এই গরমে শুস্ক ত্বকের যত্নের জন্য ঘরোয়া সুপার ফাইভ টোটকা।

গরমকাল চলেই এসেছে।চারপাশে আকড়ে ধরেছে শুস্কতা।সেই শুস্কতার বলয়ে পড়ে শুস্ক ত্বক হয়ে উঠছে আরো শুস্ক। অয়েলি ত্বকের যত্নে আমরা যতটা কেয়ারফুল থাকি সাধারনত শুস্ক ত্বকের যত্নে আমরা ততটা মনোযোগ দেই না।কিন্তু এই ব্যাপারটা আসলে ভুল।বরঞ্চ শুস্ক ত্বক আরো তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়,ত্বকের লাবণ্যতা হারিয়ে যায়,ত্বক দেখতেও রুক্ষ লাগে এবং ত্বকের ভেতরের শুস্কতার কারণে ত্বক হয়ে পড়ে প্রাণহীন।আর শুস্ক ত্বকের মানুষদের ত্বকে বার্ধ্যক্যের ছাপ তুলনামুলক আগে প্রকাশ পায়।

শুস্ক ত্বকের ওপরের এপিডার্মিস লেয়ারে প্রয়োজনীয় অনুপাতে পানির পর্যাপ্ততা পূরণ না হলে তখনি সাধারনত ত্বকের আদ্রতা  কমে যায় এবং ত্বক আস্তে আস্তে ভঙ্গুর হতে শুরু করে, ত্বকের কোষকলা দূর্বল হয়ে পড়ে,ত্বকের দৃঢ়তা কমে যায়।এতে করে ত্বক ক্ষয় তো হয়ই এবং ত্বকে বয়সের ছাপ খুব তাড়াতাড়ি দৃশ্যমান হয়।তাই শুস্ক ত্বকের যত্নে অবহেলা না করে এই ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেও নিয়মিত যত্ন নেয়া উচিত।শুরুতেই যত্ন না নিলে পরবর্তিতে এটা ড্যামেজড স্কিনে রুপ নেবে এবং তখন যত্ন নিলেও আশানুরুপ ফলাফল আর পাওয়া যায় না।

না।আমরা আসলে অনেকেই জানিনা।প্রডাক্টগুলোর চাকচিক্য এবং কয়েকদিন ব্যাবহারেই চকচকে ত্বক আমাদের চোখের সামনে একটা পর্দা হয়ে থাকে।আমরা বুঝতেই পারিনা যে এতে করে আমাদের ত্বকের কোষকলাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে,কোলাজেন ফরমেশন ব্যাহত হচ্ছে,ত্বক পাতলা হয়ে যাচ্ছে,ইলাস্টিসিটি কমে যাচ্ছে।এগুলো বুঝতে বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়।যতদিনে আমরা বুঝি ততক্ষণে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যায় ত্বকের।

তাই আমাদের উচিত নিজের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং কেমিক্যালবিহীন,সিন্থেটিক ফ্র্যাগেরন্সবিহীন উপাদান ব্যাবহারের প্রতি মনোযোগী হওয়া।কথায় আছে যে,নিজের ভালো পাগলেও বোঝে।তাই সবচে ভালো হয় ন্যাচারাল উপাদান সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যাবহার করা এবং পাশাপাশি ঘরোয়া ভাবে শুস্ক ত্বকের যত্ন নেয়া।

আজ আমরা শুস্ক ত্বকের যত্নের জন্য সহজ কিছু ঘরোয়া টোটকা জানবো যা ত্বকের শুস্কতা দূর করবে এবং ত্বক করে তুলবে লাবন্যময় ও মসৃণ।

১.মধু:

চমৎকার এই প্রাকৃতিক উপাদানটি আমাদের জন্য এক ধরনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আর এটা বলতে গেলে থাকেই আমাদের সবার বাসাতেই।মধু শুস্ক ত্বকে ময়েশ্চার ফিরিয়ে আনে এবং ময়েশ্চার লক করে রাখতে সাহায্য করে।

শুস্ক ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপাদান হিসেবে মধুর ব্যাপক ব্যাবহার রয়েছে।

কয়েকভাবেই মধু ব্যাবহার করা যায়।

(১)মধুর মাস্ক:

ত্বকে হাতের সাহায্যে বা ব্রাশের সাহায্যে  পাতলা লেয়ার করে মধু লাগিয়ে নিতে হবে।১০-১৫ মিনিট মতো রেখে এরপর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলতে হবে।

(২)মধু আর দুধের মিশ্রণ:

সমপরিমাণ মধু আর  কাঁচা দুধ মিশ্রিত করে মিশ্রণটুকু ত্বকে ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে পাতলা লেয়ার করে।এটা শুস্ক ত্বককে হাইড্রেট করবে আর ত্বক শান্ত করে তুলবে।বিশেষ করে ত্বকে চুলকানির সমস্যা থাকলে এটা খুব ভালো কাজ করে।

