রোবীমের সাথে সম্পর্কিত।আর তাই বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই বাদাম রাখতে হবে।

(১০)মিস্টি আলু:

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে মিস্টি আলু আসলে ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ থাকার কারণে এটা ত্বকের ফাইন লাইন্স দূর করে। কোলাজেন প্রডিউসিং কমে যেয়ে ত্বকের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় সেটাকে আস্তে আস্তে দূর করে ত্বককে স্বাস্থ্যজ্জল  করে তোলে।

 

এছাড়া নিয়মিত ভাবে মিস্টি আলু খেলে ত্বকের উজ্জলতাও বেড়ে যায়।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক হারাবে লাবন্যতা,হয়ে উঠবে রুক্ষ শুষ্ক,চামড়ায় ভাঁজ পড়বে,নানারকম স্কিন ড্যামেজিং হবে।এগুলো নরমাল ব্যাপার ঠিকই কিন্তু আমরা চাইলে সঠিক যত্নের মাধ্যমে এই প্রসিডিউর অনেকটা স্লো করে নিয়ে আসতে পারি।স্বাভাবিকভাবে খাবারেই রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রটিন,স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং এন্টিঅক্সিডেন্টস যা আমাদের ত্বকে নানারকম উপকারিতা দিয়ে থাকে।প্রতিদিনের খাবারে অন্তত একটি প্রটিন,স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অন্ততপক্ষে দুই ধরনের সব্জি খাবার ট্রাই করতে হবে।

তবে খাবারের দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি সঠিক সানস্ক্রিন সিলেক্ট করা,শরীরচর্চা করা,অর্গানিক স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করা,পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো,ধুমপান না করা ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।

বয়স হবে এবং বয়সের সাথে সৌন্দর্যও আস্তে আস্তে বিলীন হবে।তবে সঠিক পরিচর্যা,যত্ন ও খাদ্যাভাসের মাধ্যমে এই এজিং প্রক্রিয়া অনেকটাই স্লো করা যায়।

রূপচর্চা এবং সৌন্দর্যবিষয়ক আরো নানা কিছু জানতে চাইলে আমাদের অর্গানিকাওনের পেজে দেয়া নানারকম ব্লগগুলো চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।