ব্রণ (একনি) আমাদের সবার জীবনের জন্য একটা দুঃস্বপ্নের মত।যে কারোরই ব্রণ হতে পারে।নানা কারণেই ব্রণ হয়ে থাকে।
যদিও হরমোনাল এবং বংশগত কারণ দুটোকে বেশি প্রাধাণ্য দেয়া হয়।প্রাথমিক দৃস্টিকোণ থেকে হয়তো ব্রণের সমস্যা খুব বেশি খারাপ মনে না হলেও অতিরিক্ত পরিমাণের ব্রণ কিন্তু আমাদের সৌন্দর্যকে অনেকটাই হ্রাস করে ফেলে।
আমরা ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে অনেকটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।আসলে হওয়ারও কথা বটে।সুন্দর লাবন্যময় ত্বকে যদি এরকম দাগছোপ,গর্ত,কালচে এবং অমসৃণ ধরনের ভাইবস চলে আসে সেক্ষেত্রে স্বভাবতই উদ্বিগ্নতা আসবে।
ব্রণ যদিও যেকোন বয়সেই হতে পারে তবে কিশোরী বয়সের ব্রণ হলে সেটা কিশোরী মনে প্রভাব ফেলে অনেক।এছারাও যে কারোর ই অতিরিক্ত ব্রণ সেই মানুষের সৌন্দর্য এবং মানসিক অবস্থার পাশাপাশি কনফিডেন্স লেভেল ও কমিয়ে দেয়।
এখন কথা হলো যে ব্রণ (একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য ডাক্তার বাড়ি ছোটার আগে আমরা কিন্তু ঘরোয়া ভাবেও অনেক কিছুই ট্রাই করতে পারি।
ঘরের উপকরণগুলো যেমন সহজলভ্য এবং ব্যবহার করতেও সুবিধা।নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে ইউজ করলে অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়।
কিন্তু সেজন্য আমাদের সবারই ভালোভাবে জানা থাকতে হবে যে কোন উপকরণ কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং তাহলেই পাওয়া যাবে হাইয়েস্ট বেনিফিটস।
তো আজ আমরা জানবো ঘরোয়া এমন চমৎকার সব উপাদান সম্পর্কে যেগুলোর সঠিক ব্যবহার আপনার ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নের জন্য একদম পারফেক্ট।
১.মধু:
বলা হয়ে থাকে যে জন্মের পর মুখে মধু দিলে নাকি ভাষা মিস্টি হয়।ঠিক তেমনিই ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নেও কিন্তু মধু মিস্টি ফলাফল দেয়।
আমাদের সবার ঘরেই বেশির ভাগ সময়েই এটা থাকেই।
এটায় প্রচুর এমিনো এসিড,ভিটামিন,মিনারেল,আয়রন,জিঙ্ক তো রয়েছেই;পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্টস।আর এটা এন্টিইনফ্ল্যামেটরী,এন্টিব্যকটেরিয়াল ও এন্টিঅক্সিডেন্টাল ন্যাচারের।
মধু ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে কি উপকার করবে:
১.এটা ত্বকের জীবাণু নিরোধক হিসাবে কাজ করে।
২.বিশেষ করে প্রপাইনোব্যকটেরিয়াম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে মধু বিশেষ পারদর্শী।
৩.ত্বকের ক্ষত সারাতে সহায়তা করে।
৪.বন্ধ হয়ে যাওয়া পোরস এর মুখ খুলতে সাহায্য করে।
৫.ত্বকের জ্বালপোড়া কমায়,আরাম দেয়।
কিভাবে ব্যাবহার করা যাবে মধু ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে:
মধু সরাসরি ত্বকে লাগিয়ে নিতে হবে।পাতলা লেয়ারিং করে লাগিয়ে ১০ মিনিট মতো রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২.শশা:
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে শশা দারুন কার্যকরী।শশাতে রয়েছে প্রচুর হাইড্রেটিং গুনাবলি যে কারণে ত্বক শান্ত করে।ব্রণ (একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে গেলে অবশ্যই শশা ব্যবহার করা উচিত।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে শশা কি উপকার করে:
১.ব্রণ হলে ত্বকে যে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি হয় এগুলো কমায়।
২.ত্বকের ভেতরের ময়লা পরিস্কার করে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
