হেলদি হেয়ারের জন্যে ৫টি নেচারাল উপাদান   

আমাদের দেহ প্রাকৃতিক উপাদান নেয়ার জন্যেই তৈরি। নেচারাল ইনগ্রিডিয়েন্ট ব্যবহারের ফলাফল পেতে সময় কিছুটা বেশি লাগলেও তা নিরাপদ। স্কিনের যেমন ময়েশ্চারাইজার দরকার তেমনি চুলেরও প্রয়োজন। অনেকে চুলের যত্ন নেয়া শুরু করে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর। সেই পরিচর্যাও করে নানান আর্টিফিসিয়াল ও ক্ষতিকর প্রোডাক্ট দিয়ে। ফলাফল হিসেবে পায় হতাশা। 

চুলের যত্ন চুল ভালো থাকতেই শুরু করতে হবে। আর চুল ভালো রাখতে কয়েকটি কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান নিয়েই আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে। 

 

রোজমেরি

 

গ্রীক, মিশরীয় ও রোমান সভ্যতা থেকেই রোজমেরি নানান সমস্যায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চুলের যত্নে যত রকমের অয়েল ব্যবহার করা হয় এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপকারি অয়েল হলো রোজমেরি। তাই চুলের যত্নে তৈরি বিভিন্ন প্রসাধনীতে রোজমেরি ব্যবহার হয়। একটি বিদেশি প্রতিবেদনে দেখা যায়, রোজমেরি অয়েলের আছে এন্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টি অক্সিডেন্ট এর মতো বৈশিষ্ট্য।

চুল পড়ার সমস্যায় যারা চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়েছেন তারা অনেকেই মিনোক্সিডিলের সাথে পরিচিত। ট্রুগেইন, রিগেইন, মিনোক্সিল, হেয়ারগ্রো এসব নামে বাজারে অনেক টপিক্যাল সলিউশন রয়েছে। বলা হয় মিনোক্সিডিল ৬ মাস ব্যবহার করলে যে ফলাফল পাওয়া যায়, রোজমেরি সমপরিমান উপকারিতা দিতে সক্ষম। 

রোজমেরি মাথায় ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রেখে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ও চুলকে মসৃণ করে। ডার্মাটোলজিস্ট ডাঃ হেডলি কিং বলেন, রোজমেরিতে এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি ইনগ্রিডিয়েন্ট থাকায় এটি স্ক্যাল্পে খুশকি, ব্রণ ও অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করে। 

রোজমেরি হেয়ার অয়েল সব ধরনের চুলেই ব্যবহার করা যায়। হেয়ার লস, টাক ও আগা ফাটার সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্যে এটি বিশেষভাবে উপকারী। রোজমেরির উপকারিতা পেতে দীর্ঘমেয়াদে এটি ব্যবহার করতে হয়। কিছু গবেষনায় দেখা যায় নূন্যতম ছয় মাস ব্যবহারের ফলে রোজমেরির কার্যকারিতা প্রকাশ পায়। 

জোজোবা অয়েল, আর্গন বা কোকোনাট অয়েলের সাথে কয়েক ফোটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে সরাসরি স্ক্যাল্পে ইউজ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। শ্যাম্পু করার সময় দু তিন ফোটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে শ্যাম্পু করা হলে চুল আদ্রতা ধরে রাখতে পারে ও রুক্ষ ভাব কমে। 

 

মেথি 

 

মেথি একটি ভেষুজ উদ্ভিদ যা বহুকাল আগে থেকেই বিভিন্ন রোগ ব্যাধি নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে চুল পড়া বন্ধ করতে মেথির উপকারিতা ব্যাপক। রান্না ঘরের মশলা হিসেবেও মেথি সুপরিচিত বিশেষ করে পাঁচফোড়ন তৈরিতে এটি অপরিহার্য্য। 

মেথি বীজে একাধিক উপকারী উপাদান রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগজীবানু ও কৃমি ধ্বংস করে, ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। মেথি একাধারে চুল ঘন কালো উজ্জ্বল করার পাশাপাশি চুল পড়া পার্মানেন্টলি বন্ধ করে। এক্ষেত্রে মেথিকে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে পরদিন বেটে পেস্ট করে নিন। পেস্ট টি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে এরপর ধুয়ে নিন। 

মেথি পাউডার কোকোনাট অয়েলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে একইভাবে ইউজ করতে পারেন। এছাড়া মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সে পানি পান করলেও চুল পড়া কমে আসে।  মেথি ব্যবহারের পাশাপাশি  চুল পড়া কমাতে হেলদি ডায়েট ও স্ট্রেস ফ্রী থাকা জরুরী। 

 

এলোভেরা

 

চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্যে এলোভেরা খুবই কার্যকরী।  এলোভেরায় থাকা ফ্যাটি এসিড মাথার ত্বকের যেকোনো ধরনের সংক্রমন প্রতিরোধ করে ও ড্রাইনেস দূর করে। এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে ৩ ধরনের ভিটামিন এগুলো হলো ভিটামিন এ, ই ও সি । এই ভিটামিনগুলো হেয়ার গ্রোথকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ফলিকলগুলোকে ভেতর থেকে মজবুত করে। 

শরীরে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এলোভেরাতে ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২ আছে যা এনিমিয়ার সমস্যা সমাধানে সেবন করা হয়। এছাড়া এলোভেরা মাথার ত্বক হাইড্রেট ও ময়েশ্চারাইজ করে, এর শীতলিকরন গুনাবলি আছে ফলে মাথাও থাকে ঠান্ডা। 

শুষ্ক চুলের হাল ফেরাতে এলোভেরার সাথে কোকোনাট অয়েল ও মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে দিন। ঘন্টাখানেক পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

কয়েক চামুচ মধুর সাথে সমপরিমান আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তাতে কয়েক ফোটা ল্যাভেন্ডার এসেনসিয়াল অয়েল যোগ করতে পারেন। এবার এই মিশ্রনটি আধা কাপ এলোভেরা জেল দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এই প্যাকটি শ্যাম্পুর মতো নিয়মিত ইউজ করুন। এতে চুল ঘন কালো ও ঝলমলে হবে।

 

ব্রাহ্মী

 

ব্রাহ্মী সাধারনত মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্যেই বেশিরভাগ ব্যবহৃত হয়। তবে চুলের টনিক হিসেবেও এর বহুল প্রচলন রয়েছে। ব্রাহ্মী গুড়ো হেয়ার প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা চুলের বৃদ্ধি ও চুলকে ঘন করে। নারকেল তেলে কয়েকটা ব্রাহ্মী পাতা দিয়ে গরম করে তা মাথায় লাগিয়ে দিলে খুশকির সমস্যা কমে। ব্রাহ্মী শাক ও গুড়ো দুইভাবেই কিনতে পাওয়া যায় সুপার শপগুলোতে। মাথায় অনবরত চুলকানী হলে, ব্রাহ্মী শাকের রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে দিন। 

 

অনিয়ন

 

চুলের যত্নে পেয়াজের ব্যবহার সবারই জানা। চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিকে অনিয়ন অয়েল সাজেস্ট করার একটি রীতি আমাদের দেশে প্রচলিত আছে।  এই প্রচলন এমনি এমনি হয়নি, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনিয়নের অনন্য ভূমিকার কারনেই হয়েছে। 

পেয়াজে থাকা সালফার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কোলাজেন উৎপন্নে সহায়তা করে। পেয়াজ নতুন চুল গজাতে ও চুলের গোড়া শক্ত করে। ‘কোয়ারসেটিন’ নামক এন্টি  অক্সিডেন্ট স্ক্যাল্পে যেকোনো ধরনের প্রদাহ প্রতিরোধ করে এবং মাথায় রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখে। এলোপ্যাশিয়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রনে দিনে দু তিনবার করে একটানা দুইমাস পেয়াজের রস মাথায় মাখার পরামর্শ দিয়েছে “জার্নাল অব ডার্মাটোলজি”

পেয়াজকে ছোট ছোট টুকরো করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ছেকে রস আলাদা করে নিন। এবার এই রস মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ম্যাসেজ করুন। আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেয়াজ ব্যবহারের পূর্বে প্যাচ টেস্ট করে নিন।