ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফেরাবে ভিটামিন সি সিরাম 

স্কিনকেয়ারের ব্যাপারে যারাই একটু কনসার্ন তারাই জানেন সিরাম ত্বকের জন্য কতটা উপকারী। এটি রেগুলার স্কিনকেয়ার স্টেপে অ্যাসেনশিয়াল একটি স্টেপ। সিরামের মাঝে থাকা অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস স্কিনের ডিপে গিয়ে প্রবলেম টার্গেট করে সেগুলোকে ফিক্স করে। তাই নিয়মিত সানস্ক্রিন, টোনার এসবের মতোই সিরামও ব্যবহার করা জরুরি। আমিও যখন সিরাম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারি তখন থেকেই ত্বকে স্যুট করবে, ব্রাইটনেস বাড়াবে এমন সিরাম খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। এর মাঝে আমার নজর কাড়ে অরগানিকাওন এর ভিটামিন সি হাইড্রো বুস্টিং সিরাম। আমি এটি প্রায় চার মাস ধরে ব্যবহার করছি। আজকে এই প্রোডাক্টটি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। 

 

ভিটামিন সি সিরাম এর কোন ফরমেটটি জনপ্রিয় এবং কেন? 

 

ভিটামিন সি হলো একটি অ্যাকটিভ উপাদান। এটি খুবই শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের ত্বককে ফ্রি রেডিক্যালস থেকে রক্ষা করে, যার কারণে মূলত রিংকেলস ও ফাইন লাইনস হয়ে থাকে। 

 

ভিটামিন সি তে কয়েক ধরনের ফরমেট আছে। এর মধ্যে কমন একটি ফর্ম হচ্ছে এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড এবং অন্যটি টিএইচডি অ্যাসকরবেট। দুটো ফর্মই ভিটামিন সি সিরামে যুক্ত করা হয়। খুব এক্সপেনসিভ হওয়াতে টিএইচডি এর ব্যবহার এখনও তেমন একটা পরিচিত নয়। তাই অনেকেই এর নাম এখনও সেভাবে জানে না। 

 

কোনটি তবে বেশি ভালো? ভিটামিন সি এর কমন একটি ফর্ম হচ্ছে এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এটা বিউটি প্রোডাক্টে খুব কমন। ম্যানুফ্যাকচারাররা এটি ব্যবহার করেন আরও একটি কারণে। কারণ টিএইচডি এর চেয়ে এর দাম অনেক কম। এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ভিটামিন সি এর বেশ কিছু বেনিফিটস দেয়, এর মধ্যে স্কিন ক্ল্যারিটি ইমপ্রুভ করা, সাইনস অফ এজিং কমানোও আছে। তাছাড়া এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড স্কিনে সেভাবে পেনিট্রেট হয় না, যেভাবে টিএইচডি হয়। এ কারণে সেটির ইফেক্টিভনেস কমে যায়। অনেকের স্কিনে এ কারণে ইরিটেশন হতে পারে।

 

ভিটামিন সি এর সবচেয়ে স্ট্যাবল ও এফিশিয়েন্ট ফর্ম হচ্ছে টেট্রাহেক্সিলডিসাইল অ্যাসকরবেট, সংক্ষেপে টিএইচডি অ্যাসকরবেট। অনেকগুলো স্টার ইনগ্রেডিয়েন্টের মধ্যে এটি অন্যতম হলেও এর নাম অনেকেই শোনেনি। মার্কেটে থাকা বেশিরভাগ বিউটি প্রোডাক্টে এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড আছে, যেটা ভিটামিন সি এর ব্রাইটেনিং ও স্কিন রিনিউয়িং ইফেক্ট বাড়ায়, কিন্তু টিএইচডি অ্যাসকরবেট যেভাবে এফিশিয়েন্টলি কাজ করে, সেভাবে ট্রিট করে না। ভিটামিন সি এর এই স্ট্যাবল ফর্মটি ফাইন লাইনস ও রিংকেলস কমায়, ইরিটেশন কমায়, দেয় ফ্রেশার, হেলদিয়ার স্কিন। তাই এটি সবচেয়ে বেশি বেনিফিশিয়াল।

 

তো আমিও খুঁজতে থাকলাম কোথায় পাবো টিএইচডি অ্যাসকরবেট ফর্মের ভিটামিন সি সিরাম? খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম অর্গানিকাওন এর ভিটামিন সি হাইড্রো বুস্টিং সিরামদেরি না করে নিয়ে নিলাম ব্যবহারের জন্য।

 

আর কী কী আছে এই সিরামে?

