সেনসিটিভ স্কিন কি? কেন হয়? এবং কিভাবে এই ত্বকের যত্ন নিবেন

সেনসিটিভ স্কিন কি what is sensitive skin

সেনসিটিভ স্কিন এক ধরনের স্কিন টাইপ। এ বিষয়টি নিয়ে ডার্মাটোলজিস্টরা একমত পোষন করেন না। কারও কারও মতে প্রত্যেকেরই কোনো কোনো সাবসটেন্সের প্রতি সেনসিটিভিটি রয়েছে, সেই সেন্স থেকে চিন্তা করলে সবার স্কিন-ই সেনসিটিভ স্কিন। তবে এটি ত্বকের ধরন কিংবা অবস্থা যাই হউক না কেন, সেনসিটিভ স্কিনের সমস্যা রয়েছে লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ইউএসএ, ইউরোপ ও জাপানের বেশিরভাগ মহিলারা মনে করেন তাদের সেনসিটিভ স্কিন রয়েছে। 

 

সেনসিটিভ স্কিন ও সেনসিটাইজড স্কিন

 

ড্রাই স্কিন ও ডিহাইড্রেট স্কিনের মধ্যে আমরা যেমন মিক্স আপ করে ফেলি তেমনি  সেনসিটিভ স্কিন ও সেনসিটাইজড স্কিনের ক্ষেত্রেও সেইম। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময় স্কিন সেনসিটিভিটি অনুভব করে এর মধ্যে ইচিনেস, ইনফ্লামেশন, র‍্যাশ, লালচে ভাব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই সমস্যাগুলোর প্রতিকারের প্রথম ধাপ হবে, আপনার স্কিন সেনসিটিভ নাকি সাময়িক সেনসিটাইজড তা নির্ণয় করা। 

 

সেনসিটিভ স্কিন কি?

সেনসিটিভ স্কিন হলো দীর্ঘস্থায়ীভাবে কোনো সাবসটেন্সের প্রতি স্কিনের রিয়েকশন প্রদর্শন করা, এর মধ্যে জ্বালাপোড়া, ব্যথা, টিংগলিং, ইচিং এর মতো বিরক্তিকর অনুভূতি হতে পারে। এটি ড্রাই স্কিন বা অয়েলি স্কিনের মতোই এক ধরনের স্কিন টাইপ। সাইন্টিস্ট ও স্কিন হেলথ এক্সপার্ট শেরিল উডমেন এর মতে, সেনসিটিভ স্কিন হওয়ার পেছনে মূল কারন ২টি, একটি হলো জেনেটিক্স এবং অপরটি হলো হাইপার একটিভ ইমিউনো ফাংশান। 

শরীরের স্বাভাবিক ইমিউন সিস্টেম ফ্যাটি এসিড, কোলেস্টেরল, সিরামিডস ও সমতাপূর্ণ পিএইচ লেভেলের মাধ্যমে একটি স্ট্রং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে যাতে করে পরিবেশগত যেকোনো সেনসিটিভিটি প্রশমন করা যায়। এই ইমিউন সিস্টেমে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে স্কিন সেনসিটিভিটি দেখায়। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু জিন হাইপার একটিভ ইমিউন ফাংশানকে ট্রিগার করে, যার ফলে শরীরের ডিফেন্স সিস্টেম ক্ষতিকর নয় এমন সাবসটেন্সের প্রতিও এটাকিং মুডে থাকে। 

 

সেনসিটাইজড স্কিন কি? 

বিজ্ঞানী উডম্যানের মতে, সেনসিটাইজড স্কিন হলো ত্বকের সাময়িক এবনরমাল(এলার্জি, ইরিটেশন) অবস্থা যা কোনো স্পেসিফিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিংবা ইনগ্রিডিয়েন্টের কারনে হয়। যেকোনো ধরনের স্কিন টাইপ বিভিন্ন কারনে সেনসিটাইজড হতে পারে, এর মধ্যে কিছু কমন রিজন হলোঃ বিরূপ আবহাওয়া, UV রশ্মি, দূষন, হরমোন, স্ট্রেস, এবং এমন ইনগ্রিডিয়েন্ট যার প্রতি স্কিন এলার্জিক। 

 

ত্বক সেনসিটিভ নাকি সেনসিটাইজড কিভাবে নির্ণয় করব?

