ব্রণ হওয়ার কিছু আনইউজুয়াল কারণ যা আমরা জানতামই না।

ব্রণ কেন হয়

ব্রণ(একনি) সমস্যার ভুক্তভোগী আমরা অনেকেই। স্বাভাবিক দৃস্টিতে হয়তো তেমন সমস্যা মনে হবে না ;কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই ব্রণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যে,মনোজগতে এবং আত্নবিশ্বাস এর ভীতও নাড়িয়ে দেয় অনেকটাই।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নেয়া অনেক ধৈর্য্যসাপেক্ষ ব্যাপার।

এখন কথা হলো যে, ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে ব্রণ হওয়ার কারণ গুলোও অর্থাৎ  ব্রণ কেন হয় তা  আমাদেরকে খুজে বের করতে হবে।

আমরা মোটামুটি কমন কিছু কারণ  জানি যে এই সমস্ত কারণে ব্রণ হয়। যেমন: ত্বকে ধূলো ,বালি ময়লা আটকালে, অয়েলি স্কিন হলে, হরমোনাল কারণে  ইত্যাদি।

কিন্তু সত্যি বলতে এগুলোর বাইরেও আরো কিছু কারণ রয়েছে যা আমরা সাদা চোখে বুঝতে পারিনা। এমনকি আমাদের কাছে মনেও হয় না যে এগুলোর কারনেও ব্রণ হতে পারে।  আজ আমরা জানবো এরকম আনইউজুয়াল কিছু কারণ এবং দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়-

ব্রণ হওয়ার কারণ

১.বংশগত

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে বংশগত কারণেও ব্রণ হয়। বংশে যদি অনেকেরই ব্রণের সমস্যা থেকে থাকে তবে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।

তাই বার বার ব্রণের সমস্যা হতে থাকলে বংশে কারো ছিল কিনা এটা জেনে নিতে পারলে ভালো। সেক্ষেত্রে সমস্যাটা হওয়ার ব্যাপারে ধারণা থাকলো।

 

২.নিদ্রিষ্ট কিছু ঔষধ

নানা কারনেই আমাদেরকে ঔষধ খেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে স্পেসেফিক কিছু ঔষধ সেবন করতে থাকলে সেখান থেকেও ব্রণ হতে পারে। যেমন: কর্টিকসটেরয়েডস,এন্টিডিপ্রেশনাল,এন্ড্রোজেনস এবং লিথিয়াম জাতীয় ঔষধ অনেকদিন ধরে নিতে থাকলে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়।

 

৩.সেলফোন ব্যাবহার

শুনতে কিছুটা স্ট্রেঞ্জ মনে হলেও অনেক দীর্ঘসময়  এবং দীর্ঘদিন ধরে সেলফোনের ব্যাবহার করতে থাকলে এখান থেকে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়,ময়লা ও তেল ছড়ায় ত্বকে।এতে করেও ব্রণ বেড়ে যায়।

 

৪.কসমেটিকস

মেয়েদের মুখে ব্রণ কেন হয়? কিছু স্কিন ও হেয়ার কেয়ার প্রডাক্টে ব্রণ এর পোরস এর মুখগুলো আটকে দেয়ার মত উপাদান থাকে যেগুলোর ব্যবহারে ব্রন বেড়ে যেতে পারে। মেয়েরা যেহেতু প্রসাধনী বেশি ইউজ করে তাই এটি মেয়েদের মুখে ব্রন হওয়ার অন্যতম কারন। তবে এক্ষেত্রে নেচারাল স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস অনেকাংশে সেইফ।

 

৫.হাই মিনারেল সমৃদ্ধ পানি

মিনারেল বা খনিজ পানি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী,কিন্তু অতিরিক্ত পরিমানে মিনারেল বা খনিজ পানির ব্যাবহার ব্রণের সমস্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

 

৬.দূর্বল পরিপাকক্রিয়া

পরিপাকক্রিয়া বা হজমপ্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে এর কারণে ব্রণের সমস্যা তুলনামুলক বেড়ে যায়।

 

৭.অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া:

অতিরিক্ত পরিমানে ঘামের সমস্যা হলে, এটাও অন্যতম একটা কারন ব্রণের সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার।

 

৮.শরীর ডিহাইড্রেটেড হওয়া

পর্যাপ্ত পরিমানে পানি না খাওয়া ব্রণ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারন যা আমরা জানলেও অনেক সময় সেভাবে হয়তো গুরুত্ব দেই না।

 

৯.টাইমলি খাবার না খাওয়া 

অনেক সময় আমরা ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ বা ডিনার স্কিপ করে যাই অথবা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকি। সেটা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দুটোই হতে পারে। কিন্তু এটা করা উচিত না আমাদের। অল্প করে হলেও খাওয়া উচিত। কারন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে এটা ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে তোলে যেটা ব্রণ সমস্যাকে প্রভাবিত করে।

 

১০.ভিটামিন এবং মিনারেলের অপর্যাপ্ততা

কিছু ভিটামিন যেমন ভিটামিন বি১২ এবং জিঙ্ক যদি বেশি মাত্রায় কমে যায় তাহলেও কিন্তু ব্রণ বেড়ে যায়।

 

১১.সান প্রটেকশন না নেয়া

ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নেয়ার মধ্যে অন্যতম হলো সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতে পারা। সানস্ক্রিন লোশন ইউজ করা তো জরুরি তা তো আমরা জানি ই,তারপরেও ছাতা,স্কার্ফ,ক্যাপ এগুলো ব্যাবহার করেও যতটা সম্ভব ত্বককে সুরক্ষিত রাখার ট্রাই করতে হবে। মুখে ও কপালে ব্রণ হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারন হলো সান প্রোটেকশন না নেয়া। 

