যে ১০ টি অভ্যাস আপনাকে সব সময় রাখবে তরুণ। আরও জেনে নিন যৌবন ধরে রাখার উপায়।

যৌবন ধরে রাখার উপায়

আমরা সবাই সৌন্দর্যের পূজারী। নারী পুরুষ নির্বিশেষে আমরা নিজেকে সুন্দর দেখাতে  পছন্দ করি এবং নিজেদেকে তরুণ দেখতে চাই। কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের সবাইকেই এজিং প্রসেস এর মধ্যে দিয়ে যেতেই হয়। তাই যারা স্কিনের ব্যাপারে অধিক সচেতন তাদের যৌবন ধরে রাখার উপায় গুলো জানা দরকার।

সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে ত্বকে ভাঁজ পড়ে যায়,ফাইন লাইন্স দেখা দেয়, চোখের নিচে কালো দাগ  পড়তে শুরু করে,ত্বক পাতলা হয়ে যেতে থাকে। আমাদের শরীরে থাকা হরমোনাল বা বংশগত ব্যপারটা এক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই ব্যাপারটাকে বলা হয় ‘ইনট্রিনসিক এজিং’।আবার বাস্তবিক জীবনের নানামুখী স্ট্রেস,পরিবেশের নানা দূষণ,সূর্যের  অতিবেগুনী রশ্নি,ধূমপান,এলকোহল পান,নানারকম কেমিক্যালস ইত্যাদি কারণেও খুব অল্প বয়স থেকেই আমাদের ত্বকের ভাঙ্গন শুরু হয়।এটাকে বলা হয় ‘ এক্সট্রিনসিক এজিং’।

এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে সময়ের সাথে সাথে মানুষ আস্তে আস্তে ত্বকের জৌলুস হারাতে থাকবেই।সাধারণত ২৫ বছর বয়সের পর থেকেই ত্বকে বয়সের প্রভাব পড়তে থাকে।এখন কথা হলো যে,পরিবর্তন তো হতেই থাকবে।কিন্তু তাই বলে যে বয়স আমাদেরকে একেবারেই কাবু করে ফেলবে ব্যপারটা ঠিক তেমন হওয়া উচিত নয় নিশ্চয়ই । নিয়মিত এবং সঠিক কিছু অভ্যাস আয়ত্বকরণের মাধ্যমে মন,ত্বক,শরীর সবসহ সম্পূর্ণ মানুষটি তার বদলানোর প্রক্রিয়াটি অনেকটা ধীর প্রসেসে নিয়ে আসতে পারে।

 

নিজেকে তরুণ রাখতে জীবনে যোগ করুন এই অভ্যাসগুলো

 

(১)পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে:

পানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এজন্যই কথায় বলে পানিই জীবন। মানবশরীরের শতকরা ৭৫ ভাগই হলো তরল।আর এই জলীয় অংশের পরিমাণ কোনভাবে যদি কমে যায় তখন আমাদের শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা যায়। প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার থেকে ৩ লিটার পানি শরীরে প্রয়োজন। সকালে উঠেই কুসুম গরম পানি পান করার অভ্যাস করাটা ভালো। এসিডিটির সমস্যা যদি না থেকে থাকে তবে পানির সাথে লেবু যোগ করতে পারলে আরও ভালো।

ওজন নিয়ন্ত্রন রাখার পাশাপাশি এই অভ্যাস ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে,ব্রণের সমস্যা কমিয়ে রাখতে এবং সেটাকে মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত রাখতে,চুল পড়ে যাওয়া কমাতে,অকালপক্কতা,মাথার ত্বকের নানা সমস্যা, খুশকি ইত্যাদি থেকে অনেকটাই দূরে রাখতে সহায়তা করে। পুরুষের চেয়ে নারীরা সাধারনত স্কিন নিয়ে একটু বেশীই কনসার্ন থাকেন, নারীদের যৌবন ধরে রাখার উপায় সম্পর্কে ডিটেইলস আছে এই লেখায়। নিজেকে তারুণ্যদীপ্ত রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের অভ্যাস রাখা খুবই জরুরি।

