ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বক আসলে কি? এমন ত্বকের যত্নে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

একনি কি

একনি কি?

ব্রণ (একনি) সম্পর্কে জানেনা  বা  এই সমস্যার ভুক্তভোগী হয়নি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। জীবনের কোন না কোন সময় কম বেশি সবাই আমরা এই সমস্যাটা ফেস করি। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা অনেক বেশি  মাত্রায় হয়।এমনকি সারা বছর ধরেও তাদের হয়তো এই প্রবলেম চলতেই থাকে। এই ধরনের ত্বকে খুব সহজেই ব্রণ(একনি) দেখা দেয়,ব্ল্যাকহেডস,হোয়াইটহেডস,অন্যান্য ধরনের ব্রণ জাতীয় সমস্যাগুলো হতেই থাকে।

সাধারনত এই ধরনের ত্বক অতিমাত্রায় অয়েলি হয়, ব্রণের মুখ বন্ধ হয়ে থাকে, ত্বকে চুলকানি হয়, জ্বালাপোড়া হয়, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়। সহজেই ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। এক কথায় বলা যায়, যে ধরনের ত্বক অতিমাত্রায় সংবেদনশীল, ব্রণের সমস্যায় ত্বক সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে ও ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই ধরনের ত্বককেই মুলত ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বক বলা হয়। তখন এটা শুধুমাত্র টিনেজ স্কিন ইস্যু থাকেনা বা সাধারন ব্রণ(একনি) প্রবলেমের পর্যায়েও থাকেনা। এক্ষেত্রে বছরের অনেকটা সময়ব্যাপী ব্রণের সমস্যা ফেইস করতে হয় ।

নরমাল ত্বকের অধিকারী একজন মানুষ আর ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের অধিকারী একজনের ত্বকের ক্ষেত্রে ব্রন(একনি) প্রবণ ত্বকের মানুষদেরকে ত্বকের যত্ন নিতে অনেক বেশি সমস্যা ফেইস করতে হয়।

এই ধরণের ত্বক হলে সেক্ষেত্রে অনেক গুলো বিষয় জানা জরুরি। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক সেই বিষয়গুলো।

 

ব্রণ (একনি) প্রবণ ত্বকের সাধারণ লক্ষন

 

সাধারনত নন ইনফ্ল্যামেটরী আর ইনফ্ল্যামেটরী একনি হলে এটাকে ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বক বলা যায় না। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডস । এগুলো হয় এবং কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন,ঘরোয়া টোটকা এপ্লাই করে এগুলো সেরেও যায়।

কিন্তু লালচে,ব্যথাযুক্ত, পুঁজযুক্ত ব্রণ(একনি) যেমন, নডিউল, সিস্টিক, এবসেস ইত্যাদি সারানো কস্টসাধ্য এবং দীর্যদিন থাকে।এছাড়াও দেখা যায় যে এগুলো বারবার হতেই থাকে । সহজে নির্মূল তো হয়ইনা বরঞ্চ জীবনযাপন ,খাবারদাবারে অল্প কিছু অনিয়ম হলেও ত্বক আরো বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ে।এই ধরনের ত্বক ই আসলে ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বক।

 

ব্রণ (একনি) প্রবণ ত্বক হওয়ার কারণ

 

ব্রণের স্বাভাবিক কারণগুলো তো আমরা কম বেশি সবাই জানি। ত্বকের যত্ন ঠিকঠাক মত না নেয়া, অত্যধিক চিন্তা বা স্ট্রেস,অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ হওয়া,পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া,বেশি মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া,হরমোনাল, বংশগত এগুলোই সাধারনত ব্রণের কারণ।কিন্তু ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বক যাদের তাদের জন্য এ কারণগুলোর সাথে  আরো কিছু অন্যান্য  ব্যাপার এই  ধরনের ত্বকের সমস্যা  আরো বাড়িয়ে দেয়। উপরোক্ত কারণগুলোর সাথে আরও কিছু কারণ ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের সমস্যার জন্য দায়ী।