 

অরগানিকাওন হাইড্রো বুস্টিং গ্লোয়িং সিরাম এ শুধু যে টিএইচডি অ্যাসকরবেট আছে তাই-ই নয় বরং আরো নানারকম উপকারী সব উপাদানে ভরপুর এই সিরামটি। যেমনঃ

  • হায়ালুরোনিক অ্যাসিড
  • গ্লিসারিন
  • আলফা আরবুটিন
  • সাইট্রাস এক্সট্র্যাক্ট
  • গ্রীন টি এক্সট্র্যাক্ট
  • রোজমেরি এক্সট্র্যাক্ট
  • যষ্ঠিমধু এক্সট্র্যাক্ট
  • রোজ এক্সট্র্যাক্ট
  • মালবেরী এক্সট্র্যাক্ট
  • ভিটামিন ই
  • উইচ হ্যাজেল

 

এর মত বেনিফিশিয়াল সব উপাদান। 

 

ভিটামিন সি সিরাম আসলে কী কী উপকার করে আমাদের স্কিনে?

 

ভিটামিন সি সিরাম আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চলুন একটু জেনে নিই এটি নিয়মিত ব্যবহারের সুবিধাগুলোঃ

 

  • ফ্রি রেডিক্যালস রিমুভ করেঃ  সূর্যের রশ্মি থেকে ফ্রি রেডিক্যালস আমাদের ত্বকে প্রবেশ করে। এগুলো আমাদের স্কিন সেলস ড্যামেজ করে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস তৈরী করে। ভিটামিন সি এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যালস রিমুভ করে প্রিম্যাচিওর এজিং রোধ করে। ফলে স্কিন ইয়াংগার থাকে বেশিদিন।


  • কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়ঃ কোলাজেন প্রোটিনের একটি ফর্ম যা স্কিনের স্ট্রাকচার ঠিক রেখে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি এই কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে। ফলে স্কিন থাকে আরো বেশি ইয়াংগার লুকিং, রেডিয়েন্ট ও হেলদি।


  • হাইপারপিগমেন্টেশন ও ডার্ক স্পট দূর করেঃ আমাদের ত্বকে মেলানিন এর উপস্থিতির কারণে বেশি ডার্ক দেখা যায়। তাছাড়া মেলানিন অতিরিক্ত প্রোডিউস হলে ডার্ক স্পট, মেছতা ইত্যাদি দেখা দেয়। ভিটামিন সি এই মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে দেয়। ফলে ডার্ক স্পট, হাইপারপিগমেন্টেশন ইত্যাদি দূর হয় এবং স্কিন হয় আরো ব্রাইট।


  • ডার্ক সার্কেল দূর করেঃ গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন সি স্কিন হাইড্রেশনের মাধ্যমে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে স্কিনকে আরো প্লাম্পি করে তোলে। 


  • স্কিন হাইড্রেট রাখেঃ ভিটামিন সি স্কিন হাইড্রেট রেখে ড্রাইনেস, ডেড স্কিন সেলস হওয়া থেকে বাঁচায়।


  • স্কিন ব্রাইট করেঃ ভিটামিন সি এর প্রধান একটি কাজ হলো স্কিনটোন ব্রাইট করা। এটি স্কিনের স্যাগিনেসও দূর করে, রেডনেস কমিয়ে স্কিনকে আরো রেডিয়েন্ট করে তোলে।

 

হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের কাজ কী?