 

(২)ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার:

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করা অত্যন্ত জরুরী।তবে ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার চুজ করতে হবে।ময়েশ্চারাইজারটি ব্যবহারের পর ত্বক যদি তেলতেলে না লাগে বা ত্বকে যদি টান ভাব অনুভূত না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে ময়েশ্চারাইজারটি সঠিক।ভিটামিন এ,ই,সি যুক্ত ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করতে হবে।

 

(৩)ফল, শাকসব্জি এবং লেস এলকোহল পান ও চিনি কম খাওয়ার অভ্যাস করা:

সুস্থ থাকতে এবং নিজের তারুণ্য ধরে রাখতে  প্রতিদিন অন্তত দুটো ধরনের সব্জি এবং এক পদের ফল খেতেই হবে।শাকসব্জি যতটা সম্ভব কম আঁচে এবং কম সময়ে অল্প তেল ও মশলায় রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে খুবই ভালো।ফল জুস,স্মুদি বা সরাসরি ফল খাওয়া যেকোন ভাবেই খাওয়া যেতেই পারে।যদিও ফল কামড়ে চিবিয়ে খেলে ফলের সম্পূর্ণ অংশ খাওয়া হয় এবং ত্বকের তারুণ্যতার পাশাপাশি এটা দাঁতের জন্যও অনেক উপকারী।তাছাড়াও স্মোকিং,ড্রিংকিং এর অভ্যাস বাদ দিতে হবে।স্মোকিং ত্বকে রিংকেল তৈরী করে খুব দ্রত আর এলকোহল ত্বকে ড্যামেজ ঘটায় খুব তাড়াতাড়ি।

এলকোহল না নেবার অভ্যাস করতে হবে এবং চা, কফি তুলনামুলক কম খেতে হবে।আর পারতপক্ষে লাল চা এবং গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।চিনি খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে।একান্তই না পারলে জিরো ক্যালরিযুক্ত চিনি ট্রাই করা যেতে পারে।এরপরেও খুব বেশি ইচ্ছে হলে আখের চিনি বা লাল চিনি খুব অল্প পরিমানে মাঝেমধ্যে টেস্ট করে দেখা যায়।

 

(৪)নিয়মিত ব্যয়ামের অভ্যাস করা:

সুস্থ থাকতে এবং তরুণ থাকতে ব্যয়ামের বিকল্প নেই তা আমরা জানি।ব্যয়াম আমাদের পেশীসমুহকে শক্তিশালী রাখে,ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে,ভালো ঘুম আনে, স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। ডায়বেটিস,স্থুলতা,হৃদরোগ ইত্যাদি নানা ধরণের রোগ থেকেও সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে নিয়মিত ব্যয়াম করা।ট্রেকিং,হাইকিং,সাইক্লিং,জগিং,ডান্সিং ছারাও ফ্রি হ্যান্ড বিভিন্ন এক্সারসাইজের অভ্যাস করতে হবে। অন্তত কস্ট করে হলেও মিনিমাম ৩০ মিনিট হাটার অভ্যাস করতে পারলে এটাই তরুণ রাখতে যথেষ্ঠ।

এছারাও বিভিন্ন যোগাসন রয়েছে যা যৌবন ধরে রাখতে সহায়ক। চক্রাসন,হলাসন,স্বরভঙ্গাসন তারুণ্য ধরে রাখতে চমৎকার কাজ করে।আরো আছে বিভিন্ন ফেসিয়াল ম্যাসাজ যা অভ্যাস করতে পারলে নিজেকে রাখা যাবে অনেকটাই তরুণ।

 

(৫)ত্বক নিয়মিত এবং সঠিকভাবে পরিস্কার করা:

আমরা অনেকেই বাইরের ধূলাবালি থেকে এসে বা অতিরিক্ত ঘেমে যাবার পরেও ত্বক পরিস্কার করিনা।এটা অনভ্যাসের কারণেও হতে পারে বা আলসেমির কারণেও হতে পারে।কিন্তু একটা নিদ্রিস্ট বয়স পরে এই ছোট অভ্যাসটাই অনেকটা ক্ষতি করে ফেলে নিজের অজান্তেই।তাই ত্বক ও নিজেকে তরুণ দেখতে চাইলে আলসেমি হোক আর যাই হোক ত্বক পরিস্কার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা যাবেনা।

কস্ট করে হলেও প্রতিদিন অন্ততপক্ষে মিনিমাম দুইবার ত্বক ভালোভাবে পরিস্কার করতেই হবে।নিজেকে অন্যদের তুলনায় ইয়ংগার রাখতে চাইলে কিছুটা অভ্যাস তো আলাদা করে রপ্ত করতেই হবে।

 

(৬)অতিরিক্ত মেকাপ না করা:

বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদেরকে মেকাপ করতেই হয়। সেটা অফিশিয়াল বা ফাংশনাল নানা কারণেই হতে পারে।আমরা অনেকেই  নিজেকে আরো বেশি সুন্দর দেখাতে বা ত্বকের ক্ষুত ঢাকতে মেকাপ প্রডাক্ট ব্যবহার করি।কিন্তু এই অতিরিক্ত মেকাপ প্রডাক্টগুলো দীর্ঘমেয়াদিভাবে ত্বকের ক্ষতি করে ফেলে।যতদিনে আমরা এগুলো বুঝতে পারি ততদিনে আমাদের ত্বক অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাই যদি রাখতে হয় নিজেকে তরুণ, তাহলে মেকাপ প্রডাক্ট যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। আর চেস্টা করতে হবে যতটা সম্ভব ভালো ও ব্র্যান্ডেড প্রডাক্ট ইউজ করার।

 

(৭)অতিরিক্ত ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন্স না দেয়া:

আমাদের অনেকেই খুব অল্পতে বিরক্ত হয়ে যাই বা অনেকেরই অভ্যাস থাকে বেশির ভাগ সময়টাই চোখ মুখ কুঁচকে থাকা।এতে করে ত্বকের নিচে থাকা পেশীসমূহ উদ্দীপ্ত হয়।আর একই জায়গার পেশী অনেকগুলো বছর ধরে সেইম এক্সপ্রেশন্স হতে থাকলে সেখানে পারমানেন্ট ভাবে ভাঁজ পড়ে যায়।

তাই নিজেকে তরুণ রাখতে চাইলে এই ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন্স এর ব্যপারে খেয়াল রাখতে হবে। শুনতে মনে হতে পারে যে এটা হয়তো তেমন জরুরি কিছু নয়  বা আমরা ততটা ইম্পর্ট্যান্সও হয়তো দেইনা কিন্তু  আসলে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যপার।

 

(৮)পর্যাপ্ত এবং ভালো মানের ঘুম নিশ্চিত করা:

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে অন্ততপক্ষে ৭ ঘন্টার ঘুম অনেক জরুরি।আর শুধু ঘুমালেও হবেনা।ঘুমের মান ভালো হতে হবে।বারবার ঘুম ভেঙ্গে গেলো বা এদিক ওদিক করে রাত কেটে গেলো এরকম হালকা পাতলা ঘুম আমাদেরকে করে তোলে বিক্ষিপ্ত এবং শরীরকেও বয়স্ক করে তোলে।

তাছারাও ভালো ঘুম না হলে পরিপাকপ্রক্রিয়ার ওপরও প্রভাব পড়ে যা আমাদেরকে ভেতর থেকে বৃদ্ধ বানিয়ে ফেলে।তাই নিজেকে সুস্থ ও তরুণ রাখতে চাইলে অবশ্যই ঘুমের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

 

(৯)ত্বকের যত্নে একটি নিয়মিত রুটিন মেইনটেইন করা:

ত্বকের যত্নের জন্য অন্যতম জরুরি তিনটি রুটিন যেটাকে  সংক্ষেপে বলা যায় সিটিএম রুটিন যেটা হলো ক্লিনজিং,টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং।দিনের শুরুতেই ভালো ক্লিনজার দিয়ে ত্বক ক্লিন করে টোনার ব্যবহার এবং সর্বশেষ ভালো মানের ময়েশ্চারাইজিং ব্যাবহার করার একটা নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তোলাটা অত্যন্ত জরুরি।আর সপ্তাহে অন্তত দুদিন এক্সফোলিয়েশন করতে হবে।এক্সফোলিয়েটিং করার জন্য ন্যাচারাল ও অর্গানিক উপাদান চুজ করতে হবে।

এছারাও আই ক্রিম এবং এসপিএফ যুক্ত লিপ ক্রিম ইউজ করে চোখ আর ঠোঁট রাখতে হবে যত্নে।আর চেস্টা করতে হবে  এই প্রডাক্টগুলো যেন  অবশ্যই এন্টি এজিং টাইপের হয়।

 

(১০)সূর্যরশ্নিতে অতিরিক্ত সময় থাকা যাবেনা:

সূর্যের অতিবেগুনী রশ্নি ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক তা আমরা মোটামুটি জানি।কিন্তু আসলে এটা আমাদের জানার মাত্রার চেয়েও আরো অনেক বেশি ক্ষতি করে।সান প্রটেকশন ইউজ করা অত্যন্ত জরুরি।অতিরিক্ত সূর্যালোকে গেলে যতটা সম্ভব নিজেকে ঢেকে নিতে হবে।সেজন্য লম্বা হাতাওয়ালা জামা বা ফুল স্লিভ ড্রেস,মোজা,ফেস ঢেকে রাখতে সাহায্য করে এরকম হ্যাট বা টুপি,সানগ্লাস বা রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে।যদিও সব সময়ই এই জিনিসগুলো ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনা বা অনেক  সময় আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেও হয়তো ব্যাবহার করিনা।কিন্তু নিজেকে দীর্ঘদিন তরুণ দেখতে চাইলে এই অভ্যাসগুলো আয়ত্ব করতেই হবে।আর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা তো মাস্ট।আর এক্ষেত্রে সানস্ক্রিন সিলেক্টিং এর সময় যে তিনটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তা হলো যে সানস্ক্রিনটি অন্ততপক্ষে এসপিএফ ৫০ এর ওপর হতে হবে,বোর্ড স্পেকটার্ম  টাইপের হবে যেন ইউভি এ আর ইউভি বি এই  দুই ধরনের রশ্নি থেকেই সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে এবং ওয়াটার রেসিস্ট্যান্স টাইপের হতে হবে।

 

ত্বকের যে সমস্ত জায়গাগুলো খুব বেশি পরিমাণে ওপেন থাকে যেমন মুখ,হাত এই সমস্ত জায়গাগুলোতে প্রতিদিনই সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।এছারাও আরো বেশি পরিমাণে সুরক্ষা নিতে চাইলে ইউপিএফ ল্যাবলিং কাপড় পরিধান করা যেতে পারে।

সত্যি বলতে নিজেকে তরুণ দেখাতে নিজের যত্ন নেয়ার কোন বিকল্প নেই।ত্বককে যেভাবে যত্ন নেয়া হবে ত্বকও সেভাবেই নিজেকে প্রকাশিত করবে।

নিজেকে কিভাবে আরে সুন্দর রাখা যায় বা বয়সের সাথে সাথে কিভাবে নিজের সৌন্দর্য ধরে রেখে নিজেকে রাখা যায়  তরুণ সে ব্যাপারে আরো যদি জানতে চান তবে আমরা অর্গানিকাওন রয়েছি আপনার সাথে। ত্বক,স্বাস্থ্য ও রুপচর্চা বিষয়ক আরো অনেক কিছু নিয়ে জানতে আমাদের অর্গানিকাওন পেজে দেয়া এজিং নিয়ে লিখা ব্লগগুলো পড়ে দেখতে পারেন।