(৩)মধু আর লেবুর রসের মিশ্রণ:

হাই লেভেলের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ থাকায় লেবুর রস ত্বক উজ্জল করে এবং ত্বকে পুস্টি যোগায়।সমানভাগে লেবুর রস আর মধু নিয়ে মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে ৫-১০ মিনিট।এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে।

এটি শুস্ক ত্বকের কালচে ছোপ ছোপ দাগ দুর করবে,ত্বকের বলিরেখা কমাবে।

(৪)মধু, অলিভ অয়েল ও যষ্ঠিমধু গুড়ো:

যাদের ত্বক একদম অতিমাত্রায় শুস্ক,ত্বক ভেঙ্গে গেছে এবং ত্বকের ওপর থেকেই ত্বকের ড্যামেজড ভাব বোঝা যায় এরকম শুস্ক ত্বকের যত্নে মধুর সাথে অলিভ অয়েল এবং যষ্ঠিমধু গুড়ো মিক্স করে নিয়ে বানানো এই প্যাকটি দূর্দান্ত কাজ করে।তবে এখানে একটি কথা রয়েছে।হাজারো নকল প্রডাক্টের ভিড়ে ভালো মানের অলিভ অয়েল এবং যষ্ঠিমধু গুড়ো সিলেক্ট করতে হবে।দাম দিয়ে কিনে এনে আসলে যদি মানসম্মত প্রডাক্ট নাই হলো তাহলে তো পরিশ্রম বৃথা আর ত্বকের ক্ষতি তো যেন আছেই।আপনারা চাইলে আমি নিজে ব্যাবহার করে উপকৃত হয়েছি এরকম একটা ব্র্যান্ডের যষ্ঠিমধু গুড়ো সম্পর্কে বলতে পারি।সেটা হলো অর্গানিকাওন স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড এর যষ্ঠিমধু গুড়ো গুড়া। এদের এই যষ্ঠিমধু গুড়ো  ভেজালের ভীড়ে চমৎকার একটি পণ্য ।আপনারা চাইলে এদের ফেজবুক পেজ থেকে নিয়ে ব্যাবহার করে দেখতে পারেন।

২.কলা :

সাধারনত এই ফলটি বেশির ভাগ সময়েই আমাদের সবার বাসাতেই থাকে।প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ  হওয়ার দরূন এটি শুস্ক ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেট করে তোলে।ত্বকের কালচে ভাব দুর করে,ত্বক উজ্জল করে।

পাকা কলা থেঁতলে নিয়ে সেটা পুরো ফেসে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এটার কার্যকারিতা আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে যদি এর সাথে চন্দনগুড়ো বা মুলতানি মাটি বা কমলার খোসা গুড়ো মিশিয়ে ব্যাবহার করা যায়।এই তিনটি উপাদান সবগুলোই একত্রে চটকে নেয়া কলার ক্বাথের সাথে মিশিয়ে বা সিঙ্গেল ভাবে মিশিয়ে ব্যাবহার করা যায়।সাথে অল্প পরিমাণে পানি মিশিয়ে নিয়ে মাস্কটি ব্যাবহার করতে হয়।কিছুক্ষন রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

আপনারা চাইলে অর্গানিকাওনের পেজ থেকে শতভাগ বিশুদ্ধ এবং কোন প্রকার কোন কেমিক্যালের মিশ্রণবিহীন চন্দনগুড়ো,মুলতানি মাটি এবং কমলার খোসা গুড়ো পেয়ে যাবেন।সবগুলো যদি একত্রে মিশিয়ে ব্যাবহার করা যায়  অনেক ভালো ফলাফল আশা করা য়ায।কিন্তু সবগুলো যদি আপনারা একই সময়ে নাও নিতে পারেন অন্তত কমলার খোসা গুড়ো নিয়ে পাকাকলার সাথে চটকে নিয়ে ব্যাবহার করলে ফলাফল অনেকটা আশানুরুপ আসবে।

৩.নারিকেল তেল:

সবার বাসাতেই আর কোন তেল থাকুক বা না থাকুক নারিকেল তেল থাকবেই।শুস্ক ত্বকের যত্ন নিতে এটি একটি আদর্শ।রাতে ঘুমানোর আগে অল্প করে তেল নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিতে হবে।তবে এখানে ছোট্ট একটা সমস্যা আছে।অনেকের ক্ষেত্রেই নারিকেল তেল ব্যাবহারে ত্বক একটু কালচে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।এই সমস্যা সমাধানে নারিকেল তেলের সাথে এভোকাডো অয়েল মিশিয়ে ব্যাবহার করলে ভালো ফলাফল আসে।এভোকাডো অয়েল ত্বককে ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজড করে,ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়।তাই শুক ত্বকের যত্নে নারিকেল তেলের সাথে এভোকাডো অয়েল অল্প পরিমাণ মিলিয়ে ব্যাবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

৪.মসুর ডাল:

শুস্ক ত্বকের যত্নে আরেকটি সহজলভ্য উপাদান  হলো মসুর ডাল।মসুর ডাল বেটে নিয়ে সাথে একটু মধু মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে এপ্লাই করতে হয়।এছাড়াও অনেকে গাঁদা ফুল বেটে নিয়ে তার সাথে মসুর ডাল বেটে নিয়ে বা গুড়ো মিশিয়ে  ত্বকে লাগান।মসুর ডাল ত্বককে ময়েশ্চার যোগান দেয়,শুস্কতা কমিয়ে আনে এবং গাঁদা ফুলের কারনে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জল।

মসুর ডাল আরো সহজভাবে ব্যাবহারের জন্য মসুর ডালের পাউডার ব্যাবহার করা যায়।ভালো মানের,ভেজালবিহীন এবং একদম মিহি ভাবে বাটা মসুর ডাল পাউডার নিতে চাইলে আপনারা অর্গানিকাওনের মসুর ডাল গুড়ো নিতে পারেন।

৫.আলুর রস:

শুস্ক ত্বকের যত্নে এটি একটি চমৎকার উপাদান।এটি ত্বকে পুস্টি যোগায় এবং ত্বককে ভেতর থেকে স্বাস্থোজ্জল করে তোলে।আলুর রস করতে কস্টকর মনে হলে আলু স্লাইস করে নিয়ে ত্বকে ঘষে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।কিন্তু  শুস্ক ত্বকে আলুর রসের কার্যকারীতা আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে যদি এর সাথে মুক্তোর গুড়ো যোগ করা যায়।আলুর রস,মুক্তোর গুড়ো আর সামান্য গোলাপ জল বা পানি মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিয়ে ত্বকে ব্যাবহার করতে পারলে ফলাফল আরো অনেক ভালো পাওয়া যায়।এখন কথা হলো যে ভালো মানের মুক্তোর গুড়ো কোথায় পাওয়া যাবে।

যেহেতু মুক্তো অনেকটাই দামি এবং সচরাচর সব জায়গায় পাওয়া যায় না,তাই মান নির্ণয়ের ব্যাপার রয়েছে।আমি পার্সোনালি সাজেস্ট করতে পারি অর্গানিকাওনের পার্ল পাউডারটি।আমি নিজে এটি ব্যাবহার করেছি এবং উপকৃত হয়েছি।আপনারা চাইলে এটিও একবার ইউজ করে দেখতে পারেন।

এগুলো প্রত্যেকটি উপাদানই একেবারেই ঘরে থাকা সহজলভ্য উপাদান।চাইলেই কিছুটা  সময় বের করে নিজের যত্ন করা যায়।সব সময়ই আমাদের হাতের কাছে সব ধরনের উপাদান থাকেনা বিধায় আজ আমরা একেবারেই সিম্পল কিছু টোটকা নিয়ে আলোচনা করলাম।

অর্গানিকাওন স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড সব সময়ই প্রাকৃতিক,বিশুদ্ধ এবং হালালভাবে প্রস্তুতিকৃত পণ্য সরবরাহে বিশ্বাসী।উপরে যেগুলো বলা হয়েছে সেগুলো ছাড়াও অর্গানিকাওনের আরো কিছু প্রডাক্ট রয়েছে যা মুলত শুক ত্বকের যত্বের জন্য ফর্মুলাইজড।আপনাদের জানার সুবিধার্থে আমি জাস্ট দুটো প্রডাক্টের কথা আপাতত বলছি যা এই গরমে শুস্ক ত্বকের যত্বে একদম পারফেক্ট।সেগুলো হলো অর্গানিকাওনের কোলাজেন ক্রীম এবং কুমকুমাদি ফেসিয়াল অয়েল।দিনে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কোলাজেন ক্রীমটির ব্যাবহার শুস্ক ত্বকের ক্ষেত্রে অনেক ভালো ফলাফল দেয়।

আর প্রায় ৬০ টিরও বেশি নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত চমৎকার কুমকুমাদি  ফেসিয়াল অয়েলটি ত্বকের শুস্কতা দুর করে,ত্বক ময়শ্চারাইজড করে তোলে এবং ত্বককে করে তুলবে তুলতুলে লাবণ্যময়।যারা শুস্ক ত্বক নিয়ে অনেক সমস্যায় আছেন এবং ত্বকের যত্নের পেছনে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না তারা অন্তত একবার নাহয় এই দুটো প্রডাক্ট ব্যাবহার করেই দেখুন।

ত্বক আমাদের সৌন্দর্যকে রিপ্রেজেন্ট করে অনেকটাই।আর গরমে শুস্ক ত্বকের আরো বেশি শুস্কতা কমাতে প্রয়োজন কিছুটা আলাদা যত্বের।তাই ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমেই হোক আর অর্গানিক প্রডাক্টের মাধ্যমেই হোক ;কিছুটা সময় বের করে ত্বকের যত্ন তো নিতেই হবে।

আজ এ পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থতার সাথে।