ব্রণের সমস্যা দূর করতে কয়েকটি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়

আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে। অনেকটা সময় ধরে প্ল্যান করে আয়োজন করেছেন সবকিছু৷ নিজেও নিজেকে দারুণ গুছিয়ে নিয়েছেন। সবই রেডি তবে অনুষ্ঠানের দিন সকালে সাজতে গিয়ে দেখলেন মুখে ব্রণ উঠেছে। মন সাথে সাথেই খারাপ হয়ে গেলো। কারণ মুখে যতই মেকআপ করা হোক, মুখটাকে আর ফ্রেশ দেখাবে না।

ব্রণ বা একনে আমাদের স্কিনের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এই সমস্যা পোহাতে হয়নি এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে। আমাদের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে ব্রণের সমস্যা শুধুমাত্র টিনেজে হয়। কিন্তু তা নয়, বরং বিভিন্ন বয়সেও এই সমস্যা হতে পারে। আজকে আমরা এই সমস্যার কিছু ঘরোয়া সমাধান জানবো।

 

ব্রণ কী?

ব্রণ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে জানার আগে জেনে নিই ব্রণ মূলত কী এবং কেন হয়। আমাদের স্কিনে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড নামক ক্ষুদ্র গ্রন্থি থেকে ন্যাচারালি সিবাম বা অয়েল প্রোডিউস হয়। এই সিবামের প্রধান কাজই হচ্ছে স্কিনকে প্রোটেক্টেড ও ময়েশ্চারাইজড রাখা। অ্যান্ড্রোজেন হরমোন এই গ্ল্যান্ডকে সিবাম প্রোডিউস করার জন্য সিগন্যাল পাঠায়। সিবাম বাইরের ধুলোবালি, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থেকে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার তৈরি করে। সিবামের এই উপকারিতা ততক্ষণই যতক্ষণ নরমালি এটি প্রোডিউস হয়। এক্সেস সিবাম প্রোডিউস হওয়া মাত্রই স্কিন অয়েলি হয়ে ওঠে, একনে ব্রেকআউট হয়, পোরস ক্লগড হয়ে যায়। দেখা যায় ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস অথবা পিম্পলস। 

ভারতের জিভিসা ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিস্ট ডা: আকৃতি গুপ্তা বলেন, “আমাদের স্কিনে ন্যাচারালি অয়েল প্রোডিউস হয়। এই অয়েল যদি ভালোভাবে ক্লিন করা না হয়, তাহলে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে। আবার ডেড স্কিন সেলস যদি নিয়মিত এক্সফোলিয়েট না করা হয় সেক্ষেত্রেও ব্রণের সমস্যা বাড়তে পারে।“

 

ব্রণ কেন হয়?

ব্রণের মূল কারণ ত্বকে সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন হওয়া অথবা ডেড স্কিন সেলস জমে পোরস ক্লগ হয়ে যাওয়া। কিন্তু এমনটি কেন হয়? যদি- 

◑ ত্বকের পোরস এ ধুলোবালি, ময়লা ও ব্যাক্টেরিয়া জমে যায়

◑ হরমোনাল চেঞ্জ ও পিসিওএস থাকে

◑ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস হলে 

◑ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে 

◑ কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, মেকআপ প্রোডাক্ট যদি স্কিনে স্যুট না করে অথবা ঠিকমতো ক্লিন না করা হয় 

◑ মেকআপের ক্ষেত্রে অপরিষ্কার টুলস, ডেট এক্সাপায়ার্ড প্রোডাক্টস, অতিরিক্ত মেকআপ প্রোডাক্টস ব্যবহার করা হলে

◑ অতিরিক্ত সুগারযুক্ত, রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে 

◑ পর্যাপ্ত পানি পান না করলে 

◑ বংশগত কারণে

◑ অনেক সময় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে নানারকম ওষুধ খেতে হয়, কিছু কিছু ওষুধের সাইড ইফেক্ট হিসেবে ব্রণ উঠতে পারে। বিশেষ করে হরমোনাল চেঞ্জ আসে এমন ওষুধগুলোতে ব্রণ দেখা দিতে পারে।

 

