ত্বকের জন্য ভিটামিন সি সিরাম উপকারী হলেও এর কি কোনো সাইড ইফেক্ট আছে?

স্কিন হেলদি ও গ্লোয়ি থাকুক, এমনটা কে না চায়? আর এইজন্য স্কিনকেয়ার রুটিনে ভিটামিন সি সিরাম খুবই কার্যকর একটি প্রোডাক্ট। পাওয়ারফুল এই স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ, যা স্কিন ব্রাইট করতে, ফাইন লাইনস ও রিংকেলস কমাতে, স্কিনের ওভারঅল টেক্সচার ও টোন ইমপ্রুভ করতে সাহায্য করে। এক কথায়, রেডিয়েন্ট, ইয়ুথফুল লুকিং স্কিন এর জন্য এই সিরামের জুড়ি মেলা ভার। তবে হ্যাঁ, ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারে অনেকেরই স্কিনে রিয়্যাকশন হয়। সেক্ষেত্রে কীভাবে এটা ইউজ করলে ভালো হয়? এমনই সব তথ্য জানাবো আজকের লেখায়।

 

ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারের উপকারিতা

 

ফ্রি রেডিক্যাল নিউট্রালাইজ করে

সূর্যরশ্মি থেকে আসা ফ্রি রেডিক্যালস হচ্ছে আনস্ট্যাবল কিছু মলিকিউলস যেগুলো আমাদের স্কিনের সেল ড্যামেজ করে দেয়। এই ফ্রি রেডিক্যালস নিউট্রালাইজ করে ভিটামিন সি। এতে এজিং প্রসেস স্লো হয়, রিংকেলস ও ফাইন লাইনস ফর্মেশন প্রিভেন্ট হয়।

 

কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে

কোলাজেন নামক প্রোটিন স্কিনের স্ট্রাকচার ও ফার্মনেস ধরে রাখে। ভিটামিন সি কোলাজেন প্রোডাকশন স্টিমুলেট করে, যার কারণে স্কিন প্লাম্পি হয়, আরও ইয়ুথফুল ও রেডিয়েন্ট হয়ে ওঠে।

 

ফাইন লাইনস ও রিংকেলস কমায়

কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট হয় বলে ভিটামিন সি ফাইন লাইনস ও রিংকেলস এর ছাপ কমায়, স্কিন করে তোলে স্মুথ ও ইয়াংগার লুকিং।

 

ডার্ক স্পট ও হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়

ভিটামিন সি মেলানিন প্রোডাকশনে বাধা দেয়, যার কারণে ডার্ক স্পট ও হাইপারপিগমেন্টেশন কমে।

 

ভিটামিন সি সিরামের সাইড ইফেক্ট

 

ভিটামিন সি সিরামের নানা উপকারিতা আছে, এটা তো জানা হলো। তবে অনেক প্রোডাক্টের মতো এটারও কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। চলুন এগুলোও জেনে রাখা যাক।

 

ইরিটেশন হতে পারে

ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারের যত সাইড ইফেক্ট আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ইরিটেশন। রেডনেস, ইচিং, বার্নিং এসব সমস্যা হয় ইরিটেশনে। এটা হতে পারে যদি ভিটামিন সি সিরাম উচ্চ মাত্রায় ইউজ করা হয়। কারণ অনেকের স্কিনেই এটা বেশ স্ট্রং হতে পারে। এই ইরিটেশন অ্যাভয়েড করার জন্য অল্প মাত্রায় ভিটামিন সি স্কিনে ইউজ করতে হবে যেন পারফেক্টলি কাজ করে।

 

সেনসিটিভিটি দেখা দিতে পারে

ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারে সান সেনসিটিভিটি দেখা দিতে পারে। ইউভি রে এর সংস্পর্শে আসলে এই প্রবলেম বেড়ে যায়। তাই এই ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত সিরাম ব্যবহারের আগে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা খুবই জরুরি।

 

ড্রাইনেস ও ফ্লেকিনেস বাড়তে পারে

ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারে ড্রাইনেস, ফ্লেকিনেস এমনকি পিলিং প্রবলেমও বাড়তে পারে, বিশেষ করে এটা যদি আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী ফর্মুলেট না হয়। তাই ব্যবহারের আগে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন স্কিনটাইপ বোঝার জন্য। তখন তিনিই বলে দিবেন এই সিরাম আপনি ইউজ করতে পারবেন কি পারবেন না।

ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম স্কিনে নানা ধরনের বেনিফিট দিলেও এর সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে জানা থাকলে ব্যবহারের আগে আপনিও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যদি কোনো সাইড ইফেক্ট বা ইরিটেশন হয়, তাহলে অবশ্যই একজন স্কিনকেয়ার প্রফেশনালের সাথে কথা বলুন।

 

ভিটামিন সি সিরাম কখন অ্যাপ্লাই করবেন?