 

স্কিন হাইড্রেটেড রাখতে একটি অসাধারণ উপাদান হলো হায়ালুরনিক অ্যাসিড। অর্গানিকাওন ভিটামিন সি সিরাম এর আরেকটি প্রধান উপাদান এটি। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড নিয়মিত ব্যবহারে স্কিনের যে উপকারগুলো হয় তা হলোঃ

 

  • স্কিন হাইড্রেট রাখেঃ হায়ালুরনিক অ্যাসিডের সবচেয়ে দারুণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি স্পঞ্জের মতো কাজ করে এবং নিজের ওজনের চেয়েও ১০০০ গুন বেশি পানি ধরে রাখতে পারে। এটি ত্বকে পানি ধরে রেখে ড্রাই হওয়া থেকে রক্ষা করে ও হাইড্রেটেড রাখে।


  • ত্বকের ব্যারিয়ার স্ট্রং করেঃ হায়ালুরনিক অ্যাসিড ত্বকের বিভিন্ন ড্যামেজ রিপেয়ার করে স্কিনের ব্যারিয়ার স্ট্রং করে। সান ড্যামেজ, ফ্রি রেডিক্যালস এগুলো থেকেও স্কিনকে সুরক্ষা দেয় হায়ালুরনিক অ্যাসিড।


  • পোরস টাইট করেঃ বয়সের সাথে সাথে ফেইসের পোরসগুলো বড় হতে থাকে। হায়ালুরনিক অ্যাসিড এই পোরসগুলোকে টাইট করতে সাহায্য করে।


  • র‍্যাশ, ইরিটেশন দূর করেঃ হায়ালুরনিক অ্যাসিডের মাঝে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় এটি স্কিনের র‍্যাশ, ইরিটেশন এগুলো দূর করে। 


  • কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করেঃ হায়ালুরনিক অ্যাসিড ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে কোলাজেন প্রোডাকশন বেড়ে যায়। যার ফলে রিংকেলস, ফাইন লাইনস দূর হয়।

 

 

কারা ব্যবহার করতে পারবে এই সিরাম?

এই সিরামটি সব স্কিন টাইপের জন্যই উপযোগী। তবে যেহেতু ভিটামিন সি সিরামটি একটি অ্যাকটিভ উপাদান, তাই যথাযথ স্কিনকেয়ার রুটিন মেইনটেইন করে তবেই এটি ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।

 

সিরামটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে?

 

সকালে ও রাতে দুই সময়ের স্কিনকেয়ার রুটিনেই এটি অ্যাপ্লাই করা যায়। 

 

সকালে ব্যবহারের নিয়ম- 

ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে নিন। টোনার অ্যাপ্লাই করে দুই মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। এরপর সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। 

 

রাতে ব্যবহারের নিয়ম- 

স্কিন টাইপ অনুযায়ী ক্লিনজার দিয়ে ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে নিন। টোনার অ্যাপ্লাই করার পর সিরাম লাগিয়ে নিন। এরপর নাইট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন।  

 

আমার অভিজ্ঞতা 

 

অর্গানিকাওন ভিটামিন সি হাইড্রো বুস্টিং সিরাম ব্যবহার করে আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। এটি ব্যবহারের পর আমার স্কিনটোন আগের চেয়ে অনেকটা ইম্প্রুভ হয়েছে। আমার স্কিন টাইপ ড্রাই। আমার স্কিনেও সিরামটি দারুণ স্যুট করেছে। যে সকল বেনিফিটস আমি পেয়েছিঃ

 

  • স্কিনটোন ব্রাইট হয়েছে।
  • এটি ব্যবহারের পর স্কিনে হাইড্রেটেড ও ময়েশ্চারাইজড ফিল হয়।
  • চোখের আশেপাশের ডার্ক সার্কেলস দূর হয়েছে।
  • বেশ কিছু ডার্ক স্পটস সহ হাইপার পিগমেন্টেশন পুরোপুরি দূর হয়েছে। 

তো এই ছিলো ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারে আমার অভিজ্ঞতা। আশা করি নিয়ম মেনে এটি ব্যবহার করলে আপনারাও দারুণ ফলাফল পাবেন। তাই দেরি না করে আজই নিয়ে ফেলতে পারেন অর্গানিকাওন এর ভিটামিন সি হাইড্রো বুস্টিং সিরাম টি। 

Author