‘ দি ট্রি অফ লাইফ’ নামে খ্যাত বাওবাব অয়েল কেন আপনার ব্যবহার করা উচিত?

স্কিন ও হেয়ার কেয়ার রুটিনে বাওবাব অয়েলটি রেখেছেন তো?

আফ্রিকায় একটা কথা প্রচলিত আছে।

যদি কেউ বলে যে “You can’t have it all” মানে ” একই জিনিসে সব গুনাবলিআপনি পাবেন না ” – এরকমটা বুঝাতে চায় তাহলে তিনি হয়তো বাওবাব অয়েল সম্পর্কে এখনও জানেন না।বাওবাব শব্দটি হয়তো শুনেছেন।অনেক কসমেটিক প্রডাক্টেই বাওবাব ফ্রুট এক্ট্যাক্টস ইউজ করা হয়।কিন্তু এটি যে একটা সিঙ্গেল অয়েল হিসেবেও ব্যাবহৃত হয় তা হয়তো প্রথম শুনলেন।হতেই পারে।এটার দূ্স্প্রাপ্যতা এখনো আমাদের কাছে এটাকে সুপরিচিত করে তোলেনি।

সূদুর মাদাগাস্কারে জন্মানো প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার এই গাছটির ফলের বীজ থেকেই তৈরী এই বাওবাব অয়েল।খটোমটো এই গাছের ফলটি নাকি বাদুড়ের খুব পছন্দ বিধায় এটাকে স্থানীয় ভাষায় মাংকি ব্রেড ও বলে।

এই অয়েলটি সম্পর্কে জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছি।এটার এত উপকারিতা রয়েছে স্কীনে এবং হেয়ার কেয়ারে বলার বাহিরে।এজন্যই হয়তো এটাকে “ট্রি অব লাইফ ” বলা হয়।তো,আজকে আমি আপনাদের বলবো এই আশ্চর্য ম্যাজিকাল অয়েলটি নিয়ে।

বাওবাব অয়েল আসলে কি?

এতক্ষনে তো বুঝেই গিয়েছেন যে,বাওবাব নামক গাছের ফলটির বীজ থেকে প্রাপ্ত তেলই হলো বাওবাব অয়েল।বাওবাব ফলের বীজ থেকে অর্গানিকভাবে কোল্ড প্রেসড ওয়েতে অয়েলটি কালেক্ট করা হয়।এটাতে হিউজ পরিমানে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আছে।এছাড়াও কমলার চেয়েও প্রায় ৭ থেকে ১০ গুন বেশী ভিটামিন সি পাওয়া গিয়েছে।ক্যালশিয়াম, আয়রন,ভিটামিন বি,পটাশিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম সহ আরো রয়েছে প্রচুর ফসফরাস। এগুলো আমাদের হেয়ার ও স্কিনে বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে।

আমি কোন ব্র্যান্ডের বাওবাব অয়েলটি পছন্দ করি এবং কেন?

বাওবাব অয়েলটি পাওয়া অনেকটাই কঠিন ছিলো যদিও।কারন এই গাছটি তো একেবারেই নেই আমাদের দেশে।তো,বাজারে কিছু কিছু ব্র্যান্ড যদিও অয়েলটি সেল করে।কিন্তু আমার সবচেয়ে পছন্দের হলো “অর্গানিকাওন” ব্র্যান্ডের “১০০% পিওর এন্ড কোল্ড প্রেসড আনরিফাইন্ড বাওবাব অয়েলটি”।

ছোট্ট ৩০ মিলি পরিমানের বোতলজাত হয়ে ওদের অয়েলটি আসে।এবং ওদের প্রডাক্টের মূল উপাদানই হলো ১০০% পিওর বাওবাব অয়েল।যদিও দামটি শুনতে একটু বেশিই মনে হয় ।আমারও মনে হয়েছিলো।কিন্তু ব্যাবহারের পর আমার কাছে মনে হয়েছে যে ঠিকই আছে।ভালো জিনিসের দাম একটু বেশিই হয়।ওদের কোয়ালিটি এবং প্যাকেজিংও একদম টপ প্রিমিয়াম কোয়লিটির।

আমরা এখন অয়েলটির ডিটেইলস উপকারীতা জানবো। যেন আমটা বুঝতে পারি যে কেন এটার এত চাহিদা।

স্কিন কেয়ারে বাওবাব অয়েল:

১.বাওবাব অয়েল হেল্থি স্কিন ময়েশ্চার ব্যারিয়ার হিসাবে দূর্দান্ত:

প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই আছে বিধায় বাওবাব অয়েল ত্বকের ওপরের এপিডার্মিস লেয়ারকে সুরক্ষা দেয়।তাতে করে ত্বকের ময়েশ্চারড লক হয় এবং বয়সের ছাপ কমে আসে।ত্বক হয়ে ওঠে নরম আর স্মুথ।

২.কোলাজেন লেভেল বাড়ায়:

আমাদের স্কিনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রটিন তৈরী করে হলো কোলাজেন।স্কিনের স্ট্রেনথ এবং ইলাস্টিসিটি অনেকটাই নির্ভর করে এই কোলাজেন এর ওপর।কোলাজেন লেভেল ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা উৎপাদন কমে গেলে স্কিন এজিং দেখায়।

বাওবাব অয়েলে রয়েছে রিচ এন্টিঅক্সিডেন্ট।তাই এটি কোলাজেন প্রডাকশন বাড়িয়ে তোলে এবং সেটাকে প্রিসার্ভ ও করে।

 

৩.ফাইন লাইন্স এবং রিঙ্কল প্রতিরোধ করে:

ইউভি রশ্নি,অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহন বা পুস্টিকর খাদ্যের ল্যাকিংস,স্বল্প ঘুম আমাদের ত্বকে ফাইন লাইন্স এবং রিঙ্কলস এর কারন।বাওবাব অয়েলের এন্টিঅক্সিডেন্ট কেয়ালিটির কারনে এটি এগুলোর প্রতিরোধে দারুন কার্যকরী।

৪.এটি স্কিন মাইক্রোবিম ফ্রেন্ডলি:

আমাদের স্কিনের লেয়ারে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমিউনিটি থাকে যেগুলো স্কিনের অনেক হেল্প করে।এগুলোকে বলা হয় মাইক্রোবীম ব্যাকটেরিয়া।বাজারের বিভিন্ন প্রডাক্টের হার্মফুল এফেক্টের কারনে অনেক সময় এগুলো মারা যায় বা কম সংখ্যক বেঁচে থাকে।

বাওবাব অয়েল এই মাইক্রোব্যাকটেরিয়া ফ্রেন্ডলি এবং সেগুলোকে কোন ক্ষতি করেনা। এটি সব ধরনের স্কিনের জন্যই ব্যাবহারযোগ্য।

 

৫.একনি প্রতিরোধী এবং অয়েল ক্লিনার:

বাওবাব অয়েল ত্বকের পোরসগুলো বন্ধ করে ফেলেনা এবং অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন কমায়।সেন্সিটিভ স্কিনে জেন্টল ওয়েতে কাজ করে এবং ইরিটেশন কমায়।”অয়েল ডিসলভ অয়েল” এই কোটেশনটি বাওবাব অয়েলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সারাদিন শেষে অয়লের ১/২ ফোটার ব্যাবহার ত্বকের ময়লা এবং পোর ক্লোগিং ডার্ট ক্লিন করবে,অয়েল শুষে নেবে। এবং মেকাপ রিমুভার হিসেবেও এটি চমৎকার কাজ করে।

 

বাওবাব অয়েল আরো কি কি ভাবে ব্যাবহার করা যায়:

শুধু চমৎকার মুখশ্রীতে নয়,আরো অনেক ক্ষেত্রেই বাওবাব অয়েল কার্যকরী:

নখের বৃদ্ধিতে:

সুন্দর হেলথি নখের যত্নে বাওবাব অয়েলের সুনাম রয়েছে।এটি এবজর্ব হয় তারাতাড়ি এবং গুড কিউটিকল অয়েল।তাই নখের বৃদ্ধিতে এটার জুড়ি নেই।একটু খানি তেল নখে লাগান এবং এভাবে করুন নিয়মিত।এরপর দেখুন কি চমৎকার সুন্দর নখ হয়েছে।

শুস্ক ও ফাটা ঠোঁটের যত্নে:

সুন্দর নরম ঠোঁট তো আলাদা সৌন্দর্য।রিচ লিপ বাম হিসেবে বাওবাব অয়েলটি একটি মাস্ট নিড।

এক ফোটা অয়েল নিন এবং পুরো রাত ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন।ঠোঁট হয়ে উঠবে নরম,কোমল এবং উজ্জল।

ত্বকের একজিমা ও সোরিয়াসিস জনিত সমস্যায়:

ইনফ্ল্যামেটরী গুনাবলির জন্য বাওবাব অয়েল স্কিন একজিমা ও সোরিয়াসিসের সমস্যার এক পারফেক্ট সলিউশ্যন।দীর্যদিন নিয়মিত ব্যাবহারে এই সমস্যা পুরোটাই নির্মুল হয়।বেশি আক্রান্ত জায়গাগুলোতে ১ ফোটা বাওবাব অয়েলের সাথে গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যাবহার করুন।

হেয়ার কেয়ারে বাওবাব অয়েল:

১.গ্রেট হেয়ার কন্ডিশনার:

প্রচুর ময়েশ্চারাইজিং ন্যাচারের হওয়ায় বাওবাব অয়েল চুলের বিবর্নতা দূর করে ঔজ্জল্যতা ফিরিয়ে আনতে আদর্শ।এটা চুলকে রুট টু টিপ নারিশিং করে।চুলের ফ্রিজিনেস কমায়,চুলকে একদম গোড়া থেকে মজবুত করে নিয়ে আসে।

২.চুল হাইড্রেটস করে:

বাওবাব অয়েলে আছে অনেক পরিমানে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড।এটা হেয়ার কিউটিকলকে ময়েশ্চারাইজড করে এবং এভাবে চুলকে হাইড্রেটেড রাখে।

৩.হেয়ার গ্রোথ বুস্টার এবং কোলাজেন প্রটেকটর:

ওমেগা ৩, ওমেগা ৬ আর ওমেগা ৯ নামক ফ্যাটি এসিডের এক আশ্চর্য কম্বো রয়েছে এই বাওবাব অয়েলে।তাই এটি হেয়ার ফলিকল বাড়িয়ে তোলে প্রচুর পরিমানে এবং নতুন চুল জন্মায়।আর,সাফিশিয়েন্ট পরিমানে থাকা ভিটামিন সি চুলের কোলাজেন তৈরী হওয়ার রেটিং বৃদ্ধি করে বহুগুনে।

৪.খুশকি দূর করে:

অনেক সময় দেখা যায় যে,খুশকির পুরো স্তর পড়ে গিয়েছে মাথার ত্বকে।এটা যেমন অস্বস্তিকর তেমন কস্টদায়ক। এরকম পুরো লেয়ার হয়ে বসে যাওয়া স্ক্যাল্পের খুশকি দূর করতে চমৎকার কার্যকরী এই বাওবাব অয়েল।

 

চুলের ক্ষেত্রে বাওবাব অয়েলটি কিভাবে ব্যাবহার করবেন?

১.ওভারনাইট মাস্ক হিসেবে এবং প্রি শ্যাম্পুর মতো করে:

আনুমানিক পরিমানে বাওবাব অয়েল একটা বাটিতে নিয়ে ওভেনে সহনীয় মাত্রার গরম করে নিন।চুলের একদম গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাসাজিং করে পুরো রাত রাখুন।এছারা চাইলে এটা পুরো রাত না রেখে এক দুই ঘন্টার জন্যও এভাবে রাখতে পারেন।

 

২.কন্ডিশনার হিসেবে:

বাওবাব কন্ডিশনার যদি আপনি নাও পান,বর্তমান যেই কন্ডিশনার রয়েছে সেটাতেই আপনি ১/২ ফোটা বাওবাব অয়েল মিশিয়ে নিয়ে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন।

৩.কন্ডিশনিং স্প্রে হিসেবে:

ছোট্ট একটি বোতলে অল্প একটু পানি নিয়ে তাতে ২/৩ ফোটা বাওবাব অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে ঝাকিয়ে নিন।ব্যাস,তৈরী হয়ে গেলো চমৎকার স্প্রে।গোসলের পর চুল আধভেজা অবস্থায় এটি ব্যাবহার করুন।চুল হয়ে উঠবে সফ্ট,ঝালমলে উজ্জল।

এবার বুঝলেন যে কেন এটাকে ট্রি অব লাইফ বলে?একাই যদি এতো এতো উপকারিতা দেয় তাহলে তো বলাই যায়।ত্বক এবং চুলের যত্নে এটা যে কতটা ইউজফুল তা তো এখন জেনে গেলাম আমরা।আর দেরি না করে স্কিন কেয়ার রুটিনে আজই এটা রোলড করে ফেলুন।

একবার ব্যাবহারেই আপনি বুঝে ফেলবেন যে এটা একটা মাস্টট্রাই ও পয়সা উসুল প্রডাক্ট।”অর্গানিকাওনের” “১০০%  পিওর, কোল্ড প্রেসড এবং আনরিফাইন্ড” বাওবাব অয়েলটি নিতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

আর সরাসরি নিজের বাকেট লিস্টে বাওবাব অয়েলটি যুক্ত করে নিতে নিচে দেয়া “এড টু কার্ট লিখা বাটনে  ক্লিক করুন ।

এরকম আরো নানা ব্যাপারে জানতে আমাদের অর্গানিকাওনের পেজটিতে নিয়মিত ভাবে দেয়া লিখাগুলো ফলো করতে পারেন।

অর্গানিক পণ্য ব্যাবহার করি এবং বায়োডাইভার্সিটি বজায় রাখি।নিজের সাথে প্রকৃতিও শুদ্ধ রাখি।

আজ বিদায় নিচ্ছি।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থতার সাথে।