 

দিনে ও রাতে দুই সময়েই এই সিরাম অ্যাপ্লাই করা যায়। তবে সকালে ব্যবহার করলে বেশি ইফেক্টিভ হয়। কারণ-

 

১) দিনের বেলা এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোটেকশন দেয়

ভিটামিন সি একটি একটি পোটেন্ট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটা স্কিনকে এনভায়রনমেন্টাল স্ট্রেসর যেমন ইউভি রেডিয়েশন ও পল্যুশন থেকে তৈরি হওয়া ফ্রি রেডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয়। সকালে এই সিরাম অ্যাপ্লাইয়ে স্কিনে এক্সট্রা প্রোটেকশন লেয়ার তৈরি হয় যাতে স্কিনে স্ট্রেস হয় না।

 

২) সানস্ক্রিনের ইফেক্টিকনেস বাড়ায়

ভিটামিন সি সানস্ক্রিনের ইফেক্টিভনেস বাড়ায়। তাই সান প্রোটেকশন পুরোপুরি পাওয়ার জন্য সিরাম আগে অ্যাপ্লাই করে এরপর সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে। 

 

৩) কোলাজেন সিন্থেসিস বাড়ায়

ভিটামিন সি স্কিনের ইলাস্টিসিটি ও ফার্মনেস বাড়ায়, কারণ এটি ব্যবহারে কোলাজেন সিন্থেসিস স্টিমুলেট হয়। সকালে অ্যাপ্লাই করলে কোলাজেন প্রোডাকশন আরও বুস্ট আপ হয়।

তাহলে কি রাতে অ্যাপ্লাই করা যাবে না?

অবশ্যই যাবে। তবে রাতে যেহেতু রেটিনয়েড এর মতো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়, তাই বলা হয় ভিটামিন সি দিনে ব্যবহার করতে। আপনি যদি রাতেই ব্যবহার করতে চান, তাহলে নাইট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করার আগে ভিটামিন সি সিরাম লাগিয়ে নেবেন।

 

ভিটামিন সি এর স্ট্যাবল ফর্ম কোনটি?

ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম ব্যবহারে ইরিটেশন বা অক্সিডাইজ হওয়ার মতো প্রবলেম হতে পারে আগেই বলেছি। কিন্তু কেন? এই প্রবলেম হতে পারে প্রোডাক্টে ভিটামিন সি এর স্ট্যাবল ফর্ম না থাকলে। ভিটামিন সি তে দুই ধরনের ফর্ম আছে। একটি হচ্ছে এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড এবং অন্যটি টিএইচডি অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। দুটো ফর্মই ভিটামিন সি সিরামে যুক্ত করা হয়। কিন্তু টিএইচডি এর ব্যবহার এখনও তেমন একটা জনপ্রিয় নয়। তাই অনেকেই এর নাম এখনও সেভাবে জানে না। অথচ এটিই স্ট্যাবল ফর্ম। কিন্তু কেন? চলুন জেনে নেয়া যাক।

 

এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড কী?


ভিটামিন সি এর কমন একটি ফর্ম হচ্ছে এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এটা বিউটি প্রোডাক্টে খুব কমন। ম্যানুফ্যাকচারাররা এটি ব্যবহার করেন আরও একটি কারণে। কারণ টিএইচডি এর চেয়ে এর দাম অনেক কম। এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ভিটামিন সি এর বেশ কিছু বেনিফিটস দেয়, এর মধ্যে স্কিন ক্ল্যারিটি ইমপ্রুভ করা, সাইনস অফ এজিং কমানোও আছে। তাছাড়া এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড স্কিনে সেভাবে পেনিট্রেট হয় না, যেভাবে টিএইচডি হয়। এ কারণে সেটির ইফেক্টিভনেস কমে যায়। অনেকের স্কিনে এ কারণে ইরিটেশন হতে পারে। তাই ভিটামিন সি যুক্ত প্রোডাক্ট কেনার আগে এর গায়ের লেবেল দেখে নিন।

 

টিএইচডি অ্যাসকরবেট কী?

