স্যাফরন বা জাফরানঃ সৌন্দর্যের এক অভিজাত উপাদান

বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা বা রেড গোল্ড হিসেবে পরিচিত স্যাফরন বা জাফরান আমরা কম বেশি সবাই চিনি। বেশ দামী আর দারুণ উজ্জ্বল কমলা রঙের ছোট্ট এই উপাদানটি নানা গুনে ভরপুর বলেই প্রাচীনকাল থেকেই এর কদরের শেষ নেই। স্যাফরন বা জাফরানের আদি নিবাস গ্রীসে। সেই ৪০০০ বছর আগে থেকেই এই জাফরান খাবার থেকে সৌন্দর্যচর্চায়, সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুরু থেকেই আভিজাত্যের প্রতীক ছিলো এই জাফরান। সাধারণত অভিজাত শ্রেণীর নারীরা অথবা রাজা রানীরা সৌন্দর্যচর্চায় নিয়মিত ব্যবহার করতেন এই স্যাফরন।

 

স্যাফরন বা জাফরান কী?

অনেকে মনে করতে পারেন এটি মূলত জাফরান গাছের অংশ। আসলে তা নয়। এটি ক্রোকেস স্যাটিভাস নামক ফুলের গর্ভমুল, যা শুধুমাত্র স্ত্রী ফুলেই হয়ে থাকে। এটি কেশর নামেও পরিচিত। মাত্র ১ পাউন্ড বা ০.৪৫ কেজি ওজন জাফরান হতেই ১ লাখ ৭০ হাজারটি ফুলের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া স্যাফরন সংগ্রহের যে পদ্ধতি তা পুরোটাই হাতে করতে হয়। আর এটি প্রসেসের প্রত্যেকটি স্টেপ খুবই নিখুঁতভাবে করতে হয়। ফুলটি বছরে মাত্র একবারই চাষ করা যায়। তাই বুঝতেই পারছেন কেন এই মসলাটি এত দামী আর সহজলভ্য নয়। 

 

সৌন্দর্যচর্চায় জাফরান

জাফরানের উজ্জ্বল রঙ আর সুগন্ধ যেন সৌন্দর্যের প্রতীক বহন করছে সেই যুগ যুগ ধরে। জানা যায় প্রাচীন মিসরে ক্লিওপেট্রা জাফরান মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে  নিয়মিত গোসল করতে। এছাড়া প্রসাধনী হিসেবেও ছিলো জাফরানের বহুল ব্যবহার। প্রাচীন গ্রীক ও রোমে মূলত সুগন্ধি হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হতো জাফরান। এছাড়া মিশরীয়রা নানা চিকিৎসাতেও ব্যবহার করতেন। চলুন আজকে তবে জেনে নিই ত্বকের যত্নে জাফরানের কিছু গুনাগুনঃ

 

স্কিন ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে

জাফরানের মাঝে থাকা ক্রোসিন, ক্রোসেটিন, স্যাফ্রানাল সহ আরো কয়েকটি উপাদান অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে প্রতিদিনের ময়লা, ধুলাবালি, ব্যাক্টেরিয়া, পল্যুশন এগুলো ত্বকের যে ক্ষতি করে থাকে তা থেকে জাফরান ত্বককে রক্ষা করে। 

 

পিগমেন্টেশন দূর করে

স্যাফরনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান হয়তো ক্রোসিন যার কারণে এমন উজ্জ্বল হয়ে থাকে এর রঙ, সেটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি স্কিন ব্রাইটেনিং করে থাকে। এটি স্কিনের পিগমেন্টেশন, সানট্যান, আনইভেন স্কিন টোন দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। 

 

ত্বকের জ্বালাপোড়া ও ক্ষত সারায়

অনেক সময় নানা কারণে আমাদের ত্বকে ইনফ্ল্যামেশন, রেডনেস, ইচিং, সানবার্ন সহ ছোট ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে থাকে। জাফরানের মাঝে থাকা প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান এগুলো সারিয়ে দেয়। প্রাচীনকাল থেকেই ক্ষত সারাতে স্যাফরনের ব্যবহার হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাফরান ব্যবহারে এ ধরনের স্কিনের ক্ষতগুলো সেরে যায় এবং পরবর্তীতে হওয়া থেকে বিরত রাখে। 

 

ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে

সূর্যের ইউভি রশ্মি ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি ত্বকের সেলগুলোকে ড্যামেজ করে সানবার্ন করে থাকে, রিংকেলস, ফাইন লাইনস এসব তৈরি করে থাকে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে , জাফরানের ক্রোসিন এতটা শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যাক্টিভ উপাদান যে এটি স্কিনকে ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করে থাকে। তাই নিয়মিত স্যাফরন ব্যবহারে স্কিন হয়ে ওঠে হেলদি ও গ্লোয়ি।

 

ব্রণ কমাতে

জাফরানের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলো ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানের কারণে ব্রণ এবং এর জন্য হওয়া ইনফ্ল্যামেশন থেকে রক্ষা করে। 

 

ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েটর

জাফরান ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবেও কাজ করে। এটি স্কিনের ডেড সেলস ক্লিন করে পোরস ক্লগ হওয়া থেকে রক্ষা করে। 

 

অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে

স্যাফরনের ক্রোসিন, ক্রোসেটিন, স্যাফ্রানাল অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এগুলো ত্বকে হওয়া রেডিকেলস এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। রেডিকেল এর কারণে মূলত স্কিন ড্যামেজ হয়ে রিংকেলস, ফাইন লাইনস এগুলো হয়ে থাকে। স্যাফরন নিয়মিত ব্যবহারে এসব দূর হয়। 

 

স্কিন টেক্সচার ইম্প্রুভ করে

স্যাফরনের মাঝে থাকে ভিটামিন বি ও নানারকম মিনারেলস, যা স্কিনের টেক্সচার ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করে এবং স্কিনের পুরোনো ডেড সেলসগুলো ঝরে যেতে সাহায্য করে। ফলে স্কিন আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখায়। 

 

স্কিন ব্রাইট করে

স্যাফরনের সবচেয়ে পরিচিত গুণ হলো এটি স্কিন ব্রাইট করে। মূলত এর ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলো ডেড সেলস, পিগমেন্টেশন, রিংকেলস, ফাইন লাইনস, সানবার্ন ইত্যাদি দূর করে। ফলে স্কিন হয় হেলদি। তাই ন্যাচারালিই স্কিনে গ্লো আসে। স্কিনের আনইভেন টোন দূর হয়ে যায় বলে স্কিন আরো ব্রাইট ও রেডিয়েন্ট লাগে।

 

কোথায় পাবেন স্যাফরন?

এত গুণাগুণ সম্পন্ন একটি জিনিস ত্বকের যত্নের জন্য নিয়মিত ব্যবহার করতে হলে পাবেন কোথায়? কারণ এটি বেশ দামী এবং সহজলভ্য নয়। একটি মজার ব্যাপার এই যে, স্যাফরনের খুব অল্প পরিমাণ হলেই এটি দারুণ কাজ করে। তবে ত্বকের যত্নে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য এটিকে সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। এই সমস্যার সমাধানে দেশীয় ব্র্যান্ড অর্গানিকাওন নিয়ে এসেছে স্যাফরন গোট মিল্ক সোপ এবং স্যাফরন দিয়ে তৈরি কুমকুমাদি অয়েল।

 

সংস্কৃত ভাষায় কুমকুমা অর্থ হলো স্যাফরন বা জাফরান। কুমকুমাদি অয়েল প্রাচীনকাল থেকেই সৌন্দর্যচর্চায় ভারতবর্ষে বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্যাফরন ছাড়াও নানারকম ভেষজ ও ফলজ নির্যাস দিয়ে তৈরী এই ফেসিয়াল অয়েলটি বাংলাদেশে প্রথম এনেছে অর্গানিকাওন ব্র্যান্ড। এছাড়া রয়েছে স্যাফরন গোট মিল্ক সোপ। এই হাতে তৈরি গোট মিল্ক সোপ এর গুনাগুন সম্পর্কে অনেকেই জানেন। এর সাথে যখন স্যাফরন যুক্ত হয় তখন সেটি আরো বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে। কোনোরকম কেমিক্যাল ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এই সোপটি আপনার স্কিন ময়েশ্চারাইজ তো করবেই সাথে দূর করবে দাগছোপ, সানবার্ন, আনইভেন স্কিনটোন। এই দুটি প্রোডাক্ট সাধারণত সব স্কিন টাইপেই স্যুট করে। তাই আপনিও যদি ত্বকের যত্নে নিয়মিত জাফরানের গুনাগুন পেতে চান তবে আজই ট্রাই করতে পারেন অর্গানিকাওন এর কুমকুমাদি অয়েল এবং স্যাফরন গোট মিল্ক সোপ। 

Author