চুল পড়ার সমস্যা কমছে না কেন! কীভাবে পরিত্রাণ মিলবে এই সমস্যা থেকে?

চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন না এমন মানুষ হয়ত খুব কমই আছেন। অবশ্য একেকজনের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা একেকরকম। কারও হয়ত স্বাভাবিক নিয়মে দিনে ৮০-১০০টা চুল পড়ছে, আবার কারও হেয়ার ফল এতই বেশি যে টাক পড়ার মতো সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। তবে এই হেয়ারফল নির্দিষ্ট কোনো কারণে হয় না। নানা কারণে এই সমস্যা হতে পারে। সেই কারণগুলো কী, কীভাবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে  এবং চুলের পড়া বন্ধ করার উপায় কি কি হতে পারে তা নিয়েই আলোচনা করব আজকে।

 

চুল কেন পড়ে?

 

আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৫০-১০০টা চুল পড়ে। সারাদিনের নানা সময়ে এই চুল পড়াকে আমরা সেভাবে গুরুত্ব দেই না কারণ পড়ার সাথে সাথে চুল গজাতেও থাকে। যার কারণে ব্যালেন্স হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন চুল পড়ার পর না গজায়। আর ঠিক তখনই টাক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা বাড়তে থাকে। হেয়ারফল কোনোভাবেই কন্ট্রোলে না আনা গেলে তখন ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হয়।

চুল পড়ার নানা কারণ আছে। যেমন-

 

১) পল্যুশন

 

প্রতিদিন নানা কাজে আমাদের বাইরে যেতে হয়। আর বাইরে যাওয়া মানেই যানবাহনের ধোঁয়া, ধুলোবালি। এসব পল্যুশন থেকে চুল সুরক্ষিত রাখা খুব কঠিন। যার কারণে দিন দিন হেয়ার ড্যামেজ বাড়তে থাকে। চুল পড়ার প্রবণতাও বাড়ে।

 

২) জেনেটিকস

চুল ঘন হওয়া বা দ্রুত বড় হওয়া যেমন জেনেটিকসের অংশ, তেমনই চুল সহজে বড় না হওয়া, বেশি বেশি চুল পড়াও জেনেটিকসের কারণে হতে পারে। কারণ এটা হলেও যে চুলের যত্ন নেয়া বন্ধ করে দিতে হবে, তা কিন্তু মোটেও নয়। হেয়ার কেয়ার নিয়মিত করতেই হবে।

 

৩) স্ট্রেস

জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা আমাদের ফেইস করতে হয়। লেখাপড়া, চাকরি, পরিবার সবকিছু নিয়েই ব্যস্ততা থাকে, সেই সাথে স্ট্রেসও বাড়ে। আর স্ট্রেস বেশি হলে হেয়ারফলও বাড়ে। তাই স্ট্রেস কমানোর জন্য নিয়মিত ঘুম, এক্সারসাইজ, মেডিকেশন করতে হবে।

 

৪) নিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি

স্ক্যাল্প যদি যথাযথ পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল না পায় এবং প্রোপার প্রোটিন রিচ ডায়েট মেইনটেইন করা না হয়, তাহলে নিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি বাড়তে থাকবে। সাথে বাড়বে হেয়ারফল।

 

৫) হরমোনাল চেঞ্জ

নানা কারণে হরমোনাল চেঞ্জ হতে পারে। যেমন- পিউবার্টি, প্রেগনেন্সি, মেনোপজ, বার্থ কন্ট্রোল পিল নেয়া, থাইরয়েড ইত্যাদি। এসব যারা ফেইস করছেন, তাদের হেয়ারফল হতে পারে।

 

৬) অসুস্থতা

কয়েকটি অটোইমিউন ডিজিজ যেমন- ক্যান্সার, থাইরয়েড, আর্থ্রাইটিস, হার্ট প্রবলেম এর মতো সমস্যা যাদের আছে, তাদের হেয়ার লস বেশি হতে পারে।

 

৭) টাইট হেয়ারস্টাইল

হাই পনিটেইল বা টাইট করে চুল বেঁধে হেয়ার স্টাইল করলে চুল পড়ার প্রবণতা বাড়তে পারে।

