সিজন চেঞ্জের সাথে সাথে স্কিনকেয়ার রুটিন কিভাবে বদলাবেন?

ষড়ঋতুর দেশ বলে পরিচিত আমাদের এই বাংলাদেশ। একেক ঋতুতে ওয়েদারও একেক রকম থাকে। কখনো কাঠফাটা রোদ তো কখনো ঝম ঝম বৃষ্টি। স্কিন হলো শরীরের সবচেয়ে বেশি ডাইনামিক অঙ্গ হলো আমাদের স্কিন এবং যেকোন আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি রিয়্যাক্ট করে থাকে। তাই সিজন চেঞ্জের সাথে সাথে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ও রুটিনেও চেঞ্জ আনতে হয়। চলুন আজকে জেনে নিই সিজন চেঞ্জের সাথে সাথে কীভাবে স্কিনকেয়ার রুটিন মেইনটেইন করবেন।

 

বেসিক স্কিনকেয়ার

 

প্রথমে আমরা একটু বেসিক স্কিনকেয়ার স্টেপস জেনে নিব। বেসিক স্কিনকেয়ারের জন্য যা যা লাগবে:

১। ক্লিনজার

২। টোনার

৩। সিরাম

৪। ময়েশ্চারাইজার 

৫।সানস্ক্রিন

৬। ফেইস মাস্ক

৭। লিপ স্ক্রাব ও লিপ বাম

সিজন চেঞ্জের সাথে সাথে এই স্কিনকেয়ার রুটিনে ও প্রোডাক্টে কিছু চেঞ্জ আসে। 

 

কোন ওয়েদারে কেমন প্রোডাক্ট?

 

বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিনের কোনকিছু সাধারনত স্কিপ করার মতো না। শুধু ওয়েদার এবং স্কিনের ডিমান্ড বুঝে সে অনুযায়ী প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে। 

 

ক্লিনজার

 

স্কিনকেয়ারের শুরুতেই আসে ক্লিনজার। স্কিন টাইপ বুঝে তো বটেই, ওয়েদার বুঝেও ক্লিনজার বাছাই করা উচিৎ। শীতকালে আবহাওয়া থাকে শুষ্ক, বাতাসে আর্দ্রতা থাকে কম। তাই স্কিন ডিহাইড্রেশনের চান্স বেড়ে যায় বহুগুনে। এ সময় হাইড্রেটিং, ময়েশ্চারাইজিং এবং অয়েল বেসড ক্লিনজার ব্যবহার করা ভালো। আবার গরমকালে ঘাম হয় বেশি, ফলে স্কিনে অতিরিক্ত তেল, ঘাম ইত্যাদি জমা হয়ে থাকে। তাই এগুলো ভালোভাবে ক্লিন করবে এবং পোরস ক্লগ করবেনা এ ধরনের একটু লাইটওয়েট ক্লিনজার বেছে নিতে হবে।

 

টোনার

 

ক্লিনজিং এর পর যেই স্টেপটি আসে সেটি হলো টোনিং। অনেকে কনফিউজড হয়ে যান টোনার কখন লাগাতে হবে। ক্লিনজিং এর পর পরই টোনার ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত আমাদের স্কিনের একটি স্বাভাবিক পিএইচ লেভেল থাকে। কিন্তু ক্লিনজিং এরপর পিএইচ লেভেল এর মাত্রা কমে যেতে পারে। টোনার সেটি ব্যালেন্স করে এবং স্কিনের ব্যারিয়ার ও টেক্সচার ঠিক করে। সাধারনত আপনার পছন্দ ও স্কিন টাইপ অনুযায়ী গ্রীষ্মকাল বা শীতকাল সবসময়ই একই টোনার ব্যবহার করতে পারেন। তবুও যদি চান একটু গরমের দিনে এমন টোনার বেছে নিন যা হাইড্রেটিং, সুদিং এবং অয়েল কন্ট্রোল করে। শীতকালে হাইড্রেটিং ও ময়েশ্চারাইজিং এবং স্কিনের অয়েল সব সরিয়ে ফেলেনা এরকম একটি টোনার বেছে নিন।

 

সিরাম

 

টোনারের পর যে প্রোডাক্টটি অ্যাপ্লাই করতে হবে তা হলো সিরাম। সিরাম স্কিনের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। এটি অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। সানবার্ন, ডার্ক সার্কেলস, হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করতে সহায়তা করে। সিরাম ত্বকের কোলাজেন বাড়াতেও সাহায্য করে। যেকোন সিজনের জন্য ভিটামিন সি সিরাম অত্যন্ত দারুন কাজ করে। বিশেষত শীতকালে ভিটামিন সি সিরাম খুবই উপকারী একটি জিনিস। শীতকালে একটু হাইড্রেটিং, নারিশিং ও এসেনসিয়াল অয়েলযুক্ত সিরাম বেছে নিতে পারেন যা স্কিন কে সুদিং ফিল দেয়ার পাশাপাশি রিপেয়ার করবে। গরমকালে লাইটওয়েট এবং অয়েল ফ্রি সিরাম বেছে নিতে পারেন যেটি হাইড্রেট ও ময়েশ্চারাইজড রাখবে স্কিন কে।

