প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে হিমেল হাওয়া। শীতের আগমনী বার্তা আসার সাথে সাথে আমাদের মনের মাঝেও উঁকি দিচ্ছে শুষ্ক ত্বকের ভয়। শীতকাল মানেই ত্বকের নানারকম সমস্যা এসে হাজির। কখনো শুষ্ক ত্বক, তো কখনো চামড়া ওঠা, আবার কখনো র্যাশ বা স্কিন ইরিটেশন। গরম কমে যাওয়ার সাথে সাথে শীতের এই শুরুতে আবহাওয়ায় কমে যায় বাতাসের আর্দ্রতা। ফলে আমাদের স্কিনেও নানারকম পরিবর্তন শুরু হয়। আজকে আমরা শীতকালে কীভাবে ত্বক ভালো রাখতে পারবো সে সম্পর্কে জানবো।
শীতে কেন ত্বক শুষ্ক হয়?
আগে আমরা জানবো শীতে ত্বক কেন এত শুষ্ক অনুভূত হয়। মূলত শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে। ফলে স্কিন পানি কম পায় এবং ভেতরে থাকা পানি টেনে নিয়ে স্কিনকে আরো শুষ্ক করে ফেলে। এজন্য মুখ উজ্জ্বলও কম দেখায়। শুধু মুখই নয় হাত, পা সহ সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় রুক্ষতা। এছাড়া ঠান্ডা বাতাস আর কম তাপমাত্রা ত্বকের সেনসিটিভিটিও বাড়িয়ে তোলে। শীতকালে সাধারণত আমরা পানি কম খাই, পানির সংস্পর্শে কম যাই তাই আমাদের স্কিন তার প্রয়োজনীয় পানি পায় না ফলে স্কিন শুষ্ক হতে থাকে, ডেড সেলস বাড়তে থাকে।
শীতকালীন শুষ্কতা থেকে বাঁচার উপায় কী?
আবহাওয়ার এই পরিবর্তন আমরা বদলাতে না পারলেও আমাদের স্কিনকেয়ার রুটিন ও প্রোডাক্টস একটু খেয়াল করে বদলে ফেলে আমাদের স্কিনকে ভালো রাখতে পারি। চলুন জেনে নিই শীতের এই শুষ্ক আবহাওয়ায় স্কিন ভালো রাখতে কী করা উচিত:
১। হাইড্রেটিং ক্লিনজার ও ফেইসওইয়াশ ইউজ করুনঃ
আমরা সাধারণত আমাদের স্কিনকেয়ার রুটিনের শুরুতেই যা করে থাকি তা হলো ফেইস ও স্কিন ক্লিন করা। গরমে আমরা হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার না করলেও শীতকালে এটি ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ক্লিনজারটি যেন স্কিনের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে এবং স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে। ক্ষারযুক্ত সাবান বা ক্লিনজার শীতকালে একদমই ব্যবহার করা যাবে না কারণ ক্ষার ত্বক থেকে প্রয়োজনীয় অয়েল দূর করে ত্বককে আরো বেশি শুষ্ক করে ফেলে। এছাড়া স্কিন ক্লিন করার পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
এক্ষেত্রে অরগানিকাওন ব্র্যান্ডের স্যাফরন গোট মিল্ক সোপ একটি দারুণ প্রোডাক্ট। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী, ক্ষারমুক্ত। যা ফেইস ক্লিনের সাথে সাথে স্কিনকে করবে ময়েশ্চারাইজ ও হাইড্রেট। তাই এই শীতে ট্রাই করতে পারেন সোপটি।
২। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুনঃ
আমরা অনেক সময় মনে করি শীতকালে কি আর সানস্ক্রিন ইউজ করার প্রয়োজন আছে? হ্যা অবশ্যই আছে। শীতকালেও নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে সূর্যের তাপ কম মনে হলেও তার ইউভি রশ্মির কার্যকারিতা একই থাকে। আর শীতে এমনিতেই ত্বক শুষ্ক থাকে তাই ক্ষতির হার আরো বেড়ে যায়। এছাড়া সূর্যের রশ্মি ত্বকের পানি শোষণ করে আরো ডিহাইড্রেটেড করে ফেলে। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন ইউজ করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত এসপিএফ ৩০ হলে বেশ কার্যকর হবে।
৩। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুনঃ
শীতকালেও স্কিনকেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজার রাখতে হবে। এই সিজনে স্কিন অত্যন্ত ড্রাই হয়ে যায়, ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে বলে শুষ্কতা থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকে। এ জন্য অবশ্য ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। ড্রাই স্কিনের জন্য অয়েল বেইজড ও অয়েলি স্কিনের জন্য ওয়াটার বেইজড বা জেল জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। ফেইস ক্লিন করার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই এটি ব্যবহার করা উচিত।
৪। ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করুনঃ
ভিটামিন সি ত্বকের যত্নে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। শীতকালে ত্বককে ভালো রাখতে এটি আরো বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, স্কিন হাইড্রেট রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, সানবার্ন ও ডার্ক সার্কেল রিমুভ করে। তাই শীতকালের ডায়েটে যেমন ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখবেন তেমন স্কিনকেয়ারে যোগ করবেন ভিটামিন সি সিরাম।
আপনাদের ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানটি দিয়ে তৈরি সিরাম নিয়ে এসেছে স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড অরগানিকাওন। এই ভিটামিন সি হাইড্রো বুস্টিং গ্লোয়িং সিরামে সব উপাদান রয়েছে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে। এটি ত্বকের গ্লো বাড়ানোর পাশাপাশি শীতকালে অতিরিক্ত শুষ্কতা থেকে রক্ষা করবে। বাড়াবে আপনার ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন।
