শীতের বিকেলে একটু গরম গরম কাপড় পরে এক বাটি উষ্ণ স্যুপ অথবা এক মগ গরম কফি খেতে কার না ভালো লাগে? পুরো শীতকাল জুড়ে এমন দারুণ সব ভালোলাগার মুহুর্ত থাকলেও রয়েছে বেশ কিছু কঠিন মুহুর্তও। এই শীতে আমরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই স্কিন ও হেয়ার নিয়ে। প্রকৃতির রুক্ষতা প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরেও। তাই এ সময় দরকার হয় বাড়তি কিছু যত্ন আর খেয়ালের। আজকে তবে চলুন শীতে ঝলমলে চুলের জন্য কিছু টিপস জেনে নিই।
এই শীতে চুলের যত্ন
শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পানি বাইরে থেকে পাওয়া যায় না। তখন আমাদের সেলগুলো শরীরের ভেতর থেকে পানি শোষণ করে। ফলে শরীর ও স্কিন হয়ে যায় ড্রাই। আর এজন্য স্কিন এর পাশাপাশি স্ক্যাল্প ও ড্রাই হয়ে যায়, চুল হয়ে যায় উষ্কুখুষ্কু, প্রাণহীন। ড্রাই স্ক্যাল্পের কারণে ডেড সেলস বেশি হয়ে থাকে, ফলে হয় ড্যানড্রাফ। ড্যানড্রাফের কারণে চুল পড়তে থাকে বেশি, চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই এ সময় চুলের দরকার হয় একটু বাড়তি যত্নের। চলুন আজকে তবে জেনে নিই শীতকালে চুলের যত্নে কী কী করবেন।
১। ছেঁটে ফেলুন চুলঃ
শীত ভালোভাবে আসার আগেই চুলের আগার দিকে ছেঁটে ফেলুন। সাধারণত অনেকদিন চুলের আগা ছাঁটা না হলে তা চিকন, রুক্ষ হয়ে যায়। স্প্লিট এন্ডস, ব্রোকেন স্ট্র্যান্ডস এ পুষ্টি পৌঁছাতে শরীরকে আরো বেশি খাটতে হয়। ফলে দেখা যায় সব জায়গায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌছাচ্ছে না। এতে হেয়ার ও স্ক্যাল্পের আরো ক্ষতি হয়। তাই শীত পুরোপুরি আসার আগেই একবার চুল ছেঁটে ফেললে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
২। চুল ঢেকে বাইরে যানঃ
এই রুক্ষ শুষ্ক আবহাওয়ায় চুল খোলা রেখে বাইরে গেলে চুলের বেশ ক্ষতি হয়। এ সময় ধুলাবালি বেশি থাকে বাইরে যা হেয়ার ও স্ক্যাল্প ড্যামেজ করে দেয়। এছাড়া ব্যাক্টেরিয়াল আক্রমণও বেশি হয় ফলে ড্যানড্রাফ হয়ে থাকে। এই শুষ্ক বাতাস ও রোদ স্ক্যাল্পে থাকা অয়েল, ময়েশ্চার এগুলো শোষণ করে ফেলে। এজন্য একটি ভালো উপায় হলো চুল ঢেকে বাইরে যাওয়া। ক্যাপ বা সিল্কের স্কার্ফ হলে চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো হয়। সরাসরি উল বা পশমের জিনিস দিয়ে চুল ঢাকলে ঘর্ষণের ফলে চুল ভেঙে যেতে পারে, হতে পারে স্প্লিট এন্ডস। তাই বাইরে বেরোলে চুল ঢেকে বের হতে হবে।
৩। চুলে গরম পানি লাগানো যাবে নাঃ
শীতকালে একটু উষ্ণ গরম শাওয়ার নিতে আমরা সবাই পছন্দ করি। কিন্তু গরম পানি চুলের জন্য একটি ক্ষতিকর জিনিস। শীতকালে এটি আরো বেশি ক্ষতি করে। গরম পানি স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার শোষণ করে, চুল ড্রাই করে আরো পাতলা করে ফেলে। ফলে চুল ভেঙে যেতে থাকে, ড্যানড্রাফ হয়। তাই শীতকালে গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া থেকে বিরত থাকুন।
৪। হিট স্টাইলিং থেকে বিরত থাকুনঃ
চুলে স্টাইলিং করতে যেয়ে আমরা স্ট্রেইটনার, হেয়ার আয়রন অথবা চুল শুকোতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শীতকালে চুলের যেকোনো হিট স্টাইলিংই ভয়াবহ ক্ষতি করে থাকে। একে তো শীতকালে স্ক্যাল্পে ময়েশ্চার, অয়েল কম থাকে তার উপর হাইড্রেটও কম হয়। এদিকে হিট স্টাইলিং এ স্ক্যাল্প ও হেয়ার আরো বেশি ড্রাই হয়ে যায় যেহেতু হিট ময়েশ্চার ও অয়েল অ্যাবজর্ব করে। ফলে চুল যে শুধু দুর্বল হয়ে পড়ে তাই নয়, স্ক্যাল্পও বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই শীতকালে হেয়ার ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো।
৫। ভেজা চুলে বাইরে যাবেন নাঃ
শীতকালে চুল শুকোতে বেশ সময় লাগে তাই অনেকেই ভেজা চুলেই বের হয়ে যান বাসা থেকে। কিন্তু ভেজা চুলে বেরোলে শীতকালীন আবহাওয়ায় আরো বেশি ক্ষতি হয়। চুল ভেজা থাকলে তাতে ধুলোবালি আটকায় বেশি ফলে স্ক্যাল্পের পোরস ক্লগ হয়ে ড্যানড্রাফসহ নানারকম সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। তাছাড়া ভেজা চুলে ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাকের আক্রমণও হয় সহজে। তাই চুল ন্যাচারালি শুকিয়ে বের হোন। যদি ন্যাচারালি শুকানোর সময় না থাকে তাহলে হালকা হিটে ব্লো ড্রাই করতে পারেন তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই হিট প্রোটেকট্যান্ট ব্যবহার করবেন।
৬। হাইড্রেটেড রাখুন নিজেকেঃ
শীতকালে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ডিহাইড্রেশন। একে তো আবহাওয়ায় আর্দ্রতা কমে যায় তার উপর পানির সংস্পর্শ আমরাও খানিকটা এড়িয়ে চলি। ফলে শরীর তার প্রয়োজনীয় পানি পায় না। এতে স্কিন, হেয়ার ও স্ক্যাল্প প্রয়োজনীয় পানি, ময়েশ্চার, অয়েল এবং পুষ্টি পায় না। তাই দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায় চুল, স্প্লিট এন্ডস বাড়ে। এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
৭। প্রতিদিন চুল ধোয়া থেকে বিরত থাকুনঃ
প্রতিদিন পানি দিয়ে চুল ধোয়া থেকে বিরত থাকুন এই শীতকালে। হেয়ার ফলিকলে থাকা সেবেসিয়াস গ্ল্যান্ড সেবাম নামের অয়েল প্রোডিউস করে থাকে যা আমাদের চুলকে শুষ্কতা ও বাইরের ক্ষতিকর জিনিস থেকে প্রোটেক্ট করে, চুল ময়েশ্চারাইজড রাখে। প্রতিদিন চুল পানি দিয়ে ধুলে এই অয়েল চলে যায়। কিন্তু হেয়ার ও স্ক্যাল্প ক্লিন রাখতে চুল ধোয়ারও প্রয়োজন। এজন্য সপ্তাহে ২-৩ বার সালফেট ফ্রি একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন।
৮। ব্যবহার করুন হেয়ার অয়েলঃ
শীতে চুলের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে নিয়মিত ব্যবহার করুন হেয়ার অয়েল। হেয়ার অয়েল ম্যাসাজ যেমন স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলশন বাড়িয়ে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে তেমন চুলের ময়েশ্চার ধরে রেখে প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার তৈরি করে। ফলে হেয়ার ড্রাই হয়ে ভেঙে যাওয়া এবং স্ক্যাল্পে ড্যানড্রাফ হওয়া থেকেও বাঁচায়। তাই চুল হয় হেলদি।