 

ময়েশ্চারাইজার

 

শীত হোক বা গ্রীষ্ম, ঠান্ডা হোক বা গরম, ময়েচশাচারাইজার সবস্ময়ই ব্যবহার করা উচিত। ময়েশ্চারাইজার মূলত ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। সাধারণত আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা কমে গেলে রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। রিংকেলস বেড়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার এ সকল জিনিস থেকে স্কিনকে প্রোটেক্ট করে। ত্বকের কোমলতা ধরে রাখতে, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে ময়েশ্চারাইজারের কোনো বিকল্প নেই।  গরমের মাঝে একটু লাইটওয়েট, অয়েল ফ্রি ও হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার ভালো হয়। অন্যদিকে শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় অয়েল বেইজড ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম জেলী টাইপের ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে পারেন। 

 

সানস্ক্রিন

 

আবহাওয়া রৌদ্রজ্জ্বল হোক বা মেঘলা, বৃষ্টি হোক বা কুয়াশায় ঢাকা, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাদ দেয়া যাবেনা কখনোই। সূর্যের ইউভি রশ্মি আমাদের ত্বকে অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে রিংকেলস বাড়ে, স্কিন ট্যানিং হয়, সানবার্নও দেখা দেয়। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে সকালের স্কিনকেয়ার রুটিনে একটি সানস্ক্রিন অবশ্যই রাখতে হবে। স্কিনে স্যুট করে এমন ব্রড স্পেক্ট্রাম এবং এস পি এফ অন্তত ৩০+ এমন একটি সানস্ক্রিন বাছাই করে নিতে পারে। সাধারনত যে কোন আবহাওয়ায় একই সানস্ক্রিন সারা বছরই ব্যবহার করা যায়। 

 

লিপ বাম ও লিপ স্ক্রাব

 

আমাদের চেহারার একটি আকর্ষণীয় পার্ট হলো ঠোঁট। ঠোঁট যদি দেখতে সুন্দর না লাগে, শুষ্ক থাকে, কালো হয়ে থাকে তবে পুরো চেহারার গ্লো টাই যেন হারিয়ে যায়। তাছাড়া ঠোঁট ফেটে গেলে বেশ যন্ত্রণাও ভোগ করতে হয়। এইজন্য লিপ স্ক্রাব ও লিপ বাম অত্যন্ত কার্যকরী। লিপ স্ক্রাব মূলত ঠোঁটের উপরের মরা চামড়া তোলে এবং ঠোঁটের দাগ দূর করে। লিপ বাম ঠোঁটকে হাইড্রেট করে এবং ঠোঁটের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রেখে ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে, ঠোঁটকে সফট রাখে। দিনে ও রাতের যেকোনো সময় যত খুশি লিপ বাম দেয়া যায়। শীতকালে লিপ বাম ও স্ক্রাব একটু বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।

 

কিছু টিপস

 

  • আবহাওয়া যাই হোক না কেন, দিনের বেলা বাইরে বেরোলে অথবা গরমের সংস্পর্শে আসলে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা এবং রি-অ্যাপ্লাই করা স্কিপ করা যাবেনা।

 

  • শীতকালে হাইড্রেটিং, অয়েল বেইসড প্রোডাক্ট বেছে নিতে পারেন। গরমের দিনে হাইড্রেটিং প্রোডাক্টসের উপর জোর দিন।

 

  • যেকোন সিজনে নিজের ডায়েট এমনভাবে রাখুন যেন শরীর ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যায়। এছাড়া শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি, নিউট্রিয়েন্টস পেতে সঠিক ডায়েট মেইনটেইন করা উচিত। 

 

  • যেকোন সিজনে ময়েশ্চারাইজার স্কিপ করা যাবেনা। কারন স্কিন ময়েশ্চারাইজড না থাকলে ফাইন লাইন্স, রিংকেলস হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। 

 

  • যেকোন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করার আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে দেখে নিতে হবে স্কিনে স্যুট করে কিনা। বিশেষত একনে প্রন স্কিনের জন্য অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করতে হবে।

 

  • সপ্তাহে অন্তত একদিন ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন।

 

  • গ্রীষ্ম হোক বা শীত নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করুন। স্কিনে ডেড সেলস জমে গেল এবং নিয়মিত ক্লিন না করলে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে। ফলে একনে, র‍্যাশেস সহ নানা স্কিন কনসার্ন হতে পারে। 

 

  • সিজন অনুযায়ী মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। শীতে যেমন ম্যাট ফিনিশের জিনিস স্কিনের জন্য ভালো তেমন গরমের জন্য এটি একদমই মানানসই নয়। তাই সিজন বুঝে মেকআপ প্রোডাক্টস ব্যবহার করুন না হলে এগুলোও স্কিনের ক্ষতি করতে পারে। 

 

তো জেনে নিলেন কিভাবে সিজনের সাথে সাথে নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিন মানিয়ে নিবেন। স্কিনকেয়ার রুটিন নিয়মিত ফলো করা উচিত, স্কিপ করা উচিত না কোনভাবেই। এছাড়াও কোন স্কিন কনসার্ন হলে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নেয়া উচিৎ। 

 

Author