রিয়া তার খুব পছন্দের কালো ড্রেসটি পরে দারুণ ভাবে সেজেছে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতেই কাঁধের উপর ঝরে পড়লো একগাদা খুশকি। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো রিয়ার। অন্য রঙের একটি ড্রেস পরেই অবশেষে বের হলো।
ঘটনাটি কি খুব পরিচিত লাগছে? পরিচিত লাগাই স্বাভাবিক। কারণ খুশকি সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষ খুব কম আছেন। ছেলে অথবা মেয়ে- এই সমস্যা থেকে বাদ পড়েন না কেউই। চুলের খুব সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো এই খুশকি সমস্যা। আজকে আমরা এই সমস্যাটিরই কিছু প্রতিকার অর্থাৎ খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানবো।
খুশকি কী?
খুশকি বা ড্যানড্রাফ মূলত স্ক্যাল্পের একটি ইনফ্ল্যামেটরি কন্ডিশন। আমাদের মাথার ত্বকে প্রতি ২৮ দিন পর পর নতুন কোষ তৈরি হয় এবং পুরোনো কোষগুলো ঝরে যায়। কোনো কারণে এগুলো যদি ঠিকমত ঝরে না যেয়ে জমে যায় তাহলে সেখানে ডেড সেলসগুলো পাইল আপ হয় এবং ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়ে যায়। ফলে বড় বড় ফ্লেক্স তৈরি হয়। এটি সেবোরিক ডার্মাটাইটিস নামেও পরিচিত। আবার অনেক সময় স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত অয়েল প্রোডিউস হয়ে স্ক্যাল্পে ময়লা জমে। এগুলো ঠিকমতো ক্লিন না করলেও খুশকি তৈরি হয়।
কেন হয়?
শুধুমাত্র ফাঙ্গাল অ্যাটাকের কারণেই খুশকি হয় তা নয় বরং আমাদের খাদ্যাভাস, লাইফস্টাইল এসবের জন্যও হয়ে থাকে। যেমনঃ
১। ম্যালাসেজিয়া ফাঙ্গাসের আক্রমণ
২। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
৩। চুল ঠিকমতো পরিষ্কার না করা
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
৫। আবহাওয়ার পরিবর্তন
৬। ত্বকের শুষ্কতা
৭। হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট স্যুট না করা
৮। স্ট্রেস ও হরমোনাল ইস্যু থাকলে
৯। অতিরিক্ত ধুলাবালিতে চুল খোলা রাখলে
১০। নকল ও ভেজাল প্রোডাক্টস ব্যবহার করলে
প্রতিকার মিলবে কীভাবে?
খুশকি হওয়ার কারণ তো জানলাম। কিন্তু এর প্রতিকার কী?
যদি অধিক পরিমাণে খুশকি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া অবশ্যই জরুরি। তবে সাধারণত খুশকি বিভিন্ন ঘরোয়া উপায়েও দূর করা যায়। লাইফস্টাইলে পরিবর্তন করে একটু খেয়াল রেখে চললে খুব সহজেই এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আসুন খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় জেনে নিই:
১। পর্যাপ্ত পানি পান করা
পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দিতে পারে, ফলে স্ক্যাল্প ড্রাই হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। স্ক্যাল্প ড্রাই হলে ড্যানড্রাফের সমস্যা বাড়ে। তাই এই সমস্যার প্রতিকারে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
২। সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করা
বাজারে নানারকম শ্যাম্পু পাওয়া যায়। তবে যে কোনো শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই হবে না, এক্ষেত্রে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। শ্যাম্পু নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে শ্যাম্পুতে যেন অবশ্যই জিংক পাইরোথিন, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, সেলেনিয়াম সালফাইড থাকে। সালফারযুক্ত বা ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু স্ক্যাল্পকে শুষ্ক করে তুলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারের আগে ব্যবহারবিধি পড়ে সে অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
৩। নিয়মিত চুল ও স্ক্যাল্প পরিষ্কার করা
চুল ও স্ক্যাল্প পরিষ্কার না থাকলে ময়লা জমে খুশকি হতে পারে। যারা বাইরে নিয়মিত বের হোন, ধুলাবালিতে কাজ করতে হয়, নিয়মিত ঘাম হয় এ ধরনের পরিবেশে থাকেন, এমন ব্যক্তিদের মাথার ত্বক ময়লা হয় বেশি। তাছাড়া ত্বকে বেশি তেল জমলেও ময়লা বেশি আটকায়, ফলে ড্যানড্রাফ তৈরি হয়, ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই চুল ও স্ক্যাল্প নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। ধুলোবালিযুক্ত জায়গায় মাথায় স্কার্ফ বা ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে যেন চুলে ময়লা কম জড়ায়।