হেয়ার অয়েলের ক্ষেত্রে নারকেল তেলের সাথে টি ট্রি অয়েল মিক্স করলে সেটি আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। হেয়ার প্রোটেক্ট এর পাশাপাশি হেলদি গ্রোথও নিশ্চিত করে থাকে। শীতকালে হেলদি হেয়ারের জন্য দেশীয় ব্র্যান্ড অর্গানিকাওন এনেছে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি রোজমেরি+অনিয়ন হেয়ার অয়েল ও টি ট্রি অ্যাসেনসিয়াল অয়েল। হেয়ার অয়েলে নারিকেল তেলের সাথে আছে পেঁয়াজের নির্যাস, রোজমেরি অ্যাসেনসিয়াল অয়েল, কাঠ বাদাম, ভিটামিন- ই, রোজমেরি এক্সট্র্যাক্ট এর মতো প্রাকৃতিক সব উপাদান। নারিকেল তেল এ আছে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। এর সাথে পেঁয়াজের রস যুক্ত করলে এর কার্যকারিতা বেড়ে যায় বহুগুণ। এছাড়া পেঁয়াজের রস ও টি ট্রি অ্যাসেনসিয়াল অয়েল ইনফ্ল্যামেশন বা ইচিং দূর করে। রোজমেরি স্ক্যাল্পকে ময়েশ্চারাইজ করে ফলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া এই তেলটি চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সিল্কি করতেও সাহায্য করে।
৯। সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করুন হেয়ার মাস্কঃ
ফেইস মাস্ক যেমন সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা প্রয়োজন তেমন হেয়ার মাস্কও সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। এই বৈরী আবহাওয়ায় তো আরো বেশি প্রয়োজন। হেয়ারের ড্রাইনেস, ফ্রিজিনেস, স্প্লিট এন্ডস, ড্যানড্রাফ সহ সকল সমস্যার সমাধানে সপ্তাহে অন্তত একদিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন।
নিম,অ্যালোভেরা, আমলকি, মেথি, শিকাকাই, মেহেদি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানগুলো চুল পড়া কমায়। চুল কে হাইড্রেট করে, চুলের ফ্রিজিনেস দূর করে, চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করে। এগুলো চুলকে শাইনি ও স্ট্রং করে।
কিন্তু এগুলো সব যোগাড় করে রেডি করা, সঠিক পরিমাণে মেশানো বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করতে পারেন অর্গানিকাওন ব্র্যান্ডের হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্যাক। এই প্যাকটি এসকল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী এবং ব্যবহারও খুব সহজ। তাই কোনো ঝামেলা ছাড়াই সপ্তাহে একদিন চুলের যত্নে প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
১০। ব্যবহার করুন হিউমিডিফায়ারঃ
বাতাসের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হিউমিডিফায়ার কাজ করে থাকে। বর্তমানে বাজারে নানারকম হিউমিডিফায়ার পাওয়া যায়। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি ঘর গরম রাখতেও সাহায্য করে। বাতাসের আর্দ্রতা প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে হেয়ার ও স্ক্যাল্পের শুষ্কতা রোধ হয়।
শীতের রুক্ষতায় হেয়ার ফল বা ড্যানড্রাফ একটু যত্ন নেয়া আর সচেতন থাকার মাধ্যমেই দূর করা যায়। বেশি বেশি পানি খাওয়া আর হেলদি ডায়েটের পাশাপাশি এ নিয়মগুলো মেনে চললে চুল থাকবে হেলদি ও শাইনি। এরপরেও যদি অতিরিক্ত চুল পড়ে, রুক্ষ শুষ্ক থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Leave a comment