প্যাচ টেস্ট কি? কিভাবে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের প্যাচ টেস্ট করবেন

patch test details & process

নতুন কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করার পূর্বে প্যাচ টেস্ট করে নিলে কনফার্ম হওয়া যায় যে প্রোডাক্টটি আপনার স্কিনে স্যুট করবে কিনা। প্রোডাক্ট এ যদি এমন কোনো উপাদান থাকে যে উপাদানের প্রতি আপনার স্কিন সেনসিটিভ তাহলে তা আপনার স্কিনে র‍্যাশ, লালচে ভাব, ইনফ্লামেশন তৈরি করতে পারে। 

 

প্যাচ টেস্ট আসলে কি?

 

যারা এখনো জানেন না প্যাচ টেস্ট(Patch Test) কি, তাদের জন্যে, এটি হলো এক ধরনের পরীক্ষা যা নির্ধারন করে দেয় কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট আপনার স্কিনের জন্যে উপযোগী কিনা বা কোনো রিয়েকশন দেখায় কিনা। মূলত এসব প্রোডাক্টে থাকা বিভিন্ন উপাদানের প্রতি শরীরের সেনসিটিভিটি থেকে রিয়েকশন দেখা দেয়। এই রিয়েকশনের মধ্যে হতে পারে র‍্যাশ, ইচিনেস, লালচে ভাব, বার্নিং সেনসেশন, ব্রণ ইত্যাদি। প্যাচ টেস্ট শরীরের খুব সামান্য ও কম নোটিশেবল অংশে করা হয়, যাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটি চোখে কম পড়ে। 

কোনো নির্দিষ্ট সাবসটেন্সের প্রতি শরীরের এলার্জিক রিয়েকশন সাধারণত দুভাবে নির্ণয় করা হয়। একটি হলো Skin Prick Test এবং Specific IgE Blood Test। স্কিন প্রিক টেস্টে ত্বকের উপর বিভিন্ন এলার্জেন রেখে ত্বক ছিদ্র করে ব্লাড স্ট্রিমে কানেক্ট করা হয়। এটি সবচেয়ে কমন ও সুইটেবল এলার্জি টেস্ট। তবে ছোট বাচ্চা ও যাদের স্কিনের কন্ডিশন অনেক খারাপ তাদের ক্ষেত্রে এই টেস্ট রিকমেন্ডেড না। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় টেস্টটি করা হয়। এসব টেস্টের সাহায্যে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, খাবার ও অন্য যেকোনো সাবসটেন্স এর জন্যে আপনার শরীরের এলার্জিক রিয়েকশন নিখুতভাবে চেক করতে পারেন। এই টেস্ট কেবল প্রোফেশনাল-ই করতে পারবেন। তবে এই লেখায় বাসায় কিভাবে প্যাচ টেস্ট করবেন সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

 

কাদের প্যাচ টেস্ট করা উচিৎ

 

অনেকেই মনে করেন যাদের স্কিন সেনসিটিভ তাদের-ই কেবল প্যাচ টেস্ট করতে হবে। বিষয়টি আসলে সত্যি নয়। এমনও যদি হয় যে, পূর্বে ব্যবহৃত কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট এর প্রতিই আপনার স্কিন রিয়েক্ট করেনি, তবুও নতুন কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহারের পূর্বে আপনার প্যাচ টেস্ট করে নেয়া উচিৎ। আরেকটি বিষয় হলো প্রত্যেকের স্কিন-ই কোনো না কোনো সাবসটেন্সের প্রতি সংবেদনশীল। এই অর্থে সবার স্কিনই সেনসিটিভ। তাই নতুন কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট শুরু করার পূর্বে প্রত্যেকের অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেয়া জরুরী। একটানা কয়েক বছর একই প্রোডাক্ট ইউজ করার পর হঠাৎ সেই প্রোডাক্টের প্রতিও স্কিন সেনসিটিভ হতে পারে। তাই প্রত্যেকেরই নতুন প্রোডাক্ট শুরু করার পূর্বে, কোনো অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার পর, পূর্বে ইউজ করা প্রোডাক্টগুলোর প্যাচ টেস্ট করে নেয়া উচিৎ।

 

নিজে নিজে কিভাবে প্যাচ টেস্ট করবেন

 

প্রোফেশনাল প্যাচ টেস্ট এর পদ্ধতি ও স্থান ভিন্ন, এই টেস্ট কেবল এক্সপার্ট-ই করতে পারেন, যেটার মাধ্যমে নিখুত রেজাল্ট পাওয়া যাবে। তবে আমরা এখন ঘরে বসে কিভাবে প্যাচ টেস্ট করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করব। 

প্রথমে একসাথে কয়েকটি প্রোডাক্ট টেস্ট করা যাবে না। এতে একচুয়াল রেজাল্ট পাওয়া কঠিন। তাই সিংগেল টেস্ট করতে হবে। 

প্যাচ টেস্ট এর জন্যে প্রথমে স্থান নির্ধারন করতে হবে। এক্ষেত্রে কানের নিচে, গলায়, কনুই এর বিপরীত পাশে বা ইনার আর্ম চুজ করা যেতে পারে। যেখানে প্যাচ টেস্ট করতে চান, প্রথমেই সেই স্থান ভালোভাবে ক্লিন ও ড্রাই করে নিতে হবে। এবং আগে থেকেই সেখানো কোনো প্রোডাক্ট লাগানো নেই এটা নিশ্চিত করতে হবে। ক্লিন করার সময় এলকোহল প্যাড ইউজ না করে নরমাল ক্লিনজার ইউজ করুন। 

অল্প জায়গায় সামান্য পরিমান প্রোডাক্ট লাগিয়ে সেটি বেন্ডেজ দিয়ে ডেকে দিতে পারেন যদিও এটি আবশ্যক নয়। এবার কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা এটিকে রেখে অবজার্ব করুন। যদি কোনো সমস্যা নাহয় তাহলে পরবর্তিতে আরও সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা একই জায়গায় প্রোডাক্টটি লাগিয়ে পুনরায় অবজার্ব করুন।  যদি কোনো র‍্যাশ, লালচে ভাব, ইচিং বা অন্য কোনো সমস্যা নাহয় তাহলে আপনার জন্যে প্রোডাক্টটি সেইফ। 

আর যদি কোনো রিয়েকশন দেখা যায় সেক্ষেত্রে প্রোডাক্টটি ইউজ করা বন্ধ করুন। সামান্য ময়েশ্চারাইজারের উপর লাগিয়ে আরেকবার চেক করে দেখতে পারেন। অনেক সময় ময়েশ্চারাইজারের সাথে ইউজ করলে আর কোনো সমস্যা হয় না। তবে আপনি যদি প্যাচ টেস্টে সিভিয়ার কোনো রিয়েকশন দেখতে পান, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টের সাথে কনসাল্ট করতে পারেন।  তিনি আপনাকে আরও বিভিন্ন টেস্ট করে ঠিক কোন স্পেসিপিক উপাদানের জন্যে আপনার স্কিন রিয়েকশন দেখাচ্ছে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন। অনেকের নির্দিষ্ট ইনগ্রিডিয়েন্টে এলার্জি থাকে, যে যে প্রোডাক্টে সেই ইনগ্রিডিয়েন্ট থাকবে সেই প্রোডাক্টগুলোতে স্কিন সেনসিটিভিটি দেখাবে। 

প্যাচ টেস্টে কোনো সমস্যা না হলেও ভালোভাবে অবজার্ব করুন টেস্টের পর ঐ স্পট অনেক ড্রাই হয়েছে কিনা। যদি হয় তাহলে পরবর্তিতে এটি ফেইসে ইউজ করলে সম্পূর্ণ ফেইস ড্রাই হয়ে যেতে পারে। 

 

কোন কোন ইনগ্রিডিয়েন্টের কারনে ইরিটেশন হতে পারে

 

সত্যি বলতে অনেক জেন্টল ইনগ্রিডিয়ন্টও ইরিটেশনের কারণ হয়। প্রত্যেকের স্কিন টাইপ আলাদা, তাই জগতের যেকোনো উপাদানের জন্যে আপনার স্কিন এলার্জিক হতে পারে। তবে আর্টিফিশিয়াল ফ্রাগরান্স তুলনামূলক অধিক এলার্জিক। অনেকক্ষেত্রেই প্যারাবেন, সালফেট স্কিনে একজিমা, সোরিয়াসিস পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে ন্যাচারাল অর্গানিক প্রোডাক্টগুলো অনেকটাই নিরাপদ। তবে আপনি নেচারাল বা আর্টিফিসিয়াল যেই ধরনের প্রোডাক্ট-ই ইউজ করেন না কেন প্রথমে সেটির প্যাচ টেস্ট করে নিন। 

আশা করি এই লেখায় আপনারা প্যাচ টেস্ট নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।  লেখাটি সংক্রান্ত অথবা স্কিনকেয়ার রিলেটেড কোনো বিষয়ে আপনাদের কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানিয়ে দিন।