৩.ত্বকে শীতলতা আনে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৪.ব্রণ হলে ত্বক যে অনেকটা অনুজ্জল হয়ে যায় সেগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে শশা যেভাবে ব্যবহার করা যায়:
১.শশা পাতলা স্লাইস করে মুখে লাগিয়ে রেখে ১০ মিনিট মত রেখে ধুয়ে ফেলুন।
২.শশা থেঁতো করে নিয়ে বা রস করে নিয়েও ত্বকে এপ্লাই করা যায়।
৩.শশা কুচো করে পানির সাথে মিশিয়ে বরফ করে নিয়ে ত্বকে
ঘসলেও ভালো কাজ করে।
৳ 850.00
৩.কাঁচা হলুদ :
কাঁচা হলুদ উচ্চমাত্রার এন্টিইনফ্ল্যামেটরী গুনাবলি সমৃদ্ধ।
আর আমাদের সবার বাসাতেই এটা প্রায়সময় থাকেই।যদি কাঁচা হলুদ নাও থাকে তবে গুড়ো হলুদ ব্যবহার করেও উপকার পাওয়া যায়।
কাঁচা হলুদ ব্রণ সমস্যায় যা উপকার করবে তা হলো:
১.এন্টিইনফ্ল্যামেটরী গুণাবলির হওয়ায় এটি ব্রণের জীবানূর সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে।
২.ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকে হাত ছোয়ানো বা খোটাখুটির ফলে ত্বক যে দাগযুক্ত হয়ে যায় তা দূর করতে হলুদ খুব ভালো কাজ করে।
৩.ব্রণ প্রবণ ত্বকের কালচে হয়ে যাওয়া কমায়।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে হলুদ গুড়ো যেভাবে ব্যবহার করা যায়:
১.কাঁচা হলুদ হলে তা বেটে ব্রণ বা পিঙ্পলের ওপর সরাসরি লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলা যায়।
২.আর গুড়ো হলুদ হলে তার সাথে সামান্য পরিমাণ পানি মিশিয়ে নিতে হবে।
৪.রসুন:
আমাদের অনেকের ই হয়তো জানা নেই যে ব্রণ সমস্যা সমাধানে আমাদের হাতের কাছে থাকা রসুন কতটা কার্যকরী।
রসুন একটি দূর্দান্ত এন্টিব্যাকটেরিয়াল,এন্টিফাঙ্গাল,এন্টিভাইরাল ধরনের উপাদান।এতে আরো রয়েছে এলিসিন নামক এন্টিসেপটিক।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে রসুন যা যা উপকারিতা দেয়:
১.এটি ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস করতে দারূন কার্যকর।
২.ব্রণ হয়ে ত্বক ফুলে ওঠে অনেক সময়।রসুন সেটা দূর করে।
৩.ইণ্ফেকশনের কারণে ত্বকে যে জ্বালাপোড়া হয়,রসুন সেটা কমাতে সাহায্য করে।
ব্রণ(একনি) আক্রান্ত ত্বকের যত্নে রসুন কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে:
১.রসুন মাঝ বরাবর কেটে দুভাগ করে নিয়ে সেটা ব্রণ আক্রান্ত জায়গাগুলোর ওপর হালকা হাতে ঘসতে হয়।কিছুক্ষণ পরে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হয়।
২.দুই তিন কোয়া রসুন নিয়ে থেঁতো করে পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত জায়গাগুলোতে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষন।
পরে পরিস্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।কিছুটা জ্বলতে পারে ত্বক।সেই অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করে ত্বকে রসুন এপ্লাই করতে হবে।
৫.লেবুর রস:
লেবুতে প্রচুর পরিমানে সাইট্রিক এসিড রয়েছে এবং এটি একটি উচ্চমাত্রার এন্টিসেপটিক এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট।আর এটি আমরা পেয়েও যাই হাতের নাগালেই।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে লেবু যা যা উপকার করে:
১.প্রচুর সাইট্রিক এসিড সেবাম প্রডাকশন কমাতে সহায়তা করে।
২.এন্টিসেপটিক কোয়ালিটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে দারুন কার্যকর।
৩.ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়।
৪.ব্রণ সমস্যায় ত্বক যে লালচে টাইপের হয়ে যায় সেটা দূর করে।
যেভাবে ব্যবহার করা যাবে লেবুর রস:
১.লেবুর রস সরাসরি ত্বকে লাগানো ঠিক নয়,তাই লেবুর রসের সাথে সামান্য চালের গুড়ো বা বেসন মিশিয়ে ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নেযার জন্য ব্যবহার করুন।
