সবচেয়ে কমন কয়েকটি স্কিন কনসার্ন

most common skin concern

স্কিন কনসার্ন কত ধরনের হতে পারে এটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে আমাদের দেশে সাধারনত যে কয়েকটি প্রব্লেমের উপদ্রব বেশি পরিলক্ষিত হয় আজকে সেরকম কয়েকটি Skin concern নিয়ে এই লেখাটি সাজানো হয়েছে। চলুন সরাসরি মূল পয়েন্টে চলে যাই।

 

একনি

 

পিম্পল, ব্লেমিশ, ব্রেকআউট ইত্যাদি অনেকগুলো টার্মসকে একত্রে একনি বলে। একনি একটি বৃহৎ ধারনা। প্রায় প্রত্যেকের-ই পিউবার্টি থেকে শুরু করে জীবনের কোনো না কোনো সময় একনির প্রব্লেম ফেইস করতে হয়। অয়েলি স্কিনে একনির সমস্যা প্রকট হয়। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে একনি খুব কমন একটি skin concern. 

 

ইনফ্লামেটরি একনি ও নন-ইনফ্লামেটরি একনি এ দুটি-ই একনির প্রধান টাইপস। নন-ইনফ্লামেটরি একনির মধ্যে রয়েছে ব্লাকহেডস ও হোয়াইট হেডস। ইনফ্লামেটরি একনির মধ্যে রয়েছে প্যাপিউলস, পুস্টুলস, নডিউলস ও সিস্ট ইত্যাদি। 

 

একনি হওয়ার প্রধান কারনগুলোর মধ্যে রয়েছে পোরসে অতিরিক্ত অয়েল প্রোডাকশন, পোরসে ডেড সেল জমে যাওয়া এবং ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ। এছাড়া এনড্রোজেন হরমোনের আধিক্য, জেনেটিক্স, নির্দিষ্ট মেডিসিনের কারনেও ব্রেক আউট হতে পারে। 

 

স্ট্রেস, ডায়েট ও দূষনের কারনে acne হয় না কিন্তু এই ফ্যাক্টরগুলো একনির সমস্যা প্রকট করে তোলে। 

 

একজিমা

 

একজিমা ত্বকের খুব কমন একটি সমস্যা যা বেশিরভাগ সময়েই দীর্ঘস্থায়ী হয়। বাচ্চা থেকে বুড়ো যেকারও একজিমার প্রব্লেম হতে পারে। এই সমস্যা হলে স্কিন ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে পারে না। ফলে ত্বক ড্রাই হয়ে যায় এবং চুলকানো, লালচে ভাব, র‍্যাশ ইত্যাদি দেখা যায়। সবচেয়ে কমন টাইপ হলো এটোপিক একজিমা।

 

ত্বকের এই সমস্যাটি আমাদের জীবন যাপনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। স্কিনের বাইরের স্তর এপিডার্মিস কোনোভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেকাংশে হারিয়ে ফেলে। আর তখনই এই একজিমার প্রব্লেম দেখা দেয় আর এটি ধীরে ধীরে প্রকট হয়। 

 

Eczema শরীরের যেকোনো জায়গাতেই হতে পারে। তবে কনুই, হাটু, কানের ভিতরে বা আশেপাশে, পা ও গোড়ালিতে একজিমার সমস্যা বেশী হয়। 

 

একজিমা হওয়ার নির্দিষ্ট কারন এখনো জানা যায়নি। তবে নির্দিষ্ট এলার্জেনের প্রতি ইমিউন সিস্টেমের ওভার রিয়েক্ট, জেনেটিকভাবে প্রাপ্ত এবং পরিবেশগত কারনে Eczema হতে পারে। মেকাপ, স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, সাবান, ড্রাই ওয়েদার, ফেব্রিক্স ও স্ট্রেস একজিমার প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। দুধ, ডিম, চিনাবাদামেও একজিমা ট্রিগার হয়। 

 

একজিমার ট্রিটমেন্ট নিজে নিজে না করে বা ওটিসি মেডিসিন না নিয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে করা উচিৎ।

 

আনইভেন স্কিন টোন

 

প্রত্যেকের স্কিন উইশ লিস্টে থাকে একটি ইভেন স্কিন টোন। কিন্তু বাস্তবে স্কিন নানানভাবে ইন্টার্নালি ও এক্সটার্নালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে স্কিন হয়ে উঠে আন ইভেনটোন। 

Uneven Skin Tone কে একটি গুচ্চ শব্দ বলা যায়, যা ডার্ক স্পট, মেলাজমা, সান স্পট, হাইপারপিগমেনটেশন এর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। 

 আনইভেন স্কিন টোন যেসব কারনে হতে পারে তার মধ্যে বারবার সূর্য রশ্মির সংস্পর্শে আসা, ট্রাফিক রিলেটেড বায়ু দূষনের ফলে গ্যাস ও ধুলিকনা স্কিনে ডুকে গিয়ে মুখে ডার্ক স্পট তৈরি করে, ম্যালাজমা হলো হরমোন রিলেটেড হাইপারপিগমেনটেশন যা অতিরিক্ত মেলানিন উৎপন্ন হওয়ার কারনে হয় এসব মিলে স্কিন আনইভেন টোন হয়। 

আনইভেন স্কিন টোন দূর করতে নিয়মিত সান স্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে যখনই সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসবেন, এক্সফোলিয়েট করতে হবে নিয়ম মেনে, স্কিনে সঠিক ইনগ্রিডিয়েন্ট ইউজ করা এক্ষেত্রে অর্গানিকাওনের এক্টিভেটেড চারকোল ইউজ করতে পারেন দূষিত কনা দূর করতে, অতিরিক্ত মেলানিন প্রোডাকশন কন্ট্রোল করতে অলিগোপেপটাইডস, নায়াসিনামাইড ও জিংক গ্লাইসিনেট এবং ভিটামিন সি, রেটিনল ইউজ করতে পারেন যা স্কিনে এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি এইজিং হিসেবে কাজ করে। 

 

সোরিয়াসিস

 

এটি এক ধরনের ত্বকের ব্যাধি যা স্কিন সেলের বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে ত্বরান্বিত করে। এটি ত্বকে আঁশযুক্ত ছোপ তৈরি করে। সোরিয়াসিস যেকোনও জায়গায় হতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথার ত্বক, কনুই, হাঁটু এবং পিঠের নীচে দেখা যায়। স্কিনের এই রোগটি সংক্রামক নয় তবে এটি একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হতে দেখা যায়। 

সোরিয়াসিসের অনেক ধরন রয়েছে যেমনঃ প্ল্যাক সোরিয়াসিস, নেইল সোরিয়াসিস, স্ক্যাল্প সোরিয়াসিস ও পোস্টিউলার সোরিয়াসিস ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে প্ল্যাক সোরিয়াসিস সবচেয়ে কমন। এই রোগটির সঠিক কারন এখনও জানা যায়নি। তবে এটি অনেকগুলো বিষয়ের কম্বিনেশনে হয়। সোরিয়াসিস ত্বকের এক ধরনের অটো ইমিউনো কন্ডিশন। 

স্ট্রেস, হরমোনাল চেইঞ্জ, কোনো নির্দিষ্ট ট্রীটমেন্ট সোরিয়াসিসের প্রকোপ বাড়ায়। এছাড়া হঠাৎ করে স্ট্রেরয়েড জাতীয় মেডিসিন বন্ধ করে দিলে, সূর্যের আলো, স্কিন ইনজুরি এগুলো সোরিয়াসিসকে ট্রিগার করে।Psoriasis এর ধরন বুঝে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে এর চিকিতসা উচিৎ। কোনোভাবেই নিজে থেকে কোনো মেডিসিন নেয়া যাবে না, এতে দীর্ঘমেয়াদে প্রব্লেম হতে পারে। 

 

প্রি-ম্যাচিউর এইজিং

 

বয়স লুকিয়ে রাখার মতো নয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই চাপ চেহারায় স্পর্ষ্ট হয়। তবে নানান কারনে অনেকের বয়সের তুলনায় স্কিনে বার্ধক্যের চাপ তাড়াতাড়ি ভিজিবল হয়, যেটাকে আমরা প্রিম্যাচিউর এইজিং(Premature Ageing) বলি। 

লাইফস্টাইল ও পরিবেশগত কিছু ফ্যাক্টর যেগুলো সাধারনত এ সমস্যার জন্যে দায়ী এগুলো হলোঃ দূষিত পরিবেশ, এলকোহল, বিভিন্ন টক্সিন ও ক্যামিকেলস, স্কিন ইরিটেন্টস, স্মোকিং, অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি। 

 

প্রিম্যাচিউর এইজিং এভোয়েড করার জন্যে যা করতে পারেন-

 

স্মোকিং বন্ধ করা। 

এলকোহল সেবন নিয়ন্ত্রনে রাখা।

সান ডেমেজ এড়াতে সান স্ক্রিন ব্যবহার করা। 

রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো। 

শাক সবজি ও ফলমূল খাওয়া। 

স্কিনের প্রোপার যত্ন নেওয়া। 

স্ট্রেস লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখা। 

 

রোজেশা

 

ত্বকের এক ধরনের লালচে ভাব হলো রোজেশা যা সাধারনত নাক, গাল বা কপালে বেশি হয়। তবে এটি বডির অন্য অংশেও হতে পারে। স্কিনের অন্যান্য সমস্যা বা একনির মতোই ত্বকের এই সমস্যাটি লাইট স্কিনে সহজে নির্ণয় করা গেলেও কালো বা ব্রাউন স্কিনে নির্ণয় করা কঠিন। 

 

মধ্য বয়ষ্ক ও বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে Rosacea হওয়ার প্রবনতা বেশি হয়। এছাড়া মহিলা ও ফর্সা ত্বকের অধিকারী ব্যক্তিদেরও এটি হওয়ার ঝুকি অপেক্ষাকৃত বেশি। 

 

রোজেশার কয়েকটি ধরনের মধ্যে ওকিউলার রোজেশা, ফাইমাটাস রোজেশা ও  প্যাপিউলোপুস্টুলার রোজেশা অন্যতম। 

 

রোজেশার কমন একটি লক্ষন যা প্রায় ৫০% রোজেশার সমস্যায় দেখা যায় তা হলো চোখের দৃষ্টি জনিত সমস্যা। চোখেও লালচে ভাব, ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়া বাম্পস হওয়া, ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া, পোরস বড় হয়ে যাওয়া, চোখের পাতায় চিকন ও ভাঙা রক্তনালি ভেসে উঠা ইত্যাদি। 

 

রোজেশায় চুলকানো বা ইচিং হতে পারে তবে এটি খুব কম সময়েই দেখা যায়। এ সমস্যার উপসর্গগুলো আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে। 

 

যে যে ফ্যাক্টরগুলো রোজেশার ট্রিগার হিসেবে কাজ করেঃ

 

সূর্যরশ্মি, 

অনেক বেশি ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়া,

এলকোহল, 

অতিরিক্ত স্পাইসি ফুড,

মানসিক চাপ, 

অতিরিক্ত ব্যায়াম ।

 

রোজেশার হওয়ার কারন হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন । এগুলো হলোঃ

 

জেনেটিক কারনে।

রক্তনালির সমস্যার কারনে।

মাইট নামে এক ধরনের জীবানু ও এইচ ফাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার কারনেও Rosacea হতে পারে। 

 

রোজেশার ট্রিটমেন্ট হিসেবে চিকিৎসক এন্টিবায়োটিকসহ নানান মেডিসিন নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর চিকিৎসা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শেই করতে হবে।