এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কি খাবেন আর কি খাবেন না ।

আমাদের শরীরের সবচে প্রথমেই কিন্তু নজরে পড়ে আমাদের ত্বক। এটি আমাদের সৌন্দর্যের অনেক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।ত্বকের যত্নের অন্যতম একটা জরুরি ব্যাপার হলো আমরা কি  ধরনের খাবার খাচ্ছি।বিশেষ করে ত্বকের ধরণ যদি হয় তৈলাক্ত তাহলে তো খাবারের প্রতি আমাদেরকে আরো একটু খেয়াল রাখতে হবে।আর এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে খাবারের প্রতি হতে হবে আরো একটু সতর্ক।আমরা অনেকে হয়তো জানি আবার অনেকে হয়তো ভালো করে জানিনা যে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের খাবারের চার্ট আসলে কিরকম হওয়া প্রয়োজন।

আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আমরা জানবো যে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের জন্য আমরা কোন কোন খাবারগুলো খাবো আর কোন কোন খাবারগুলো তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এড়িয়ে চলবো।

প্রথমেই জানবো যে,কোন খাবারগুলো আমরা এড়িয়ে চলবো বা একান্তই সেরকম সিচুয়েশনে তুলনামুলক খুবই কম পরিমানে খাবো:

১.রেড মিট,পোল্ট্রি চিকেন:

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যেকোন ধরনের রেড মিটই বলতে গেলে ক্ষতিকর।কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং লিউসিন নামক এমিনো এসিড থাকে যা ত্বকের তৈল নিঃসরণ প্রবনতা বাড়িয়ে তোলে।বিশের করে গরু এবং খাসির মাংশ তো তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা আরো প্রকট করে তোলে।

২.অতিরিক্ত মশলাদার খাবার:

বাঙ্গালি মানেই তো ঝালঝাল আর মশলাদার  খাবারের সমঝদার।কিন্তু অতিরিক্ত ঝাল এবং মশলা একত্রিত হয়ে ত্বকের জ্বলন ও প্রদাহ বাড়িয়ে দিয়ে ত্বকের তৈলাক্ততা আরো জোরদার করে তোলে।তাই তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে ঝাল ও মশলা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

৩.ডেইরী প্রডাক্টস:

এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে  ত্বককে আরো সুরক্ষিত রাখতে দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন দুধ,পনির,চীজ,মাখন এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।এগুলোতে উচ্চমাত্রার ফ্যাট থাকে এবং তৈলাক্ততা বাড়ায়।এমনকি লো ফ্যাট বা স্কিম মিল্কও ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যা বাড়ানো বৈকি কমায় না ।

৪.চিনি এবং রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটেড জাতীয় খাবার:

গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সবচেয়ে বেশি থাকে চিনি জাতীয় খাবারে।তাই চিনি,কেক,পাউরুটি,কুকিজ, বিভিন্ন পানীয় যেমন কোক,সেভেন আপ,সোডা বা এই ধরণের অন্যান্য আরো খাবার ও পানীয় গুলো ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়িয়ে দেয়।তাই এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে ।

৫.লবনাক্ত প্রসেসড ফুড এবং তেলেভাজা খাবার:

বিভিন্ন ধরনের চিপস, তেলে ভাজা বিভিন্ন ধরনের খাবার,অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় নাস্তায় থাকে ট্র্যান্স ফ্যাট নামক উপাদান যা আমাদের তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা আরো অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়।আবার যেহেতু অনেকগুলো প্রসেসড খাবার ই দ্বিত্বীয়বার তেলে ভাজতে হয়,তাই সেটা হয়ে যায় আরো বেশি ক্ষতিকর এবং তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেবার  পথে অন্যতম এক শত্রু।

৬.ফাস্ট ফুড ক্যাটাগরির খাবার:

ফাস্ট ফুড খাবারগুলো দেখতে যেমন সুন্দর,খেতে যেমন মুখরোচক,স্বাদে যেমন ফাস্ট ঠিক তেমনি তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা দ্বিগুন করে তুলতেও ফাস্ট।ফ্রাইড রাইস,ফ্রাইড চিকেন,পিজ্জা,রোল,বার্গারস যতই ভালো লাগুক না কেন,এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই এই জাতীয় খাবারগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।

এগুলো সাধারনত এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যার অনেক বড় ধরণের প্রভাবক।তারপরেও কিছু কিছু খাবার হয়তো দেখা গেল যে একজনের হয়তো সমস্যা হচ্ছেনা, কিন্তু আরেকজনের হচ্ছে।সেটাও নিজেরটা নিজের বুঝতে হবে।এভাবে যতটা সম্ভব নিজের সতর্কতা বাড়িয়ে খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

এতক্ষণ আমরা জানলাম যে এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে আমরা কোন কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবো।আসলে এড়িয়ে চলাটা জানতে পারলেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়েই যায়।

এখন আমরা এটা জানবো যে এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কোন খাবারগুলো আমাদের জন্য ভালো ফলাফল দেবে মানে ত্বকের তৈলাক্ততা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

১.উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার :

ফাইবার তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের জন্য আদর্শ।এটা শরীরকে বিশুদ্ধ করে,ফ্যাট কমিয়ে আনে।এতে করে ত্বকের তৈলাক্ততা কমে আসে।লাল আটা,ওটস,মিস্টি আলু,মসুর ডাল ইত্যাদি খাবার তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে আদর্শ খাবারের তালিকায় রয়েছে।

২.পানি,ফলমুল এবং শাকসবজি:

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে পানির কোন বিকল্প নেই।পর্যাপ্ত এবং নিদ্রিস্ট সময় অন্তর সঠিক পরিমানের পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।আর যতটা সম্ভব শাকসবজি খেতেই হবে।আমরা অনেকেই শাকসবজি খেতে পছন্দ করিনা।কিন্তু ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে চাইলে খাদ্যতালিকায় শাকসবজির লিস্ট টা বড় রাখতেই হবে।আর ফলমুলও যতটা সম্ভব খেতেই হবে তৈলাক্ত ত্বককে হাইড্রেটেড রেখে ত্বকের তৈলাক্ততা কমিয়ে আনতে।

৩.ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার:

ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাবার তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অনেক উপকারীতা দেয়।সামৃদ্রিক মাছ যেমন স্যামন,টুনা এগুলোতে হাই লেভেলের ফ্যাটি এসিড রয়েছে।এগুলো ত্বকের তৈলাক্ততা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে এবং একই সাথে ত্বকে এন্টিঅক্সিডেন্ট যোগায়।এছারাও বিভিন্ন শষ্য বীজ যেমন তিসির বীজ,চিয়া বীজ এ পর্যাপ্ত পরিমান ওমেগা থ্রী ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান।

এই জাতীয় খাবারগুলো তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অনেক কার্যকর।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন মানেই একটু বাড়তি খেয়াল রাখা,নিজেকে আরো কিছুটা আলাদা যত্নে রাখা।আর এই গরমে ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে চাইলে অবশ্যই কিছুটা বাড়তি খেয়াল করতেই হবে খাদ্যতালিকার প্রতি।যদিও সব সময়ই আসলে এত নিয়মকানুন মানা সম্ভব হয়ে ওঠে না।কিন্তু তারপরেও নিজের সুরক্ষার জন্য এবং এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে অবশ্যই আমরা খাদ্যতালিকার প্রতি যত্নশীল হতে চেস্টা করবো।

দিনশেষে আয়নায় সুস্থ,সুন্দর,স্বাস্থোজ্জল ত্বক দেখতে তো আমরা সবাই পছন্দ করি।

 

আজ এ পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থতার সাথে।