রিঙ্কলস দুর করার জন্য ২০ টি এসেন্সিয়াল অয়েল ও ক্যারিয়ার অয়েল

এসেন্সিয়াল অয়েল

কথায় আছে যে ত্বক সুন্দর তো আপনি সুন্দর । তারুন্যদীপ্ত ,লাবন্যময় ত্বক তো আমাদের সবারই চাওয়া । এমনিতে সারাবছর ধরেই ত্বক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যাওয়া,ব্রণের সমস্যা,দাগছোপ পড়ে যাওয়া ইত্যাদি নানারকম সমস্যা কিন্তু আমাদের সবার ক্ষেত্রেই কম বেশি হয়েই থাকে । কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে আরো কিছু বাড়তি নানারকম সমস্যা তেরী হতে থাকে।সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রিঙ্কলস বা বলিরেখা।

বয়সের কারণে তো বটেই;তাছাড়াও সূর্যের ক্ষতিকারক রঞ্জনরশ্নির প্রকোপ,দূষণ,ফ্রি রেডিক্যালস এর কারনেও প্রিম্যাচিউর এজিং হতে পারে এবং সেটার প্রকাশ ঘটে রিঙ্কলস দৃশ্যমান হওয়ার দ্বারা। এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাজারে অনেক ধরনের এন্টিএজিং প্রডাক্টস পাওয়া যায়।বিভিন্ন ধরনের ক্রীম,লোশন, সিরাম রয়েছে। কিন্তু এসবের দীর্ঘমেয়াদি ব্যাবহার এবং এগুলোতে বিদ্যমান নানা কেমিক্যালস ত্বকে বয়ে আনে নানারকম জটিলতা।

তাই বলে কি যত্ন নেয়া হবেনা? হ্যা,তা তো নিতেই হবে। কেমিক্যাল জাতীয় প্রডাক্টের ব্যাবহার কমিয়ে দিয়ে যতটা সম্ভব ন্যাচরাল উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নেবার ট্রাই করতে হবে। আর এগুলোর সাথে আরো একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেজিম যোগ করা যায়, যেটা হলো এসেন্সিয়াল অয়েল।

যদিও বিউটি ওয়ার্ল্ডে এসেন্সিয়াল অয়েলের ধারনা তেমন বেশি পুরানো নয়। তারপরেও এখন আমরা অনেকেই এসেন্সিয়াল অয়েল সম্পর্কে কমবেশি জানি।

এসেন্সিয়াল অয়েল আমাদের ত্বকে নানাবিধ উপকারিতা দেয়। টোনিং, স্মুথিং,ব্রণের সমস্যায়,ত্বকের দাগছোপ দূরীকরণ,আদ্রতা রক্ষায়,কোলাজেন ইমপ্রুভিং, ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমানো,পরিবেশগত দূষণ থেকে ত্বককে রক্ষা করাসহ রিঙ্কলস বা বলিরেখা কমিয়ে আনতেও এসেন্সিয়াল অয়েল চমৎকারভাবে কাজ করে। অনেকগুলো এসেন্সিয়াল অয়েলের মধ্যে কিছু আছে যা এন্টিরিঙ্কলস টাইপের। আজ আমরা এরকম দূর্দান্ত কার্যকরী ১০ টি এসেন্সিয়াল অয়েল সম্পর্কে জানবো যা রিঙ্কলস এর সমস্যায় অনেক ভালো কাজ করে।

 

প্রথমেই আমাদেরকে ভালোভাবে জানতে হবে যে বলিরেখা পড়া সংক্রান্ত কোন সমস্যার জন্য কোন এসেন্সিয়াল অয়েলগুলো আমরা সিলেক্ট করবো।এই এসেন্সিয়াল অয়েলের মধ্যে কিছু আছে যেগুলো অধিক মাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।এগুলো আমাদের ত্বকে হওয়া ফ্রি রেডিক্যালসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বকে যে বলিরেখা পড়ে যায় সেগুলো কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।পরিবেশগত দূষণ যেমন :

 

(১) ধোয়া,ধুলা
(২) সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্নি
(৩)বায়ু দূষণ
ইত্যাদির কারণে ত্বক বয়স্ক দেখায় এবং বলিরেখা পড়ে যায়।সেজন্য যে এসেন্সিয়াল অয়েলগুলো অনেক ভালো ফলাফল দেবে সেগুলো হলো:

 

 

(১)রোজমেরী এসেন্সিয়াল অয়েল

 

রোজমেরী হার্ব থেকে এই এসেন্সিয়াল অয়েলটি প্রস্তুত হয় এবং এটাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার এন্টিমাইক্রেবায়াল এবং এন্টিঅক্সিডেন্টাল গুনাবলি যে কারনে ত্বকের বলিরেখা দূর করতে অনেক কার্যকরী।এটা ফ্রি রেডিক্যালসের কারনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে,ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায় এবং প্রদাহ কমিয়ে আনে।

 

(২)ক্ল্যারী সেজ এসেন্সিয়াল অয়েল

মিস্টি স্বাদের ও স্মেলযুক্ত এই অয়েলটি সংগ্রহ করা হয় ক্ল্যারী সেজ গুল্ম থেকে।
হাই এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই অয়েলটি ত্বকের প্রটিন এবং ডিএনএ ড্যামেজ হওয়া কমায়।এতে করে ত্বকে বয়সের ছাপ কমে এবং সাথে রিঙ্কলসও মিনিমাইজ করে নিয়ে আসে।এন্টিমাইক্রোবায়াল প্রপ্রারটি সমৃদ্ধ এই অয়েলটি শুস্ক এবং অয়েলি দুই ধরনের ত্বকের জন্যই কার্যকরী।

 

(৩)লেমন এসেন্সিয়াল অয়েল

সিট্রাসি গ্রুপভুক্ত  এই এসেন্সিয়াল অয়েলটি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ধারণ করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নির কারণে ত্বকে যে বলিরেখা হয় সেটা দূর করতে লেমন অয়েল খুব ভালো কাজ করে।এটি ত্বকে ব্যাবহারের পরে বেশ কিছু সময় সূর্যালোকে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।এজন্য এই লেমন অয়েল রাতে ঘুমানোর পূর্বে ইউজ করলে সর্বাত্নক উপকারিতা পাওয়া যায়।

 

 

(৪)ক্যারট সীড এসেন্সিয়াল অয়েল

২০১২ তে হওয়া একটা স্টাডিতে এটা পাওয়া গিয়েছে যে ক্যারট সীড এসেন্সিয়াল অয়েলটিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রপারটি রয়েছে।এটি ত্বকের কোষের স্বাস্থ্য ভালো করে তোলে,ত্বকের পেশী রিল্যাক্স রাখতে সাহায্য করে,এবং ব্লাড সুগার লেভেল ঠিক রাখতেও সহায়তা করে।এভাবে করে ক্যারট সীড এসেন্সিয়াল অয়েল ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে আনে এবং স্পেশালি বলিরেখা কমিয়ে আনতে চমৎকার ভাবে কাজ করে।এটা অনেক জায়গায় বুনো ক্যারট সীড এসেন্সিয়াল অয়েল নামেও পরিচিত।

এরপর আরো একটা ব্যাপার যেটা খেয়াল রাখতে হবে যে,আমাদের  ত্বকে বলিরেখা পড়ার আরো একটা জরুরি কারণ হলো ত্বকের ময়েশ্চারাইজ কমে যাওয়া।তাই ত্বক যেন ময়েশ্চারাইজড থাকে,নরম থাকে এবং ত্বক যেন পুনরায় উদ্দীপ্ত হয় বা উদ্দীপ্ত  থাকে এর জন্য কিছু নিদ্রিস্ট এসেন্সিয়াল অয়েল আছে যা এই জাতীয় সমস্যাগুলো কমিয়ে এনে ত্বকের বলিরেখা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনে।

 

(৫)ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল

ল্যাভেন্ডার ফ্লাওয়ার এক্সট্র্যাক্ট থেকে প্রাপ্ত ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েলটির চমৎকার সুদিং ক্যাপাবিলিটি রয়েছে এবং এটি ত্বকের স্ট্রেস দূর করে এবং ত্বকের ডাল লুকিং ভাব টা কমায়।এটার রিল্যাক্সিং ন্যাচারের সাথে এন্টিমাইক্রোবায়াল গুনাবলির কারণে ত্বকের প্রদাহ কমায়। আর এন্টিঅক্সিডেন্টাল গুনাবলি থাকার কারনে এটি ফ্রি রেডিক্যালসের কারনে হওয়া অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর  ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।এভাবে করে চমৎকার এই সুগন্ধি অয়েলটি ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে আনে এবং রিঙ্কলস এর সমস্যাটাও কমায়।

