কম্বিনেশন স্কিন কি? কিভাবে কম্বিনেশন স্কিনের যত্ন নিবেন

স্কিন টাইপ পার্সন টু পার্সন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কার্যকরী একটি হেলদি স্কিনকেয়ার রুটিন তৈরির প্রথম ধাপ হলো নিজের স্কিন টাইপ জানা। যদিও সব স্কিন টাইপের-ই যত্ন নেয়ার আলাদা আলাদা পদ্ধতি রয়েছে, তবে কম্বিনেশন স্কিনের এর যত্ন অনেকগুলো বিষয়ের কম্বিনেশনে হয়, যা কিছুটা বেশি কমপ্লেক্স। 

 

কম্বিনেশন স্কিন কি?

কম্বিনেশন স্কিন সম্ভবত সবচেয়ে কমন স্কিন টাইপ, যদিও এর ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া সবচেয়ে কঠিন। কম্বিনেশন স্কিন একাধিন স্কিন টাইপের মিশ্রনে হতে পারে। অয়েলি ও ড্রাই কিংবা অয়েলি, ড্রাই এন্ড ব্যালেন্সড স্কিন এর কম্বিনেশন। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কপাল, নাক, চিবুক এর অংশ বা টি জোন অয়েলি, আর গাল, চোয়ালের লাইন ড্রাই হয়ে থাকে। একই ফেইসে দু ধরনের স্কিন টাইপ থাকায় স্কেনকেয়ার প্রোডাক্ট সিলেক্ট করা ও তা প্রোফারলি এপ্লাই করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। হেভি ময়েশ্চারাইজার নিলে সেটা ড্রাই অংশে ভালো কাজ করে আবার অয়েলি পার্টের অবস্থা আরও খারাপ করে। 

 

কিভাবে বুঝবেন আপনার কম্বিনেশন স্কিন কিনা?

কম্বিনেশন স্কিন ভিজিবল হওয়ায় এটি ইজিলি আইডেন্টিফাই করা যায়। একটি আঙুল কপাল থেকে নাক পর্যন্ত টেনে দেখুন এটি তৈলাক্ত কিনা বা কোনো দাগ পড়ে কিনা, এবার গালে আরেকবার টান দিয়ে দেখুন দাগ উঠে কিনা, সাথে খসখসে ও শুষ্কতা অনুভব হয় কিনা, যদি কপালে দাগ না পড়ে কিন্তু গালে দাগ পড়ে তাহলে এটি কম্বিনেশন স্কিন হতে পারে।

এছাড়া মাইল্ড ফেইস ক্লিনজার দিয়েও এই টাইপ আইডেন্টিফাই করতে পারেন। ক্লিনজার ইউজের পর যদি নাক, থুতনি ও কপালের পোরসগুলো ক্রমবর্ধমান অয়েলি হয়ে যায়, সেই সাথে গাল রুক্ষ ও শুষ্ক মনে তাহলে এটি নিশ্চিতভাবেই কম্বিনেশন স্কিন। 

 

কম্বিনেশন স্কিন কেন হয়?

 

আবহাওয়া, ক্রনিক কোনো ডিজিজ এর কারনে আমাদের স্কিন টাইপ মাঝে মাঝে সাময়িক পরিবর্তন হলেও বেসিক্যালি আমাদের পার্মানেন্ট স্কিন টাইপ নির্ধারিত হয় জেনেটিক্যালি।  সেবাম প্রডিউসে ভারসাম্যহীনতা, মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেস, ইনএপ্রোপ্রিয়েট স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের কারনেও কম্বিনেশন স্কিন হতে পারে। 

এছাড়া যারা দীর্ঘমেয়াদে কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন বা কোনো মেডিসিন নিচ্ছেন যার প্রভাবে স্কিনের নির্দিষ্ট পার্ট আদ্রতা হারিয়ে কম্বিনেশন স্কিন সৃষ্টি করে। 

আপনার স্কিন টাইপ ঠিক কি কারনে কম্বিনেশন হলো এটা যদি আপনি নির্ণয় করতে পারেন, তাহলে আপনি এর সবচেয়ে ভালো পরিচর্যা করতে পারবেন। যদি আপনি নেচারেলি এটি পেয়ে থাকেন তাহলে তো আপনার কিছুর করার নেই। তবে যদি আপনি উপরে উল্লেখিত কোনো কারনে এটি পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আগে তা সমাধান করতে হবে। যেমন বেশি স্ট্রেসের মধ্যে থাকলে স্ট্রেস লেভেল কমাতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুপযুক্ত স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করা বন্ধ করতে হবে। 

 

কম্বিনেশন স্কিনের পরিচর্যা কিভাবে করবেন?   

