বছর ঘুরে চলে এসেছে মুসলিমদের ধর্মীয় পবিত্র মাস রমজান। এই পুরো মাসটি বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিম সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থেকে সিয়াম সাধনা করেন। যেহেতু এ সময় পুরো দিনই কোন পানি বা অন্য কোন খাবার গ্রহন করা হয় না তাই দেখা যায় শরীরে এবং স্কিনে পানি শূণ্যতার কারনে নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া নিয়মিত রুটিনে বেশ একটি বড় পরিবর্তন আসায় স্কিনে ব্রন বা একনে সহ নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই এ সময় নিয়মিত স্কিনকেয়ার নিয়ে বেশ একটু চিন্তায় থাকেন। আজকে তবে চলুন জেনে নিই কিভাবে রোজায়ও হেলদি স্কিনকেয়ার রুটিন মেইনটেইন করবেন।
রোজায় স্কিনের কী কী সমস্যা হতে পারে?
রোজায় স্কিনে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় পানি শূণ্যতার কারনে। এজন্য স্কিনে অতিরিক্ত সেবাম বা অয়েল তৈরী হয়ে একনে বা ব্রন উঠতে থাকে। এছাড়া দীর্ঘসময় ডিহাইড্রেটেড থাকার কারনে স্কিন ড্রাই হয়ে যায় ও উজ্জ্বলতা কমে যায়। এছাড়াও সারাদিন রোজা রাখার পরে ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়ার যে রীতি আছে সেজন্যও স্কিনে ব্রন, ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদি হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। তাই রমজানেও নিয়মিত স্কিনকেয়ার মেইনটেইন করা জরুরী।
রমজানে কীভাবে স্কিনকেয়ার করবেন?
রমজানে যেহেতু আমাদের প্রতিদিনের রুটিন চেঞ্জ হয়ে যায় তাই স্কিনকেয়ার রুটিনেও আসতে পারে চেঞ্জ। আবার অনেকে মনে করেন রোজা রেখে হয়তো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস অ্যাপ্লাই করলে রোজায় কোন সমস্যা হতে পারে। তবে রোজার সময় স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস অ্যাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই যেহেতু এগুলো সরাসরি খাবারের মত গ্রহণ করা হয় না। তাহলে চলুন জেনে নিই রমজানে কীভাবে স্কিনকেয়ার মেইনটেইন করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
সারাদিনের পানি ঘাটতি পুরণে সেহরী ও ইফতারের সময় পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে। এতে সারাদিনের পানির চাহিদা পূরনের পাশাপাশি স্কিনও থাকবে হাইড্রেটেড এবং ফ্রেশ। ইফতারির মেন্যুতে শরবত ও পানির পাশাপাশি বিভিন্ন হাইড্রেটিং খাবার ও ফল যেমন তরমুজ, শসা, স্ট্রব্রেরী, টমেটো ইত্যাদি রাখুন।
ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন বার বার
রোজায় অন্য সময়ের চেয়ে স্কিন ড্রাই হয়ে যায় বেশি। তাছাড়া অযু করার সময় বার বার মুখ ধোয়া হলেও স্কিনে টান টান ফিল হয়। তাই ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করতে হবে বার বার। ফেস ক্লিন করার পর, অযু করার পর বা স্কিন টান টান লাগলে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন।
মাইল্ড ও হাইড্রেটিং ক্লিনজার বেছে নিন
স্কিনকেয়ারের প্রথম ধাপই হলো ক্লিনজিং। আর ক্লিনজিং এর ক্ষেত্রে একটি হাইড্রেটিং ক্লিনজার বেছে নিলে স্কিন ডিহাইড্রেটেড হওয়া থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই ক্লিনজার বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে হাইড্রেটিং উপাদান আছে কি না তা দেখে নিন।
টোনার ও সিরাম অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না
ক্লিনজিং এর পর টোনার ও সিরাম অ্যাপ্লাই করতে হয়। টোনার আমাদের স্কিন ক্লিনজিং এর পর যে পি এইচ লেভেল ইমব্যালান্স হয়ে যায় তা মেইনটেইন করতে সাহায্য করে। আর সিরাম রিংকেলস, ফাইন লাইনস দূর করার পাশাপাশি স্কিনে হাইড্রেশন বুস্ট করে থাকে। তাই ক্লিনজিং এর পর টোনার এবং টোনারের পর সিরাম অ্যাপ্লাই করুন। এতে রোজার সময়ও স্কিন হাইড্রেটেড থাকবে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না
সানস্ক্রিন নিয়মিত ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা অনেক সময়ই এই স্টেপটি স্কিপ করে যাই কিন্তু এটি ঠিক নয়। ঘরে থাকলে অথবা বাইরে গেলে সবসময়ই দিনের বেলা সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে যেন স্কিনের ময়েশ্চার লকড থাকে।
লিপ বাম সাথে রাখুন সবসময়
দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া হলে আমাদের ঠোঁট শুকিয়ে আসতে থাকে। ফলে ঠোঁট ড্রাইনেস, ঠোঁট ফাঁটা, ঠোঁটের চামড়া ওঠা ইত্যাদি দেখা দেয়। তাই সবসময় সাথে রাখুন লিপ বাম। ঠোঁট শুকিয়ে আসলে লিপ বাম অ্যাপ্লাই করে নিন।
ব্যবহার করুন ফেস মাস্ক
সপ্তাহে অন্তত একবার হাইড্রেটিং ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন। এছাড়া হাইড্রেটিং নানারকম শিট মাস্ক পাওয়া যায় সেগুলো প্রতিদিন রাতে অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
হেলদি ডায়েট মেইনটেইন করুন
স্কিনের যত্ন নিতে শুধু যে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস অ্যাপ্লাই করলেই হবে তা নয়, বরং একটি হেলদি লাইফস্টাইল মেইনটেইন করাও জরুরি। এমনিতেই রোজায় ঘুম ঠিকমতো হয় না, ফলে স্ট্রেস বেড়ে যায়। তাই সেহরি ও ইফতারের মেন্যুতে রাখুন হেলদি এবং হাইড্রেটিং খাবার, ফলমূল ও শাকসব্জী। এড়িয়ে চলুন ভাজাপোড়া অথবা বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার।
রোজায় এ নিয়মগুলো মেনে সকালে এবং রাতে স্কিনকেয়ার রুটিন মেইনটেইন করতে পারেন। যেহেতু দিনের একটি বেশি সময় হাইড্রেটিং থাকা হয় না তাই সব ক্ষেত্রেই হাইড্রেশনের ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে বেশি। এছাড়া এ সময় ঘুমের রুটিন চেঞ্জ হয়ে যায়, ঘুমের সময়ও কমে আসে ফলে স্ট্রেস ও বিশ্রামের অভাবে স্কিনে ডার্ক সার্কেল সহ দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। তাই একটু সময় করে রোজায় স্কিনকেয়ার মেইনটেইন করাটাও প্রয়োজন।
Leave a comment