 

 

(৬)রোজ এসেন্সিয়াল অয়েল

রোজ বা গোলাপ যে শুধু  ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের জন্যই সমাদৃত তা কিন্তু নয়।পুরো পৃথিবীজুড়েই রুপচর্চায় ব্যাপক ব্যাবহার রয়েছে এই রোজ এসেন্সিয়াল অয়েলটির।বিশেষ করে দামেস্ক রোজ এক্সট্র্যাক্ট থেকে প্রাপ্ত রোজ এসেন্সিয়াল অয়েলের রয়েছে এন্টিইনফ্ল্যামেটরী,এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিঅক্সিডেন্টাল গুনাবলি।এটার রিল্যাক্সিং এরোমা ত্বকের ময়েশ্চার লক করে রাখে এবং ত্বক শুষ্ক হতে দেয়না ।এছাড়াও এটা ত্বকের বাহ্যিক আবরণকে উন্নততর করে ও ত্বককে করে তোলে কোমল,মসৃণ।এভাবে রোজ এসেন্সিয়াল অয়েল ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বককে করে তোলে তারুন্যদীপ্ত।

(৭)জেরানিয়াম এসেন্সিয়াল অয়েল:

চমৎকার এন্টিইনফ্ল্যামেটরী গুনাবলি সমৃদ্ধ অয়েলটি সাইনুসাইটিস ও ব্রঙ্কাইটিস সারায় এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও ভালো কাজ করে।এটি ব্রণের জন্যও ভালো এবং সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বকে কোষ তৈরীতে সাহায্য করার গুনাবলি এটাকে চমৎকার এন্টিরিঙ্কল টাইপের এসেন্সিয়াল অয়েল রুপে তৈরী করেছে।

 

(৮)ইলাং ইলাং এসেন্সিয়াল অয়েল

অনেক স্কিন কেয়ার কম্পানি তাদের প্রডাক্টে ইলাং ইলাং এসেন্সিয়াল অয়েল
ব্যাবহার করে থাকে এটার মনোমুগ্ধকর সুগন্ধের জন্য।বিভিন্ন গবেষণায় এটা পাওয়া গিয়েছে যে ইলাং ইলাং অয়েলের এন্টিঅক্সিডেন্টাল গুনাবলি রয়েছে।এটা ত্বকের  প্রটিন তৈরীতে সাহায্য করে এবং ত্বকের মেদ কমিয়ে তোলে।এতে করে ত্বক পুনর্জীবিত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে বলিরেখাও কমে আসে অনেকটাই।

 

(৯)স্যান্ডালউড এসেন্সিয়াল অয়েল

এন্টিইনফ্ল্যামেটরী গুনাবলি সমৃদ্ধ এই এসেন্সিয়াল অয়েলটি ত্বকে ময়েশ্চার ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কার্যকরী।কারণ ত্বক যদি অতিমাত্রায় ময়েশ্চারলেস হয়ে যায় তখন এটি ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতা তৈরী করে এবং ত্বকের বলিরেখাগুলো আরো বেশি দৃশ্যমান করে ফেলে।তাই স্যান্ডালউড এসেন্সিয়াল অয়েলটি ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতে এবং রিঙ্কলস কমিয়ে আনতে অনেক ভালো কাজ করে।

 

 

(১০)নেরোলি এসেন্সিয়াল অয়েল

বিটার অরেঞ্জ নামক প্রজাতির থেকে প্রাপ্ত চমৎকার সুগন্ধময় নেরোলি এসেন্সিয়াল
অয়েলটি ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে এবং সেটা ধরে রাখতে দূর্দান্ত কাজ করে।The National Center for Complementary and Integrative Health(NCCIH) থেকে প্রকাশিত একটা রিপোর্টে এটা এসেছে যে নেরোলি এসেন্সিয়াল অয়েলে থাকা এন্টিইনফ্ল্যামেটরী গুনাবলি ফাংগাল ইনফেকশন কমাতে এবং ত্বকের প্রদাহ,জ্বালা,পোড়া ইত্যাদি দূর করতে বিশেষ কার্যকর।ত্বকের বলিরেখার সমস্যা দূর করতে নেরোলি এসেন্সিয়াল অয়েল অন্যতম একটি অয়েল।

 

(১১) পমেগ্র্যানেট এসেন্সিয়াল অয়েল

পমেগ্র্যানেট এসেন্সিয়াল অয়েলটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নির কারণে হওয়া সানস্পট দূর করে,সেন্সিটিভ ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে,ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।এতে করে ত্বকের বলিরেখার প্রকোপ কমে আসে এবং নতুন বলিরেখা সহজে দেখা দেয়না।

 

 

(১২)ফ্র্যাংকিনসেন্স এসেন্সিয়াল অয়েল

অনেকের কাছে হয়তো নতুন লাগতে পারে কিন্তু বর্তমানে ফ্র্যাংকিনসেন্স এসেন্সিয়াল অয়েল রিঙ্কলস কমানোর জন্য একটি আদর্শ।বাংলায় এটা লোবান নামেও পরিচিত।এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারনে হওয়া ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করে,নতুন কোষ গজাতে সহযোগিতা করে।এতে করে ত্বকে রিঙ্কলস এর প্রকোপ কমে আসে।

 

(১৩)হেলিক্রিসম এসেন্সিয়াল অয়েল

হেলিক্রিসম বা সূর্যভক্তি ফুলের গাছ থেকে চমৎকার এই এসেন্সিয়াল অয়েলটি প্রস্তুত হয়।সূর্যমুখী ফুলের মতোই এটিও সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বিধায় এটির এমন চমৎকার নামকরণ।এই অয়েলটির রয়েছে এন্টিমাইক্রোবায়াল,এন্টিইনফ্ল্যামেটরী এবং এন্টিঅক্সিডেন্টাল গুনাবলি।এটা ত্বককে পুনর্জীবিত করে এবং ত্বকের জ্বালাপোড়ার সমস্যা কমিয়ে আনে।এন্টিএজিং কোয়ালিটির হওয়ায় এটা ত্বকের কোষ নতুন করে তৈরীতে সহায়তা করে।এভাবে করে হেলিক্রিসম এসেন্সিয়াল অয়েলটি বয়স্ক হয়ে যাওয়া ত্বকের যত্নে অনেক ভালো কাজ করে।

এখন ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া রুখতে স্পেসেফিক কিছু এসেন্সিয়াল অয়েলের নাম তো জেনে নিলাম আমরা।কিন্তু এসেন্সিয়াল অয়েল তো সরাসরি ত্বকে ব্যাবহার করা যায়না।অন্য কোন ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে মিলিয়ে এগুলো ত্বকে ব্যাবহার করতে হয়।ক্যারিয়ার অয়েল এসেন্সিয়াল অয়েলের প্রবলতা বা আতিশয্য দূর করে ত্বকে এসেন্সিয়াল অয়েলের কার্যকারিতাকে আরো দ্বিগুন করে তোলে।ক্যারিয়ার অয়েলগুলোতে থাকা ময়েশ্চারাইজিং ন্যাচার বয়সজনিত ত্বকের সমস্যা সমাধানে অনেক ভালো কাজ করে।কিন্তু তার আগে ভালোভাবে জানতে হবে যে কেন ক্যারিয়ার অয়েলগুলো বয়সজনিত ত্বকের সমস্যা সমাধানে এসেন্সিয়াল অয়েলের সাথে দূর্দান্তভাবে কাজ করবে। চলুন জেনে নেই এরকম কয়েকটি ক্যারিয়ার অয়েল সম্পর্কে।

 

(১৪) জোজোবা অয়েল

জেন্টল এবং নন এলার্জিক এই জোজোবা অয়েলটি তৈরী হয় জোজোবা প্ল্যান্ট থেকে।আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেলের সাথে জোজোবা অয়েলের পি এইচ লেভেল প্রায় কাছাকাছি লেভেলের। আর নন গ্রিজি এবং ওয়াক্সি টেক্সচার এই অয়েলটি ত্বকের ব্রণের সমস্যা কমায়,ত্বক ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়।এসেন্সিয়াল অয়েলের সাথে মিশে এটা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া রুখতে চমৎকার ভাবে কাজ করে।

 

 

(১৫)আর্গান অয়েল:

মরক্কোতে জন্মানো আর্গান গাছ থেকে প্রাপ্ত আর্গান অয়েলটির বহুমুখী ব্যাবহার রয়েছে।এটা খাদ্য হিসেবে,চুলের যত্নে এবং ত্বকের যত্নে ব্যাপকভাবে ব্যাবহৃত হয়।এটা ত্বকের ইলাস্টিসিটি এবং রিঙ্কলস এর সমস্যা দূর করতে এতটাই কার্যকরী যে স্কিন কেয়ারের অনেক প্রডাক্টে আর্গান অয়েলের উপস্থিতি পাওয়া যায়।এসেন্সিয়াল অয়েলের সাথে মিলিত হয়ে এটি শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজ আরো ভালোভাবে শোষিত হওয়াতে সাহায্য করে,কাটাছেড়া বা জ্বালাপোড়া দূর করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে নিয়ে আসে।

 

(১৬)ভিটামিন ই অয়েল

ভিটামিন ই অয়েলের উপকারিতা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা।ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাচ্ছে এরকম ত্বকের যত্নে এটা অনেক ভালো কাজ করে।ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করে,কালো ছোপছোপ দাগ দূর করে,ফ্রি রেডিক্যালস এর কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্টাল হওয়ার কারনে এটা ত্বকের ড্যামেজ কমায় এবং স্কিন ক্যান্সার এর ঝুঁকে কমিয়ে দেয় অনেকটাই।এসেন্সিয়াল অয়েলের সাথে জুটি বেধে তখন কার্যকারিতা বেড়ে যায় আরো বহুগুণ।

 

(১৭)আমন্ড অয়েল

আমাদের অত্যন্ত পরিচিত এই আমন্ড অয়েল বা বাদাম তেলের রয়েছে হাই লেভেলের এন্টিইনফ্ল্যামেটরী গুনাগুন যা ত্বকের একজিমা এবং সোরিয়াসিস সারাতে সাহায্য করে।অন্যান্য এসেন্সিয়াল অয়েলের সাথে মিলে এটা ত্বকের শুষ্কতা কমায়,ত্বকের গঠন উন্নত করে, দাগ ছোপ কমিয়ে আনে এবং ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়।এভাবে আমন্ড অয়েল ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া দৃশ্যমান রূপে কমিয়ে আনে ।

 

(১৮)গ্রেপসীড অয়েল

প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি এবং সমৃদ্ধ গ্রেপসীড অয়েল ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে।ত্বকের যে জেল্লাদার ভাব থাকে সেটা ধরে রাখে,ত্বককে করে তোলে কোমল ও মসৃণ।এন্টিঅক্সিডেন্টাল হওয়ার দরূন এটা ত্বককে পুনর্জীবিত করে তুলতে সাহায্য করে।এসেন্সিয়াল অয়েলের সাথে মিলে এটা নিজেদের কার্যকারীতা আরো বাড়িয়ে তুলে ত্বককে রাখে তরুণ ও লাবন্যময়।

 

(১৯)এভোকাডো অয়েল

এভোকাডোর পাল্প এবং বীজ থেকে প্রস্তুতিকৃত এই অয়েলটি একটি ন্যাচারাল এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এতে রয়েছে এন্টিইনফ্ল্যামেটরী গুনাগুন।ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধির জন্য আদর্শ এই এভোকাডো অয়েল।

 

(২০)এপ্রিকট অয়েল

এপ্রিকটের বীজ থেকে প্রাপ্ত এই অয়েলটিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড যা ত্বকে ময়েশ্চার যোগান দেয় এবং ময়েশ্চার লক করে রাখতে সাহায্য করে।এছাড়াও অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের সাথে রিঙ্কলস আছে এরকম ত্বকের ক্ষেত্রে এপ্রিকট অয়েল অন্যান্য এসেন্সিয়াল অয়েলের সাথে মিলে নিজেদের কার্যকারিতা আরো বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে এবং বয়স্ক ত্বকের বলিরেখা,শুষ্কতা,স্কিন লুজ হয়ে যাওয়া এগুলো সমস্যা আশানুরুপ ভাবে কমিয়ে নিয়ে আসে।

 

 

এই অয়েলগুলো ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্বার্শপ্রতিক্রিয়াগুলো কি কি হতে পারে চলুন জেনে নেই:

যেহেতু এসেন্সিয়াল অয়েলগুলো গাছ,গুল্ম ইত্যাদি থেকেই সংগৃহীত হয় তাই এগুলোর সাইড এফেক্টস তুলনামুলকভাবে কম।কিন্তু তারপরেও ত্বকের ধরনের জন্য অনেকের ক্ষেত্রে কিছুটা এলার্জি বা অস্বস্তি হতে পারে।চলুন তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেই।

