এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টোটাল একটা স্কিনকেয়ার রেজিম ।

দেখতে দেখতে চলে এসেছে গরমকাল।প্রকৃতিতে সগৌরবে জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি।আর  একই সাথে নিজের সাথে করে নিয়ে এসেছে প্রখর তাপ,নানাবিধ দূষণ এবং পলিউশনাল ড্যামেজেস।সেজন্য এমনিতেই এই গরমে ত্বকের যত্ন নেয়া জরুরি।

তার ওপর যদি হয় অয়েলি ত্বক তাহলে তো যত্ন নিতে হবে আরো দ্বিগুনভাবে।তেল চিটচিটে ভাবের সাথে গরম আবহাওয়া,ধোয়া,ময়লা,দূষণ এবং প্রখর সূর্যতাপ মিলে আমাদের তৈলাক্ত ত্বককে করে তোলে আরো সমস্যাযুক্ত।

তাই এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে আমাদের টোটাল একটা স্কিনকেয়ার রুটিন প্রয়োজন।অনেকগুলো প্রডাক্ট কিনলাম,টাকা নস্ট করলাম কিন্তু  কখন কোনটা ব্যবহার করবো এবং কিভাবে ব্যবহার করবো তা যদি আমরা ভালোভাবে না জানি তাহলে সর্বোচ্চ বেনিফিটস তো আমরা পেলাম না।আর যেহেতু অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক ব্রণের সমস্যাসহ আরো অনেকগুলো সমস্যার অবতারণা করতে পারে তাই আমাদেরকে পারফেক্ট একটা রুটিন কেয়ার করার প্রতি সজাগ দৃস্টি রাখতে হবে।

দিনশেষে সুস্থ সুন্দর ঝলমলে লাবন্যময় একটা ত্বক তো আমরা সবাই পেতে চাই।তাই আজ আমরা জানবো পারফেক্ট একটা স্কিনকেয়ার রুটিন যা এই গরমে আমাদের তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের জন্য জানতেই হবে।

সেজন্য আমরা এখন স্টেপ বাই স্টেপ একটা পারফেক্ট রুটিন জেনে নিবো তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেবার জন্য।

স্টেপ ১:ক্লিনজিং:

এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে সর্বপ্রথম যেটার প্রতি ফোকাস রাখতে হবে সেটা হলো ত্বক ভালোভাবে পরিস্কার করা। আর তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্লিনজার এমন চুজ করতে হবে যেন সেটা নন গ্রিজি এবং ন্যাচারাল উপাদান সমৃদ্ধ হয় এটার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

আমি ব্যবহার করি এরকম একটা ভালো ক্লিনজার  আমি আপনাদের সুবিধার জন্য সাজেস্ট করতে পারি যা আমি ইউজ করে অনেক উপকার পেয়েছি। সেটা হলো অর্গানিকাওনের চারকোল সোপ।একটিভেটেড চারকোলের সাথে লাই,একুয়া,গ্লিসারিন এবং আরো কিছু চমৎকার উপাদানের দূর্দান্ত সংমিশ্রণ হয়ে এই জেন্টল ক্লিনজারটি তৈরী।

সামান্য পরিমান ব্যবহারেই ত্বক অনেক ভালোভাবে পরিস্কার করে এবং এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও হালাল বিধায় আমি আশ্বস্ত হয়েছি এর নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে।


স্টেপ ২: টোনার:

আমরা অনেকেই এই ভুলটা করি যে ক্লিনজার ইউজের পরে টোনার ব্যবহার করিনা।এতে করে ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।আর তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে আরো একটু বেশি ক্ষতি হয়।তাই এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে টোনার ব্যবহার তো মাস্ট।এখন টোনারটি হতে হবে এমন যা তৈলাক্ততার পাশাপাশি ব্রণের সমস্যাও কমিয়ে আনবে।কারণ এটা তো আমরা জানি যে ত্বকের তৈলাক্ততা আর ব্রণের সমস্যা কতটা অন্তরঙ্গ।

তাই টোনার সিলেক্টিং একটা জরুরি বিষয়।

অর্গানিকাওন স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডের লেমন গ্রাস এন্ড পেপারমিন্ট টোনার আর উইচ হেজেল টোনার দুটো আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা এবং ব্রণের সমস্যা,দুটো ক্ষেত্রেই টোনারদুটো চমৎকার কাজ করে।
তাই এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে আপনারা চাইলে অর্গানিকাওনের এই টোনার দুটো আপনাদের বাকেট লিস্টে প্লেসড করতেই পারেন।

 

স্টেপ ৩:সিরাম

তৈলাক্ত ত্বকে সিরাম হাইড্রেশনের কাজ করে এবং অন্যান্য পুস্টি ভালোভাবে শোষিত হতে সাহায্য করে।আর এই গরমে আমাদের ত্বক খুব তাড়াতাড়ি ময়লা,ধুলো,বালি, প্লাস্টিক কণা এগুলো দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাই অন্যান্য নিউট্রিশন্স যেন আরো ভালোভাবে এবজর্ব হয় সেজন্য সিরাম অত্যন্ত জরুরি।

আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভিটামিন সি সিরাম অত্যন্ত কার্যকরী।কিন্তু ভিটামিন সি এর অনেকগুলো ফরম্যাট রয়েছে।সেগুলোর মধ্যে থেকে সবচেয়ে নিরাপদ ফরম্যাটটি চুজ করতে হবে।বাজারে অনেক ব্র্যান্ডেরই ভিটামিন সি সিরাম রয়েছে।দেখে শুনে ভালো এবং নিরাপদটা ক্রয় করতে হবে।


আমি আপনাদের সুবিধার জন্য একটা ভিটামিন সি সিরাম সাজেস্ট করতে পারি।সেটা হলো অর্গানিকাওনের ভিটামিন সি সিরাম।এটি ভিটামিন সি এর সবচেয়ে নিরাপদ ফরম্যাট থেকে প্রস্তুতিকৃত এবং ব্যবহারে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ফলাফল।আপনারা চাইলে নিজেদের জন্য নিতে পারেন।এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে এটা হবে পারফেক্ট একটা চয়েজ।

স্টেপ ৪: ময়েশ্চারাইজার।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে আমরা অনেকে ভাবি যে তৈলাক্ত ত্বকে হয়তো ময়েশ্চারাইজার এর প্রয়োজন নেই।কারন ত্বক তো তৈলাক্ত হয়েই আছে।কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা নয়।ত্বকে যেটা আছে সেটা এক্সট্রা তেল,তা আমাদের ত্বকে তেমন কোন উপকার করেনা।ত্বকে ইরিটেশন ঘটায়,ব্রণ তৈরী করে।তাই তৈলাক্ত ত্বকের ময়েশ্চারটা এমন হওয়া প্রয়োজন যেটা ত্বকের পি এইচ ব্যালেন্সের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ হয়।

তাই এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে ভালো দেখে ময়েশ্চারাইজার চুজিং করা অত্যন্ত জরুরি।
এজন্য আপনারা চাইলে অর্গানিকাওনের স্যাফ্রন গোট  মিল্ক সোপ  টা নিতে পারেন।স্যাফ্রনের সাথে গোট মিল্ক এবং আরো কিছু চমৎকার উপাদানের সমন্বয়ে এই চমৎকার বডি সোপটি তৈরী।আর গোট মিল্কের পিএইচ লেভেল আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেলের প্রায় কাছাকাছি।তাই এটি হয়ে উঠেছে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে আদর্শ একটি ময়েশ্চারাইজার।

স্টেপ ৫: এক্সফোলিয়েট বা ত্বক একদম ভেতর থেকে পরিস্কার করে আনা:

তৈলাক্ত ত্বকে প্রয়োজন হয় এমন ধরনের কেয়ার যা একদম ত্বকের ভেতরের ময়লা,ডার্ট,শূল এগুলো ক্লিন করে নিয়ে আসবে।আর এক্সফোলিয়েটিং এর জন্য ফেইস প্যাক ইউজ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।বাজারে অনেক ধরনের ফেস প্যাক রয়েছে।কিন্তু এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে তিনটা জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।এমন কোন ফেইস প্যাক চুজ করতে হবে যা এই গরমে ত্বককে সুরক্ষা দেবে,তৈলাক্ততা দূর করবে আবার ব্রণের সমস্যা থাকলে সেটাও অনেকটাই কমিয়ে আনবে।এই সমস্ত ব্যাপারগুলোর ওপর ফোকাস রেখে ফেইস প্যাক চুজ করতে হবে।

এজন্য অর্গানিকাওনের রয়েছে ডিপ ক্লিনজিং একনি রিমুভিং প্যাক।নিম পাউডার,মরিঙ্গা পাউডার,সিনামন পাউডার,মন্জিস্ঠা পাউডারের সাথে আরো বেশ কিছু কার্যকরী উপাদানের সমন্বয়ে তৈরী এই প্যাকটি এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের জন্য আদর্শ একটি ফেস প্যাক।আপনারা চাইলে প্যাকটি একবার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

স্টেপ ৬: লিপ কেয়ার

সম্পূর্ণ মুখশ্রীটির যত্ন নিতে যেয়ে যেন আমরা ঠোঁটের যত্ন নিতে না ভুলে যাই।সুন্দর টুকটুকে ঠোঁটজোড়া ধুলোময়লা,দূষণ এবং আরো নানাবিধ পলিউশনাল ড্যামেজের কারণে  হয়ে পড়ে কালচে,বিবর্ণ।আর ঠোঁট যেহেতু খুব সফিস্টিকেটেড জায়গা তাই পারতপক্ষে কেমিক্যালজাতীয় প্রডাক্ট ইউজ না করাটাই ভালো।
এই গরমে ঠোঁটে স্ক্রাবিং করাটা জরুরি।কারন ধুলো ময়লা,মেকাপ,লিপস্টিক এসবের কারনে অনেক ক্ষতি হয় ঠোঁটের।

তাই অর্গানিকাওনের রয়েছে চমৎকার একটা স্ক্রাবার যেটাতে ব্যবহৃত হয়েছে বিটরুট গুড়ো,ব্রাউন সুগার,এভোকাডো অয়েল ইত্যাদি উপাদান।এটি ঠোঁটের মৃত চামড়া উঠিয়ে আনবে,ঠোঁটের চামড়া নরম করবে,কালচে দাগ দূর করবে এবং হালকা গোলাপি একটা আভা তৈরী ।আবার অনেকের ক্ষেত্রে উল্টো সমস্যা দেখা দেয়।দেখা গেলো যে ত্বক অয়েলি কিন্ত ঠোঁট ড্রাই।এই সমস্যার জন্য অর্গানিকাওনের রয়েছে স্ট্রবেরী,এলোভেরা,কোকো বাটার,শিয়া বাটার,অলিভ অয়েল সহ আরো নানা চমৎকার উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরী লিপ বাম।এটি ঠোঁটের ড্রাইনেস দূর করে,ঠোঁটকে করে তোলে কোমল, মসৃণ।

আপনারা চাইলে লিপ বাম বা লিপ স্ক্রাবার আলাদা আলাদা নিতে পারেন। আবার চাইলে কম্বো ও নিতে পারেন।সুন্দর আপনি আকর্ষনীয় ঠোঁটে হয়ে উঠুন আরো প্রিয় ।

 

গরমে হবে হই হট্টগোল,জমবে মজা।কিন্তু এতকিছু করতে যেয়ে ত্বকের যত্নের ব্যপারে হবেনা কোন কম্প্রোমাইজ।আর যেহেতু তৈলাক্ত ত্বকের কথা আসছে,সেক্ষেত্রে তো খেয়াল করতে হবে আরো একটু বেশি যত্নের সাথে।
বাজারের হাজারো প্রডাক্ট দেখে ধোঁকা খাওয়া যাবেনা।দেখে শুনে কেমিক্যালমুক্ত,সিন্থেটিক ফ্যাগরেন্স মুক্ত ন্যাচারাল,হালাল এবং নিরাপদ প্রডাক্ট চুজ করতে হবে।তার সাথে পুস্টিকর খাবার,পর্যাপ্ত পানি,মানসম্মত ঘুম এবং ন্যাচারাল ওয়েতে ত্বক পরিচর্যার মাধ্যমে এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিশ্চিত করতে হবে।

আজ এ পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকুন সুস্থতার সাথে।