অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটাঃ মাথার চুল ঝরে যাওয়ার এই রোগ কেন হয়?

রানা হঠাৎ করে একদিন খেয়াল করলো তার মাথার একটি নির্দিষ্ট স্থানের চুল উঠে গেছে, একবারে পরিষ্কার হয়ে আছে জায়গাটি, কোন চুলই নেই। সে বেশ ভয় পেল এবং টেনশনে পড়ে গেলো।

এই সমস্যাটি খুব সাধারন একটি স্কিন প্রবলেম যা এলোপেশিয়া এরিয়াটা নামে পরিচিত। আজকে আমরা এই সমস্যাটি সম্পর্কে জানবো।

 

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা কী?

মূলত চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যাকে মেডিকেলীয় ভাষায় অ্যালোপেশিয়া বলে। প্রতিদিন ১০০ টি থেকে ১২৫ টি চুল পড়া একদম স্বাভাবিক। কিন্তু এর চেয়ে বেশি পড়তে থাকলে সেটি অবশ্যই চিন্তার কারন। তবে অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা ব্যাপারটা আরো একটু গভীর। আমাদের চুল গজানো থেকে ঝরে পড়া পর্যন্ত মোট আছে চারটি ধাপ। 

 

১। অ্যানাজেনঃ এটি হলো চুলের বৃদ্ধির পর্যায়। এই পর্যায়ে মূলত চুল বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই পর্যায়টি ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। প্রতি মাসে চুলের এই বৃদ্ধির হার আধা ইঞ্চি। ৮০-৯০% চুল এই পর্যায়ে থাকে। 

২। ক্যাটাজেনঃ এই পর্যায়ে চুলের ফলিকলগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে ফলে চুলের বৃদ্ধি কমে যেতে থাকে। এই পর্যায়টি সাধারনত ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

৩। টেলোজেনঃ এই পর্যায়টিকে বলে রেস্টিং ফেজ। এ সময়ে হেয়ার ফলিকল প্রায় দেখাই যায় না, অনেকটা সুপ্ত বা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। ফলে চুলের বৃদ্ধিও একদমই বন্ধ থাকে। এই পর্যায়টি কয়েকদিন থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। ১০-১৫% চুল এই পর্যায়ে থাকে।

৪। এক্সোজেনঃ এটি হলো চুল পড়ার স্টেজ। মূলত ফলিকলে অ্যানাজেন ফেজ আবার শুরু হয় ফলে নতুন চুল গজানো শুরু করে। নতুন চুলের জন্য জায়গা দিতেই পুরোনো ও পুরোপুরি বৃদ্ধি পাওয়া চুল ঝরে যায়। 

 

তো অ্যালোপেশিয়া তখনই হয় যখন অ্যানাজেন ফেইজে আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম এই স্কিন সেলস বিশেষ করে হেয়ার ফলিকলস কে শত্রু ভেবে আক্রমণ করে বসে। এটিকে তাই বলে অটোইমিউন ডিজিজ। ফলে দেখা যায় শরীরের একটি নির্দিষ্ট জায়গার অথবা অনেক জায়গার চুল ঝরে একবারেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। 

 

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা কেন হয়?

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা নানান কারনে হতে পারে। যেহেতু এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ তাই দেখা যায় এই রোগটি হলে এর সাথে সাথে অন্যান্য ইমিউন সিস্টেমজনিত ও জিনগত সমস্যা দেখা দেয়। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার জন্য এই রোগটি দেখা দিতে পারে। যেমনঃ

 

  • অটোইমিউন সিস্টেমঃ অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটার প্রধান কারনই হলো ইমিউন সিস্টেমে কোন একটা সমস্যা হওয়া। যার ফলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম নিজের সেলস গুলোকে বাইরের সেলস মনে করে আক্রমণ করে বসে।  

 

  • জিনগত ও বংশগতির সমস্যাঃ বংশে কারো থাকলে এটি জিনগতভাবে হতে পারে।

 

  • পল্যুশনঃ অনেক বেশি পল্যুশন এর মাঝে থাকলে কখনো কখনো এই সমস্যাটি হতে পারে।

 

  • বিশেষ কিছু রোগঃ বিশেষ কিছু রোগ যেমন ডায়বেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা, থাইরয়েড ইত্যাদির কারনে অ্যালোপেশিয়া হতে পারে। আবার দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রেস, হতাশায় ভুগতে থাকলেও এটি হতে পারে।

 

  • ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সিঃ শরীরের নিউটিয়েন্টস ও ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সির কারনে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে অ্যালোপেশিয়া দেখা দিতে পারে।

 

  • ফাঙ্গাল ইনফেকশনঃ স্কিনে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, রিং ওয়ার্ম ইত্যাদির আক্রমণে অ্যালোপেশিয়া হতে পারে। 

 

  • স্কিন ডিজিজঃ সোরাইসিস, একজিমা সহ নানারকম স্কিন ডিজিজের কারনে এই রোগটি দেখা দিতে পারে।

 

  • ক্যান্সার ট্রিটমেন্টঃ ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট, কেমোথেরাপি ইত্যাদির জন্য অ্যালোপেশিয়া হতে পারে। 

 

অ্যালোপেশিয়া কত প্রকার?

যদিও আমরা অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা নিয়ে কথা বলছি তবে অ্যালোপেশিয়া কোথায় এবং কী ধরনের হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে কয়েক প্রকারে ভাগ করা যায়। যেমনঃ 

 

১। প্যাচি অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটাঃ এটিই সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। সাধারন শরীরের এক বা একাধিক স্থানে বিশেষ করে স্ক্যাল্পে প্যাচ বা গোলাকার হয়ে চুল উঠে যেতে দেখা যায়। চুল ঝরে যাওয়া অংশটি থাকে একদম মসৃণ। এটি এক রাতের মধ্যেও হতে পারে আবার আস্তে আস্তেও হতে পারে। এটি নিয়ে ‘তেলাপোকা চুল খেয়ে ফেলেছে” ধরনের ভুল ধারনাও প্রচলিত আছে। আসলে তেলাপোকার সাথে এটির কোন সম্পর্ক নেই। মাঝে মাঝে চুল ঝরার আগে স্ক্যাল্প চুলকাতে বা জ্বলতে পারে।

২। অ্যালোপেশিয়া টোটালিসঃ অ্যালোপেশিয়া টোটালিস হলে স্ক্যাল্পের সব অথবা বেশিরভাগ চুল ঝরে যায়।

৩। অ্যালোপেশিয়া ইউনিভার্সালিসঃ এটি খুব কম মানুষের মাঝে হয় তবে এটি হলে মাথা, ফেস সহ শরিরের সব স্থানের চুল পড়ে যায়।

৪। ডিফিউজ অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটাঃ স্ক্যাল্পে হঠাৎ করে চুল পড়ে যেতে থাকলে সেটিকে ডিফিউজ অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা বলে। এটি মাঝে মাঝে সেভাবে বোঝা যায় না যেহেতু খুব স্বাভাবিক চুল ঝরার সাথে এর লক্ষন মিলে যায়।

৫। অ্যালোপেশিয়া বারবেঃ এটিও প্যাচি অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটার মত মসৃণ প্যাচ বা গোলাকার চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা তবে এটি হয়ে থাকে দাড়িতে। হঠাৎ করে ছেলেদের দাড়িতে ছোট বা অল্প জায়গায় গোলাকার প্যাচ এর মত করে চুল ঝরে যেতে দেখা যেতে পারে। আস্তে আস্তে বড়ও হতে পারে অনেক সময়। এই সার্কেলের আশেপাশের দাড়িগুলো একটু সাদাও দেখা যেতে পারে। 

 

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা হলে করণীয় কী?

 

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে এটি হলে চুলকাতে পারে, ইচিং বা বার্নিং ফিলিং হতে পারে। এর চিকিৎসা তবে কী?

সেভাবে নির্দিষ্ট করে এর চিকিৎসা এখনো বের হয়নি। সাধারনত অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা হলে কিছুদিন পর একাই ঠিক হয়ে যায় যদি সমস্যাটা অনেক বেশি জটিল না হয়। এছাড়া অভিজ্ঞ ডাক্তাররা কিছু মিনক্সিডিল ৫%, অ্যানথ্রালিন, কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম, ডাইফেনসাইপ্রোন ক্রিম ইত্যাদি সাজেস্ট করে থাকেন। এছাড়াও লেজার লাইট থেরাপি, স্টেরয়েড ইনজেকশন ও এসব ক্ষেত্রে বেশ কাজ করে থাকে। ন্যাচারাল ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে পেঁয়াজের রস বেশ ভালো কাজ করে এবং প্যাচি অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটার ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর। পেঁয়াজের রস চুল পড়া কমায়, চুল অকালে পাকা রোধ করে এবেং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটির মাঝে থাকা অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকেও রক্ষা করে। তাই পেঁয়াজের রস সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করলেও এ রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।

রোজমেরী এবং পেঁয়াজের মাঝে রয়েছে চুলের জন্য নানা উপকারী উপাদান। এই দুটি উপাদান চুল বৃদ্ধি করতে, নতুন চুল গজাতে, চুল ঝলমলে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ হাতের কাছে পেলেও রোজমেরী সবসময় পাওয়া সম্ভব নয়। আবার এগুলো থেকে এক্সট্র্যাক্ট নিয়ে সব সঠিকভাবে প্রসেস করাটাও বেশ ঝামেলা ও সময়ের ব্যাপার। তাই আপনাদের কথা চিন্তা করেই অরগানিকাওন এনেছে রোজমেরী+অনিয়ন হেয়ার অয়েল। 

 

এই হেয়ার অয়েলটি আপনাকে যে যে বেনিফিট দিবে- 

 

১) চুল পড়া কমাবে

২) চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাবে

৩) চুলকে দিবে মজবুত ও ন্যাচারাল শাইন 

৪) পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে চুল 

৫) ড্যানড্রাফ দূর করতে সাহায্য করবে 

৬) ড্রাইনেস ও ফ্লেকিনেস কমাবে 

 

রোজমেরী, অনিয়ন ও কোকোনাট অয়েল দিয়ে তৈরী এই হেয়ার অয়েলটি হতে পারে আপনার হেয়ার কেয়ারের নিত্যসঙ্গী। অর্গানিকাওন সম্পূর্ণ কেমিক্যাল ফ্রি, ন্যাচারাল উপাদান দিয়ে স্কিন ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টস তৈরী করে থাকে। সেলফ কেয়ারে এই ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহারে আপনি পাবেন মনের মতো চুল ও ত্বক। 

Author