২.অতিরিক্ত ব্রণ হলে তখন পোরস এর ওপর লেবুর রস কটন বাড দিয়ে লাগিয়ে ৫/৬ মিনিট মত রেখে ধুয়ে ফেলুন।এরচেয়ে বেশি সময় ধরে রাখা যাবেনা।
৩.লেবুর ছোট একটা টুকরা নিয়ে পুরো মুখে ঘসে সাথেসাথেই ধুয়ে ফেলুন।
৬.দারুচিনি:
এটাও আরেকটি সহজলভ্য উপাদান যা আমাদের প্রায় ঘরেই থাকে।
এটি উচ্চ মাত্রার এন্টিব্যাকটেরিয়াল,এন্টিঅক্সিডেন্টাল এবং এন্টিফাংগাল ন্যাচার এর।
চলুন তাহলে জেনে নেই যে দারুচিনি ব্রণ যুক্ত ত্বকের সমস্যায় কি কি উপকার করবে:
১.এটা বন্ধ পোরস এর মুখগুলো খুলতে সাহায্য করে।
২.ত্বকে অক্সিজেন আরো ভালোভাবে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে যা ব্রণযুক্ত ত্বকে আরাম দেয়।
৩.এসট্রিনজেন্ট প্রপার্টি থাকায় ব্রণের কারণে হওয়া কালচে দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্নে দারুচিনি যেভাবে ব্যবহার করা যাবে:
১.দারুচিনির টুকরা পানির সাথে বেটে নিয়ে আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে।শুকিয়ে এলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২.দারুচিনি গুড়ো করে নিয়েও এভাবে ব্যবহার করা যায়।
৭.বরফ:
ঘরে থাকা উপাদানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন হলো বরফ।
যদিওবা প্রথমে মনে হবে যে জাস্ট বরফ ই তো ; কিন্তু এটা ব্রণ(একনি) সমস্যায় অনেক কার্যকরী।
চলুন তাহলে জেনে নেই যে ব্রণ(একনি) সমস্যাযুক্ত ত্বকের যত্নে বরফ কি কি উপকারিতা দেয়:
১.সবচেয়ে জরুরি যেটা তা হলো যে ব্রণযুক্ত ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে বরফ এক কথায় দূর্দান্ত।
২.ত্বক ফুলে ওঠা কমাবে।
৩.লালচে ও চুলকানো ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
৪.সিস্টিক পর্যায়ের ব্রণ বা এমনিতেও ত্বক যে ব্যথা করে সেটা সারাতে বরফ ভালো কাজ করে।
৫.ত্বকে ইনস্ট্যান্ট একটা সজীবতা দেয়।
ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকে বরফ যেভাবে ব্যবহার করবেন:
সবচেয়ে ইজি প্রসেস যেটা তা তো আমরা জানি ই যে বরফ সরাসরি ত্বকে ঘসে নেয়া।
আরেক ভাবেও করা যায়। একটা মাঝারি পাত্রে বেশ কিছু বরফ নিয়ে তাতে এক কাপ পরিমান ঠান্ডা পানি নিয়ে তার মধ্যে মুখ ডুবিয়ে রাখুন।এভাবে অল্প কিছুক্ষণ কয়েকবার করুন।পরে মুখ মুছে ফেলুন।
ব্রণ(একনি) সমস্যা আমাদের জীবনে অনেক বাজে প্রভাব ফেলে।তাই বলে সব সময়ই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মত শারিরীক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও আমাদের হয়তবা থাকেনা।তার চেয়ে যদি কিছুটা সময় সুযোগ বের করে প্রাকৃতিক এবং হাতের নাগালে থাকা উপাদানগুলো দিয়েই আমরা ব্রণ(একনি) যুক্ত ত্বকের যত্ন নিতে পারি সেটা অনেকটাই সুবিধাজনক।
এরকম আরো নানা ব্যাপারে জানতে আমাদের অর্গানিকাওনের পেজটিতে নিয়মিত ভাবে দেয়া লিখাগুলো ফলো করতে পারেন।
আপনাদের নানারকম সমস্যায় আমরা অর্গানিকাওন রয়েছি আপনাদের পাশে স্কিনকেয়ার,হেয়ারকেয়ার এবং বডিকেয়ার এর জন্য নানাবিধ সব প্রাকৃতিক সব উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরী কেয়ারী প্রডাক্টস নিয়ে।বিশুদ্ধ,কেমিক্যাল বিহীন,সিন্থেটিক ফ্র্যাগরেন্সবিহীন এবং ত্বকের কোন ক্ষতি না করে নিজেকে সুন্দর,লাবণ্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে অর্গানিকাওন হলো আপনার নিরাপদ যাত্রার সঙ্গী।
আজ এ পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকুন,নিজেকে এবং পরিবারের সকলকে যত্নে রাখুন।
Leave a comment