৪। হেয়ার অয়েল ট্রিটমেন্ট নেয়া
অনেকেই ড্যানড্রাফ সমস্যা হলে মাথায় তেল দেয়া একদমই বন্ধ করে দেন। আবার অনেকে করেন উল্টোটা, বেশি বেশি তেল দিতে থাকেন। দুটোই খুশকি সমস্যার জন্য ক্ষতিকর। তেল বেশি দিলে যেমন ময়লা বেশি জমবে স্ক্যাল্পে তেমন একদমই না দিলে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়েও খুশকি বাড়িয়ে দেবে। তবে উপায় কী? উপায় হলো সপ্তাহে অন্তত ২/৩ দিন মাথায় তেল দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। তবে বাইরে যাওয়ার সময় তেল না দিলে ভালো হয়।
ড্যানড্রাফ প্রবলেম সল্যুশনে একটি দারুণ প্রোডাক্ট হতে পারে অরগানিকাওন ব্র্যান্ডের রোজমেরি+অনিয়ন হেয়ার অয়েল। এতে নারিকেল তেলের সাথে আছে পেঁয়াজের নির্যাস, রোজমেরি অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল, কাঠ বাদাম, ভিটামিন- ই, রোজমেরি এক্সট্র্যাক্ট এর মতো প্রাকৃতিক সব উপাদান। নারিকেল তেল এ আছে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। এর সাথে পেঁয়াজের রস যুক্ত করলে এর কার্যকারিতা বেড়ে যায় বহুগুন। এছাড়া পেঁয়াজের রস ইনফ্ল্যামেশন বা ইচিং দূর করে। রোজমেরি স্ক্যাল্পকে ময়েশ্চারাইজ করে ফলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া এই তেলটি খুশকি দূর করতেই নয় বরং চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সিল্কি করতেও সাহায্য করে।
৫। চুল ভেজা না রাখা
চুল ভেজা বা আধা শুকনো রাখলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি বেড়ে যায়। কারণ এতে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। চুল ভেজা অবস্থায় ঘুমানো বা বেঁধে রাখা চুলের ভয়াবহ ক্ষতি করে। তাই গোসল করে বা চুল ভিজিয়ে সবসময় সুন্দর করে চুল শুকাতে হবে। এক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে আলতোভাবে ভালোভাবে চুল মুছে নিতে হবে।
৬। সঠিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহার করা
অনেক সময় হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস স্যুট না করলে, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত অথবা ভেজাল প্রোডাক্টস হলে খুশকি হতে পারে। তাই যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভালোভাবে খেয়াল করে অ্যাপ্লাই করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় অরগ্যানিক প্রোডাক্টস ব্যবহার করলে। কারণ এগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে, ফলে সাইড ইফেক্টস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এক্ষেত্রে অরগানিকাওন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন।
৭। সপ্তাহে একদিন হেয়ার কেয়ার প্যাক ব্যবহার করা
খুশকি দূর করতে নিম পাতা, মেহেদি, আমলকী, অ্যালোভেরা, মেথি, বহেরা ইত্যাদি অত্যন্ত কার্যকরী। এ সকল উপকরণ সঠিকভাবে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগান।
এ সকল উপকরণ একসাথে অনেক সময় পাওয়া না-ও যেতে পারে। আবার এগুলো রেডি করে প্যাক বানাতেও বেশ সময় লাগে। সেক্ষেত্রে অরগানিকাওন ব্র্যান্ডের হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্যাক বেস্ট একটি সল্যুশন। এটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ফলে সময় বাঁচবে এবং সঠিকভাবে ব্যবহারও করতে পারবেন।
৮। পরিষ্কার জিনিস ব্যবহার করা
অপরিষ্কার বালিশের কভার, চিরুনি, তোয়ালে এগুলো থেকে চুলে ও স্ক্যাল্পে আরো ময়লা জড়ায়। তাই এগুলো সব সময় পরিষ্কার রাখুন। সেই সাথে অন্যের চিরুনি ব্যবহার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে খুশকি সমস্যা যে কারোই হতে পারে। এটি চুলের খুব সাধারণ একটি সমস্যা। তবে দৈনন্দিন জীবনে এটি বেশ প্রভাব ফেলে। কমন এই প্রবলেমটির বেশ কয়েকটি সল্যুশন আমি আপনাকে জানিয়ে দিলাম। আশা করি খুশকি সমস্যা সমাধানে সল্যুশনগুলো কাজে আসবে। এরপরও যদি খুশকি সমস্যা সহজে না কমে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
Leave a comment