 

সো কিভাবে আপনার কম্বিনেশন স্কিন ব্যালেন্সে রাখবেন? এর জন্যে অবশ্যই আপনাকে মাল্টিটাস্ক করতে হবে। নির্দিষ্ট পার্টের পরিচর্যা করতে হবে অন্য অংশের ক্ষতি না করেই। অর্থাৎ তৈলাক্ত অংশের পরিচর্যা এমনভাবে করতে হবে যাতে ড্রাই অংশ আরও খারাপ না হয়। এর জন্যে যদিও আপনার হাই মেইনটেনেন্সের প্রয়োজন হবে, তবে এর মাধ্যমে আপনি বুঝে যাবেন কোনটি করা উচিৎ আর কোনটি এভোয়েড করতে হবে, কোনটির ফলে স্কিন ব্যালেন্সিভ অবস্থায় থাকে। দ্রুত পরিবর্তন দেখার জন্যে নিচের কয়েকটি টিপস ফলো করতে পারেনঃ

 

অপ্রয়োজনে ফেইস এ হাত দিবেন না

অয়েলি পার্টের জন্যে ক্লিনলিনেস খুবই জরুরী। হাতে থাকা নানান ব্যাকটেরিয়া তেলতেলে জায়গায় বেশি একটিভ থাকতে পারে। যার ফলে ব্ল্যাকহেডস এবং ব্রেকআউটের সম্ভাবনা থাকে। আপনার হাত যতই পরিষ্কার থাকুক না কেন চেষ্টা করুন যত কম মুখ স্পর্শ করা যায়। এছাড়া মেকাপ এ আঙুল ইউজ করা এড়িয়ে চলুন। লক্ষ্য রাখুন আপনার ব্রাশ ও স্পঞ্জ পরিষ্কার কিনা। 

 

হার্শ সোপ পরিহার করুন

খেয়াল করুন আপনি কোন ধরনের ফেইস ওয়াশ বা সোপ ইউজ করছেন, কিছু কিছু সোপ এমন ফর্মুলায় তৈরি যেগুলো আপনার কম্বিনেশন ত্বকের প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার কেড়ে নেয়। এর কারনে স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই হতে পারে যা অয়েলের হাইপার সিক্রেশন ঘটাতে পারে। এছাড়া এ ধরনের সোপ বিভিন্ন স্কিন কনসার্নের প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করুন তবে খুব ঘন ঘন নয়

ত্বকের ডেড সেল দূর করার জন্যে এক্সফোলিয়েশন একটি চমৎকার প্রক্রিয়া। এটি ত্বকের অনুজ্জ্বল ভাব কমায় এবং স্মুথ করে। কম্বিনেশন স্কিনের জন্যে এক্সফোলিয়েশন খুবই জরুরী।

কত সময় পর পর এক্সফোলিয়েট করবেন, এটার জন্যে সার্বজনীন কোনো ফ্রীকোয়েন্সি নেই। এটি আপনার স্কিনের টলারেন্স লেভেলের উপর নির্ভর করে। এক্সফোলিয়েট করার পর এটি মুখে ইরিটেট সৃষ্ট করে বিধায় আপনার স্কিন টাইপ যাই হউক না কেন আপনি ওভার এক্সফোলিয়েট করা এভোয়েড করতে চাইবেন। সপ্তাহে একবার করে শুরু করতে পারেন, এরপর সহনশীলতার মাত্রা বুঝে এটি উইকলি ২ থেকে ৩ বারে বৃদ্ধি করতে পারেন। এক্সফলিয়েশন ইনগ্রিডিয়েন্ট নির্ধারনে ডার্মাটোলজিস্ট এর সহায়তা নিতে পারেন, নিতে আপনার স্কিনের অবস্থা বুঝে সবচেয়ে সুইটেবল ইনগ্রিডিয়েন্টটি সাজেস্ট করতে পারবেন। 

 

ফেইসের বিভিন্ন অংশের জন্যে মাল্টি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন

কম্বিনেশন স্কিনের একটি সুবিধা হলো এতে মাল্টি মাস্ক ইউজ করা যায়। এতে ফেইসের নির্দিষ্ট অংশকে টার্গেট করে প্রয়োজন অনুযায়ী মাস্ক কাস্টমাইজ করা যায়। 

 

