ব্রণ ! হতে পারে আরো যেসব রোগের হাতছানি । জেনে নিন ।

ব্রণ (একনি) আমাদের সবার জন্যই একটা আতঙ্কের নাম।স্বাভাবিক দৃস্টিকোণ থেকে শুরুতেই এটাকে অনেক বড় রকম কোন কিছু মনে না হলেও ব্রণ(একনি) আমাদের জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে।

কিন্তু ভয়াবহ ব্যপার হলো যে,ব্রণ(একনির) সমস্যা যে শুধুমাত্র নিজেই একটা সমস্যা তা তো নয়।দীর্ঘমেয়াদি ব্রণ(একনি) আমাদের জন্য নিয়ে আসে আরো নানা রকম রোগের ইঙ্গিত।

সুতরাং ব্রণকে এলাফেলা ভাবে দেখার কোন উপায় নেই।


চলুন তাহলে আজ আমরা জানবো যে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া ব্রণ কিসের ইঙ্গিত দেয় এবং পরবর্তিতে ব্রণ থেকে আরও কি কি ধরনের রোগ হতে পারে।

ব্রণ কেন হয় তা আমরা কম বেশি জানি সবাই।বেশিরভাগ সময়ই আমাদের মুখ,বুক,পিঠ,চিবুক এবং কাঁধে ব্রণ বেশি দেখা দেয়।

কিন্তু সম্ভবত আমরা অনেকেই এটা জানিনা যে নিদ্রিস্ট জায়গার ব্রণ আসলে নিদ্রিস্ট কিছু সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত করে।

তবে চলুন জেনে নেই।

চিবুক :

এই জায়গাতে ব্রণ হওয়া বোঝায় যে শরীরে কোন হরমোনাল পরিবর্তন হচ্ছে বা বংশগত কারনে বা জীবনযাত্রার কোন বাজে অভ্যাস এর কারনে এটা হচ্ছে।

এটা সাময়িক ব্রণ(একনি) হতে পারে যা ঘরোয়া ভাবেই সেরে যাবে।সাধারনত বেশির ভাগ নারীদের ক্ষেত্রেই এটা ঘটে থাকে।

গাল:

সাধারনত ধূলাবালি এবং বায়ু দূষণ এর কারণে এই সমস্যাটা হয়ে থাকে।

এই জায়গার ব্রণ এটা বুঝায় যে ত্বক অতিমাত্রায় ময়লা হয়েছে বা ত্বকের যত্ন ঠিকঠাকভাবে নেয়া হচ্ছে না।

এছারাও গালে ব্রণ(একনি) হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি বা শ্বাসকস্টের সমস্যাকেও বোঝায়

এক্ষেত্রে গাল যেন ধূলাবালির দ্বারা বেশি আক্রান্ত না হয় সেজন্য মাস্ক বা স্কার্ফ ইউজ করা জরুরি।


কপাল:

হটাৎ করেই যদি দেখা যায় যে কপালে অনেক ব্রণ হয়েছে তবে বুঝতে হবে পরিপাকক্রিয়া সঠিকভাবে হচ্ছে না।সেক্ষেত্রে খাবার দাবার টাইমলি খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।

তাছারা লিভারের সমস্যা,অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা ভালো ঘুম না হওয়াও আরো কিছু কারণ।

এছারাও মেকাপ রেসিডুয়াল বা মেকাপ করার পরের অবশিস্টাংশ ভালো ভাবে ক্লিন না করা হলেও কপালে ব্রণ হয়।

কোনভাবেই খোটাখুটি করা যাবেই না।কপালের চামড়া তুলনামুলক টান টান থাকে।

তাই নখের খোটাখুটির দরূন দাগ পড়ে গেলে সেটা ওঠানো কস্টসাধ্য।

নাক:

ব্রণ সাধারনত নাকের চারপাশেই বেশি হয়। কারণ, নাকের আশেপাশে অয়েল গ্ল্যান্ড অনেক বেশি হওয়ার কারণে সেবাম প্রডাকশন বেশি হয় এবং ত্বক অতিমাত্রায় অয়েলি হয়ে যায়।

তখন ময়লা ধূলো বালি এসব জমে জমে ব্রণ অনেক বেশি মাত্রায় হয়।তবে যদি নিয়মিতই নাকের আশেপাশে অনেক বেশি ব্রণ হয় তবে অবশ্যই রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে।

হার্টের অসুখ থাকলে এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নাকের আশেপাশে ব্রণ বেড়ে যায়।অন্যান্য নিয়মকানুনের পাশাপাশি পদ্মাসন নামক একটা যোগব্যায়াম আছে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং এটা ব্রণ কমিয়ে আনে।


পিঠ:

যদিও পিঠে তুলনামুলক ভাবে ব্রণ কম হয় কিন্তু এটাও কম যন্ত্রনাদায়ক না।এই ব্যাকনে বা পিঠে ব্রণ সাধারনত হয় পিঠের ত্বকের ঠিকঠাক যত্ন না নিলে,গোসলের সময় পিঠ ভালোভাবে পরিস্কার না করা হলে ।

এছারাও জিম করার পরে, গরম জায়গায় অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে বা ঘামে ভেজা জামাকাপড় অনেকক্ষণ পরে থাকলেও পিঠে ব্রণ হতে পারে।

যদিও পিঠের ব্রন হাইড রাখা সোজা;কিন্তু কোন অনুস্ঠানে ভালো একটা ড্রেস পড়তে গেলে এই ব্যাকনি কিন্তু আমাদের সৌন্দর্য এবং পার্সোনালিটি অনেকটাই ম্লান করে দেয়।

তাই ব্যাকনি কে হালকা করে দেখার অবকাশ নেই।

এছারাও ত্বকের আরো অনেক স্থানেই ব্রণ হতে পারে।কিন্তু এই কমন কিছু জায়গার ব্রণগুলো সাধারনত এগুলোই বোঝায়।



আমরা তো এটা জানি যে, ব্রণের জন্য স্পেসেফিক কিছু হরমোন দায়ী। দীর্ঘদিন যদি ব্রণ(একনি) সমস্যা থাকে তবে তা আমাদেরকে অনুধাবন করায় যে আরো কিছু রোগ হয়তো ভেতরে দানা বাঁধছে যা সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা জরুরি।

চলুন তাহলে জেনে নেই এমন কিছু রোগ সম্পর্কে যাদের সাথে ব্রণের সংযোগ রয়েছে।

১.পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম:

সাধারনত অন্যান্য আরো হরমোনের সাথে এন্ড্রোজেন হরমোন অতিরিক্ত হারে নিঃসরিত হয়ে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম টা হয়।

আর যেহেতু এন্ড্রোজেন হরমোন ব্রন(একনি) বাড়িয়ে তুলতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে তাই বলা যায় যে এই দুটো রোগের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।তাই অতিরিক্ত ব্রণ হলে পিকোস এর সমস্যা হয়েছে কিনা সেটা টেস্ট করে দেখা উচিত।


২.কুজিং সিনড্রোম:

শব্দটাই কিছুটা অপরিচিত আমাদের কাছে।কুজিং সিনড্রোম হলো কর্টিসোল নামক হরমোনটি অতিরিক্ত নিঃসরণ হয়ে যে সমস্যা তৈরী করে সেটা বোঝায়।

কর্টিসল তৈরী হয় এড্রেনাল গ্ল্যান্ডস থেকে এবং শরীরের অনেকগুলো ফাংশন এর সাথেই এটা জড়িত যেমন রক্তচাপ,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তায় একজন মানুষ কিভাবে রেসপন্স করবে এই ব্যাপারগুলো।

কুজিং সিনড্রোম হলে মানুষের উপরোক্ত সমস্যাগুলো প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে যায়।এখন সমস্যা হলো যে,অতিরিক্ত পরিমানে কর্টিসোল তৈরী হলে সেটা এন্ড্রোজেন এবং সেবাম প্রডাকশন বাড়িয়ে দেয়।তখন ব্রণ(একনি) সংক্রমণ ও অনেক বেড়ে যায়।

তাই আমাদের যদি অতিরিক্ত ব্রণ হয় এবং পাশাপাশি উপরোক্ত সমস্যাগুলো হয় তাহলে কুজিং সিনড্রোম হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।



৩.কনজেনিটাল হাইপারপ্লেশিয়া বা CAH :

শুনতে কট্টর এই রোগটি হলে শরীরের এড্রেনাল গ্ল্যান্ডস গুলো আক্রান্ত হয়।আর কিডনীর ওপরে অবস্থানরত এই গ্ল্যান্ডসগুলো সাধারনত কর্টিসোল এবং এলডোস্টেরন নামক হরমোন উৎপাদন করতো।

তো CAH এর প্রবলেম হলে তখন এই এড্রেনাল গ্ল্যান্ডস পর্যাপ্ত।পরিমান হরমোন উৎপাদন করতে পারেনা এবং এতে করে শরীরে লবনের ঘাটতি,দূর্বলতা,ওজন কমে যাওয়া, দূর্বলতা এগুলো হয়।

এমনকি সঠিক সময়ের মধ্যে ট্রিটমেন্ট না করতে পারা গেলে এই সমস্যায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়। আর CAH এর সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর এন্ড্রোজেন হরমোন উৎপাদন অনেক বেড়ে যায় এবং সেবাম প্রডাকশন বেড়ে যেয়ে ব্রণ(একনির) সমস্যাও অনেক বাড়িয়ে তোলে।

তাই ব্রণ(একনি) সমস্যার সাথে সাথে উপরোক্ত সমস্যা হলে CAH হলো কিনা সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখা জরুরি।

৪.এন্ড্রোজেন সিক্রেটিং টিউমার:

অতিরিক্ত পরিমানে এন্ড্রোজেন নিঃসরিত হয়ে এন্ড্রেনাল গ্ল্যান্ডস,অন্ডকোষ, জরায়ু সহ আরও কিছু অঙ্গে টিউমার সৃস্টি করতে পারে।

এটার লক্ষনগুলো হলো হিরসুটিজম বা অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া,অনিয়মিত মাসিক,ক্লিটোরিস বড় হয়ে যাওয়া

আবার যেহেতু এটার কারণে এস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ কমে যায় তাই হাড় ক্ষয়,ইনফার্টিলিটি সহ আরও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।আর যেহেতু এন্ড্রোজেন উৎপাদন বেড়ে যায় তাই সেবাম প্রডাকশন বেড়ে যেয়ে ব্রণ(একনি) সমস্যাও বেড়ে যায়।

তাই ব্রণ(একনি) সমস্যার পাশাপাশি উপরোক্ত সমম্যাগুলো দেখা দিলে এন্ড্রোজেন সিক্রেটিং টিউমার হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকবো।


৫.এক্রোমেগালি:

এটা কিছুটা রেয়ার হরমোনাল রোগ যেটা পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে অতিরিক্ত গ্রোথ হরমোন উৎপাদনের কারণে হয়।

এই রোগের লক্ষণগুলো হল হাত পা অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়া,মুখমন্ডল তুলনামুলক বড় ও এলোমেলো ধরণের হয়ে যাওয়া (যেটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় কোয়ার্স ফিচার বলা হয়),গলার স্বর অনেক ভারী হয়ে যাওয়া,অতিরিক্ত ঘাম হওয়া,পেশী দূর্বল হয়ে যাওয়া,মাথা ব্যাথা,জয়েন্ট পেইন ইত্যাদি।

আর এই অতিরিক্ত মাত্রার হরমোণ নিঃসরণ ত্বকে অয়েল উৎপাদন বাড়ায় এবং এতে করে ব্রণ(একনি) সমস্যাও তুলনামুলক অনেক বেশি পরিমাণে হয়।

তাই দীর্ঘদিন যদি ব্রণ(একনি) সমস্যা হচ্ছে তো হচ্ছেই এবং পাশাপাশি উপরোক্ত লক্ষণগুলোর অধিকাংশের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাহলে এক্রোমেগালি হয়েছে কিনা তা টেস্ট করে দেখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

যদিও কিছুটা রেয়ার তারপরেও আমরা তো জানি যে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।



.এছারাও যদি দীর্ঘদিন ত্বকে ব্রণ(একনি) থাকে তবে সেগুলো থেকেও আরো নানা ধরনের ত্বকের রোগ হয়ে যেতে পারে।যেমন: কেলোয়েড স্কারস,শ্বেতী ইত্যাদি।

ব্রণ(একনি) সমস্যার কারণে ত্বকে যে দাগ,ছোপ পড়ে যায় সেগুলো থেকে ক্রমান্বয়ে এই জাতীয় রোগগুলোর সম্ভাবনা তৈরী হয়।

ব্রণ(একনি) জাতীয় সমস্যা যে শুধুমাত্র একক একটি সমস্যা তাই নয়।দীর্ঘদিন ধরে ব্রণ থাকা হাতছানি দেয় আরো কিছু রোগের। আমরা এই সমস্ত ব্যাপারগুলোর প্রতি খেয়াল রাখবো।সেই অনুযায়ী প্রিকরশন নেবো।

এরকম আরো নানা ব্যাপারে জানতে আমাদের অর্গানিকাওনের পেজটিতে নিয়মিত ভাবে দেয়া লিখাগুলো ফলো করতে পারেন।

আজ এ পর্যন্তই।সবাই ভালো থাকুন সুস্থতার সাথে।