 

এই দুটি টার্মস এর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এগুলোর প্রভাব স্কিনে একইভাবে দেখা যায়। নিচের সমস্যাগুলো উভয় অবস্থাতেই দেখা যায়ঃ

প্রদাহ

প্রায়ই লাল হয়ে যাওয়া

চুলকানি, পোড়া বা ঝলমলানি

খসখসে বা খোসা ছাড়ানো

বিবর্ণতা (লাল, বেগুনি, বা ধূসর)

শুষ্কতা

ব্রণের মতো ফুসকুড়ি

 

স্কিন সেনসিটিভ নাকি সেনসিটাইজড তা জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো  আপনার স্কিনের ইরিটেশন সাময়িক নাকি লেংদি। অর্থাৎ সমস্যা কি কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যায় নাকি একটানা চলতে থাকে। সেনসিটিভ স্কিনে প্রায় সারা জীবনজুড়ে সমস্যা থেকে যায় এছাড়া একজিমা, সোরায়াসিস বা রোজেশা র মতো ইনফ্লামেটরি অবস্থা তৈরি হয়। যারা ফর্সা স্কিনের অধিকারী তাদের ত্বকে প্রায়ই পিগমেন্টের অভাব থাকে, ফর্সা স্কিনের লোকেদের অপেক্ষাকৃত বেশি সেনসিটিভ স্কিন হয়।

আপনি যদি মাঝে মাঝে সেনসিটিভিটি অনুভব করেন অথবা সাম্প্রতিক সময়ে এটি বাড়ছে বলে মনে হয় তাহলে এটি সেনসিটাইজড স্কিন হতে পারে। এর কারন আপনি হয়ত নতুন কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করা শুরু করেছেন? অথবা অনেক বেশি এক্সফোলিয়েট করছেন? নতুবা রিসেন্টলি নতুন কোনো এরিয়ায় শিফট হয়েছেন? 

 

সেনসিটিভ স্কিনে কোন ইনগ্রিডিয়েন্টগুলো ইউজ করবেন আর কোনগুলো করবেন না?

 

সেনসিটিভ স্কিনের সতিকারে কোনো পার্মানেট ট্রিটমেন্ট নেই। তবে এমন কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো অনুসরন করে এর সিম্পটম উপশম করা যায় বা নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। আপনার যদি সেনসিটিভ স্কিন থাকে তাহলে সব সময় একসাথে একটির বেশি নতুন প্রোডাক্ট ইউজ শুরু করা উচিৎ নয়, সেই সাথে ইউজ করার পূর্বে অবশ্যই সঠিকভাবে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। 

 

ব্যারিয়ার স্ট্রেংদেনিং ইংগ্রিডিয়েন্ট 

দুর্বল ময়েশ্চার ব্যারিয়ার প্রায়ই সেনসিটিভ স্কিনের কারন হয়। এন্টি অক্সিডেন্টের মতো ব্যারিয়ার স্ট্রেংদেনিং উপাদান এ সমস্যা কমিয়ে রাখতে পারে। বিজ্ঞানী উডমেন এক্ষেত্রে কলয়ডাল ওটমিল নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে রয়েছে সুদিং, এন্টি ইনফ্লামেটরি এজেন্ট যেমন লিপিডস, বিটা গ্লুকান, ফ্যাটি এসিড। 

 

pH-সমন্বিত ফর্মুলা

আপনার সেনসিটিভ স্কিন থাকলে স্কিনকেয়ার রুটিনে থাকা প্রোডাক্টগুলোর pH এর দিকে নজর রাখুন, বিশেষ করে ক্লিনজার্স ও টোনারের ক্ষেত্রে। নরমাল স্কিনের পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত অর্থাৎ নরমাল স্কিন কিছুটা এসিডিক। এখন সোপ এর মতো ক্ষারীয় প্রোডাক্টগুলো ব্যবহারের ফলে ত্বকের পিএইচ এর লেভেল ব্রেক হতে পারে, এতে স্কিন সেনসিটিভিটি দেখাতে পারে। 

 

জেন্টল এক্সফোলিয়েন্টস 

ইরিটেশন এর ভয়ে সেনসিটিভ স্কিন টাইপের ব্যক্তিরা অনেক সময় স্ক্রাব করা থেকে দূরে থাকে। কিন্তু ত্বকের টেক্সচার এবং টোন সমান করতে, ডেড সেল দূর করতে এক্সফোলিয়েশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বক সংবেদনশীল হলে জেন্টল এক্সফোলিয়েটর ইউজ করতে পারেন। 