 

আপাতদৃষ্টিতে এই কারণগুলো নিরবভাবেই ব্রণের সমস্যা অনেকটাই প্রকট করে তোলে। চলুন তাহলে জেনে নেই কারণগুলো:

১.ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে অনেকে ত্বক এত বেশি শুস্ক করে ফেলেন যেটা ব্রণ(একনি) প্রবণতা আরো বাড়িয়ে দেয়।

.অনেকের অনেক খাবারে এলার্জি থাকতে পারে কিন্তু হয়তো তিনি সেটা জানেন না বা এখনো আইডেন্টিফাই করে উঠতে পারেননি।কিন্তু হয়তো তিনি সেটা খাচ্ছেন এবং সেটার কারণে এলার্জিক রিএকশন  হয়ে  ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের  যত্ন নেবার পথে আরো অনেক বেশি ক্ষতি করছে।

৩.অনেক বেশি পরিমাণ এবং লো কোয়ালিটির কসমেটিকস প্রডাক্ট ইউজ করলেও ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের সমস্যা আরো অনেক বেড়ে যায়।

৪.অতিরিক্ত আলোতে অস্বস্তি,অতিরিক্ত পরিমাণে ভীত হয়ে পড়ার স্বভাব বা যেকোন কিছুতেই অনেক বেশি অস্থিরতা বা ছটফটানি স্বভাবও কিন্তু এই ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের সমস্যায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

আমাদের যাদের অতিরিক্ত ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বক তারা এই সমস্ত বিষয়গুলোর প্রতিও নজর দেব।

 

ব্রণ (একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন

 

এখন কথা হলো যে, ব্রণ(একনি) সমস্যায় ত্বকের যত্ন নেয়ার প্রচলিত কিছু নিয়ম কানুন এবং অন্যান্য ব্যাপারাদি তো আমরা কম বেশি সবাই ই জানি। কিন্তু ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নিতে গেলে এগুলোর সাথে সাথে আরো কিছু ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।

 

চলুন তাহলে জেনে আসি যে ব্রন(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নিতে আরো কি কি বিষয়ে নজর রাখা জরুরি।

 

১.কঠিন এবং রাফ স্ক্রাবিং করা যাবেনা:

ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকে স্ক্রাবিং খুবই জরুরি। মৃত চামড়া তুলে আনতে,মরা কোষ সরিয়ে ফেলতে, মেকাপ এর আটকে থাকা অবশিস্টাংশ সরাতে স্ক্রাবিং খুবই জরুরি।

কিন্তু এটা করতে যেয়ে অতিরিক্ত স্ক্রাবিং করে ফেলি আমরা অনেকেই।যা আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।সফ্ট এবং মাইল্ড স্ক্রাবার  দিয়ে এক্সফোলিয়েটিং করতে হবে।

 

২.জেন্টল এবং মাইল্ড ক্লিনজার চুজ করতে হবে:

ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে ত্বকের যত্নে  যেন নরম,কোমল এবং কেমিক্যালবিহীন ক্লিনজার সিলেক্ট করি।এই ধরনের ত্বকের জন্য উইচ হেজেল,টি ট্রি জাতীয় ক্লিনজার গুলো আমরা লিস্টে রাখতে চেস্ট করবো।

 

৩.অনেকে ভাবেন যে ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নিতে গেলে হয়তবা ময়েশ্চারাইজার ইউজ করার দরকার নেই।কারন ত্বক তো এমনিতেই অয়েলি।কিন্তু এটা করা যাবেনা। ত্বক অতিরিক্ত শুস্ক হয়ে গেলেও ব্রণ(একনি) বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু এটা খেয়াল রাখতে হবে যে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজারটি নন কমেডোজেনিক এবং অয়েল ফ্রি হবে।

 

.চুলের যত্নের দিকেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।চুল ও মাথার ত্বক পরিস্কার রাখা খুবই জরুরি।

 

.সাধারনত ব্রণের সমস্যায় পানি তো পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে বলা হয়ই কিন্তু ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নিতে গেলে এই ব্যপারে আরো বেশি কেয়ারফুল হতে হবে।নিয়ম করে পর্যাপ্ত পানি নিদ্রিস্ট সময় অন্তর পান করতে হবে।

 

৬.অতিরিক্ত এবং অনেক ভারী প্রডাক্ট দিয়ে মেকাপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।যথাসম্ভব হালকা এবং সফিস্টিকেটেড মেকাপ প্রডাক্ট ইউজ করার ট্রাই করতে হবে।সুন্দর, লাবন্যময় এবং ব্রণমুক্ত ত্বক পেতে হলে কিছুদিন নাহয় আর্টিফিশিয়াল প্রডাক্ট আমরা কম ব্যবহার করলাম।এটুকু তো করতে হবেই।

 

৭.নন কমেডোজেনিক স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ইউজ করতে হবে।

 

.বিছানার চাদর,বালিশের কভার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটা খুবই জরুরি।

 

৯.পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং ডায়েটে অন্যান্য যা নিয়মকানুন অলরেডি আমরা জানি সেগুলোর সাথে  আলাদা করে অবশ্যই ভিটামিন এ,ডি,ই ছারাও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে সেটার প্রতি খেয়াল রাখবো।

 

১০.মেকাপ ব্রাশ এবং পাফ যেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।

 

ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নিতে গেলে অন্যান্য ব্যাপার গুলোর সাথে এই সমস্ত বিষয় খেয়াল রাখাটাও অনেক জরুরি। কারণ সমস্যাটা যেহেতু মারাত্বক পর্যায়ের তাই সমাধানও সময়সাপেক্ষ এবং জটিল তো হবেই।

 

মনে রাখা জরুরি:

ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নেয়াটা দীর্যমেয়াদি এবং কঠিন। শুধুমাত্র অল্প কিছুদিন ইউজ করেই একটা রেজাল্ট পেয়ে যাবো এটা ভাবলে ভুল হবে। বরং এভাবে ভাবলে সেটা স্ট্রেস বাড়িয়ে তুলবে। তাই ব্রণ (একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে কোনোভাবেই ধৈর্য হারানো যাবে না।

 

সাধারণ ব্রণ এবং ব্রণ প্রবণ ত্বক, দুটো কাছাকাছি হলেও যত্নের বেলায় কিছু আলাদা ব্যাপার রয়েছে। ত্বকের যত্নের বেলায় ব্রণ(একনি) প্রবণ ত্বকের যত্ন নেওয়া তুলনামুলক সময়সাপেক্ষ। আর ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে গেলে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন,সঠিক ভাবে ত্বকের যত্ন নেয়া,সুষম ডায়েট ,শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা এগুলো তো যেন আছেই।

সাথে আনুষঙ্গিক আরো যা যা কিছু করতে হবে সে বিষয়ে আমরা ওপরে আলোচনা করেছি। তারপরেও যদি সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

আপনাদের নানারকম সমস্যায় আমরা অর্গানিকাওন রয়েছি আপনাদের পাশে স্কিনকেয়ার,হেয়ারকেয়ার এবং বডিকেয়ার এর জন্য নানাবিধ সব প্রাকৃতিক সব উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরী কেয়ারী প্রডাক্টস নিয়ে। বিশুদ্ধ,কেমিক্যাল বিহীন,সিন্থেটিক ফ্র্যাগরেন্সবিহীন এবং ত্বকের কোন ক্ষতি না করে নিজেকে সুন্দর,লাবণ্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে অর্গানিকাওন হলো আপনার নিরাপদ যাত্রার সঙ্গী। ব্রন হওয়ার কারন বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে পারেন অর্গানিকাওনের এই আর্টিকেল থেকে।

 

আজ এ পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থতার সাথে এই কামনায় এখানেই শেষ করছি।