 

১২.ডার্টি মেকাপ ব্রাশ ব্যাবহার করা

মেকাপ তো আমরা কম বেশি সবাই ই করি।কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে এই মেকাপ ব্রাশের কারনেও কিন্তু ব্রন বেড়ে যায়। মেকাপ ব্রাশ নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটা জরুরি।নাহলে এখান থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।

 

১৩.ধুমপান করা

ছেলেদের মুখে ব্রণ কেন হয়? ভেবে দেখেছেন কখনও। ধুমপান করার অভ্যাস তো এমনিতেই তেমন একটা ভালো না। এমনকি এটা ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতেও অনেকটা ভূমিকা রাখে।

 

১৪.বডি স্প্র বা সুগন্ধি

অনেকেরই কিছু বডি স্প্রে বা সুগন্ধিতে এলার্জি থাকে।এমনকি এগুলো থেকে ব্রণের সমস্যাও বেড়ে যায়।সেজন্য এগুলো ব্যাবহারের সময় বুঝে শুনে ব্যাবহার করতে হবে।

 

১৫.টুথপেস্ট

শুনতে কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলেও সোডিয়াম লরিয়েট সালফেট যুক্ত টুথপেস্ট ব্রণ(একনি) সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

 

১৬.আর্টিফিশিয়াল আলো

দীর্ঘসময় ধরে আর্টিফিশিয়াল আলো,মনিটরের আলো এসব বিশয়গুলোও ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

 

১৭.কেমিক্যালযুক্ত জিনিসের অতিরিক্ত সংস্পর্শে থাকা

কিছু নিদ্রিষ্ট কেমিক্যাল যেমন গ্যাসোলিন,ইঞ্জিন, টার জাতীয় উপাদানগুলোর অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যাবহার ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

 

১৮.টাইট ক্লথিং এবং হেডক্যাপ

অনেক বেশি টাইট জামাকাপড় এবং হেলমেট এর অনেক বেশি সময় ধরে ব্যাবহার ব্যাকটেরিয়া জন্মানোকে প্রভাবিত করে এবং এতে করে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়।

 

১৯.অলসতা

একদম নিরবিচ্ছিন্ন অলসতা এবং কর্মবিমুখতাও ব্রণ বাড়িয়ে তোলে।

 

২০.অনেক দীর্ঘসময়ের স্ট্রেস

দীর্ঘদিন ধরে যদি ক্রনিক স্ট্রেস চলতেই থাকে তবে এখান থেকেও ব্রণ বেড়ে যায়।

 

২১.হরমোনাল ক্ন্ট্রাসেপটিভ পিলস

হরমোনাল পিল দীর্ঘদিন ধরে সেবন করলেও ব্রণের সমস্যা প্রভাবিত হয়।

 

২২.লন্ড্রি ডিজারজেন্ট

কিছু লন্ড্রি ডিজারজেন্টে কিছু স্পেসেফিক সুগন্ধি এবং অন্যান্য উপাদান থাকে যা অনেক সময় ব্রণ বাড়িয়ে তোলে।তবে এটা নিজেকেও কিছুটা বুঝতে হবে যে কোনটায় সমস্যা হচ্ছে।

 

২৩.মাউথওয়াশ

কিছু মাউথওয়াশেও ব্রণ সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।এটা নিজেকে বুঝতে হবে।

 

২৪.ইনফেকশন্স

কিছু ইনফেকশন যেমন স্ট্রেপটোকক্কাস ইনফকশন্স এর কারনেও ব্রণ বেড়ে যায়।এই ধরনের ব্রন হলে তখন প্রচন্ড ব্যথাযুক্ত ব্রণের সমস্যা তৈরী হয় যা পরবর্তিতে স্কীন ক্যানসার ও হয়ে যেতে পারে। এটাকে বলা হয় একনি ফুলমিনা। যদিও এই সমস্যাটা কিছুটা রেয়ার।

 

২৬.সনা বাথ এবং স্টীম রুম

অনেক বেশি সময় ধরে সনা এবং স্টীম রুমে থাকার হ্যাবিট ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।

 

তবে এটাও জানা প্রয়োজন যে সব কারনগুলোই কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই সমস্যা করবে না। একেকটা জিনিসে একেকজনকে প্রভাবিত করতে পারে। ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে গেলে যত্নের পাশাপাশি কি কি কারনে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায় এগুলোর প্রতিও সতর্ক দৃস্টি রাখতে হবে।

অনেক যত্ন নেয়া হল কিন্তু ভেতরে ভেতরে কিছু একটা আমাদের সমস্যা অনেক বাড়িয়ে তুললো কিনা সেটার প্রতি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। উপরোক্ত কারনগুলো হয়তো শুনতে কিছুটা বেখাপ্পা লাগবে কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় এই সমস্ত কারনগুলোকেও দায়ী করা হয়েছে ব্রণ সমস্যা বাড়িয়ে তোলার ফ্যাক্ট হিসেবে।

 

আমরা সতর্ক থাকবো এবং খেয়াল রাখবো যে উপরোক্ত কারনগুলো কি আমাদের ব্রণের সমস্যাগুলো বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা।

সবাই ভালো থাকবেন সুস্থতার সাথে।