যে কারোরই যেকোন নিদ্রিস্ট অয়েলে সাধারনত নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো হলেও হতে পারে:
.ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া।
.লাল লাল দাগ এবং সাথে চুলকানি যেটাকে রক্তস্ফোটও বলে।
.গুটি গুটি ছোট দানা
৪.চুলকানি
৫.নাক থেকে পানি ঝড়া
৬.হাঁচি হওয়া ,এগুলো হতে পারে।

 

এগুলো টুকটাক হতে পারে হয়তোবা। হয়ে আবার সেরেও যায়।কিন্তু যদি অতিমাত্রায় হয় সেক্ষেত্রে সেই নিদ্রিস্ট অয়েলের ব্যাবহার বন্ধ করে দিতে হবে।তাছাড়া অনেক সময় এনাফিলিক্সিস নামক স্কিন এলার্জি হতে পারে।এটা অনেক মারাত্নক ধরনের স্কিন এলার্জি যাতে এমন অনুভূত হবে যে ত্বকে মৌমাছি বা বোলতা কামড় দিয়েছে।এটা এতটাই মারাত্নক যে এটা শ্বাসের ক্ষেত্রেও সমস্যা ঘটিয়ে দিতে পারে।এরকমটা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

সিট্রাস গ্রুপ ভুক্ত অয়েলগুলো ব্যাবহারের ক্ষেত্রে যেটা খেয়াল রাখতে হবে যে অয়েলগুলো ব্যাবহারের তাৎক্ষণিক পরে বা আরো কিছু সময় পরে সূর্যালোকের সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না।যেমন লেমন অয়েল, গ্রেপসীড অয়েল বা অন্যান্য সিট্রাসগ্রুপভুক্ত এসেন্সিয়াল অয়েলগুলো ব্যাবহারের সময় সূর্যালোক এভয়েড করতে হবে।

সেজন্য যেকোন এসেন্সিয়াল অয়েল ব্যাবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেয়া উচিত।

তারুণ্যময় ত্বক আমরা সবাইই চাই।ত্বকের জেল্লা এবং সৌন্দর্য ধরে রাখতে চাই।সেজন্য এই সমস্ত এসেন্সিয়াল অয়েল ও ক্যারিয়ার অয়েলগুলো হতে পারে আমাদের আদর্শ সহযোগী।অনেকগুলো অয়েল সম্পর্কেই আমরা আলোচনা করেছি।আপনি আপনার পছন্দমত অয়েল নিয়ে স্কিন কেয়ার রুটিনে যোগ করতে পারেন।আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি’র একটা রিপোর্টে এটা উল্লেখিত হয়েছে যে সাধারনত রিঙ্কলস এর সমস্যা সমাধানের জন্য কোন প্রডাক্ট বা রেজিম কার্যকরী হতে আনুমানিক তিন মাস মত সময় লাগতে পারে।সেক্ষেত্রে তিন মাস বাদে নতুন কোন একটি অয়েল ইউজ করে দেখা যেতে পারে।তাই,কোন একটি অয়েল ব্যাবহার করে উপকারীতা পেলে আরেকটি অয়েল চুজ করতে চাইলে তার আগে ডার্মাটোলজিস্ট এর সাজেশন নিয়ে প্রয়োজনীয় অয়েলটি সিলেক্ট করে নিতে পারলে সম্ভাব্য পজিটিভ এবং আশানুরূপ ফলাফল দেবে।

 

সুস্থ, সুন্দর তারুণ্যদীপ্ত ত্বক ধরে রাখতে চাইলে নিজের প্রতি এবং ত্বকের যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ গুলোর প্রতি আমরা থাকবো সচেতন।

আপনারা চাইলে আমাদের অর্গানিকাওনের পেজ থেকে  আপনার প্রয়োজনমতো অয়েলটি নিয়ে নিতে পারেন। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের অয়েল পেয়ে যাবেন সুলভ মূল্যে এবং এরা আপনাকে দেবে সম্পূর্ণ হালাল,ন্যাচারাল অয়েলের নিশ্চয়তা।


সব অয়েলগুলো দেখার জন্য এবং কেনার জন্য এখানে ক্লিক করুন : Essential Oil

 

আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থতার সাথে।