 

চুল পড়া সমস্যা কমাতে করণীয়

 

কেন চুল পড়ে তা নিয়ে বেশ কিছু কারণ তো জানা হলো। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে এই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

১) প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া

আপনার খাদ্য তালিকায় যদি প্রোটিন থাকে, তাহলে নতুন চুল গজানোতে সেটি খুবই হেল্পফুল হবে। শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজিতে ১ থেকে দেড় গ্রাম প্রোটিন আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। শিমের বিচি, ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, চিয়া সীড, পালং শাক এর মতো খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে প্রতিদিন।

 

২) ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সি কমাতে হবে

শরীরে যদি বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল যেমন- ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই, আয়রন ও জিংক এর মতো উপাদান কম থাকে তাহলে হেয়ার ফল বাড়বে। ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন আপনার কোনটির ডেফিসিয়েন্সি আছে, তিনি সেই হিসেবে আপনাকে সাপ্লিমেন্ট দিবেন। এতে হেয়ার গ্রোথও হবে, চুল হেলদিও হবে।

 

৩) প্রতিদিন শ্যাম্পু না করা

প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে আমাদের স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল ওভার ওয়াশ হয়ে যেতে পারে। যার কারণে চুল ড্রাই হয়ে যেতে পারে। আর ড্রাই হয়ে যাওয়া মানে হেয়ার ব্রেকেজ বেড়ে যাওয়া। তাই প্রতিদিন শ্যাম্পু না করে ১/২ দিন পর পর ওয়াশ করতে পারেন। সেই সাথে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। হেলদি হেয়ারের জন্য ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত অরগানিকাওন আরগান কেরাটিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।   

 

৪) স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা

রেগুলার স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে। হেয়ার ফল বন্ধের জন্য এটা খুবই জরুরি। স্ক্যাল্প ম্যাসাজ যদি এমন হেয়ার অয়েল দিয়ে করা যায় যেটাতে চুল পড়া বন্ধের উপকরণ আছে তাহলে বেশি ভালো হয়। যেমন- অরগানিকাওন ব্র্যান্ডের রোজমেরি+অনিয়ন হেয়ার অয়েল। এই অয়েলে আছে রোজমেরি ও অনিয়নের কার্যকরী এমন অনেক গুণ যা চুল পড়া বন্ধে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিয়মিত এই তেল দিয়ে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে হেয়ার কিউটিকল সিল হয়, চুল হয় মজবুত এবং গোড়া থেকে শক্ত হয়।

 

৫) টাইট হেয়ারস্টাইল না করা

লুক চেঞ্জ করার জন্য অনেকেই হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ করি। কিন্তু এতে অনেক সময় চুলের ক্ষতি হতে পারে। হেয়ার স্টাইল করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন স্ক্যাল্প ও হেয়ার ভালো থাকে। পুল ব্যাক, ব্রেইড, পনিটেইল এর মতো স্টাইলগুলো চুলের ক্ষতি করে এবং হেয়ার লসকে ট্রিগার করে। সেই সাথে হার্শ প্রোডাক্ট ইউজ না করা, বার বার হেয়ার ডাই না করা, হিট স্টাইলিং টুলস কম ব্যবহার করা উচিত।

 

৬) লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনা

চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে হার্শ লাইফস্টাইল ফলো করা। তাই এখানেও পরিবর্তন আনা জরুরি। ব্যালেন্সড ফুড খাওয়া, রেগুলার এক্সারসাইজ করা, স্ট্রেস লেভেল মেইনটেইন করার মতো কাজগুলো করলে লাইফস্টাইলে অনেকটাই পরিবর্তন আনা সম্ভব।

 

যে কোনো পরামর্শ মেনে চললে যে হেয়ার ফল একদম বন্ধ হয়ে যাবে তা নয়। বরং ভালো একটি হেয়ার কেয়ার রুটিন মেনে চললে এই সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। সেই সাথে নতুন চুল গজাবে। তাই হেয়ার ফল হচ্ছে এই চিন্তা বেশি না করে, প্রোপার রুটিন মেনে চলুন, হেয়ার ফল কন্ট্রোল করুন।