ত্বক ! শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে উজ্জল,দাগহীন,সুন্দর একটি প্রতিবিম্ব।কিন্তু সেই সুন্দর ছবিটা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় যদি কিনা ত্বক হয় তৈলাক্ত।ত্বকের ধরন তৈলাক্ত হলে সৌন্দর্য অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে।আর এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেয়াটা তো আরো এক যুদ্ধ বলা যায়।
নানাবিধ স্কিনকেয়ার রেজিম বা প্রডাক্টস বা টোটকা অনুসরণ করে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন যেমন বাহির থেকে নিতে হয় ঠিক তেমনি ভেতর থেকেও ত্বককে তৈলাক্ততা প্রতিরোধী করে তুলতে হয়।সেজন্য আমরা অনেক ধরনের ফল, মুল, শাক সবজি এবং অন্যান্য খাবার খাই। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন ধরনের খাবারগুলি খাওয়া প্রয়োজন বা কোনগুলো আমরা এড়িয়ে চলবো এটা আমরা অনেকেই জানি ।কিন্তু আজ আমি একদম আলাদা করে সুপার ৫ টি খাবারের কথা বলবো যা এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা কমিয়ে আনতে খুব ভালো কাজ করবে।
এখন এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে আলাদা করে এটুকু কেয়ার তো আমরা নিতেই পারি। চলুন তাহলে জেনে নেই সেই সুপার ফাইভ ফুড ; যেগুলো তৈলাক্ততা কমিয়ে আনতে শরীরকে ভেতর থেকে কার্যকরী করে তুলবে।
সাধারনত সব ধরনের ত্বকের জন্যই পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেবার ক্ষেত্রেও এটি তার ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু আরো একটি ন্যাচারাল ফুড আছে যা শরীরকে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড করে এবং ত্বকের সেবাম প্রডাকশন কমিয়ে আনতে দূর্দান্ত।সেটা হলো ডাবের পানি।
প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি,ম্যাগনেসিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ,পটাশিয়াম ধারণ করা এই সুস্বাদু ন্যাচারাল পানীয়টি এই গরমে শরীর তরতাজা রাখার পাশাপাশি তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যাতেও অনেক ভালো কাজ করে।তাই আমাদের যাদের তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা রয়েছে,আমরা নিয়মিত ডাবের পানি খাদ্যতালিকায় রাখতে চেস্টা করবো।
বিভিন্ন প্রকারের শষ্যদানা ত্বকের নানা ধরনের উপকার তো করেই কিন্তু স্পেসেফিক কিছু শষ্যদানা ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে চমৎকার কাজ করে।এরকম কিছু শষ্যদানা হলো কুইনোয়া,ওটস,লাল চাল,বাজরার আটা বা বাকহুইট যা খুবই ভালো কাজ করে ত্বকের তৈলাক্ততা কমাতে।আমাদের দেশে কুইনোয়া আর বাজরার আটা পাওযা কিছুটা কঠিন।
কিন্তু ওটস এবং লাল চাল খুব সহজেই পেতে পারি আমরা।প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল,এন্টিঅক্সিডেন্টাল গুনাবলির পাশাপাশি এগুলো উচ্চ মাত্রার ফাইবারসম্পন্ন।
বিভিন্ন পরীক্ষায় এগুলো প্রমানিত যে গাট হেল্থ বা পরিপাকসম্নন্ধীয় ব্যাপারগুলো যখন ভালোভাবে ঘটে তখন আমাদের ত্বকের কার্যকারিতাও সূচারুভাবে হয়ে থাকে।তাই এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অবশ্যই আমাদের খাদ্যতালিকায় এই জাতীয় শষ্যদানাগুলো রাখতে চেস্টা করবো আমরা।
আমরা কম বেশি সবাই জানি যে কমলা অনেক পুস্টিকর এবং নানাবিধ গুণাবলি সম্বলিত একটি ফল।কিন্তু কমলা যে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কতটা উপকারী তা কি আমরা জানি?হয়তো জানি বা হয়তো নাও জানতে পারি।সমস্যা তো নেই।এখন আমরা জেনে নিলাম।প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় এটি কোষের ড্যামেজ কমিয়ে আনে,রিঙ্কলস দূর করে এবং ত্বকের তৈল নিঃসরণ আশানুরুপ ভাবে কমিয়ে আনে।
তাই এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে যেয়ে খাবারের তালিকায় কমলা রাখতে কিন্তু ভুল করা যাবেনা।
মনে আছে কি, বাসায় যখন মিস্টিকুমড়ার বীজ ভাজা হতো তখন কতটা খুশি হতাম আমরা?কিন্তু তখন হয়তো আমরা জানতাম না যে মুখরোচক এই মিস্টিকুমড়ার বীজ যেটাকে পেপিটাস বলা হয়,এটা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য একটা আইডিয়াল খাদ্য উপাদান।প্রচুর পরিমানে ম্যাঙ্গানিজ জিঙ্ক এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।এটি ত্বকের তৈল নিঃসরণ প্রবণতা কমিয়ে আনতে দূর্দান্ত কাজ করে।
এছাড়াও নিয়মিত মিস্টিকুমড়ার বীজ গ্রহন কোলাজেন সিন্থেসিস বাড়ায়,বয়সের ছাপ কমায়। তাই এখন এই কুড়মুড়ে মিস্টিকুমড়ার বীজ খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া যাবেনা কোনভাবেই।
চমৎকার এই খাবারটি পছন্দ করেনা এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই বেশি নয়।লিগাম ফ্যামিলির এই খাবারটিতে রয়েছে বি ভিটামিন,জিঙ্ক,ফোলেট,পটাশিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবার আর প্রটিন এর কম্বো।
এটা ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে,এতে করে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে এবং এর প্রভাব পড়ে ত্বকে।এতে করে সিবাসকোস গ্ল্যান্ড থেকে কম অয়েল উৎপন্ন হয় এবং ক্রমান্বয়ে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা অনেকটাই কমে আসে।
গরমকাল মানেই তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা যেন আরো দ্বিগুনবেগে ধেয়ে আসা।তাই এই সিজনটাতে ত্বকের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ দুটো যত্নই নিতে হবে আরো একটু যত্নের সাথে।অনেক খাবারই আছে যা তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের জন্য উপকারী।কিন্তু সব সময়ই সব ধরনের খাবার হাতের কাছাকাছি পাওয়া নাও যেতে পারে।উপরে যেগুলো বলা হলো সেগুলো বেশিরভাগ সময়েই আমাদের বাসায় থাকে বা চাইলেই কাছেপিঠে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।আর দামও অনেকটাই হাতের নাগালে।
এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে নিজেকে ভেতর থেকেও রাখতে হবে সতেজ এবং তৈলাক্ততার সমস্যা কমিয়ে আনার জন্য শরীরকে সেভাবে প্রতিরোধী করে গড়ে তোলার জন্য খাদ্যতালিকার প্রতিও একটু মনোযোগী হবো আমরা।সেজন্য প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় এগুলো রাখার চেস্টা করবো।
আজ এ পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থতার সাথে।
Leave a comment