মেলাজমা বা মেছতাঃ কী, কেন হয় এবং প্রতিকার

আমাদের স্কিনে যত রকম প্রবলেমস হয়, তার মাঝে মেলাজমা বা মেছতা একটি, যা সাধারনত ফেস এ হয়ে থাকে। মেছতা নিয়ে প্রায়ই ভুক্তভোগীরা হতাশা ও দুশ্চিন্তায় থাকেন। আজকে আমরা স্কিনের এই কনসার্নটি নিয়ে আলোচনা করব।

 

মেলোজমা বা মেছতা কী?

মেলাজমা হলো স্কিনের উপর বাদামী, লাল বা কালচে ছোপ যা গাল, থুতনি ও কপালে দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাতের কনুই ও পিঠেও দেখা যেতে পারে। সাধারনত চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের মাঝে মেছতা হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মূলত আমাদের ত্বক কালো করার জন্য দায়ী মেলানিন, এই মেলানিনের পরিমান বেড়ে গিয়েই মেছতার সৃষ্টি হয়।  

 

মেছতা কেন হয়?

গর্ভধারনের সময় মেছতা হওয়ার প্রবনতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এজন্য একে “মাস্ক অফ প্রেগ্ন্যান্সী” বলা হয়ে থাকে। এছাড়া জেনেটিক্যাল কারনে, সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনী রশ্মীর প্রভাব, বার্থ কন্ট্রোল পিল, হরমোনাল ইম্ব্যালান্স, থাইরয়েড বা ডিম্বাশয়ের সমস্যা ইত্যাদির কারনেও মেছতা হতে পারে। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত কসমেটিকস ব্যবহারের কারনেও মেছতা হতে পারে যা “মেলাজমা কসমেটিকা” নামে পরিচিত। এছাড়া লিভারের সমস্যার কারনেও মেছতা হয়ে থাকে তাকে “মেলাজমা হেপাটিকা” বলা হয়ে থাকে। 

 

মেছতার প্রকারভেদ

আমাদের ত্বকে রয়েছে তিনটি স্তর। সবার উপরে সূক্ষ্ম স্তরটিকে বলা হয় “এপিডার্মিস”। এর নিচের পুরু স্তরটিকে বলা হয় “ডারমিস” এবং একদম গভীরের ফ্যাট দিয়ে তৈরী স্তরটি হলো “সাবকিউটিস”। মেছতা যদি ত্বকের বাইরের স্তরে হয়ে থাকে তাকে “এপিডার্মাল মেলোজমা”, ভেতরের ডারমিসে হলে “ডার্মাল মেলোজমা” এবং এর গভীরে অর্থ্যাৎ সাবকিউটিস অঞ্চলে হলে তাকে “মিক্স মেলোজমা” বলে। আবার মেছতা ত্বকের কোন অঞ্চলে হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করেও তিন ভাগে ভাগ করা যায়। কপাল, নাক, থুতনি ও মুখে হলে একে সেন্ট্রোফেসিয়াল মেলোজমা বলে। নাক ও গালে হলে ম্যালার এবং শুধু থুতনিতে হলে তাকে ম্যান্ডিবুলার মেলোজমা বলে। 

 

 

কিভাবে বুঝবো সমস্যাটি মেছতা?

মেছতা সাধারনত খালি চোখেই দেখা যায় ত্বকের উপর। তবে অনেক সময় অন্য কোন স্কিন প্রবলেমের সাথেও লক্ষন ম্যাচ করতে পারে। তাই একজন অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট এর সাথে কনসাল্ট করা উচিত। একজন ডার্মাটোলজিস্ট দেখেই মেছতা শনাক্ত করতে পারে। এছাড়া এটি আসলে মেছতা নাকি ব্যাক্টেরিয়াল বা ফাঙাল ইনফেকশন তা ঠিকমতো বোঝার জন্য উড ল্যাম্প টেস্ট করতে পারেন ডার্মাটোলজিস্ট। এতে সাধারনত আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির মাধ্যমে স্কিনের প্রবলেম ডিটেক্ট করা হয়। এটি একদমই সহজ এবং কোন সাইড ইফেক্ট বা পেইন হয় না।

 

মেছতা হলে কী কী হয়?

মেছতা হলে সাধারনত ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ ছাড়া খুব বেশি কিছু দেখা যায় না। কোন ব্যথা হয় না বা চুলকায় না। এটি থেকে ক্যান্সার হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নেই। 

 

মেছতা কি পারমানেন্ট?

মেছতা পারমানেন্ট- এমন কিছু দেখা যায় নি তবে মেছতা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। অনেক সময় শুধুই প্রেগ্ন্যান্সির সময়ে হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় তিন চার মাস বা তার বেশি সময়ও থাকতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে সারাজীবনও থাকতে পারে। তবে মেছতা হলেই সেটি পারমানেন্ট হবে এমন ধারনা করা যাবেনা। স্কিনের ধরন, লাইফ স্টাইল, মেছতার কারন এর নির্ভর করে স্থায়ীত্ব কম বেশি হতে পারে।

 

মেছতা দূর করার উপায়

মেছতা হলে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে যেন এটি আর না বাড়ে, অবস্থা যেন আরো খারাপ না হয়। এজন্য সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতে হবে, মেকআপ আইটেম, কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ইত্যাদি ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। স্কিন ঠান্ডা রাখতে হবে যতটা সম্ভব।

প্রেগ্ন্যান্সিকালীন মেছতা সাধারনত একাই চলে যায়। এর জন্য একটু ধৈর্য্য ধরতে হয়। রোদে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ইউজ করতে হবে। কারন সূর্যের ইউভি রশ্মি মেলানিন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া রোদে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। 

হরমোনের সমস্যার জন্য হলে সাধারনত হরমোনের ট্রিটমেন্টেই এটি দূর হয়ে থাকে। অনেক সময় ডার্মাটোলজিস্ট কিছু ক্রিম, সিরাম ইত্যাদি সাজেস্ট করে থাকেন। হাইড্রোকুইনোন–সমৃদ্ধ ব্লিচিং ও ভিটামিন এ যুক্ত ক্রিম, মেথিমাজোল, এজেলিক অ্যাসিড, স্টেরয়েড, এজেলিক এসিডযুক্ত ক্রিম  ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে মাইক্রোডার্মাব্রাসন ও ডায়মন্ড পিল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এগুলো যেহেতু ওষুধ সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা একদমই উচিৎ নয়। 

 

বর্তমানে অনেক অর্গানিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টসও পাওয়া যায় যাতে মেছতার দাগ দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অর্গানিকাওন মেছতা কম্বো হতে পারে একটি দারুণ সমাধান। এই কম্বোতে আছে Green Tea Face Mist, Brightening Face Pack, Saffron Goat Milk Soap, Kumkumadi Oil এবং Saffron Soothing Gel। ধৈর্য্য ধরে নিয়ম মেনে এই কম্বোটি ব্যবহার করলে মেছতার দাগ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব। এসব প্রোডাক্ট এ কোনরকম কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না, পুরোপুরি ন্যাচারাল উপাদান দিয়ে তৈরী করা হয়ে থাকে, তাই এর কোন ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। 

সাধারনত যাদের স্কিনটোন একটু ডার্কার অর্থ্যাৎ যাদের স্কিনে মেলানিনের উপস্থিতি বেশি তাদের মাঝে মেছতা হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মেছতা হলে স্কিনে পিগমেন্টেশনের বাইরে তেমন কোন ঝুঁকি বা সাইড ইফেক্ট দেখা যায় না তাই এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং ধৈর্য্য ধরে স্কিনকেয়ার করলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

Author