ব্রণ নিরাময়ে ঘরোয়া সমাধান

ব্রণ কেন হয় তার বিভিন্ন কারণ তো আমরা জানলাম। তবে এবার প্রতিকারের উপায় কী? ব্রণ প্রতিকারের নানারকম উপায় আছে। ঘরে বসেই বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে প্যাক বানিয়ে প্রতিকার পাওয়া যায় ব্রণের সমস্যা থেকে। চলুন আজ এমন কয়েকটি প্যাক সম্পর্কে জানা যাক।  

 

১। টি ট্রি অয়েল, টকদই ও মধু ফেইস মাস্ক

একনে সমস্যার জন্য টি ট্রি অয়েল অত্যন্ত কার্যকর একটি উপাদান। এটি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল হিসেবে কাজ করে এবং অয়েলি স্কিন ব্যালান্স করে এবং স্কিনে গ্লো আনে। এছাড়া মধু ফেইসকে ময়েশ্চারাইজ করে, পোরস ক্লিন করে। টকদই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি রিংকেলস দূর করে, সানবার্ন দূর করে। আসুন আজকে শিখে নিই টি ট্রি অয়েল, মধু ও টকদই ব্যবহার করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেইস মাস্ক তৈরির উপায়। 

 

যা যা লাগবে: 

১। মধু 

২। টকদই

৩। টি ট্রি অয়েল

 

যেভাবে বানাবেন:

◑ ১ টেবিলচামচ মধু এর সাথে ২ টেবিলচামচ টি ট্রি অয়েল মেশান।

◑ ১ টেবিলচামচ টকদই এই মিশ্রণের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ফেলুন।

◑ ফেইস ভালোভাবে ওয়াশ করে তাওয়েল দিয়ে শুকিয়ে নিন। 

◑ প্যাকটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে নিন। 

 

সপ্তাহে একদিন এই মাস্কটি ব্যবহার করুন। অল্পদিনেই খুব ভালো ফলাফল পাবেন। 

 

২। অ্যালোভেরা, মধু ও দারুচিনি

অ্যালোভেরা ত্বকের যত্নে বহুল ব্যবহৃত একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি স্কিনকে যেমন ক্লিন করে, ব্রণ দূর করে তেমন স্কিনকে হাইড্রেট রাখে। মধু এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ কাজ করে এবং ত্বকে সুদিং ফিল দেয়। দারুচিনি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের টেক্সচার ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা, মধু ও দারুচিনি দিয়ে দারুণ একটি ফেইস মাস্ক বাসায় বানিয়ে ফেলতে পারেন খুব সহজেই।

 

যা যা লাগবে:

১। অ্যালোভেরা জেল

২। মধু

৩। দারুচিনি গুড়া

 

যেভাবে বানাবেন:

◑ ২ টেবিলচামচ মধু এবং ১ টেবিলচামচ অ্যালোভেরা জেল নিন। ভালোভাবে মিক্স করুন। মিক্সচারটা যেন খুব পাতলা না হয় কিন্তু খুব সহজেই মুখে লাগানো যায় এমন হয়।

◑ মাস্ক ব্যবহারের আগে ১/৪ টেবিলচামচ দারুচিনি গুড়ো এই মিক্সচারে মিশিয়ে নিন।

◑ ফেইস ভালোভাবে পরিষ্কার করে মুখে মাস্ক লাগিয়ে ৫/ ১০ মিনিট পর ধুয়ে নিন। 

 

সপ্তাহে মাত্র একদিন ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য এই মাস্কটি ব্যবহার করেই মুক্তি পেতে পারেন ব্রণের এই অযাচিত ঝামেলা থেকে।

 

৩। হলুদ, বেসন ও টকদই

হলুদ আমাদের ত্বকের নানা উপকার করে। এটি স্ট্রং একটি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে। বেসন ত্বকের পিএইচ লেভেল ব্যালান্স করে, সিবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। রান্নাঘরের এই খুব সাধারণ উপাদানগুলো দিয়েই একটি অসাধারণ ফেইস প্যাক এভাবে সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন:

 

যা যা লাগবে:

১। হলুদ

২। বেসন

৩। টক দই

 

যেভাবে বানাবেন:

◑ ২ টেবিল চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ হলুদ ও ১ টেবিল চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি যেন পেস্ট এর মতো হয়।

◑ ফেইস ভালোভাবে পরিষ্কার করে মাস্কটি পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

◑ স্কিন ড্রাই হলে এই মাস্ক এর সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক আরও সফট ও হাইড্রেট থাকবে।

 

সপ্তাহে একদিন হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন সব উপাদানেই তৈরি এই ঘরোয়া মাস্কটি আপনার স্কিনকে যেমন ব্যাক্টেরিয়া, ব্রণ এসবের হাত থেকে বাঁচাবে তেমনই স্কিনের গ্লোও বাড়াবে। তাই সপ্তাহে একদিন মাত্র অল্প কিছু সময়ে হাতের কাছে থাকা জিনিস দিয়েই করে ফেলতে পারেন ব্রণ সমস্যার সমাধান।

 

৪। নিম ও হলুদ

 

নিমের গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। নিম ব্রণ সৃ্‌ষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়ার বিস্তার রোধ করে, ফলে ব্রণের বার বার ফিরে আসা বন্ধ হয়ে যায়। হলুদ অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে। চলুন নিম ও হলুদের সহজ একটি ফেইস প্যাক বানানো শিখে নিই:

 

যা যা লাগবে:

১। নিম

২। হলুদ

 

যেভাবে বানাবেন:

◑ ২ টেবিলচামচ নিমপাতার গুড়া ও ১ টেবিলচামচ হলুদ নিন। রোজওয়াটার অথবা পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি স্মুথ পেস্ট তৈরি করে নিন।

◑ ফেইস ভালোভাবে পরিষ্কার করে অ্যাপ্লাই করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

মাত্র দুটি উপকরণ হলেও এটি বেশ কার্যকরী একটি প্যাক। সপ্তাহে অন্তত একবার করে ব্যবহার করলে ব্রণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে সহজে।

 

৫। একনে ট্রিটমেন্ট প্যাক

 

আমরা অনেকেই প্রচন্ড ব্যস্ত জীবন পার করি। এই ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে সব উপকরণ যোগাড় করে সেগুলোকে রেডি করে ফেইস প্যাক বানানোর সময় পাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার চমৎকার একটি সমাধান হলো অরগানিকাওন ব্র‍্যান্ডের একনে ট্রিটমেন্ট প্যাক এবং টি ট্রি অ্যাসেনসিয়াল অয়েল। এই একনে প্যাকটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। কোনো ঝামেলা ছাড়াই একনে সমস্যা সমাধানের জন্য ইউজ করতে পারেন দারুণ এই ফেইসপ্যাকটি।

 

যা যা লাগবে:

১। একনে রিমুভিং প্যাক

২। টি ট্রি অ্যাসেনসিয়াল অয়েল

 

যেভাবে বানাবেন:

◑ একনে রিমুভিং প্যাক থেকে ২ টেবিলচামচ গুড়া নিন। কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অ্যাসেনসিয়াল অয়েল দিন এবং প্রয়োজন মতো পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।

◑ মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেইস মাস্কটি লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। 

 

এই একনে রিমুভিং প্যাক এ রয়েছে মুলতানি মাটি, মসুর ডাল, নিম, মরিঙ্গা, কাওলিন ক্লে, দারুচিনি, কস্তুরি হলুদের মত উপকারী সব প্রাকৃতিক উপাদান। যা একনে প্রতিরোধ করতে দারুণ কার্যকরী। তাই সপ্তাহে একদিন এই ফেইস মাস্কটি ব্যবহার করে পেতে পারেন ব্রণবিহীন ফ্রেশ এবং গ্লোয়িং ফেইস।

 

ব্রণ সমস্যা নেই এমন বোধহয় খুব কম ব্যক্তিই আছেন। সমস্যা যেমন খুব কমন, তেমন সবাই এটার সল্যুশনও চায় দ্রুত। কিন্তু কীভাবে কী করতে হবে সহজে বুঝতে পারেন না। যারা ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছেন, তারা উপরে উল্লেখিত প্যাকগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। যদি কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান না পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।   

 

Author