৫। ফেইস অয়েল ব্যবহার করুনঃ
আগেই বলেছি যে শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার ত্বকে পানির পরিমাণ কমে যায়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেসকল সমস্যা তৈরী করে সেসব সমাধান করতে ফেইস অয়েল দারুণ কাজ করে। ফেইস অয়েল অনেক সময় পর্যন্ত ত্বক হাইড্রেট রাখে, ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত ফেইস অয়েলে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি অ্যাসিড ও থাকে। ফেইস অয়েল স্কিনের পিগমেন্টেশন, আনইভেন স্কিনটোন এগুলোও দূর করে থাকে।
ফেইস অয়েল হিসেবে দারুণ এক প্রোডাক্ট হলো অরগানিকাওন এর কুমকুমাদি অয়েল। কুমকুমাদি অয়েল বহু আগে থেকেই আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি জাদুকরী তেল হিসেবে পরিচিত। অরগানিকাওন কুমকুমাদি অয়েল এ রয়েছে সব প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বক ময়েশ্চারাইজ রাখবে এবং শুষ্কতা থেকে রক্ষা করবে। তাই এই শীতে স্কিনকেয়ার রুটিনে যুক্ত করে ফেলুন অরগানিকাওন এর কুমকুমাদি অয়েল।
৬। লিপ বাম ও লিপ স্ক্রাব ব্যবহার করুনঃ
আমাদের ঠোঁট আমাদের ফেইসের থেকেও বেশি নরম ও নাজুক হয়ে থাকে। ফলে দেখা যায় শীত আসতে শুরু করলেই আমাদের ঠোঁট ফেটে যায় এবং চামড়া উঠতে শুরু করে। ফলে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধান পেতে নিয়মিত ব্যবহার করুন লিপ স্ক্রাব ও লিপ বাম। লিপ স্ক্রাব ডেড স্কিন সেলস দূর করতে সাহায্য করে। লিপ বাম ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করে, স্কিনকে ড্রাই হওয়া থেকে বাঁচায়। এছাড়া ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা করে, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচায়।
এজন্য ব্যবহার করতে পারেন অরগানিকাওন ব্র্যান্ডের লিপ বাম ও লিপ স্ক্রাব কম্বো। এই লিপ বাম ও লিপ স্ক্রাবে আছে অ্যালোভেরা, অলিভ অয়েলের মত ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস যা ঠোঁটফাটা থেকে রক্ষা করে, ঠোঁটকে করে তোলে আরো সুন্দর ও মসৃণ। সাধারণত সপ্তাহে একবার স্ক্রাব ব্যবহার করলেই হয়। লিপ বাম শীতকালে দিনে রাতে কয়েকবার ব্যবহার করা উচিত, এতে ঠোঁট শুষ্কতা থেকে রক্ষা পায়।
৭। বেশি বেশি পানি খান ও নিয়মিত গোসল করুনঃ
শীতকালে সাধারণত পানি খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। এছাড়া শীতকালে অনেক সময় গোসলও নিয়মিত করা হয় না। কিন্তু এটি ত্বক ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত গোসল করলে ত্বক তার দরকারি পানিটুকু শোষণ করতে পারে। বেশি বেশি পানি পান করলে শরীরেও পর্যাপ্ত পানি থাকে ফলে ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা পায়।
৮। ব্যবহার করুন হিউমিডিফায়ারঃ
বাতাসের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হিউমিডিফায়ার কাজ করে থাকে। বর্তমানে বাজারে নানারকম হিউমিডিফায়ার পাওয়া যায়। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি ঘর গরম রাখতেও সাহায্য করে। বাতাসের আর্দ্রতা প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে ত্বকের শুষ্কতা রোধ হয়।
৯। বডি অয়েল অথবা লোশন ব্যবহার করুনঃ
শীতকালে শুধু ফেইসের স্কিনই নয় বরং পুরো শরিরের স্কিনেই একটি ড্রাইনেস থাকে। ফলে শরীরে টান টান ভাব, অস্বস্তি অনুভূত হয়। এজন্য ব্যবহার করুন বডি অয়েল অথবা বডি লোশন। সকালে, গোসলের পর এবং রাতে ব্যবহার করতে পারেন লোশন অথবা বডি অয়েল। সাধারণত অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের জন্য বডি অয়েল যেমন অলিভ অয়েল, ভালো কাজ করে। বডি লোশন প্রায় সব রকম স্কিনেই মানিয়ে যায়। তবে লোশন ব্যবহারের আগে তার উপাদানগুলো খেয়াল করে নিবেন যেন তা আপনার স্কিনে স্যুট করে। লোশন বা বডি অয়েল স্কিন কে ময়েশ্চারাইজ করে, স্কিনের ড্রাইনেস অথবা ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
শীতকালে ড্রাই, ফ্লেকি স্কিন হওয়া কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বরং পুরো শরীরের ত্বকেই এমন হতে পারে। তাই এ সময় আপনার ত্বকের প্রয়োজন হয় একটু বাড়তি খেয়ালের। আপনার স্কিন কে ঘন ঘন ময়েশ্চারাইজ করলে, এক্সফোলিয়েটিং করলে, হাইড্রেট রাখলে এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারেন সহজেই। হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা, নরম ও আরামদায়ক কাপড় পরা, টুপি, গ্লাভস এসব ব্যবহার করা আপনাকে দেবে শীতের এই শুষ্কতা থেকে বাড়তি সুরক্ষা। এসব মেনে চলার পরও যদি আপনার ত্বকের ড্রাইনেস না যায় এবং উন্নতি না হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
Leave a comment