ফেইস ওয়াশ

কম্বিনেশন স্কিনের জন্যে স্যালিসিলিক এসিড বেইজড ফেইসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে কিছু পরিমান ফেইসওয়াস হাতের তালুতে নিয়ে মুখের টি জোনে এপ্লাই করুন। দু মিনিট রেখে এরপর ধুয়ে ফেলুন। ধুয়ে ফেলার সময় অতিরিক্ত ফেইসওয়াস আপনার মুখের বাকি অংশে লাগিয়ে দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। মূলত একইসাথে দুই ভিন্ন স্কিন টাইপের পরিচর্যার কথা মাথায় রেখে এভাবে ইউজ করতে হয়। 

 

সানস্ক্রিন

আপনার যদি রোদে অনেক সময় ধরে থাকার প্রয়োজন হয় তবে আপনার সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরী। এটি আপনাকে ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি হতে রক্ষা পেতে সহায়তা করবে। আপনার যদি কম্বিনেশন বা অয়েলি স্কিন হয়, তাহলে জেল বেইজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকে খুব আঠালো অনুভব করাবে না, অপেক্ষাকৃত  হালকা লাগবে এমনকি এটি আপনাকে ঘুম বেশি ঘামতে দিবে না। আর আপনার যদি সেনসিটিভ স্কিন হয় তাহলে প্লেইন জিংক অক্সাইড জেল বেইজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। 

 

কম্বিনেশন স্কিনের জন্যে কোন ইনগ্রিডিয়েন্টগুলো ভালো?

কম্বিনেশন স্কিনের জন্যে খুব ভালো কাজ করে এমন কয়েকটি ইনগ্রিডিয়েন্ট হলোঃ

 

হায়ালুরোনিক এবং/অথবা পলিগ্লুটামিক অ্যাসিড

সকল ধরনের স্কিন টাইপের-ই হাইড্রেশন প্রয়োজন। যদি স্কিন হাইড্রেশনের অভাব অনুভব করতে পারে তখন এটি অয়েল প্রোডাকশন বৃদ্ধি করে দেয়। এটি এড়াতে হায়ালুরোনিক এসিডের মতো লাইট হাইড্রেটরগুলো ইউজ করতে পারেন। 

 

নায়াসিনামাইড

এই ভিটামিন বি-৩ এর অনেকগুলো গুন রয়েছে যেমনঃ একনি দূর করা, অকাল বার্ধক্য রোধ করা ও হাইপারপিগমেন্টেশন উপশম করে। কম্বিনেশন স্কিনের জন্যেও এই উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার এই টাইপের স্কিন হলে নায়াসিনামাইডযুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করতে পারেন। 

 

ক্লাউডবেরি সীড অয়েল

বেশিরভাগ ময়েশ্চারাইজার হয় ড্রাই স্কিন অথবা অয়েলি স্কিনের জন্যে তৈরি, কিন্তু কম্বিনেশন স্কিনের জন্যে আলাদা করে কোনো ময়েশ্চারাইজার খুব একটা তৈরি করা হয়না। ক্লাউডবেরি সীড অয়েল একটি নন কমেডোজেনিক উপাদান স্কিনকে সফট করে। কম্বিনেশন স্কিনের জন্যে

এটি বেস্ট একটি উপাদান। ক্লাউডবেরি, ভিটামিন সি ও ক্যারোট রুটের সমন্বয়ে তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের ময়েশ্চারাইজার মার্কেটে পাওয়া যায়। 

ল্যাকটিক এসিড

এই উপাদানটি একইসাথে স্কিন হাইড্রেট ও এক্সফোলিয়েট করতে পারে। কম্বিনেশন স্কিনের জন্যে আইডিয়াল এই ইনগ্রিডিয়েন্টটি বিভিন্ন ফেসিয়ালে পাওয়া যায়। বাজারে এমন অনেকগুলো ফেসিয়াল এভেইলেবল আছে, যা আপনি চাইলে ইউজ করতে পারেন।

পরিশেষে, কম্বিনেশন স্কিনের যত্ন অন্য স্কিন টাইপ থেকে আলাদা ও জটিল। তাই সচেতনতা ও সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে আপনার স্কিনের যত্ন নিন। প্রয়োজনে ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন। স্কিনকেয়ার রিলেটেড কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান।

 

REFERENCES

 

  1. https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/15998330/
  2. https://bmcmedgenomics.biomedcentral.com/articles/10.1186/s12920-021-00953-8
  3. https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/30620080/
  4. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7549745/
  5. https://longsecowater.com/blog/how-water-benefits-the-body
  6. https://www.nationalacademies.org/news/2004/02/report-sets-dietary-intake-levels-for-water-salt-and-potassium-to-maintain-health-and-reduce-chronic-disease-risk
  7. https://www.ajicjournal.org/article/S0196-6553(14)01281-4/fulltext