ড্রাই স্কিন কেন হয়? কিভাবে শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিবেন

ড্রাই স্কিন খুব কঠিন শারীরিক সমস্যা না হলেও কমন একটি স্কিন প্রব্লেম। এটি স্কিন সচেতান ব্যক্তিদের জন্যে খুবই বিরক্তিকর । বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের প্রভাব যখন ভিজিবল হয় তখন সেটা বিড়ম্বনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অনেকে এজন্যে ইনসিকিউরিটি ফিল করে। ড্রাই স্কিনের সাথে যদি অনেক বেশি সেনসিটিভিটি থাকে তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এই সিচুয়েশনে স্যুইটেবল স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বেচে নেয়া কঠিন। যদিও ড্রাই সেনসিটিভ স্কিনের জন্যে ন্যাচারাল অনেক রেমেডিস আছে, যেগুলোতে কোনো কেমিক্যাল বা টক্সিন নেই। ধারাবাহিকভাবে ন্যাচারাল রেমেডি নিলে দ্রুতই রেজাল পাওয়া যায়। 

 

ড্রাই স্কিন কি?

স্কিনের জন্যে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। স্কিন সফট, ময়েশ্চারাইজড ও হাইড্রেটেড রাখার জন্যে শরীরে ন্যাচারেলি পানি ও অয়েল উৎপন্ন হয়। যদি শরীর এ দুটি উপাদান পর্যাপ্ত না পায় তাহলে তখন স্কিন শুষ্ক রুক্ষ দেখায় যেটাকে আমরা ড্রাই স্কিন বলি। তবে স্কিন ড্রাই হলেও মনে রাখতে হবে এটি আপনাকে বাহিরের বিভিন্ন টক্সিন্স, ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। ত্বক যদি স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকে তবে এটি প্রোপারলি কাজ করবে না। 

 

ড্রাই স্কিন কেন হয়?

পর্যাপ্ত ময়েশ্চারের অভাবে ড্রাই স্কিন হলেও আরও কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে যেগুলোর কারনে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা হতে পারে। 

 

জেনেটিক্স

এটার উপর আপনার হাত নেই। গবেষনা থেকে পাওয়া যায় জেনেটিক্যালি এই সমস্যা হতে পারে অর্থাৎ আপনার বাবা মা বা পরিবারের অন্য কারও এই সমস্যা থাকলে আপনারও তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রোটিন ফাইলাগগ্রিন নিয়ে একটি রিসার্চে দেখা যায়, এটি স্কিনের বিভিন্ন ফর্ম তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, জিনে মিউটেশনের সময় প্রোটিন ফাইলাগ্রিন তৈরি হয় যা স্কিনের বিভিন্ন কন্ডিশন যেমন ড্রাইনেস, একজিমা ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারে। (রিসার্চ রেফারেন্সঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2721001/ )

 

লং ও হট শাওয়ার

রিলাক্স ও স্ট্রস ফ্রী হওয়ার জন্যে আমরা মাঝে মাঝে লং ও হট শাওয়ার নিয়ে থাকি। এ ধরনের শাওয়ার বডির ময়েশ্চারাইজার চুষে নিয়ে স্কিন ড্রাই করে ফেলে। 

 

সোপ

বেশিরভাগ শ্যাম্পু ও ডিটারজেন্টের মতো কিছু সাবানও ত্বকের আদ্রতা কমিয়ে দেয়। তাই সাবান সিলেক্ট করার সময় ময়েশ্চাইজিং ইনগ্রিডিয়েন্ট আছে এমন সোপ নিতে পারেন। সেনসিটিভ স্কিন হলে এটি আরও বেশি জরুরি।

 

হার্ড ওয়াটার 

পানিতে উচ্চ মাত্রার খনিজ পদার্থ থাকলে সে পানিকে হার্ড ওয়াটার বলে। আমাদের দেশের বিশেষ করে শহর অঞ্চলে আমরা যেসব পানি ব্যবহার করি সেগুলোতে দূষিত পদার্থের পাশাপাশি ভারী ধাতু থাকে যেগুলো পানির হার্ডনেস এর জন্যে দায়ী। এ খর পানি স্কিনে শুষ্কতা তৈরি করে। এছাড়া ভারী ধাতুগুলো ত্বকের প্রয়োজনীয় অয়েলকে ঘন পদার্থে রুপান্তর করে ও ময়েশ্চারাইজার শোষনে বাধা দেয়। সেনসিটিভ স্কিনের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে।

 

ফ্রাগরান্সেস

সেন্টেড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ত্বকে শুষ্কতা তৈরি করতে পারে। 

 

ওয়েদার

শুষ্ক আবহাওয়া বা অপর্যাপ্ত হিউমিডিটির কারনে স্কিন ড্রাই হতে পারে। 

 

ড্রাই স্কিনের লক্ষন কি কি?

ড্রাই স্কিনের অনেকগুলো ক্লিয়ার লক্ষন রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ড্রাই স্কিন ততই ভাল, কারন দ্রুত তা ফিক্স করতে পারবেন। 

ড্রাই স্কিনের এই লক্ষনগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারেঃ

 

স্কিন ফাটা

স্কিন বার্নিং

খসখসে ত্বক

স্কিন ইচিং

লুজ স্কিন বা রিংকলস

 

কারা ড্রাই স্কিন হওয়ার অধিক ঝুকিতে রয়েছেন?

 

এ বিষয়ে the American Academy of Dermatology Association থেকে পাওয়া তথ্যমতে,

যারা এমন স্থানে কাজ করে যেখানে বার বার পানি স্পর্শ করতে হয় যেমন নরসুন্দর, নার্স।

শীত প্রধান রিজিওনে যারা বসবাস করে।

৪০ বছরের অধিক বয়স্ক ব্যক্তি।

ফর্সা বা গাঢ় ত্বকের অধিকারি মানুষ।

যারা স্মোক করে।

 

শুষ্ক ত্বকের যত্নে কয়েকটি ন্যাচারাল রেমেডি

 

যদি আপনার ড্রাই স্কিনের সমস্যাগুলো গুরুতর পর্যায়ে না হয় তাহলে আপনি এই প্রাকৃতিক রেমেডি গুলো নিতে পারেন। 

 

ওটমিল বাথ

ওটমিল ড্রাই ও সেনসিটিভ স্কিনের জন্যে খুবই উপকারী নেচারাল উপাদান। ২০১৫ সালের একটি স্টাডি থেকে দেখা যায়, ওটমিলের নির্যাস এ এন্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টি অক্সিডেন্ট প্রোপার্টিজ রয়েছে, যেগুলো ড্রাই স্কিনের প্রব্লেম উপশমে হেল্প করে। 

 

কুমড়া বীজের তেল

ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা 3- এবং 6- ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ  কুমড়া বীজের তেল পুষ্টিকর উপাদানে পূর্ণ। এই নেচারাল রেমিডিটি আপনার ত্বকের আদ্রতা ও তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি ফ্রী রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে স্কিনকে রক্ষা করে। 

এছাড়া এই তেলে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি ও জিংক রয়েছে যা স্কিন টোনকে ইমপ্রুভ করে, ব্রণের প্রকোপ কমিয়ে দেয়। 

 

রোজহিপ অয়েল

বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন লাবন্যতা ও আদ্রতা হারায়। রোজহিপ অয়েলে এমন সব উপকারি উপাদান রয়েছে যেগুলো স্কিনের হাইড্রেশন ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এই প্রাকৃতিক তেলটিতে রয়েছে ফ্যাটি এসিড, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই ও সি। ফ্যাটি এসিড স্কিনের সেল ওয়াল স্ট্রং করে যাতে এটি হাইড্রেশন না হারায়। রোজহিপ অয়েল খুব সহজেই স্কিনে এবজর্ব হয় এবং এটি ত্বকের ডিপ লেয়ার পর্যন্ত পৌছে হাইড্রেশন বাড়িয়ে দেয়। 

 ২০১৫ সালের একটি রিসার্চে(https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4655903/ ) দেখা যায় রোজহিপ অয়েল স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করতে পারে। গবেষনায় অংশ নেয়া লোকেদের মধ্যে যারা রোজহিপ অয়েল ইউজ করেছে তারা তাদের স্কিনে ইমপ্রুভ দেখেছে।

 

ভিটামিন ই

ভিটামিন ই হলো প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধক। এটি সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে স্কিনকে রক্ষা করে। ড্রাই সেনসিটিভ স্কিনের জন্যেও এটি উপকারী।  আমাদের শরীর সাধারনত সেবামের মাধ্যমে ভিটামিন ই উৎপন্ন করে। শরীর যদি ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজনীয় সেবাম উৎপন্ন করতে পারে তাহলে এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। আর সেবাম কম উৎপন্ন হলে ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। 

আরগন অয়েল

আরগন অয়েল ড্রাই ও সেনসিটিভ স্কিনের জন্যে খুবই চমৎকার একটি নেচারাল রেমিডি। এর ভিটামিন ই, লিনোলিক এসিড, ফ্যাটি এসিড এর কম্বিনেশন স্কিনকে রাখে হাইড্রেটেড। এছাড়া এটি স্কিনকে সফট করার পাশাপাশি একজিমা উপশম করে। 

 

কোকোনাট অয়েল 

কোকোনাট অয়েল ড্রাই স্কিনের জন্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। ২০১৪ সালের একটি স্টাডিতে ( https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/15724344/ ) প্রাপ্ত তথ্যমতে, ত্বকের শুষ্কতা কমাতে কোকোনাট অয়েল পেট্রোলিয়াম জেলির মতো নিরাপদ। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে, নারকেল তেল ত্বকে লিপিডের পরিমান এবং স্কিনের হাইড্রেশন লেবেল অনেক বাড়িয়েছে । 

 

এলোভেরা

এলোভেরা জেল হাত ও পায়ের হাইড্রেশনের জন্যে খুবই উপকারী। ড্রাইনেস কমানোর জন্যে শরীরের শুষ্ক এরিয়ায় এলোভেরা জেল মেখে বেন্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিন। 

 

পরিশেষে, ড্রাই স্কিনের জন্যে দামি দামি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট যেগুলোতে ক্ষতিকর কেমিক্যালস রয়েছে সেগুলো ইউজ না করে বেচে নিন নেচারাল স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট। এগুলো আপনাকে ড্রাই স্কিন এর সমস্যা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে, এছাড়া এগুলো স্কিনের জন্যে অপেক্ষাকৃত সেইফ।