ভিটামিন সি এর সবচেয়ে স্ট্যাবল ও এফিশিয়েন্ট ফর্ম হচ্ছে টেট্রাহেক্সিলডিসাইল অ্যাসকরবেট, সংক্ষেপে টিএইচডি অ্যাসকরবেট। অনেকগুলো স্টার ইনগ্রেডিয়েন্টের মধ্যে এটি অন্যতম হলেও এর নাম অনেকেই শোনেনি। মার্কেটে থাকা বেশিরভাগ বিউটি প্রোডাক্টে এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড আছে, যেটা ভিটামিন সি এর ব্রাইটেনিং ও স্কিন রিনিউয়িং ইফেক্ট বাড়ায়, কিন্তু টিএইচডি অ্যাসকরবেট যেভাবে এফিশিয়েন্টলি কাজ করে, সেভাবে ট্রিট করে না। ভিটামিন সি এর এই স্ট্যাবল ফর্মটি ফাইন লাইনস ও রিংকেলস কমায়, ইরিটেশন কমায়, দেয় ফ্রেশার, হেলদিয়ার স্কিন।

এটি ভিটামিন সি এর স্ট্যাবিলাইজড, লিপিড সল্যুবল ফর্ম। ভিটামিন সি যুক্ত বেশ কয়েকটি সিরামে এর ব্যবহার হচ্ছে ইদানিং। স্কিন সফট রাখতে, স্মুথ ও ব্রাইট করতে, হেলদি ও গ্লোয়ি রাখতে এই অ্যাসিডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে স্মুথ ও ব্রাইট করে তুলতে টিএইচডি অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের কার্যকারিতা অনেক বেশি। এটি যেমন স্কিনকে হাইড্রেট রাখতে হেল্প করে, তেমনই ট্র্যান্স এপিডার্মাল ওয়াটার লস প্রিভেন্ট করতেও হেল্প করে।

 

কেন এটি সুপারিয়র?


এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ওয়াটার সল্যুবল, অর্থাৎ স্কিনের লিপিড ব্যারিয়ার ভেদ করে পেনিট্রেট হতে পারে না। এ কারণে ভিটামিন সি প্রোডাক্টে এটি অ্যাভেয়লেবল থাকলেও স্কিন পুরোপুরি নারিশমেন্ট পায় না। অন্যদিকে টিএইচডি অ্যাসকরবেট অয়েল সল্যুবল ইনগ্রেডিয়েন্ট, যেটি স্কিনে দ্রুত অ্যাবজর্ব হয়ে যায়, স্কিনের সারফেসে পেনিট্রেট হয়ে ময়েশ্চার প্রোভাইড করে এবং এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ডিপার লেভেলে যেয়ে প্রোটেকশন দেয়। আপনি যদি বুঝতে পারেন যে এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পরও স্কিন ড্রাই হয়ে যাচ্ছে এবং আনকমফোর্টেবল লাগছে, তাহলে সময় হয়েছে টিএইচডি অ্যাসকরবেট সিরামে সুইচ করার।



এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মতো র‍্যাপিডলি টিএইচডি অ্যাসকরবেট অ্যাসিড অক্সিডাইজ করে না। বাতাসে থাকা অক্সিজেনের সাথে মিশে যদি আপনার সিরাম রিয়্যাক্ট করে, তাহলে সিরাম ব্রাউন হয়ে যেতে পারে, ব্যবহার করা নিরাপদ নাও হতে পারে। ব্যবহারের আগেই যদি এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিড অক্সিডাইজ হয়ে যায়, তাহলে আপনার মনে হতে পারে যে পুরো টাকাটাই পানিতে গেলো! যেহেতু টিএইচডি সহজে অক্সিডাইজ হয় না, কাজেই এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। পুরো বোতল ব্যবহারের পর আপনি আবারও ফিরবেন এই অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট কিনতে, কারণ টাকা নষ্ট হলো এটা আপনার মনেই হবে না!

এল অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের পিএইচ রেঞ্জ যেহেতু কম, এটা সেনসিটিভ স্কিনের অধিকারীদের জন্য ইরিটেটিং হতে পারে, সিরাম ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ছেদ ঘটাতে পারে। টিএইচডিতে আছে হায়ার রেঞ্জের পিএইচ রেঞ্জ, যেটা সব ধরনের ত্বকেই স্যুইটেবল। আপনি যদি সেনসিটিভ স্কিনের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে এই অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট স্কিনকেয়ার রুটিনে যুক্ত করে নিন এবং সেই হাইড্রেশনটাই পান, যেটা আপনি খুঁজছিলেন।

অরগানিকাওন ভিটামিন সি হাইড্রো বুস্টিং গ্লোয়িং সিরাম হচ্ছে সেই সিরাম যাতে ব্যবহার করা হয়েছে টিএইচডি অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। যা স্কিনের গ্লো বাড়ায়, এজিং সাইনস রিডিউস করে, কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়, স্কিনকে রাখে সফট ও ময়েশ্চারাইজড, স্কিনকে দেয় ইয়াংগার লুক। সেই সাথে স্কিনকেয়ার রুটিনকে করে তোলে আরও ইফেক্টিভ। যেহেতু স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট একেকজনের স্কিনে একেকভাবে কাজ করে, তাই আমরা পরামর্শ দেই ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে। এতে আপনার ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।

 

Author