 

হাইলি একটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস

রেটিনল ও ভিটামিন সি এর মতো হাইলি একটিভ উপাদানগুলো অনেক সময় সেনসিটিভ স্কিনের সমস্যা আরও বাড়িতে দিতে পারে। এর বিকল্প হিসেবে নিতে পারেন নিয়াসিনামাইড, এটি আপনার স্কিনের হাইপারপিগমেন্টেশন ও চোখের নিচের দাগ কমাতে হেল্প করবে। আপনি যদি রেটিনলে অনেক সেনসিটিভ হউন, তাহলে এর বিকল্প হিসেবে বাকুশিওল অথবা এরোফিরা নিতে পারেন কোনোরকম ইরিটেশন ছাড়া। 

 

ফ্রাগর‍্যান্স

আপনার সেনসিটিভ স্কিন থাকলে ফ্রাগর‍্যান্সের বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরী। কারন ফ্রাগর‍্যান্সে এমন অনেক আর্টিফিসিয়াল ইনগ্রিডিয়েন্ট থাকে যেগুলো আপনার স্কিন সেনসিটিভিটি কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এসব ফ্রাগর‍্যান্স এভোয়েড করা উচিৎ।

 

সেনসিটিভ স্কিনকেয়ার রুটিনে যেসব প্রোডাক্ট অন্তর্ভুক্ত করবেন

ক্লিনজারস

আপনার স্কিন যদি অয়েলি না হয় তবে মর্নিং এ আপনার ক্লিনজার্স ব্যবহার না করলেও চলবে, শুধু পানি ব্যবহার করলেই হবে। রাতে দিনের ময়লা, তেল ও মেকাপ দূর করতে হালকা ও সালফেটমুক্ত ক্লিনজার্স ব্যবহার করতে পারেন। অর্গানিক ক্লিনজার হিসেবে অর্গানিকাওনের রোজ এসেন্স টোনার ইউজ করতে পারেন। 

 

এক্সফোলিয়েটরস

বিটা হাইড্রক্সি এসিড বা স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত এক্সোফোলিয়েটরস ইউজ করতে পারেন । এটি তুলনামূলক কম ইরিটেট করবে। 

 

সেরাম

আগেই উল্লেখ করেছি, নিয়াসিনামাইড সেনসিটিভ স্কিনের জন্যে ফ্যান্টাসটিক ইনগ্রিডিয়েন্ট। এটি রেডনেস, ড্রাইনেস কমায় ও স্কিন ব্যারিয়ার শক্তিশালী করে। সম্পূর্ণ নেচারল ইনগ্রিডিয়েন্ট থেকে তৈরি অর্গানিকাওনের ভিটামিন সি সেরাম হতে পারে আপনার জন্যে ওয়ান অফ দ্য বেস্ট সেরাম। এটি সম্পূর্ণ আর্টিফিসিয়াল ইনগ্রিডিয়েন্ট ফ্রী। 

 

ময়েশ্চারাইজার

ময়েশ্চারাইজার স্কিনের ওয়াটার লস প্রটেক্ট করার পাশাপাশি স্কিন ব্যারিয়ার মেইনটেইন করে। সেনসিটিভ স্কিনে কৃত্রিম ময়েশ্চারাইজার এর পরিবর্তে নেচারাল ময়েশ্চারাইজার ইউজ করুন। 

 

সানস্ক্রিন

মিনারেল বেইজড সানস্ক্রিন আপনাকে UV রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি স্কিন ইরিটেট করে এমন দূষনগুলোকেও প্রতিরোধ করে। 

পরিশেষে

সেনসিটিভ স্কিন থাকা সত্ত্বেও আপনি একটি হেলদি ও গ্লোয়িং স্কিন মেইনটেইন করতে পারবেন। সেজন্যে ট্রিগারগুলোর বিষয়ে আপনাকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আশা করি এই লেখায় আপনি সেনসিটিভ স্কিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। কোনো প্রশ্ন থাকলে বা স্কিনকেয়ার রিলেটেড কোনো টপিক নিয়ে জানতে চাইলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন।